পাক অত্যাচারের সংবাদ একটুকুও অতিরঞ্জিত নয়
গ্যালাঘার
মারকিন কংগ্রেসের সদস্য শ্ৰীকরনেলিয়স ই গ্যালাঘার শুক্রবার কলকাতায় প্রেসক্লাব সদস্যদের বলেন, পূর্ব বাঙলায় ব্যাপক গণহত্যা ও লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর পাকফৌজের বর্বর অত্যাচারের যেসব খবর বিভিন্ন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার একটুকুও অতিরঞ্জিত নয়। শ্রী গ্যালাঘার এদিন দমদমও বনগাঁয় আগত পূর্ববাংলার শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, মানুষের উপর যে এমন নির্মম অত্যাচার পূর্ববাংলায় ঘটেছে, বাংলাদেশের শরণার্থীদের এত করুণ অবস্থা আমেরিকার বসে সেটা আমরা ভাবতেও পারিনি।’
শ্রী গ্যালাঘার বলেন : তিনি ভােলা মন নিয়েই পূর্ববাংলার এই সমস্যাকে বুঝতে এসেছেন এবং যে অভিজ্ঞতা তিনি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তা ঠিক ঠিক মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। ‘ শ্রী গ্যালাঘার মারকিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ-এর বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির ‘এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক এ্যাফেয়ারস’ সাব কমিটির চেয়ারম্যান।
শ্রী গ্যালাঘার বলেন, তার সরকার-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ববঙ্গের ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন এবং এর রাজনৈতিক সমাধানই চায়। তিনি জানান : পূর্ব বাংলার ২৫ মার্চ যে ঘটনা শুরু হয়েছে, প্রথমদিকে তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারই ছিল, কিন্তু এখন আর একে সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলা চলে না। যে দেশ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশে আশ্রয় নেয় সেই দেশের সমস্যাকে আর অভ্যন্তরীণ বলা। যায় না। তিনি বলেন : ওই ঘরছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ আবার যাতে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে সেজন্য পাকিস্তানের উপর বিশ্বের সব দেশেরই চাপ দেওয়া উচিত। পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে সেই চাপের সূত্রপাত করা হয়েছে।
শ্রী গ্যালাঘার বলেন : শরণার্থীদের সঙ্গে তিনি কথাবার্তা বলে জানতে পেরেছেন যে, পাকিস্তান সুপরিকল্পিতভাবে পূর্ববাংলা থেকে বুদ্ধিজীবী ছাত্র, অধ্যাপক চিকিৎসকদের বিতাড়নের জন্যই এই গণহত্যা চালায়। এই বিতাড়নের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতাও করা হয়েছে। হিন্দুদের উপর উদ্দেশ্যমূলকভাবেই নির্যাতন চালানাে হয়েছে। শ্রী গ্যালাঘার বলেন, পূর্ববাংলার শরণার্থীদের সেবার জন্য ভারত সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়। আমাদের কারওই এই সমস্যায় চুপচাপ থাকা উচিত নয়। ত্রাণের জন্য যা যা প্রয়ােজন তা দিতে হবেই।’ জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন : পূর্ববাংলার সমস্যার একমাত্র সমাধান রাজনৈতিকভাবেই সম্ভব এবং এজন্য শেখ মুজিবরকেও মুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন রাষ্ট্র পাকিস্তানের উপর চাপ দিয়েই সেটা করাতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী সকাশে গ্যালাঘার
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করুন যাতে অত্যাচারের আতঙ্কে ওখানকার নিরীহ। নাগরিকরা দলে দলে দেশত্যাগ করতে বাধ্য না হন এবং দেশত্যাগী শরণার্থীরা যাতে ফিরে যেতে পারেন তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও পাকিস্তানের উপর চাপ দেওয়া হােক। শুক্রবার বিকালে মারকিন কংগ্রেস সদস্য শ্রীকরনেলিয়স গ্যালাঘার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজয়কুমার মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাঁকে এই অনুরােধ জানান। পাকিস্তানকে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের মারকিন সাহায্য বন্ধের জন্যও মুখ্যমন্ত্রী সুপারিশ করেন। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী পৌঁছেছেন, তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতেও শ্রীমুখারজি শ্রী গ্যালাঘারের মাধ্যমে মারকিন সরকারকে অনুরােধ জানান।
Reference:
৪ জুন ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা