You dont have javascript enabled! Please enable it! আওয়ামী  মুসলিম  লীগ থেকে  আওয়ামী লীগ - সংগ্রামের নোটবুক
                      শিরোনাম                সুত্র                     তারিখ
আওয়ামী  মুসলিম  লীগ থেকে  আওয়ামী লীগ পাকিস্তান অবজারভার ২৪শে অক্টোবর, ১৯৫৫

 

আওয়ামীলীগ অ-মুসলিম, অসাম্প্রদায়িক হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ

কর্তৃক সমর্থিত।

(স্টাফ রিপোর্টার থেকে প্রাপ্ত)

 

ছয় বছর বয়সী সর্ব-পাকিস্তান রাজনৈতিক পার্টি ‘আওয়ামী লীগ’ বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে অ-সাম্প্রদায়িক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যখন গতকাল এর মন্ত্রীপরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এ বিষয়ক কমিটির প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং এর নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, এখন থেকে  পাকিস্তানের সকল অংশের এবং সম্প্রদায়ের সদস্যের জন্য আওয়ামী লীগের দ্বার খোলা।

 

দলীয় সংবিধানে এই সংশোধনী………………. এর সভাপতি জনাব হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এনেছেন।

 

তিনি এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী দু’জনেই,  সভাপতি হিসেবে কাউন্সিলরদেরকে এটা বোঝাতে আকুল আবেদন করেন যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশের রাজনীতিতে তাদের  সক্রিয় অংশগ্রহনের অধিকার দেওয়াটাই ন্যায়সঙ্গত  এবং পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের পাকিস্তানের প্রতি যে আনুগত্য দেখানো উচিত তারা তা দেখাতে পারবে কিনা তা শুধুমাত্র তখনই বোঝা যাবে যখন তাদেরকে এরকম সুযোগ দেওয়া হবে।

 

মাওলানা ভাষানী এত চমৎকারভাবে কাউন্সিলরদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, কিছুক্ষণ আগেও এই সংশোধনীর বিপক্ষে যে বিরুদ্ধ-মত ছিল তা হাওয়ার মত উড়ে গিয়েছিল এবং ৬০০ কাউন্সিলরের একটি সভায়  মাত্র ৫ জন এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

 

যখন দলের এই ভাগ্য নির্ধারণী সিদ্ধান্তটি নেয়া হয় তখন রূপমহল সিনেমা হলে মিলিত হওয়া কাউন্সিলররা সোল্লাস ‘শহীদ ভাষানী জিন্দাবাদ; হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই’ এই স্লোগানে ফেঁটে পড়েন।

 

এই প্রথমবার, মুসলিম নিয়ন্ত্রিত এবং দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন কোন দল, পাকিস্তানে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের জন্য তাদের দুয়ার উন্মুক্ত  রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

এখন থেকে এই পার্টি ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ’ নামে পরিচিত হবে এবং এখন থেকে ১৮ বছরের উর্ধ্বে পাকিস্তানের যেকোন নাগরিক যে দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বলিত অঙ্গীকারনামায় সাক্ষর করবে এবং সদস্যপদ প্রাপ্তির ফি প্রদান করবে সেই দলটির সদস্য হতে পারবে।

 

শুক্রবার যখন এই সংগঠনটির বৈশিষ্ট্যগত মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে বিতর্ক চলছিল এবং কিছু প্রভাবশালী অংশ সেই সময় সেটা মেনে নেওয়ার বিরোধিতা করছিল তখন এটা নিশ্চিত ছিল না যে ভোট কোন দিকে যাবে। মাওলানা ভাষানী, যিনি এ বিষয়ে কমিটির বৈঠকের সময়  আওয়ামীলীগ অফিসের অন্য একটি কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তিনি তখনও সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন।

 

<001.094.448>

 

গতকাল তার ভাষণে মৌলানা ভাষাণী বলেন যে, আওয়ামীলীগ যে নির্দলীয় অসম্প্রদায়িক একটা দল হিসেবে প্রকাশ পাবে, এই প্রস্তাবনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। তবে, এই ভয়ও ছিল যে দল যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে আসার পূর্বেই এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে, যে বিরুদ্ধ মতের ঝড় আসতে পারে। তাতে দল তলিয়েও যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে মৌলানা হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত ভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগের নেতারা কতদূর অংশ নিয়েছিলেন সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করেন। আওয়ামীলীগ এখন একটি শক্তিশালী দল এবং এত সহজে ভেঙ্গে পড়বে না। সুতরাং, বহুতদিন ধরে যে সিদ্ধান্তটি তারা নিতে চাচ্ছিলেন তা এখন নির্দ্বিধায় নিরাপদে নেয়া যায়।

 

আমরা পুরোপুরি তাদের সাথে

সংবিধান সংশোধনের প্রাক্কালে জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন, “তাদেরকে (সংখ্যালঘুদেরকে) এটা উপলব্ধি করার সুযোগ দিন যে আপনি, এবং আপনার সরকার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের তাদের অধিকার আদায়ে তাদের পাশে আছেন। শুধুমাত্র তখনই, আপনি তাদের কাছ থেকে প্রতিদানে বিশ্বস্ততা দাবি করতে পারেন”।

 

পঞ্চাশ মিনিট দীর্ঘ ভাষণ দানকালে সোহরাওয়ার্দী আরো বলেন, ন্যায়বিচার না থাকলে সেখানে অসন্তুষ্টি এবং অবিশ্বাস জন্ম নেবেই। ভারতের মুসলমানরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি করেছিল কারণ হিন্দু কংগ্রেস তাদের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করেছিল। সেই একই পরিস্থিতি যদি এখনকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর চাপানো হয়, তখন কাউন্সিলররা কি একমত হবেন না যে এখানকার সংখ্যালঘুদেরও অবস্থাও বিভাজন পুর্ব ভারতের মুসলমানদের মত হবে, তিনি জানতে চান।

 

পরবর্তীতে জনাব সোহরাওয়ার্দী এই পদক্ষেপের যথার্থতা নিয়ে সেই সন্দেহের কথাও উল্লেখ করেন যেটা কিছু সদস্যের মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এই কারন যে, গত ৮ বছর ধরে আওয়ামীলীগ সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে  কাজ করলেও, তারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে হাত মিলিয়েছে। জনাব সোহরাওয়ার্দী এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটা এই আশঙ্কায় হতে পারে যে, যদি তারা বিরোধী দলের সাথে তাল মেলায় তবে মুসলিম লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তারা যে ব্যবহার পেয়েছে আবার হয়তো তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

 

পূর্ব-পশ্চিম সমতা

সোহরাওয়ার্দী সাহেব আরো যোগ করেনঃ এখানে যেমন আপনাদের পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল, তেমনি, পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের জিন্নাহ-আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল। ট্রেড ইউনিয়নে অবস্থান প্রভৃতি বিচার করে আমরা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগকে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম, যদিও তাদের নামে এবং অন্যান্য ব্যাপারে পার্থক্য ছিল। এখন পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের আছে পাকিস্তান আওয়ামীলীগ, এবং নামের সমতা সৃষ্টির জন্য আমার মতে আপনাদের সংগঠনেরও একই পন্থা অবলম্বন করা যুক্তিযুক্ত এবং সঠিক হবে কিন্তু এই পুরো বিষয়ে রায়ের ব্যাপারটি আপনাদের মতের উপর নির্ভরশীল।