You dont have javascript enabled! Please enable it!

“একদিন বিকেল বেলা আমি দৈনন্দিন কাজ সেরে বাসায় ফিরছিলাম। বাসায় ফিরে বিপুলসংখ্যক পাক সৈন্য ও বিহারীদেরকে দেখতে পাই। কয়েকজন বিহারী আমার বাসার গুরুত্তপূর্ণ মূল্যবান উপকরণগুলো খুলে নিচ্ছিল। আমি সরলভাবে প্রতিবাদ জানাই জনৈক পরিচিত বিহারীকে। উক্ত কুখ্যাত বিহারী আমার জীবনের ক্ষতির হুমকি প্রদান করে এবং ঘরের ভিতরে অবস্থানরত কুখ্যাত মেজর বাংলাদেশের পতাকা হাতে রাখে ও আমাকে অভিযুক্ত করে কারণ আমি আওয়ামী লীগের নেতা ছিলাম বলে উক্ত মেজরের ধারণা ছিল। পরে বিহারী ও পাক সৈন্যরা আমার বাসা লুট করে অনেক মালামাল নিয়ে যায়। বলা প্রয়োজন ঐ দিনই আমাকে ধরে ইপিআর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আমার অফিসের একজন কর্মচারীর সুপারিশে সেবারের মত মুক্তি পাই। কিন্তু আমাকে কাজে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়।

ঘটনা প্রবাহের অবনতির সাথে সাথে আমি জনগণের ভাগ্যের সাথে ভাগ্য মিলিয়ে আমার অফিসের কাজ করতে থাকি। কিছুদিন পর অত্র শহরের পাঞ্জাবী এসডিও দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন। উক্ত এসডিওর হত্যার পরে বিহারী ও পাক সৈন্যদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। পাক দস্যুরা বিহারীদের যোগসাজশে হত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। হঠাৎ জুলাই মাসের ১৫ তারিখে আমার বাড়ি ঘেরাও করে। ঘেরাও করার পরে কুখ্যাত মিলিটারী ও বিহারীরা তথাকথিত এসডিওর হত্যাকারী বলে বিবেচনা করে। এখানে প্রকাশ করা প্রয়োজন যে জনৈক বিহারী দৃঢতার সাথে বলে যে, উক্ত এসডিওকে দুটি ছোরা দিয়ে আমি নিহত করেছি এবং ছোরার সাথে তাজা রক্তের ছাপ ছিল। তার সাক্ষ্যে পরে আমার দুই হাত বেঁধে নিহত এসডিওর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে একজন কর্ণেল, একজন মেজর ও কিছুসংখ্যক সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিল। তারা আমাকে বেদম প্রহার করে। রাইফেলের বাঁট, কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ প্রহার করার পর আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। পরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আমাকে নওগাঁর ইপিআর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে যাবার পরে আমি অনেক বিহারী ও মিলিটারীদের দেখতে পাই। পুনরায় পাক কুকুরেরা আমাকে প্রহার করতে থাকে। প্রহার করার পরে আমাকে ক্যাম্পের সংলগ্ন একটি ছোট প্রকোষ্ঠে রেখে দেয়। সেখানে ৪/৫ জন লোক থাকার মত জায়গা ছিল অথচ উক্ত প্রকোষ্ঠে প্রায় ২৪/২৫ জন বাঙ্গালী নিরীহ মানুষকে আটকিয়ে রেখেছিল। সেখানে আমি আটদিন অবস্থান করেছিলাম। আটদিনের প্রায় প্রতিদিনই বেদমভাবে প্রহার করতো। পাক বর্বররা পরিমিত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় সরবরাহ করতো না। ২/৩ দিন পরে পরে কিছু কিছু করে খাবার দিতো কিন্তু তা খাবার অযোগ্য আহার্য ছিল।

বন্দীখানায় অবস্থান করার পর আমি প্রত্যেক দিনই ফুটো দিয়ে দেখতাম যে ২০/২৫ জন করে নিরীহ লোকজনকে মারধর করার পর হাত উল্টো করে বেঁধে ও চোখ বেঁধে বেয়োনেট দিয়ে বুক চিরে রাস্তায় ফেলে রাখত। পরে মৃতদেহগুলিকে নিকটস্থ নদীতে নিক্ষেপ করত। উপরে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় আটদিনে তারা ২৫০ জন নিরীহ বাঙ্গালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে আমি অনুমান করি। একমাত্র আমিই অফিসের কতৃপক্ষের সুপারিশে মুক্তি পাই।“

স্বাক্ষর

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন

নওগাঁ

রাজশাহী

এস, ডি, ও অফিস, নওগাঁ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!