You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকবাহিনী রাজশাহী প্রবেশের পূর্বে বিমান মহড়া শুরু করে জনমনে ত্রাসের সঞ্চার করে। বিমান থেকে যে দিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বোমাবর্ষণ করা হয় সেদিন আমি প্রাণের ভয়ে সপরিবারে দুর্গাপুর থানার পাচুবাড়িয়া স্কুলগৃহে আশ্রয় নেই। সেখানে প্রায় মাসাধিককাল ছিলাম। ইতিমধ্যে গোটা শহর সামরিক বাহিনীর লোকেরা নিজেদের দখলে নেয়। বাজারের দোকান লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে দেয়। জনবসতি এলাকায় বাসাবাড়ি ও লুটপাট করে। এতে আমাদের বাড়ি ও দোকান লুট হয়।

 

সামরিক বাহিনীর লোকেরা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যখন তৎপরতা শুরু করে তখন আমরা শহরে ফিরে আসি। নিজের বাড়ি বাসোপযোগী না থাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠি (বেলদার পাড়া)। এর দশ বারদিন পর হঠাৎ একদিন রাতে কারফিউ এর মধ্যে রাত দশটার সময় বাসা ঘেরাও করে আমাকে গ্রেফতার করে। পালাবার চেষ্টা করলে গুলি করে। গুলি পেটে লেগে পিছলে বেরিয়ে যায়।

 

গ্রেফতারের পর প্রথমে এক বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আকারে ইঙ্গিতে শলাপরামর্শের পর আমাকে স্থানীয় সার্কিট হাউসে নিয়ে যায়। সেখানে পিছনে হাত বাঁধা অবস্থায় সারারাত অত্যাচার করে। কেউ ঘুষি মারে, কেউ চড় মারে, কেউ বা লাথি মারে।

 

পর দিন সকাল ৯টার সময় জোহা হলে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। একটি অন্ধকার কক্ষে উলঙ্গ করে হাত বাঁধা অবস্থায় রাখে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর হলের আঙ্গিনায় ইলেকট্রিক তার, হান্টার ও লোহার রড় দ্বারা বিরামহীনভাবে ৮ ঘন্টা ধরে অত্যাচার করা হয়। এর মধ্যে আমি ৯ বার জ্ঞান হারিয়েছিলাম। পিপাশায় পানি ও দেওয়া হয়নি। বিকাল বেলা আমাকে আবার ঘরে নিয়ে আসে। রাতে খিচুড়ি জাতীয় সামান্য কিছু খাবার দেওয়া হয়।

 

পরের দিনও আমাকে ঐ একইভাবে অত্যাচার করে ও নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিকালের দিকে এক বাঙালি দালাল বাসা থেকে এক হাজার টাকা মুক্তিপণ হিসেবে নেয়। এবং পরের দিন সকালে সৈন্যরা আমাকে পূর্বোক্ত বাসায় রেখে যায়। ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয় তোমার উপর যা ঘটলো তা যদি কাউকে বলো তাহলে তোমার গোটা পরিবারকে শেষ করে দেওয়া হবে।

 

জোহা হলে বন্দী অবস্থায় আমি বহু সংখ্যক নারী কন্ঠের চিৎকার, কাকুতি মিনতি ও করুণ কান্নার শব্দ শুনেছি। যদিও কিছুই দেখতে পাইনি তবে এটা বুঝেছি যে নরপশুদের অমানুষিক অত্যাচার চলছে।

 

স্বাক্ষর/-

মোঃ আবুল হোসেন

থানা- সদর, জেলা- রাজশাহী

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!