You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাণীনগর থানার আতাইকুলা গ্রামে অপ্রত্যাশিতভাবে জুন মাসে ২৯ তারিখে প্রায় ৮০ জন পাক সৈন্য প্রবেশ করে। পাক বর্বরদের সাথে বিহারীরাও ছিল। সেদিন বেলা দশটার সময় উল্লেখিত পাক বর্বররা ধ্বংস, বীভৎসতা চালানোর জন্য গিয়েছিল। গ্রামে প্রবেশ করার আগে গ্রামের সংলগ্ন যমুনা নদী পার হয়ে সশস্ত্রভাবে দৌড়ে গিয়ে গ্রামটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। অবশ্য গ্রামের পাল পাড়া ধ্বংস করাই উদ্দেশ্য ছিল বলে আমার মনে হয়। গ্রামের অন্যান্য পাড়ায় গুরুত্ব না দিয়ে উক্ত গ্রামের পাল পাড়াতেই বেশি তৎপরতা চালায়। পাল পাড়ায় সমস্ত জনগণকে একত্রিত হতে পাক হানাদাররা আদেশ করে। আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পাড়ার হিন্দু জনগণ এক জায়গাতে একত্রিত হয়। পরে পাক হানাদাররা তল্লাশি করে ও জোরপূর্বক টাকা-পয়সা, সোনার গহনা, ব্যবহারিক সৌখিন জিনিস লুট করতে থাকে। অন্যূন ৬০ হাজার টাকা উক্ত গ্রাম থেকে লুট করে নিয়েছে। বেলা ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত লুট পর্ব চলে। পড়ে উল্লিখিত ধৃত ব্যক্তিগণকে এক লাইনে দাঁড় করায়। লাইনে দাঁড় করানোর পরে মেশিন গানের গুলিতে ৪০ জন লোক নিহত হন।

উক্ত হত্যাকাণ্ডের আগে পাক বর্বররা গ্রামের প্রায় ৫০ জন কুলবধূকে অন্য এক জায়গায় বন্দী করে রাখে। কুলবধূগণকে গুলি করে না মারলেও তাদের অধিকাংশের শ্লীলতাহানি করে। বলা প্রয়োজন উক্ত হত্যালীলা ও ধর্ষণ চালানোর পরে উক্ত পাড়াতে ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ করে। ফলে উক্ত পাড়ায় শতকরা ৩০ ভাগ বাড়িঘর সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। অবশ্য গ্রামে প্রবেশ করার পূর্বে ও পরে মাঠের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে গুলি চালালে ইরি ক্ষেতের মাঝে লুকায়িত ৬/৭ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

কিছুদিন পরে পশ্চিমা বর্বর বাহিনী পুনরায় উক্ত আতাইকুলা গ্রামে পাল পাড়ায় প্রবেশ করে। প্রবেশ করার আগে গ্রামের জনগণ নারী, পুরুষ নির্বিশেষে প্রাণের ভয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। পরে কোন মানুষকে না পেয়ে কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পাক পশুরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে চলে যায়।

আত্রাই থানায় তখন বর্বরদের ধ্বংস ও বীভৎসতা চরম ভাবে চলেছিল। বলা প্রয়োজন আতাইকুলাতে দুইবার অভিযান চলার পর পার্শ্ববর্তী গ্রামের কিছুসংখ্যক যুবক ঐ গ্রামে অভিযান হবেনা ভেবে রাত্রিতে অবস্থান করতেন। কিন্তু গ্রামে স্বার্থান্বেষী পাকিস্তানী দালালদের প্ররোচনায় তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছিল। পরে দালালদের আমন্ত্রণে পাক বর্বররা তৃতীয়বার উক্ত আতাইকুলা গ্রামে প্রবেশ করে পাল পাড়াতেই। বলা প্রয়োজন উক্ত পাল পাড়ায় প্রাণের ভয়ে কয়েকজন যুবক আশ্রয় নিয়েছিল। তখন কয়েকজন যুবক পাক দস্যুদের তৎপরতায় ধরা পড়ে। পাক বর্বররা উক্ত ধৃত যুবকদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

স্বাক্ষর/-

মোঃ হামিদুর রহমান

গ্রাম- কুমাইল, পোঃ- কাশিমপুর

থানা- রাণীনগর, রাজশাহী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!