You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.19 | বারাসাত শহরে শরণার্থীর ভীড় | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বারাসাত শহরে শরণার্থীর ভীড়

রিলিফ ও চিকিৎসার সরকারী ব্যবস্থা নিম্নস্তরে : শরণার্থী ও স্থানীয় যুবকদের যুক্ত কমিটি
বারাসত (চব্বিশ পরগণা) ১৮ জুন— মে মাসে তৃতীয় সপ্তাহেও বরাসতে কোন শরণার্থী ছিলেন না এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তখন সিদ্ধান্তই ছিল সীমান্ত এলাকার বাইরে শরণার্থী পাঠানাে হবে না। সরকারী সিদ্ধান্ত বানচাল হয়ে গেল এক ধাক্কায় যখন বসিরহাট, হাসনাবাদ, বনগাঁ অঞ্চল গুলি থেকে উপচে পড়া হাজার হাজার শরণার্থী কলকাতা অভিমুখে রওনা হলেন। মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহের কথা এটা।
বারাসতে প্রথম শরণার্থী শিবির খােলা হয় শহর এলাকার বাইরে আমডাঙ্গা কালীবাড়ি এবং সাধনপুর স্কুলে। এই দুই জায়গায় যথাক্রমে ১০ হাজার ১০ হাজার এবং প্রায় ৫ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নেন। এরপর শরণার্থী আসার গতি আর থামে নি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারাসত শহরে ভীড় করতে থাকেন। রেল স্টেশন, কোর্ট প্রাঙ্গন, শহরের সমস্ত স্কুল আর কলেজ ভর্তি হয়েও মানুষ পথে দাঁড়িয়ে গেল। বিভিন্ন বাড়ি আর দোকানের বারান্দা, গাছতলা ভরে গেল। মাথার ওপরে আকাশ ভাঙ্গা বর্ষা আর প্রখর রৌদ্রের মােকাবিলা করলেন এই মানুষেরা।
বারাসাতের কমিউনিস্ট কর্মীরা, মহিলা সমিতি যুবসংঘ এবং ছাত্র ও সরকারী কর্মচারীরা প্রথম দিন থেকেই শরণার্থীদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্থানীয় যুবক এবং কমিউনিস্ট কর্মীদের নিয়ে আমডাঙ্গা শিবিরের দায়িত্ব নেন সিতাংশু মজুমদার। শরণার্থী যুবক এবং স্থানীয় যুবকদের যুক্ত কমিটির গঠিত হয়।
সত্যভারতী স্কুল এবং পান্না ইটখােলার ১৩শ পরিবারের মেডিক্যাল এবং অন্যান্য যাবতীয় কাজের ভার নেন বারাসতের মহিলা সমিতি সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা বারােটা এবং বিকাল তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দুবেলা মেডিক্যাল দেওয়া হয়। ডাঃ ব্রজেন্দ্রলাল বসু সকাল বেলার দায়িত্ব নিয়েছন, বিকেলে ডাঃ মােহিত চ্যাটার্জি। এদের সঙ্গে সাহায্য করেন মেডিক্যাল কলেজের ৪র্থ বার্ষিক শ্রেণির ছাত্র বিমান বসু। এছাড়া শেফালী গেরিলদার বেলা ঘােষ, মলিনা সরকার, বিলাসিনী ভৌমিক প্রভৃতি আরাে বহু কর্মী সাহায্য করছেন। রমা ঘােষ সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখানে দুধ, বার্লি দেওয়া, ভেকসিনেশন ও ইনজেকসন দেওয়া প্রভৃতি কাজ হয়।
কালীকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের শিবিরে দক্ষিন পাড়ার যুব কমিউনিস্ট কর্মীরা ব্যাপক কলেরার ইনজেকসন দেওয়ায় সাহায্য করেন। এছাড়া চিড়া, গুড় দেওয়া ও দেখা শােনার কাজও তারা করছেন। দত্ত পুকুর এবং বারাসত জেলখানার মাঠেও শিবির খােলা হয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ১৯.৬.১৯৭১