মুক্তিবাহিনীর হাতে তিন দিনে ১৬০ জন খান সেনা খতম
স্টাফ রিপাের্টার
শুক্রবার মুজিবনগর সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেল গত তিনদিনে বাংলাদেশের কয়েকটি রণাঙ্গনে স্বাধীন। বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিফৌজ গেরিলা লড়াইয়ে হানাদার পাকবাহিনীর ১৬০ জন সৈন্যকে খতম করেছে। এছাড়া মুক্তিফৌজের হাতে দখলদার পাকবাহিনীর ১৩ জন সাহায্যকারী, একজন মুসলিম লীগ নেতা এবং ৬ জন রাজাকারও খতম হয়েছেন।আরও প্রকাশ, মুক্তিফৌজ তাদের গেরিলা কার্যকলাপ ক্রমশ তীব্রতর করে তুলছে। কোন কোন গেরিলা ইউনিট নারায়ণগঞ্জ এবং খাস ঢাকা শহরেও অতর্কিতে হানা দিয়ে একাধিক পাকফৌজ নিধন করেছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা বাহিনীগুলির ক্রমাগত আক্রমণে পাকফৌজ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হিন্দু অধিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করছে বলেও অভিযােগ পাওয়া যায়। এজন্য তারা মিথ্যা অজুহাতও একটা খাড়া করেছে। তাদের বুলি হয়েছে : হিন্দুস্থান গােলাবারুদ লােকজন দিয়ে মুক্তিফৌজকে সাহায্য করছে। মুক্তিফৌজ সেই অস্ত্র দিয়ে আমাদের সৈন্যদের হত্যা করছে। সেজন্য আমরাও কোন হিন্দুকেই আর এখানে ‘জিন্দা’ রাখব না।’
বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন যে, ভারতের সাহায্য সম্পর্কে পাক হানাদার বাহিনীর ওই অভিযােগ যে কত মিথ্যা তা বিদেশী সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা ভারত সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন তারাও ভালভাবেই জানেন। আসল কথা বাংলাদেশ সরকারের গেরিলা বাহিনী যে প্রবল আঘাত হানছে তাতে হানাদার ফৌজ আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে। তাই তারা এখন যে কোনভাবে তাদের প্রতিশােধ স্পৃহা চরিতার্থ করতে চাইছে। মুজিবনগর সূত্রে গত কয়েকদিনে মুক্তিফৌজের গেরিলা বাহিনীর নানা অভিযানের কয়েকটি নমুনা নিচে দেওয়া হচ্ছে : গত ১৮ জুলাই মুক্তিফৌজ গেরিলা ইউনিটের গ্রেনেড আক্রমণে জেনারেল পােস্ট অফিস বিধ্বস্ত হয়। ১৬ জুলাই ওই নারায়গঞ্জেই গেরিলা বাহিনীর গ্রেনেড আক্রমণে ১০ জন পাকফৌজ নিহত হয়।
১৯ জুলাই যশােহর জেলায় শহরবাটি অঞ্চলে গেরিলা বাহিনী একটি পাকফৌজী জীপ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ওই জীপের আরােহী ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২১ জুলাই শােলচুপা এলাকায় গেরিলা বাহিনীর আক্রমণে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুজিবনগর সূত্রে পাওয়া আর একটি খবরে বলা হয় যশাের শহরটি এখন বিভীষিকার শহর। চারদিকে কামান সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মিলিটারি এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সশস্ত্র অবাঙ্গালী গুন্ডা রাস্তার মােড়ে মােড়ে অলিগলিতে মােতায়েন। রেশন দোকানের অবাঙ্গালী মালিকরা কোন হিন্দু রেশন নিতে গেলে নির্যাতন ও কোন কোন ক্ষেত্রে হত্যা করছে।
Reference:
২৪ জুলাই ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা