You dont have javascript enabled! Please enable it!

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে বর্বর নরপশুরা রাজাকারসহ সশস্ত্র অবস্থায় আকস্মাত গ্রামে প্রবেশ করার পূর্বেই গ্রামের জনসাধারণ স্ত্রী-পুত্র, কন্যাসহ বিক্ষিপ্তভাবে প্রাণের ভয়ে পলায়ন করতে থাকে। পড়ে সৈন্যরা এবং রাজাকাররা নৌকা থেকে নেমেই গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ি তন্ন তন্ন করে তল্লাশী চালাতে লাগলো, তাদের ধারণা ছিল হয়তো কোন আওয়ামী লীগার, মুক্তিযোদ্ধা কিংবা কোন স্বেচ্ছাসেবক গ্রামের মাঝে আত্মগোপন করে আছেন। কিন্তু তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল লুট করা। ঘরের মাঝে যে সমস্ত মূল্যবান আসবাবপত্র ছিল তা নষ্ট করে দেয়, কতকগুলি শৌখিন জিনিস নিয়েও যায়। ট্রাংক, সুটকেস খুলে খুলে কিংবা উপর থেকে আছাড় মেরে তার ভেতরে যা পায় যেমন দামি কাপড় চোপড়, গহনা পত্র, রেডিও, ঘড়ি সমস্ত লুট করে নিয়ে যায়। পঞ্চান্ন বছর বয়স্ক মজিবর রহমান নামক এক বৃদ্ধকে বেদম প্রহার করে। সেই প্রহারের ক্ষণকাল পর আমাকে ধরে চোখ বাঁধে। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই আমাকে নৌকায় তোলে। অনেক অবাঞ্চিত কথা বলার পর পাক বাহিনীর লোকেরা আমাকে আত্রাই স্টেশনে নিয়ে যায়। আত্রাই স্টেশনে নামিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেয়। স্টেশন সংলগ্ন একটি কোঠায় আমাকে বন্দী করে রাখে। সেখানে আমি নাম না জানা অপরিচিত বারজন লোককে দেখতে পাই। দুদিনে দুইখানা রুটি খেতে দিয়েছে নরপশুরা। অবশ্য কোন থালা বা প্লেটে দেয়নি। হাতে হাতে দিয়েছে।

যে বার জন লোক উল্লিখিত কুঠুরিতে ছিলেন তাদেরকে নিয়ে কয়েকজন মিলিটারী প্রায় দুইশ গজ দূরে নিয়ে যায়। তখন অন্ধকার রাত ছিল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। সেই অন্ধকারের মাঝে ব্রিজের উপরে বার জন লোককে তুলে নেয়। অবশ্য ব্রিজের নিচে অথৈ পানি ছিল। একসময় গুলি করে বার জন লোককে হত্যা করে। আমি স্পষ্ট গুলির শব্দ শুনতে পাই। পরে বর্বর সৈন্যরা নির্দিষ্ট জায়গাই চলে আসে।

উল্লিখিত ঘটনার পড়ে পালা এলো আমাকে হত্যা করার। আমি চাকুরিজীবী বলে পশুরা আমাকে হত্যা করে না। আর পকেটে ছিল পরিচয়পত্র। সেই পরিচয়পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে রাত ৯টার সময় আত্রাই স্টেশন ক্যাম্প থেকে হানাদাররা মুক্তি দেয়।

স্বাক্ষর/-

মোঃ ছালামত আলী

গ্রাম- সফিকপুর

ডাকঘর- পালসা

রাণীনগর, রাজশাহী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!