You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973 | তাজউদ্দীনের হাতে দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু | আমেরিকা সফরে বিতর্কিত নিউজ কাভারেজ | স্বাধীনতার ঘোষণা ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের বিভিন্ন দেশপ্রেমিক বাঙালীর কাজ | সাংবাদিক সৈয়দ মােহাম্মদ উল্লাহর সাক্ষাৎকার - সংগ্রামের নোটবুক
সাংবাদিক সৈয়দ মােহাম্মদ উল্লাহর সাক্ষাৎকার
প্রাক্তন নিউজ এডিটর ও ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট, ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি (এনা), ঢাকা, বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র হতে প্রকাশিত প্রথম নিয়মিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা প্রবাসী’র প্রতিষ্ঠাতা (১৯৮৫) ও সম্পাদক।  আমি সে সময় (১৯৭২-৭৫) ঢাকার এনা’র ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট এবং গণভবনের সঙ্গেও অ্যাটাচড ছিলাম। এনার চিফ এডিটর গােলাম রসুল মল্লিক আমাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর ছিল। উনি একবার কাউকে দেখলে পরে চিনতে ভুল করতেন না। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন সফর, মিটিং ও অনুষ্ঠানে আমি যেতাম। সে সময় আমি সাংবাদিক হিসেবে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের ৩৫ হেয়ার রােডের সরকারি বাসভবনেও যেতাম। তাজউদ্দীন সাহেব আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ‘৭৩-এর সাধারণ নির্বাচনের প্রার্থী মনােনয়নের সময় একদিন তার হেয়ার রােডের বাসায় পৌছে দেখি যে নমিনেশন পাওয়ার আশায় ওই বাসার নিচতলায় বহু প্রার্থীর ভিড়। এক লোক সঙ্গে এক সুন্দরী মহিলাকে নিয়ে তাজউদ্দীন সাহেবের অফিস রুমে ঢুকে নমিনেশন চাইতে যান। তাজউদ্দীন সাহেব ভীষণ ব্রেগে তাদের ঘর থেকে বের করে দেন। ওই নির্বাচনে আতাউর রহমান খান (পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানের এককালীন মুখ্যমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভােটের দিন উনি তাজউদ্দীন সাহেবকে ফোন করলেন। বললেন যে, আওয়ামী লীগের লােকজন তার এলাকার বিভিন্ন ভােটকেন্দ্রে গােলমাল করছে। তারা তার সমর্থকদের ভােট দিতে দিচ্ছে না। তাজউদ্দীন সাহেব তখন ওই অঞ্চলের পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বললেন এবং ঢাকা থেকে একজন বিদেশি সাংবাদিকসহ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে সে এলাকায় পাঠালেন। এর ফলে ওই এলাকায় গােলমাল প্রশমিত হয় এবং আতাউর রহমান খান ইলেকশনে জিতলেন।
আমার সাংবাদিক জীবনের অনেক ঘটনা, স্মৃতি ও তথ্যের মধ্যে একটি ঘটনা বিশেষ উল্লেখযােগ্য এবং যা জানানাে দরকার মনে করি। ‘৭৩-এর নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় আমরা চারজন সাংবাদিক রমনার পুরনাে গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাই। উনি তখন নিচতলার পূর্ব দিকের ওয়েটিং রুমে ইজিচেয়ারে বসেছিলেন। আমরা রুমে ঢুকতেই উনি আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। উনি আমার সঙ্গের সিনিয়র সাংবাদিকদের স্নেহ করে ‘তুই’ সম্বােধন করতেন। তাদেরকে চিনতেন বহুদিন ধরে। আমি জুনিয়র সাংবাদিক, নতুন পরিচয়। আমাকে তুমি সম্বােধন করতেন। আমার সঙ্গের সিনিয়র সাংবাদিকরা ছিলেন ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারের সিটি এডিটর আব্দুর রহিম ও সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জোয়াদুর রহীম এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চিফ, যিনি ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সেক্রেটারি হয়েছিলেন, জাওয়াদুল করিম। বঙ্গবন্ধু আমাদের বসতে বললেন এবং আমাদের বললেন, “দেখাে নির্বাচন দিলাম, আমার একটা প্ল্যান আছে। তাজউদ্দীনদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আমি কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থাকব। এরা যদি ঠিক মতাে চালাতে না পারে, বা অন্যায় করে, লােকে তখন আমার কাছে আসবে। আমি আল্টিমেট আদালতের মতাে থাকৰ। এ কথা শুনে আমি বলতে চেয়েছিলাম, ‘স্যার, খুব ভালাে হবে। কিন্তু আমার সম্পূর্ণ বাক্য বলা হলাে না, ‘স্যার’ পর্যন্ত বলতে পেরেছিলাম। আমার তিন বড় ভাই সাংবাদিক সেই মুহূর্তেই বসা থেকে লাফিয়ে উঠে প্রবলভাবে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে আপত্তি জানালেন। তারা বললেন যে বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে, এই সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না, ইত্যাদি। ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রতিমন্ত্রী কে এম ওবায়েদুর রহমানের স্ত্রী অধ্যাপিকা শাহেদা ওবায়েদ মিষ্টির ভাণ্ড নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। ওবায়েদ জিতেছেন। তার এলাকায় ফলাফল তাড়াতাড়ি ঘােষিত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু উনার হাত থেকে মিষ্টি নিয়ে আমাদের নিজ হাতে তুলে দিলেন। তাঁর সেই ঐতিহাসিক বক্তব্য তখন চাপা পড়ে গেল এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ এসে গেল। খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়, সম্ভবত ২০০২ সালে, সে সময় আমি ঢাকায় একদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়েছি বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে। নিয়তির কী পরিহাস, ‘৭৩-এ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের ওই প্রতিবাদকারীদের একজন, আব্দুর রহীম, এদিন প্রেসক্লাবে কথা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে ‘ভঙ্গবন্ধু’ বলে উপহাস করছিলেন ! সাল-তারিখ মনে নেই। আমি লালবাহিনীর জনসভা কাভার করি ঢাকার সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বঙ্গবন্ধু লালবাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন। লালবাহিনীকে বলা যেতে পারে দলীয় সমর্থনপুষ্ট ও তরুণদের নিয়ে গঠিত বাহিনী। শ্রমিক লীগের আবদুল মান্নান ছিলেন লালবাহিনীর প্রধান। জনসভায় শেখ সাহেব দেশে গােলযােগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে উক্তি করেন, ‘লাল ঘােড়া দাবড়ায়ে দেব।’ উক্তিটির যদিও পরিপ্রেক্ষিত ছিল, কিন্তু সমালােচকদের কাছে তা ছিল শ্রুতিকটু। সে সময় সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি ও আরও বেশ কিছু দল ও গ্রুপ পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি নাম দিয়ে দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছিল। শেখ সাহেব ওই মিটিং থেকেই দ্বিতীয় বিপ্লবেরও ডাক দেন। শেখ সাহেব যেদিন সােহরাওয়ার্দী ময়দানে লালবাহিনীর সালাম নিচ্ছেন, ঠিক তখন তাজউদ্দীন সাহেব জিঞ্জিরায় এক জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘প্রাইভেট বাহিনী রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। আমার সহকর্মী সাংবাদিক যিনি জিঞ্জিরায় তাজউদ্দীন সাহেবের মিটিং কাভার করছিলেন, তিনি এ কথা আমাকে জানান। শেখ সাহেবের লালবাহিনীর জনসভায় সব মন্ত্রী এবং দলের উচ্চপর্যায়ের সকলেই উপস্থিত ছিলেন। তাজউদ্দীন সাহেবই একমাত্র মিনিস্টার যিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেননি। কাজী ফজলুর রহমান ছিলেন সিএসপি অফিসার। ইয়াহিয়া খান তাঁকেসহ বেশকিছু বাঙালি অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযােগ এনে পদচ্যুত করে। তাকে ‘৭৪ অথবা ‘৭৫ সালে একদিন লালবাহিনীর সভাপতি শ্রমিক লীগের আবদুল মান্নান তার পুরানা পল্টনের অফিসে বন্দী করে রাখেন।
তাজউদ্দীন সাহেব খবর পেয়ে সােজা সেখানে গিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ১৯৭৪ সালে হিমাগার সমিতি হােটেল পূর্বাণীতে তাদের বাৎসরিক মিটিং ও ডিনারের ব্যবস্থা করে। সেই মিটিংয়ে তারা বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দাবি করে। সেখানে আমার সঙ্গে আরও অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সে সময় সরকারি সিদ্ধান্তহীনতায় কয়লা আমদানির অভাবে বিদ্যুতের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়। খুলনার নিউজপ্রিন্ট কারখানাসহ অনেক মিল ও ইন্ডাস্ট্রির প্রডাকশন স্থবির হয়ে যায়। ইন্দিরা গান্ধী তখন বঙ্গবন্ধুর বার্তা পেয়ে জরুরিভিত্তিতে ভারত থেকে  কয়লা সরবরাহ করেন। সে বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট চলছিল। রাশিয়া (তৎকালীন সােভিয়েত ইউনিয়ন) আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করেছিল এবং সেই সংগ্রহ হতে কয়েক জাহাজ খাদ্যশস্য ধার হিসেবে ভারতে পাঠানাের নির্দেশ দেয়। ওই জাহাজগুলাে গভীর সমুদ্রে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর অনুরােধে ভারত একটি বা দুটি জাহাজ ডাইভার্ট করে বাংলাদেশে পাঠায়। তাজউদ্দীন সাহেব হিমাগার সমিতির উক্ত অনুষ্ঠানে এসব বিষয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বেশ ইমােশনাল হয়ে গেলেন। বললেন, ‘সার্বভৌমত্ব অটুট রাখতে হলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সচেষ্ট হতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়ানাের চেষ্টা করতে এবং আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে হবে।’ তিনি আরও বললেন, রাষ্ট্র তার সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে না। যেমন একজন নারী তার সতীত্ব বিসর্জন দিয়ে কৃতজ্ঞতার প্রতিদান দিতে পারে না।’  তাঁর সেদিনের ওই উক্তিটি আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল।
১৯৭৪-এর সেপ্টেম্বর মাসে আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সেশন এবং বঙ্গবন্ধুর  নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন সফর কাভার করি। বাংলাদেশ সে বছরই জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু নিউইয়র্কে পৌছানাের পরপরই তাজউদ্দীন সাহেব আইএমএফ ও ওয়ার্ড ব্যাংকের সম্মেলনে যােগ দিতে ওয়াশিংটনে আসলেন। সেটিও আমি কাভার করি। মুহিত সাহেব (এই লেখার সময় তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত) তখন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিতে ইকোনমিক মিনিস্টার হিসেবে কাজ করছেন। তাজউদ্দীন সাহেবের সম্মানে তিনি তার বাসায় ডিনারের আয়ােজন করেন। ওয়াশিংটন ডিসির ডুপন্ট সার্কেলের হােটেল থেকে অনু ভাই (নুরুল ইসলাম অনু, তখন বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত) আমাকে ও আরও ক’জন সাংবাদিককে উঠিয়ে নিজে ড্রাইভ করে মুহিত সাহেবের বাসায় নিয়ে যান। তাজউদ্দীন সাহেব সেই ডিনারে দুঃখ প্রকাশ করে অনেক কথাই বলেছিলেন। আভাসও দিয়েছিলেন যে তিনি আর বেশিদিন মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। তিনি একটা কথা শুনে খুব আপসেট ও শকড হয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার এক মার্কিন পাবলিক রিলেশন্স কোম্পানিকে বঙ্গবন্ধুর যুক্তরাষ্ট্রের সফর কাভার করতে ২০ থেকে ৪০ হাজার ডলার দিয়েছে, এ তথ্য তিনি সেদিনই জানতে পারেন। তাজউদ্দীন সাহেব অর্থমন্ত্রী, অথচ এ ব্যাপারে তাকে আগে জানানাে হয়নি। তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন যে গরিব দেশের এতগুলাে টাকার অপচয় হলাে, অথচ পাবলিসিটিও হলাে না। এখানে উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে জাতিসংঘের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যােগ দেওয়ার জন্য আফ্রিকার কোনাে এক রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে এসে এখানকার এক ছােট্ট মােটেলে ওঠেন। তিনি বলেন যে তার রাষ্ট্রের সামর্থ্য নেই যে তাকে দামি হােটেলে রাখবে। শুধু এই কারণে ওই প্রেসিডেন্ট বিশাল মিডিয়া কাভারেজ পান। তার কোনাে পাবলিসিটি কোম্পানির সহায়তার প্রয়ােজন হয়নি।
তাজউদ্দীন সাহেব পার্লামেন্টে সকল সদস্যের বক্তব্যের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি সবার আলােচনার নােট নিতেন। পার্লামেন্টে বিরােধী দলের সদস্যদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন খুব গুছিয়ে, যুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে। এর বিপরীত চিত্রও উল্লেখ করা যায়। একবার স্পিকার মােহম্মদ উল্লাহর (পরবর্তীকালে স্বল্পকালীন রাষ্ট্রপতি) তিনবার অনুরােধের পর মন্ত্রী খন্দকার মােশতাক বিরােধী দলের এক সদস্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হন। তিনি অর্ধেক দাঁড়িয়ে, অনিচ্ছভাবে বলেন যে তার আরও সময়ের দরকার। স্বাধীনতা ঘােষণা সম্বন্ধে আমার হাইপােথিসিস হলাে যে; বঙ্গবন্ধুর নামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সে সময় আমি চট্টগ্রামে ছিলাম এবং অনেক ঘটনা কাছ থেকে দেখার ও জানার সুযােগ আমার হয়। বেলাল মােহাম্মদ ছিলেন চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী। তিনি ‘৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় হৃদয়গ্রাহী কথিকা পাঠ করে অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দেশপ্রেমিক। তিনি, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ এবং আরও কজন ইঞ্জিনিয়ার চট্টগ্রামের কালুরঘাটে। ২৬ মার্চ ১৯৭১ এক কিলােওয়াটের রেডিও স্টেশন স্থাপন করেন। সেখান থেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আব্দুল হান্নান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। ২৫ মার্চ গত ২৬ শে মার্চের শুরুতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। তারপর ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার হতে আব্দুল হান্নান স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। ২য় বার কালুরঘাট ট্রান্সমিটার হতে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। বেলাল মােহাম্মদ চট্টগ্রামের পটিয়া অঞ্চল হতে মেজর জিয়াকে কালুর ঘাটে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য একজন সিনিয়র মিলিটারি অফিসারকে দিয়ে স্বাধীনতা ঘােষণা করা।
বেলাল মােহাম্মদের অনুরােধে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট ট্রান্সমিটার হতে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ, একারণেই যে ঐ দিনেই প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষিত হয়। (লেখক)। এই দেশপ্রেমিকেরা নিজেরাই বঙ্গবন্ধুর নাম দিয়ে ওয়্যারলেসে বিভিন্ন স্থানে মেসেজ পাঠান। ফোনেও তারা নিজেদের গ্রুপের মধ্যে একই বার্তা বিনিময় করেন। আর একটা ব্যাপার হলাে বেলাল মােহাম্মদরা জানতে পারেন যে কয়েকজন বাঙালি আর্মি অফিসার কালুরঘাট থেকে কয়েক মাইল দূরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা ২৭ মার্চ সেখানে গিয়ে ওই অফিসারদের বেতার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে সিনিয়র অফিসার হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণার জন্য বাংলায় লেখা একটি বিবৃতি দিয়ে সেটি পাঠ করতে বলেন। জিয়া বিবৃতিটি পড়ে নিজে কাগজ কলম নিয়ে ইংরেজিতে একটি বিবৃতি তৈরি করেন এবং সেটি পাঠ করে শােনান। সেই ইংরেজি বিবৃতিতে তিনি নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা করেন, যা আমি চাটগা থাকাকালীন নিজ কানে শুনি। আধঘণ্টা পর তিনি আরেকটি সংশােধিত ঘােষণা পাঠ করে শােনান। তাতে তিনি নিজেকে আর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেননি, শুধু বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। পরবর্তী সময়ে আমি সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের বরাতে শুনেছি যে জিয়া নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘােষণা করায় উপস্থিতদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তাদের প্রতিবাদের মুখে জিয়া নিজের ওই রাষ্ট্রপতিত্বের দাবি বাদ দিয়ে সংশােধিত ঘােষণা পাঠ করতে বাধ্য হন। আমার মতে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকেই স্বাধীনতার ঘােষণা হিসেবে ধরা যেতে পারে। 
দেশ যখন স্বাধীন হলাে তখন সবকিছু বিধ্বস্ত ছিল। ব্রিজ, ফ্যাক্টরি, রাস্তাঘাট সবই বিনষ্ট ছিল। খরা, বন্যা লেগে ছিল। তারপর ‘৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী সকল পণ্যের দাম বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়। সে সময় বিশ্বের সর্বত্র তীব্র খাদ্যসংকট ছিল, ফলে মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও প্রচণ্ড খাদ্যসংকট দেখা দেয়। কিন্তু ওই সংকট ও অন্যান্য দ্রব্যের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকার দায়ী ছিল না। কারণ যুদ্ধের ফলে দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে চলে গিয়েছিল। পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা লাখ লাখ ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে দিয়েছিল। পর পর দুটি শস্য মৌসুমে আবাদের সুযােগ পায়নি মানুষ। তা ছাড়া যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানিরা কলকারখানা, ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি ধ্বংস করে দিয়েছিল। ফলে দেশের সার্বিক অবস্থা একটা প্রচণ্ড বিপর্যয়ের কবলে নিপতিত হয়েছিল। দেশের মানুষ এসব দেখেছে এবং বুঝতে পেরেছে। তাই তারা কষ্ট সহ্য করতে রাজি ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব ছিল না। মিরাকল ঘটানােও সম্ভব ছিল না। সে হিসেবে সরকার ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু জনগণ যখন দেখল যে অনেক আওয়ামী লীগার রাতারাতি ধনী বনে যাচ্ছে, সব সুবিধা নিচ্ছে এবং আপামর জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে তাতে করে সরকারের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নামে। এ ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা হতে ফেনীর জয়নাল হাজারীর ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
হাজারী মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন বটে, কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর তিনি অধিকাংশ অস্ত্র সমর্পণ করেননি, সন্ত্রাস করেছেন এবং অনেক লুটপাট করেছেন। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যাপক অভিযােগ ছিল। তিনি অবৈধভাবে ফেনীর দুটি আবাসিক হােটেল দখল করেন। জেলখানার পাশে কলেজ রােডের ওপর ওই হােটেল দুটি ছিল। একটির নাম হােটেল ডিনােফা, অন্যটির নাম মনে নেই। হাজারী একটি হােটলে তার হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন এবং অন্য হােটেলকে জেলখানা ও টর্চার চেম্বার করে পাকিস্তানপন্থীদের ওপর নির্যাতন চালান। তাদের স্বজনদের কাছ থেকে অনেক অর্থ আদায় করতেন। ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি খাজা আহমেদ (তিনি ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় মুক্তিসংগ্রামের একজন বীর সেনানী ছিলেন এবং কিছুকাল নৈনিতাল জেলে জওহরলাল নেহেরুর পাশের সেলে বন্দী ছিলেন)। তিনি হাজারীর অত্যাচার হতে পাকিস্তানি দালালদের বাঁচানাের এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের সরকারি জেলে পাঠিয়ে দেন। জয়নাল হাজারীর অত্যাচার এতই বৃদ্ধি পায় যে বঙ্গবন্ধুর সরকার তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনী পাঠাতে বাধ্য হয়। একদিন পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে হাজারীর সশস্ত্র বাহিনীর কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। হাজারীর ওই দখল করা হােটেল থেকেই পুলিশ বাহিনী তাকে আটক করে। পরে তিনি উচ্চ কানেকশনের বলে ছাড়া পান। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মনি পল্টন ময়দানে যুবলীগের বিশাল এক সমাবেশ করেন। সেই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি ছিলেন। সেদিন হাজারীর হাত দিয়ে শেখ মনি বঙ্গবন্ধুকে হরিণ উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এতে ফেনী এলাকার জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। এর কয়েক দিন পর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার সঙ্গে এ নিয়ে শেখ মনির প্রচণ্ড তর্ক হয়। আমি মনিকে বলেছিলাম যে তিনি হাজারীর মতাে সন্ত্রাসীর হাত দিয়ে শেখ সাহেবকে হরিণ উপহার দিয়ে ঠিক কাজ করেননি। আমার সহকর্মী সাংবাদিক সৈয়দ নাজিম উদ্দিন মানিক (প্রয়াত) আমাকে সমানে চিমটি কাটছিলেন যাতে মনির সঙ্গে তর্কে ক্ষান্ত দেই। সেদিন মনি আমাকে বলেছিলেন যে জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে সব অভিযােগ অপপ্রচারণা। তিনি আরও বলেছিলেন, যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের অস্ত্রের প্রতি আকর্ষণ থাকবেই। অস্ত্র তারা নিজেদের কাছে রাখলেও সেটা অপরাধের পর্যায়ের পড়ে না। যারা সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেয়নি, তাদের পক্ষে এসব বােঝা মুশকিল।
আরেকটি ঘটনা। ১৯৭৩ বা ‘৭৪ সালের কথা। বাংলা একাডেমীতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমানের স্মরণসভার আয়ােজন করেন তাঁর আত্মীয় অধ্যাপক আলাউদ্দীন আল-আজাদ। তৎকালীন বিমানমন্ত্রী জেনারেল ওসমানী ছিলেন প্রধান অতিথি । তার উপস্থিতিতেই একজন সার্ভিং আর্মি অফিসার বললেন যে মতিউর বেঁচে থাকলে আজ তিনি ‘৭১ এর মতােই যুদ্ধবিমান নিয়ে বিদ্রোহ করতেন। তিনি সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতার সমালােচনা করে এ কথা বলেছিলেন। ওসমানী কোনাে প্রতিবাদ করলেন না। আমি সেই মিটিং কভার করেছিলাম।
২১ অক্টোবর, ২০০১ লেখকের ডায়েরি থেকে। (ডায়েরির অধিকাংশই ইংরেজিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সঙ্গতি রাখার জন্য ইংরেজিতে লেখা ঘটনা ও তথ্যাবলি বাংলা অনুবাদ করা হলাে। কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ অনুবাদ ব্যতীত ব্যবহার করা হলাে।)
মুজিব হত্যা সম্পর্কে তথ্য ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি-এনার তৎকালীন সাংবাদিক ও নিউইয়র্কের বাংলা সাপ্তাহিক প্রবাসীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সৈয়দ মােহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে কথা হলাে। মােহাম্মদ উল্লাহ ভাই আমার জানামতে অত্যন্ত সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেছেন। তার কাছ থেকে কতগুলাে তথ্য পেলাম যা লিখে রাখলাম ভবিষ্যতের জন্য। (নিম্নে উল্লিখিত ৪ ও ৫ নম্বর-এ মােহাম্মদ উল্লাহ সাহেব আরও কিছু তথ্য যােগ করেছেন)।
মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রধান ব্যক্তিবর্গের কার্যকলাপ
১) ১৯৭৪ বা ‘৭৫ সালে খন্দকার মােশতাক তার তেহরান সফরের সময় চীনের উপ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক অনির্ধারিত মিটিং করেন।
২) মােশতাকের ডান হাত বলে পরিচিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দীন ঠাকুর দুই সপ্তাহ ধরে ভারত সফর করেন। তাকে ভারতের তথ্যমন্ত্রী (পূর্ণ মন্ত্রী) অভ্যর্থনা জানান যা প্রােটোকলের বাইরে।
৩) যখন লাহাের কনফারেন্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুকে সেখানে যােগদানে রাজি করাতে আসেন তখন প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দীন ঠাকুর তাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
৪) মােহাম্মদ উল্লাহ ভাই আরও জানান “পূর্ব এশিয়ায় নিউজ উইকের ব্যুরাে চিফ আর্নল্ড জেটলিন, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর কোলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এ সময় একদিন তিনি আমাদের এনার কার্যালয়ে এসেছিলেন। আমাদের এক্সিকিউটিভ এডিটর হাসান সাঈদের টেবিলের ওপর বসে সামনের একটি চেয়ারে পা রেখে (অনেক পশ্চিমা তৃতীয় বিশ্বের লােকদের সঙ্গে আচরণে এখনাে যে ধৃষ্ঠতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।- সাক্ষাকারদাতার উক্তি) আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হাসান সাঈদ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তােমরা কি আগে থেকে এসব ব্যাপারে কোনাে কিছু জানতে না বা আঁচ করতে পারােনি? উত্তরে তিনি জানান যে ম্যানিলায় তিনি বেনজির ভুট্টোর চাচা মমতাজ আলী ভুট্টোর সঙ্গে ডিনার করেছিলেন। সে সময় তাঁর কাছে একটি ফোন আসে এবং তাঁকে জানানাে হয় যে মুজিব নিহত হয়েছেন। তিনি এই তথ্যটি মমতাজ ভুট্টোকে জানান। তখন ভুট্টো স্মিত হাসি হাসেন [knowing smile] কিন্তু কিছুই বলেননি। তাতে ধারণা করা যেতে পারে-এ বিষয়ে তারা আগে থেকে কিছু জানত।
৫) জেটলিন আরেক ঘটনা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, মাস দেড়েক আগে আমি ঢাকা এসেছিলাম। বিমানবন্দর থেকে আমি সােজা তােমাদের সচিবালয়ে খন্দকার মােশতাকের অফিসে যাই। কিছুক্ষণ সেখানে কথা বলার পর তিনি আমাকে তার গাড়িতে করে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে আমরা বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলি এবং খাওয়াদাওয়া করি। এরপর ওইদিনই সন্ধ্যায় আমি ঢাকা থেকে কোলকাতা চলে যাই। হাসান সাঈদ তার এই দুই বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেও জেটলিন আর কিছু বলতে রাজি হননি। ব্যক্তিগত, টেলিফোন ও ভিডিও সাক্ষাৎকার ১১ নভেম্বর ও ৩০ নভেম্বর, ২০০৯ এবং ১২ জানুয়ারি ২০১০ ওয়াশিংটন-নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
তথ্যসূত্র
১) বেলাল মােহাম্মদ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ঢাকা : অনুপম প্রকাশনী, ১৯৯৩ সংস্করণ, পৃ. ৩৩-৩৪, ৪০
২) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড: মইনুল ইসলামের সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বললে (৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪) তিনিও অনুরূপ মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন সে ২৭ মার্চ, ১৯৭১ মেজর জিয়াউর রহমানের প্রথম ঘােষণাটি যাতে তিনি নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন, তা চট্টগ্রাম থেকে তিনি শােনেন। তিনি আরও জানান যে, তারপর সেই সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত, ড: মমতাজউদ্দীন (নাট্যকার) বেলাল মােহাম্মদ প্রমুখের প্রতিবাদের মুখে মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর নামে ঐ সন্ধ্যাতেই আবার স্বাধীনতা ঘােষণা করেন।
৩) কালুর ঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি বেলাল মােহাম্মদ পূর্বে উল্লেখিত বইয়ে (পু, ৪০, ৪৪-৪৫) উল্লেখ করেন যে ২৭ মার্চ মেজর জিয়া নিজের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণার কথাটি লিখেছিলেন। পরে বেলাল মােহাম্মদের অনুরােধে তিনি নিজের নামের শেষে বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করে, তার নামে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। ২৮ মার্চ তিনি নতুন একটি লিখিত ঘােষণা নিয়ে এসেছিলেন যাতে তিনি নিজেকে Provisional Head of Bangladesh ও স্বাধীন বাংলা লিবারেশন আর্মির প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এই দ্বিতীয় ঘােষণায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে অনুল্লেখিত থাকে যা ছিল শ্রোতাদের কাছে আপত্তিকর। ঐ আপত্তির কারণে, মেজর জিয়া তৃতীয় ঘােষণায় মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নাম বারবার উল্লেখ করেন। সৈয়দ মােহাম্মদ উল্লাহ এবং ড: মইনুল ইসলাম উল্লেখ করেন যে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় তারা মেজর জিয়াউর রহমানের প্রথম ঘােষণাটি শােনেন, যাতে তিনি নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করেন। বেলাল মােহাম্মদ এ প্রসঙ্গে তার বইতে ২৮ মার্চ উল্লেখ করেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ- নেতা ও পিতা – শারমিন আহমদ