You dont have javascript enabled! Please enable it!
নথিভুক্তির জন্য স্মারক
বিষয়
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ওপরে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা; ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ১. এনএসসি ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা ৮ ডিসেম্বর সােমবার ১১:০০টায় হােয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ড. কিসিঞ্জার । ২. অংশগ্রহণকারী সদস্যবৃন্দ ক. প্রধান ড. হেনরি কিসিঞ্জার; মি. রিচার্ড হেমস, সিআইএ; জেনারেল জন রায়ান (John Ryan), জেসিএস; মি. ডােনাল্ড ম্যাকডােনাল্ড, এআইডি; মি. ডেভিড প্যাকার্ড, ডিফেন্স; রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সিস জনসন, স্টেট। খ. অন্যান্য; মি. মরিস উইলিয়াস, এআইডি; মি. জন ওয়াল্টার, সিআইএ; কর্নেল রিচার্ড কেনেডি, এনএসসি; মি, স্যামুয়েল হােসকানসন, এনএসসি; মি. হ্যারল্ড সন্ডার্স, এনএসসি; মি, আরমিস্টেড সেলডেন, ডিফেন্স; মি. জেমস নয়েস, ডিফেন্স; মি. ক্রিস্টোফার ফন হােলেন, স্টেট; মি. স্যামুয়েল ডি পালমা, স্টেট; মি. ব্রুস ল্যানিজন, স্টেট; মি. ডেভিড শাইডার, স্টেট; মি. জোসেফ সিসকো, স্টেট; রিয়ার অ্যাডমিরাল রবার্ট ওয়েল্যানডার, ওজেসিএস; ক্যাপ্টেন হাওয়ার্ড কে, ওজেসিএস। সারসংক্ষেপ; ড. কিসিঞ্জার মত প্রকাশ করেন যে, পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানি সেনা ও বিমানবাহিনী ধ্বংসের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানকে নির্বীর্য করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি অনুরোধ করেন, পাকিস্তানকে সাহায্য করার জর্ডানি সম্ভাবনার বিষয়টি যাতে নাকচ না করে আপাতত স্থগিত রাখা হয়। কাশ্মিরে অবস্থিত পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর শক্তি নিরূপণ করতেও তিনি অনুরােধ করেন। বর্তমান পরিস্থিতির ওপরে সংক্ষিপ্ত আলােকপাত করে মি. হেমস সভার কাজ শুরু করেন। পূর্ব অঞ্চলে ভারতীয়রা কুমিল্লার প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছে। ঢাকা আর ভারতীয়দের মধ্যে এখন শুধু বড় নদীর বাধা অবশিষ্ট আছে। সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে ভারতীয়রা দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।
পূর্ব অঞ্চলে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি যােগাযােগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে। পশ্চিমে পাকিস্তানিরা সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকা পুনছ (Poonch) দখল করেছে বলে দাবি করছে। পাকিস্তানিরা অবশ্য যুদ্ধে তাদের। যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। সিন্দ/রাজস্থান (Sind/Rajsthan) অঞ্চলে ট্যাঙ্কযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মিসেস গান্ধী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের আহ্বানে কর্ণপাত করার আগে আজাদ কাশ্মিরের দক্ষিণ সীমান্ত অঞ্চল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে চান। জানা গেছে যে, সংঘাত বন্ধ করার আগে মিসেস গান্ধী। পাকিস্তানি সেনা ও বিমানবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করবেন। এখন পর্যন্ত ভারত ও ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা বিশ্বাস করা কঠিন নয় যে, পাকিস্তানিদের সাথে সম্পর্ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই কারণে স্বীকৃতি দানের বিষয়টি সােভিয়েতরা স্থগিত রেখেছে। অল্পদিনের মধ্যেই সােভিয়েতরা অবশ্য স্বীকৃতি দানের জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। পাকিস্তানিরা আর কতদিন পূর্ব পাকিস্তানে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে, সে ব্যাপারে মি. সিসকো প্রশ্ন করেন। জবাবে মি. হেমস বলেন যে, বড়জোর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা। প্রকৃতপক্ষে নির্ভর করে নদীগুলাে অতিক্রম করতে ভারতীয়দের কতটা সময় ব্যয় হবে, তার ওপরে।  ৬. পশ্চিমের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জেনারেল রায়ান বলেন যে, ভারতীয়রা খুব বেশি চেষ্টা করছে বলে তার মনে হয় না, বরং তারা অনেক বেশি মনােনিবেশ করছে নিজেদের।
অবস্থান সুসংহত করার কাজে। ৭. ড, কিসিঞ্জার জানতে চান যে, পূর্ব থেকে পশ্চিম অংশে সৈন্য স্থানান্তর করতে ভারতীয়দের কতটা সময়ের প্রয়ােজন। জেনারেল রায়ান বলেন, এতে বেশ দীর্ঘ সময়ের প্রয়ােজন হবে। কিন্তু বিমানবাহিত ব্রিগেডগুলাে তাড়াতাড়িই স্থানান্তর করা সম্ভব, আনুমানিক পাঁচ অথবা ছয় দিনের মধ্যে । শরণার্থীদের সাহায্য সম্পর্কে ড. কিসিঞ্জার জানতে চান। মি. উইলিয়ামসের সাথে আলােচনার পর নির্ণয় করা হয় যে, প্রদত্ত মার্কিন সাহায্যের ক্ষুদ্র একটি অংশ। শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়, বাদবাকি অংশ ভারতের অর্থনীতির সাথে মিশে যায় । এক কথায়, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই সামগ্রিক ত্রাণ কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত আছে। ৯. এর পরে ৬, ৫.সিঞ্জার গুরুত্ব আরােপ করে বলে যে, হােয়াইট হাউসের অনুমােদন ছাড়া ভারতকে ২৩ আর কোনো বৈদেশিক মুদ্রা, পিএল-৪৮০ ১ ১ অথবা উন্নয়ন ঋণ বরাদ্দ না কর হ, সে ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন। মি. উইলিয়ামস আশ্বস্ত করেন যে, কোনাে কিছু ফসকে যাবার আশঙ্কা নেই।
১০. ড. কিসিঞ্জার জানতে চান, এর পরের প্যাচ কী হবে। মি. উইলিয়ামস বলেন, এখন একমাত্র বিকল্প হল বর্তমানে চুক্তিবদ্ধ সাহায্যসামগ্রীর ব্যাপারে নতুন অবস্থান গ্রহণ করা। ব্যাপারটি অবশ্য খুবই জটিল আকার ধারণ করবে, কারণ এর সাথে অপ্রত্যাহারযােগ্য ঋণপত্র সংশ্লিষ্ট। মি, উইলিয়ামস আরাে বলেন, মার্কিনী ঠিকাদাররা ভারতে যেসব সামগ্রী পাঠাচ্ছে, আমাদেরকে সেসব দখল করতে হবে এবং এভাবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে সেসব ঠিকাদারের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। | ১১. মি. প্যাকার্ড বলেন, এর সব কিছুই করা সম্ভব, কিন্তু সেইসাথে এটাও স্বীকার করেন যে, কাজটি অত্যন্ত কঠিন ও পরিশ্রমসাপেক্ষ। বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সমস্ত পণ্যসামগ্রীর তালিকা বের করতে হবে, এর পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এর মালিকানা গ্রহণ করতে হবে, সরবরাহকারীদের সাথে নিষ্পত্তি করতে হবে, সংরক্ষণাগার খুঁজে বের করতে হবে, ইত্যাদি। তা সত্ত্বেও এটাই যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে সেটা করা সম্ভব। মি. উইলিয়াস বলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে সীমিত আকারে এ ধরনের ব্যবস্থা এর আগে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু দাবি নিষ্পত্তিতে শেষ পর্যন্ত কয়েক বছর লেগে যায়। ১২. ড. কিসিঞ্জার জানতে চান, ভারত পরবর্তী বছরের উন্নয়ন ঋণ কার্যক্রমের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। জবাবে মি. উইলিয়ামস বলেন, বর্তমানে এ বিষয়ে কোনাে আলােচনা চলছে না।
১৩, ড. কিসিঞ্জার পরবর্তী বছরের (এআইডি) বাজেট সম্পর্কে জানতে চান। মি, উইলিয়াস বলেন, বাজেটে যা আছে, সেখানে কোনাে প্রতিশ্রুতি নেই। ড. কিসিঞ্জার বলেন, বর্তমান নির্দেশ হল এই যে, বাজেটে ভারতের জন্য কোনাে এআইডি রাখা চলবে না। যে বাজেটে এআইডি ভারতের জন্য অর্থ বরাদ্দ রেখেছে, সেটা ফাস করা যাবে না। হােয়াইট হাউস এটা সরিয়ে ফেলবে। ১৪. ড. কিসিঞ্জার মত প্রকাশ করেন যে, ভারতীয়রা যদি পাকিস্তানিদের দিকে মনােযােগ দেয়, তাহলে আজাদ কাশ্মিরই হবে প্রধান ইস্যু। ভারতীরা যদি ধ্বংস করে ফেলে, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, ভারত পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের বিমান ও সশস্ত্রবাহিনীর ধ্বংস পাকিস্তানকে প্রতিরক্ষাবিহীন করে ফেলবে এবং এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তান একটি পােষ্য রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই আশঙ্কা থেকে কয়েকটি প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে। আমরা যখন একটি অবরােধে অংশ নিচ্ছি, সেই অবস্থায় আমরা কি ঘটনার সাথে মার্কিনী মিত্রবাহিনীর পুরােপুরি সম্পৃক্ত হওয়া অনুমােদন করব? আমরা কি আমাদেরকে ভয় দেখাতে ভারতীয়দের অনুমােদন করব এই বিশ্বাসে যে, যদি মার্কিনী রসদ প্রয়ােজন হয় তাহলে সেটা দেয়া হবে না? ১৫. মি. সিসকো বলেন, ড, কিসিঞ্জার তখন যা বললেন, ঘটনা যদি সে রকম রূপ ধারণ।
করে, তাহলে তাে পশ্চিম পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। ভারতীয়দের আদৌ এ ধরনের কোনাে উদ্দেশ্য আছে কি না, সে ব্যাপারে মি. সিসকো অবশ্য সন্দেহ পােষণ। করেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিং রাষ্ট্রদূত কিটিংকে বলেছেন, পাকিস্তানি এলাকা দখল করা ভারতের উদ্দেশ্য নয়। মি. সিসকো বলেন, এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কাশির একটি বিতর্কিত এলাকা। ১৬. মি. হেমস এর পরে বলেন, এর আগে তিনি বলতে ভুলে গিয়েছিলেন যে, চীন প্রসঙ্গে শ্রীমতি গান্ধী আশা প্রকাশ করেন যে, পশ্চিমে কোনাে চীনা হস্তক্ষেপ ঘটবে না। চীনারা লাদাখে অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু করতে পারে বলে সােভিয়েতরা তাকে সতর্ক করেছিল। বলে তিনি বলেন। কিন্তু এ ধরনের কিছু ঘটলে সেক্ষেত্রে সােভিয়েতরা উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। মি. হেস বলেন যে, বর্তমানে কোথাও কোনাে চীনা সমাবেশ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা অগ্রসর হয়ে হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। ১৭, এর পরে প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য প্রদান সম্পর্কে ড. কিসিঞ্জার।
জানতে চান। পাকিস্তানকে এফ-১০৪ দেয়ার ব্যাপারে বাদশাহ হােসেনের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে ড, কিসিঞ্জার প্রশ্ন করেন, এই বিষয়টি প্রেসিডেন্ট বিবেচনা করা পর্যন্ত কীভাবে আমরা জর্ডানকে হাতে রাখতে পারি। ড. কিসিঞ্জার আরাে জানতে চান যে, পশ্চিম পাকিস্তানের ওপরে যে কোনাে বড় ধরনের আক্রমণ হলে এই দেশ বিষয়টি যে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে, এটা ভারত ও গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেয়া উচিত কি না। ১৮, মি, প্যাকার্ড ব্যাখ্যা করেন যে, মার্কিন সরকার যা করতে পারেনি, সেটা করার জন্য আমরা জর্ডানিদেরকে অধিকার দিতে পারি না। মার্কিন সরকার যদি পাকিস্তানকে ১০৪গুলাে দিতে না পারে, সেক্ষেত্রে জর্ডানকেও এটা করার অধিকার আমাদের না দেয়াই উচিত। এমন যদি হত যে, তৃতীয় একটি দেশের কাছে এমন কোনাে জিনিস আছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই, তাহলে সেটা আলাদা কথা। কিন্তু ১০৪ হস্তান্তরের জন্য জর্ডানকে আমরা অনুমােদন দিতে পারি না, যদি না আমরা দেখি যে, আমাদের কাছ থেকে সেগুলাে কেনার মতাে যােগ্যতা পাকিস্তানের আছে। ১৯, ড, কিসিঞ্জার বলেন, আমরা যদি পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ না করতাম, তাহলে এই সমস্যা তৈরি হত না। মি. প্যাকার্ড একমত পােষণ করেন। ২০, ড. কিসিঞ্জার বলেন, আমরা যখন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করি, তখন আমরা বুঝতে পারিনি, বিপদটি আসলে কেমন। ২১. মি. প্যাকার্ড বলেন যে, পাকিস্তানকে জর্ডান এগুলাে হস্তান্তর করলে সেসব প্রতিস্থাপিত করার বিষয়টি সম্ভবত বিবেচনা করা যেতে পারে। রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন, আমাদের আর কোনাে সামরিক সহায়তা কার্যক্রম নেই ।
২২. ড. কিসিঞ্জার বলেন, যে জিনিসটি আমাদেরকে দেখতে হতে পারে, তা হল এমন এক পরিস্থিতি যেখানে সােভিয়েত সাহায্যপুষ্ট একটি দেশ পাকিস্তানের অর্ধেককে নির্বীর্য করে। রাখবে এবং বাকি অর্ধেককে ক্রীতদাসে পরিণত করবে। আমাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে অন্যান্য রাষ্ট্র কী ভাববে, সেটা অবশ্যই আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে। ২৩. মি. হেস পাকিস্তানের সাথে আমাদের সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন – সেন্টো (Central Treaty Organization – CENTO) সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন যে, সেন্টোর প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের কাছে আমাদের কোনাে আইনগত দায়বদ্ধতা নেই। ড, কিসিঞ্জার এতে একমত পােষণ করলেও উল্লেখ করেন যে, ১৯৬২ সালে ভারতের সাথে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানেও আমাদের কোনাে আইনগত দায়বদ্ধতা নেই। বিশ্বের বৃহত্তর ঘটনাপঞ্জির প্রেক্ষিতে বর্তমান সমস্যার প্রভাব কীভাবে পড়বে, সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। ২৪. ড, কিসিঞ্জার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া নিশ্চয়তা ও অন্যান্য অঞ্চলে
তার প্রভাবের আলােকে বর্তমান সমস্যাটি আমাদের অবশ্যই যাচাই করে দেখা প্রয়ােজন। সামরিক সরবরাহ পরিস্থিতিও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি যুক্তি দেখান, যে কেউ বলতে পারে যে, বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করছি, তবে তা কমপক্ষে দুই সপ্তাহ দেরিতে।
২৫. মি. প্যাকার্ড বলেন, একমাত্র যে সমাধানটি এখন আমাদের পক্ষে গ্রহণীয়, তা সম্ভবত এই যে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে এই আশায়। আমাদের যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ২৬. রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন, পাকিস্তানকে বাড়তি কোনাে সামরিক সাহায্য দিলে তার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া আমাদের অবশ্যই যাচাই করে দেখা উচিত। এমনও হতে পারে যে, পশ্চিম অঞ্চলে সত্যিকারের লড়াই শুরু হলে আটটি এফ-১০৪ তেমন কোনাে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে না। এগুলােকে শুধু নমুনা হিসেবে দেখা যেতে পারে । আমাদেরকে প্রকৃতই যদি পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হতে হয়, তাহলে নতুন এক খেলায় আমরা যােগ দেবাে। রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিংকে একটা জবাব দেয়া যেতে পারে যেখানে ভারতীয় প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে পারি যে, এলাকা দখলের। জন্য তাদের কোনাে পরিকল্পনা নেই। তিনি আরাে বলেন, পাকিস্তানিরা নিজেরাই যে কাশ্মির দখলের চেষ্টা করছে, সেটাও আমাদের বিবেচনায় আনা উচিত। পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলােচনা করে মি. প্যাকার্ড বলেন, এই মুহূর্তে অতি-প্রয়ােজনীয় বিবেচ্য বিষয় হল, হয় কার্যকর কিছু করতে হবে, নতুবা কিছুই করা উচিত না’। জয়লাভের সম্ভাবনা যদি এতে না থাকে, তাহলে এতে সংশ্লিষ্ট হবার প্রয়ােজন নেই।
আমরা যদি কিছু করার চেষ্টা করি, তাহলে এটাই নিশ্চিত করতে হবে যে, ফলাফলের ওপরে এর প্রভাব পড়বে। আমরা যদি জানি যে, আমরা হারব, তাহলে এর মধ্যে না জড়ানােই ভাল। ২৯, মি, উইলিয়ামস বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতির দিকে আমাদের এখন মনােসংযােগ করা উচিত। রাষ্ট্রদূত জনসন কলেন, এতে অবশ্য পাকিস্তানিরা কাশ্মিরের দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রাখবে। ৩০, ড. কিসিঞ্জার কাশ্মিরে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্ষমতা ও সম্ভাবনা যাচাই করতে বলেন।
শ্রীমতি গান্ধীর সাম্প্রতিক কার্যকলাপের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সিআইএ-কে তিনি রিপাের্ট তৈরি করতে বলেন। তিনি বলেন যে, সামরিক সাহায্য দানের প্রশ্নে আমাদের প্রাথমিক একটি অবস্থান তৈরি করা উচিত। তিনি পুনরাবৃত্তি করেন, তিনি চান যে, পাকিস্তানকে সহায়তার প্রশ্নে হােসেনকে নিরস্ত না করে বরং অপেক্ষমাণ অবস্থায় রাখা হােক। মার্কিন সরকারের উচিত অবিলম্বে হােসেনকে জানানাে যে, এ বিষয়ে তার। অনুভূতিকে আমরা কখনাে তুচ্ছ করে দেখি না। অবরােধ প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই অবরােধ আরােপ করেছে, যদিও পাকিস্তানের আরােপ করা অবরােধটি পুরােপুরিই কাগুজে। ড. কিসিঞ্জার বলেন, পাকিস্তানিদেরকেও আমাদের প্রতিবাদ জানানাে উচিত। রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন, অবরােধের প্রতিবাদ করার কোনাে আইনগত ভিত্তি আমাদের নেই। যুদ্ধ চলা অবস্থায় এ ধরনের অবরােধ আরােপের অধিকার বিবদমান দেশগুলাের থাকে। এটাকে আমরা অদূরদর্শিতা বলতে পারি এবং প্রশ্ন তুলতে পারি, কীভাবে এটা করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা স্বাভাবিকভাবে আমাদের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছি। অন্যদিকে এস এস বাকআই স্টেট (S S Buckey State)-এর ঘটনার প্রতিবাদ জানানােতেও আমাদের কোনাে সমস্যা।
৩২. ড, কিসিঞ্জার বলেন, আমরা নিরপেক্ষ হবার চেষ্টা করছি না। প্রেসিডেন্ট কী চান, সেটা নিয়ে কোনাে সংশয় থাকার কথা নয়। প্রেসিডেন্ট নিরপেক্ষ হতে চান না। প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করেন যে, ভারত আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ভারত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে, সেটাই আমরা ভুলে যাবার চেষ্টা করছি । ড. কিসিঞ্জার বলেন, ভারতকে আমরা স্বস্তিতে থাকতে দিতে পারি না। এই ‘মহিলা’ অত্যন্ত। নিরাবেগ ও কঠোর; শুধু শক্রতার বশবর্তী হয়ে তিনি সােভিয়েতদের উপগ্রহে পরিণত হবেন না। তাকে আমাদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়া উচিত নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে দ্বিমত পােষণ করেন, এমন যে কোনাে কাউকে তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে আলােচনার আমন্ত্রণ জানান। তিনি জানান যে, রাষ্ট্রদূত কিটিং তাঁর নিজের দিক থেকে পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
৩৩. পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক বিবাদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করে ড. কিসিঞ্জার জানতে জান যে, কখন এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটছে, সে সম্পর্কে কারাে পক্ষে কিছু জানা সম্ভব কি না। মি, হেমূস বলেন, খুব শিগগির আমরা কিছু জানতে না পারলেও ঘটনা ঘটার পর আমরা নিশ্চয়ই জানতে পারব। ৩৪. বেলা ১২:১০ মিনিটে সভা মুলতবি ঘােষণা করা হয়। স্বাক্ষর/ এইচ এন কে এইচ এন কে ক্যাপ্টেন, ইউএসএন সাউথ এশিয়া/এমএপি ব্রাঞ্চ, জে৫ এক্সটেশন ৭২৪০০
 সূত্র: প্রাগুক্ত
টীকা: এতে ব্যবহৃত পরিভাষা আইএসএ: ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স অভ ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট আজাদ কাশ্মির: মুক্ত কাশ্মির, কাশ্মিরের পাকিস্তান অধিকৃত অংশের নাম আর অ্যান্ড সি ফাইলস: রেকর্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল ফাইন্স ইউএসজি: ইউনাইটেড স্টেটস গভর্নমেন্ট এআইডি: এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট | এএসডি (আইএসএ): অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অত্ ডিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি
অ্যাফেয়ার্স এনইএ: নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্স, সেকশন অভ স্টেট ডিপার্টমেন্ট এনইএসএ: নিয়ার ইস্ট অ্যান্ড সাউথ এশিয়া এনএসসি: ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এফ-১০৪: স্টারফাইটার জেট এয়ারক্র্যাফট এমএপি: মিলিটারি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রােগ্রাম এলওসি: লাইন অ কমিউনিকেশন এস এস বাকআই স্টেট পাকিস্তানি বন্দরে বােমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন জাহাজ ওজেসিএস: অফিস অড় জয়েন্ট চিফস অভ স্টাফ জেসিএস: জয়েন্ট চিফস অভ স্টাফ ডাব্লিউএসএজি: ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের শাখা ডিএএসডি, এনইএএসএ অ্যান্ড পিপিএনএসসিএ: ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অত্ ডিফেন্স, নিয়ার ইস্টার্ন, আফ্রিকান অ্যান্ড সাউথ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স; ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অভ ডিফেন্স, পলিসি প্ল্যান্স অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল অ্যাফেয়ার্স ডেপ, ডির., এনএসসিসি অ্যান্ড পিপিএনএসসিএ: ডেপুটি ডিরেক্টর, পলিসি প্ল্যান্স অ্যান্ড।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল অ্যাফেয়ার্স ডেপসেকডেফ: ডেপুটি সেক্রেটারি অড় ডিফেন্স পা: পাকিস্তানি । পিএল: পাবলিক ল পিএল৪৮০: পাবলিক ল ৪৮০, সাহায্য হিসেবে বিদেশে প্রেরিত সরকারি উদ্বৃত্ত পিওএল: পেট্রোলিয়াম, অয়েল অ্যান্ড লুব্রিক্যান্টস পিডিএএসডি (আইএসএ): প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অত্ ডিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স সিআইএ: সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি সিজেসিএস: চেয়ারম্যান, জয়েন্ট চিফস অভ স্টাফ সেকডেফ: সেক্রেটারি অ ডিফেন্স। সেন্টো: সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন
(ঙ) ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ প্রকাশিত মি. জ্যাক অ্যান্ডারসনের রচনা হােয়াইট হাউসের গােপন দলিলে বঙ্গোপসাগর ও গালফ অফ টনকিন (Gulf of Tonkin)এর মধ্যেকার বেশ কিছু অশুভ মিল লক্ষ করা যায়। ৪ আগস্ট ১৯৬৪-তে সংঘটিত গালফ অত্ টনকিনের ঘটনা ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকাকে পুরােপুরি জড়িয়ে ফেলে।
মার্কিন জনসাধারণকে বলা হয় যে, উত্তর ভিয়েতনামের টর্পেডাে বােট বিনা উস্কানিতে মার্কিন ডেস্ট্রয়ারের ওপরে আঘাত হানে, যদিও পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে, আক্রমণের জন্য উস্কানি দেয়া হয়েছিল। বঙ্গোপসাগরে সংঘটিত একই ধরনের ঘটনা স্টেট ডিপার্টমেন্টে এমন এক গভীর আশঙ্কার জন্ম দেয় যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের তীব্রতার মতাে সােভিয়েত টাস্ক ফোর্সের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র তার টাস্ক ফোর্স পাঠায়।
৭ ডিসেম্বর অতি গােপনীয় একটি হুঁশিয়ারি ওয়াশিংটনে বিস্তার লাভ করে যে, “তিনটি সােভিয়েত নৌজাহাজ, একটি সমুদ্রগামী মাইনসুইপার ও একটি ট্যাঙ্কার উত্তর-পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। “এই ইউনিটগুলাে মালাক্কা স্ট্রেইট (Malacca Strait) থেকে ৫ ডিসেম্বরে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং ৭ ডিসেম্বর তারা সিলােন (Ceylon) থেকে ৫০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বদিকে অবস্থান করছিল।” হােয়াইট হাউসে জরুরি আলােচনার পর ১০ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, নৌবাহিনীর | সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ (Enterprise)-কে অগ্রবর্তী রেখে মালাক্কা স্ট্রেইটে মার্কিনী টাস্ক ফোর্স সমবেত করা হবে।  ‘শক্তি প্রদর্শন এবং ভারতীয় বিমান ও জাহাজের মনােযােগ পাকিস্তানের ওপর থেকে  সরানাে ছিল এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য।  টাস্ক ফোর্স যথাস্থানে পৌঁছানাের পর ১১ ডিসেম্বর আমাদের প্যাসিফিক কম্যান্ডার অ্যাডমিরাল জন ম্যাককেইন (John McCain) ‘সিলােনের আনুমানিক ১৮০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সােভিয়েত টাস্ক গ্রুপের ওপরে আকাশ থেকে নজর রাখার সম্ভাব্যতা’ সম্পর্কে জানতে চান।  সেইদিনই অনুমােদন চলে আসে, ‘এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে টাস্ক ফোর্স ৭৪কে মালাক্কা স্ট্রেইট ধরে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। উপযুক্ত সময়ে নজরদারির জন্য পর্যবেক্ষণ বিমান ব্যবহারের অনুমােদন দেয়া হল।’
স্ট্রেইট পেরিয়ে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলাে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের পর ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি থেকে আরাে খারাপ রিপাের্ট আসে।  ‘সম্প্রতি যে খবরগুলাে পাওয়া গেছে, তা থেকে মনে হয় যে, ভারত-পাকিস্তান বিরােধে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছে।’  সংক্ষেপে বর্ণিত অতি গােপনীয় একটি রিপাের্ট: নির্ভরযােগ্য একটি গােপন সূত্রের মতে, [পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দাবি করেছেন আজ যে, ইসলামাবাদস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত  তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চীনা সেনাবাহিনী সীমান্তের দিকে যাত্রা করবে।  ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। অবশ্য সাম্প্রতিককালে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের ভূমিকার বিরুদ্ধে পিকিংয়ের প্রচারণা আরাে প্রবল হয়েছে।’  ইতােমধ্যে হিমালয়ের পাদদেশ কাঠমান্ডু থেকে সংবাদ এসেছে যে, মার্কিন মিলিটারি অ্যাটাশে মেলভিন হােস্টকে সােভিয়েত ও ভারতীয় মিলিটারি অ্যাটাশে জিজ্ঞাসা করেন, চীনা সেনাবাহিনী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের অগ্রগমন সম্পর্কে তিনি কী জানেন।  ‘সােভিয়েত অ্যাটাশে লােগিনভ (Loginov)’, গােপন বার্তা অনুযায়ী, চীনা মিলিটারি অ্যাটাশে চাও কুয়াং চিহ (Chao Kuang Chih)-র সাথে কাঠমান্ডুতে দেখা করেন এবং তাঁকে বলেন যে, হস্তক্ষেপের ব্যাপারে চীনের বেশি আগ্রহ দেখানাে উচিত নয়; কারণ সােভিয়েত ইউনিয়নের হাতে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র, ইত্যাদি আছে।
বার্তায় হােস্ট
উপসংহার টেনেছেন, ‘সােভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত – উভয় দূতাবাসই চীনা হস্তক্ষেপের ব্যাপারে ক্রমাগত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।’
পাশাপাশি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি একটি অতি গােপনীয় রিপাের্ট দেয়, “গত ৮ ডিসেম্বর থেকে চীনারা তিব্বত ও সিনাে-ভারতীয় (Sino-Indian) সীমান্তের জন্য আবহাওয়া বার্তা পাঠাচ্ছে। ক্রমাগত এ ধরনের আবহাওয়া বার্তা পাঠানাের ঘটনা অস্বাভাবিক এবং এটা সতর্কতামূলক কিছুর ইঙ্গিত দেয়।’ নয়া দিল্লী থেকে সিআইএ রিপাের্ট দিয়েছে: ‘নির্ভরযােগ্য একটি গােপন সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী গান্ধী তাঁর কংগ্রেস পার্টির এক নেতাকে বলেছেন যে, চীনারা যে ভারতের উত্তর সীমান্তে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, তার ইঙ্গিত তিনি পেয়েছেন শ্রীমতি গান্ধী বলেছেন যে, চীনারা লাদাখ অঞ্চলে আক্রমণ চালাতে পারে।’  ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই এম পোেেভ (Nicolai M Pegov) ১৩ ডিসেম্বর অবশ্য প্রতিশ্রুতি দেন যে, সােভিয়েতরা চীনাদের মনােযােগ ভিন্নদিকে নিবদ্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে’ এবং ‘সপ্তম নৌবহরকে প্রতিরােধ করবে।’
 এখানে মারাত্মক সােভিয়েত আবেদনের সারসংক্ষেপ দেয়া হল, যা সিআইএ-র ভাষ্য অনুযায়ী নির্ভরযােগ্য সূত্র থেকে পাওয়া। ‘পেপােভ বলেছেন যে, পাকিস্তান এই যুদ্ধের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন – উভয়কেই। জড়াতে চাইছে। সােভিয়েত ইউনিয়ন অবশ্য বিশ্বাস করে না যে, এদের কেউ এতে হস্তক্ষেপ করবে।
‘পেগােভের ভাষ্য অনুযায়ী, সপ্তম নৌবহর হল ভারতকে বােকা বানানাের জন্য এক মার্কিনী। চাল, যাতে ভারত পশ্চিম পাকিস্তান আক্রমণ থেকে বিরত থাকে এবং একই সাথে পাকিস্তানি সৈন্যদের মনােবল বৃদ্ধি পায়। |‘পেগােভ উল্লেখ করেছেন যে, সােভিয়েত নৌবহর এখন ভারত মহাসাগরে এবং সােভিয়েত ইউনিয়ন সপ্তম নৌবহরকে প্রতিরােধ করবে।
‘চীন যদি লাদাখ আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়, সােভিয়েত ইউনিয়ন সেক্ষেত্রে সিনকিয়াং (Sinkiang) আক্রমণ করে তাদের মনােযােগ অন্যদিকে প্রবাহিত করবে।’ পেগােভ আরাে মন্তব্য করেন যে, ঢাকা মুক্ত হবার পর সেখানে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আর কিছু করণীয় থাকবে না এবং সেক্ষেত্রে এই সঙ্কটের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য হবে।”  এভাবেই বৃহৎ শক্তিবর্গ ধ্বংসস্কৃপের প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠেছিল ঠিক । ক্রিসমাসের আগে, যখন মানুষ পৃথিবীতে শান্তি ও কল্যাণের গান গায়।
সূত্র: ডেইলি টেলিগ্রাফ (লন্ডন), ১০ জানুয়ারি ১৯৭২

সূত্র : সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা একটি জাতির জন্ম – লে জেনারেল জে এফ আর জেকব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!