৩১ মার্চ ১৯৭১-এ ভারতের লােকসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর উথাপিত।
পূর্ববঙ্গে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে লােকসভা প্রগাঢ় বেদনা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পরিচালিত সশস্ত্র বাহিনী এক ব্যাপক আক্রমণে সমগ্র পূর্ববঙ্গের জনগণের দাবিদাওয়া আশা-আকাক্ষা দমন করতে তাদের ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ডিসেম্বর ১৯৭০-এর নির্বাচনে সন্দেহাতীতভাবে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে পাকিস্তান সরকার জনগণের এই ম্যান্ডেটকে অবজ্ঞা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান সরকার শুধু নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকারই করেনি, বরং নিয়মবহির্ভূত উপায়ে জাতীয় পরিষদকে তার ন্যায্য ও সার্বভৌম ভূমিকা পালনে বাধা দিয়েছে। সামরিক শক্তির নগ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের জনগণকে লক্ষ্য করে বেয়নেট, মেশিনগান, ট্যাঙ্ক, কামান ও বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের সরকার ও জনগণ সব সময়ই পাকিস্তানের সাথে একটি শান্তিপূর্ণ, স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করেছে। এই উপমহাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত পারস্পরিক বন্ধন যেহেতু বহু-শতাব্দী-প্রাচীন, সীমান্তের এত কাছে সংঘটিত প্রলয়সম মর্মান্তিক ঘটনাবলিতে এই সভা নির্লিপ্ত থাকতে পারে। নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপরে নজিরবিহীন এই বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনগণ সন্দেহাতীতভাবে তাদের ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেছে।
পূর্ববঙ্গের জনগণের গণতন্ত্রের সংগ্রামে এই সভা তাদেরকে আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন এবং তাদের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করছে। শান্তি রক্ষায় ভারতের স্থায়ী স্বার্থ এবং মানবাধিকার সংরক্ষণে আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি শিরােধার্য করে এই সভা অরক্ষিত জনগণের নিধনযজ্ঞ থেকে সামরিক বাহিনীকে বিরত থাকার দাবি জানাচ্ছে। পাকিস্তান সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে অবিলম্বে এই পরিকল্পিত গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের জনগণ ও সরকারের প্রতিও এই সভা আহ্বান জানাচ্ছে। | পূর্ববঙ্গের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঐতিহাসিক জাগরণ যে শেষ পর্যন্ত সাফল্য অর্জন করবে, এই সভা সে ব্যাপারে তার দৃঢ় আশাবাদ নথিভুক্ত করছে। এই সভা এই মর্মে তাদেরকে নিশ্চয়তা প্রদান করছে যে, তাদের সংগ্রাম ও ত্যাগে তারা সব সময় ভারতের জনগণের আন্তরিক সহানুভূতি ও সহযােগিতা লাভ করবে।
সূত্র : সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা একটি জাতির জন্ম – লে জেনারেল জে এফ আর জেকব