You dont have javascript enabled! Please enable it! শাখারীকাঠি গণহত্যা - সংগ্রামের নোটবুক
নদী পেরিয়ে যে প্রশস্ত রাস্তা হয়েছে তাতে বাগেরহাট যেতে খুব বেশী সময় লাগেনা। রাস্তায় কোন জ্যাম নেই। দুই পাশের সবুজ যেন চোখ ভরে দেখা যায়। কিন্তু এই বাগেরহাটে একটি জায়গা আছে যেখানে মাটি খুঁড়লেই খুলি আর কংকাল বেরিয়ে আসে। হ্যাঁ, বধ্যভূমিটি চিহ্নিত হয়েছে বহু আগে। পেছনের কথাগুলো নীচে লিখে দিচ্ছি।

শাখারীকাঠি গণহত্যা

মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর প্রান্তের দৈবজ্ঞহাটি বাজারের কাছে বিশ্বাস বাড়িতে বসানো হয় রাজাকার ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সেখানে রাজাকারদের কয়েকদফা যুদ্ধ হয়। ৪ নভেম্বর ১৭ কার্ত্তিক ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার সারারাত উভয়পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় চলে। স্থানীয় রাজাকারদের আহ্বানে পর দিন দুপুরের মধ্যেই কচুয়া উপজেলার রাজাকাররা সেখানে আসে। ৫ নভেম্বর শুক্রুবার কচুয়া উপজেলার শাখারীকাঠি গ্রামের হাট ছিল। সূর্য ডোবার বেশ আগেই শতাধিক অস্ত্রধারী রাজাকার বাজারটিকে ঘিরে ফেলে। বাজার থেকে ৮২ জনকে বেঁধে বিষখালী খালপাড়ে নেয় তারা। প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল খালেক লিখেছেন, হুইসেল দিয়ে প্রচণ্ড গুলি করা শুরু করে তারা। ৮২ জনকে বাঁধা হলেও কয়েকজন বেঁচে যান। পরদিন বিষখালী খালের পূবে রামচন্দ্রপুর গ্রামের এক প্রান্তে লাশগুলো গণকবর দেওয়া হয়।

সেদিন ৪২টি লাশ বিষখালী নদীর চরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: বাগেরহাটের ইতিহাস, দ্বিতীয় খন্ড-ড. শেখ গাউস মিয়া, পৃ.-২৬৮-২৬৯; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৩১০-৩১৬; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ – ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৩৯৫; একাত্তরের বাগেরহাট – স্বরোচিষ সরকার, পৃ.-২৭৫-২৭৭)

 

১৯৯২ সালের ৫ নভেম্বর এই গণকবরে শহীদ নিরঞ্জন দাসের ভাই স্কুল শিক্ষক মনোরঞ্জন দাসের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৯৮ এর ডিসেম্বরে সরকারি অর্থায়নে শাখারীকাঠি বাজারে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। (সূত্র স্বরোচিষ সরকারের ‘একাত্তরের বাগেরহাট’)