You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.21 | রাজাকারদের হাতে গ্রেফতার হবার পর নির্যাতন | বগুড়ায় জেনোসাইড - সংগ্রামের নোটবুক

মোঃ ছানোয়ার হোসেন
গ্রাম- বালীস্বর্বা
ডাকঘর- পাঁচবিবি
জেলা- বগুড়া

১৯৭১ সনের ২২ শে জুলাই রাজাকারদের হাতে গ্রেফতার হলে পাক বাহিনীরক্যাম্পে নিয়ে যাবার পর আমাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। তারপর আরম্ভ হয় দৈহিক নির্যাতন। প্রায় ১৫/২০ জন পাঞ্জাবী ফুটবল খেলার মত লাথি মারতে থাকে। একজন লাথি মেরে আরেকজন এর কাছে দেয়, সে আবার আর একজনের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে কিল ঘুষি,রাইফেলের বাঁটের বাড়ি চলতে থাকে। প্রায় ৪০ মিনিট তারা আমার উপর নির্যাতন চালায়। শেষের দিকে আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি। সারা শরীর ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। আমার উপর দৈহিক নির্যাতন চালাবার পর প্রায় জ্ঞানশূন্য অবস্থায়থানাতে পৌছে দেয় এবং হাজতে চোখ, হাত বাঁধা অবস্থায় বন্দী করে রাখে।  রাত্রি৮ টার দিকে একজন বাঙ্গালী পুলিশ আমার চোখ ও হাতের বাধন খুলে দেয় এবং কিছু ভাত খেতেদেয়। এই সময় আমি দেখতে পাই হাজতের ভিতরআরও ৮ জন বন্দী আছে। 

অতঃপর আমাকে ১০ দিন থানা হাজতে বন্দী করে রাখে। প্রত্যেকদিন বহু পাঞ্জাবী সৈন্য ও বিহারীরা আমাকে দেখার জন্যথানা হাজতে আসতো কেননা তারা নাকি মুক্তিফৌজ কেমন দেখা যায় তা জানে না। তারা এসে নানাভাবে আমাকে গালিগালাজ দিত এবং লাঠি দিয়ে হাজতেরভিতরেই আমাকে খোঁচাতো। অনেকে আবার উপহাস করে আমাকে বন্ধুবলে ডাকতো।

আগস্ট মাসের ১ তারিখে আমাদেরকে থানা হাজত থেকে বের করে এবং আমারদুই পার্শ্বে দুইজনকে দাঁড় করে আমার দুই হাত দুই জনের হাতের সঙ্গে বেঁধে মাজায় দড়িবেঁধে টেনে রেল স্টেশনে আনা হয়। তারপরগাড়ীতে করে বগুড়া নিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। বগুড়াজেলে দুইটা পাঞ্জাবী কে”জেল”দেয়া হয়েছিল। এই পাঞ্জাবী দুটি জেলের ভিতর যখন তখন আমাদেরকে মারধোর করতো।

৩ রা আগস্ট আমাকে জেল থেকে বের করে বগুড়া কটন মিলের নিকট একটাছোট ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। এখানেনিয়ে প্রথমে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। এইসময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে-
‘তুমি কত বিহারী ও পাঞ্জাবী মেরেছো? কোথায়মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং দিয়েছো,তোমাদের লিডার কে, কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছো, ভারতীয় সৈন্যবর্ডারে যুদ্ধ করছে, কিনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কত? পাক বাহিনীর প্রশ্নের জবাবে আমি শুধু এ কথাবলি যে,  আমি এ সবকিছু জানি না।  আমিভারত থেকে পালিয়ে আসছিলাম,  আমি ট্রেনিং নেই নি।

আমার কাছ থেকে কোন কথা বের করতে না পেরে ৩ জন মিলে এক সঙ্গেআমাকে মারতে আরম্ভ করে। কিল, ঘুষি,লাথি, রাইফেলের বাটের বাড়ি এবং লাঠি দিয়ে ভীষণভাবে পিটানো আরম্ভ করে। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত এইভাবে মারধোর করার পর আমাকে পায়ের ভিতরহাত দিয়ে কান ধরে রাখতে নির্দেশ দেয়। আমিযখন তাদের কথা মত নিচু হয়ে পায়ের ভিতর হাত দিয়ে কান ধরে থাকি তখন পিছন থেকে চাবুকদিয়ে পিটান হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে একই প্রশ্ন বারবার করতে থাকে। সময় সময় বাইরে থেকে যারা দেখতে আসে তারাও হাতের কাছে যা পায়তাই দিয়ে পিটায়।

প্রায় ৩ ঘন্টাযাবত এইভাবে নির্যাতন চালানোর পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আমার পায়ে চিকন রশি শূন্যেঝুলিয়ে দেয়। এই সময় এমন লাগতে থাকে যে জীবন বোধহয় পা দিয়ে বের হয়ে যাবে।  ঝুলেথাকা অবস্থায় মোটা রোলার দিয়ে প্রত্যেক গিরায় গিরায় মারতো এবং মাথার পিছনের দিকেআঘাত করতো। প্রায় ২০ মিনিট রাখার পর আমি বলি যে, আমাকে মাটিতে নামানো হলে আমি সব কথা বলবো। তখন তারা আমাকে নিচে নামায় এবং তখনই বলার হুকুম দেয়। কিন্তু আমি জিরিয়ে নেবার উদ্দেশ্যে আবোল তাবোল বলতে থাকি। আমার চালাকি বুঝতে পেরে বর্বর সৈন্যরা আমাকে লাথির পর লাথিমারতে থাকে। কিছুক্ষন পিটানোর পর পুনরায় আমাকেঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং পূর্বের চেয়ে আরও বেশী প্রহার করতে থাকে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আমার ঐ একই উত্তর যে আমি জানি না।

২য় বার আমাকে ঝুলানোর প্রায় ১৫/২০ মিনিটপর পাশের রুম থেকে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন বের হয়ে আসে এবং আমাকে বলে“ছানোয়ার,আমি একজন মুসলমান তুমি বিশ্বাস কর?”  আমি তার জবাবে বলি যে।“হাঁ আপনি  মুসলমান।“তখন ক্যাপ্টেন সাহেব আমাকে পুণরায় বলে যে“আমিমুসলমান হয়ে আর এক মুসলমান এর কাছে প্রতিজ্ঞা করছি যে যদি তুমি আমার কাছে সত্য কথাবলো তবে তুমাকে আর মারা হবে না,এবং আমি চেষ্টা করবো তোমাকেছেড়ে দিতে।“তখন আমার তার কথা বিশ্বাস হলো এবং আমিপ্রতিশ্রুতি দিলাম যে”আমি সত্য কথা বলবো?” এই সময় আমাকে মাটিতে নামান হয় এবং বলে যে তুমি”খাওয়া দাওয়ার পর বলবে না এখনই বলবে?” আমিবলি যে আপনি যা বলেন সেই হিসাবেই আমি কাজ করবো।  তখনআমাকে রুটি ও তরকারি এনে খেতে দেওয়া হয়।

খাওয়ার পর ক্যাপ্টেন সাহেব আমাকে জানায় যে তুমি আজ বিশ্রাম করকাল তোমার কাছ থেকে সব কিছু শোনা হবে। এই বলে আমাকে পুনরায় জেলে নিয়ে একটা সেলের ভিতর বন্দী করেরাখে। এই সময় আমি এত কাহিল হয়ে পড়েছিলাম যে আমি মোটেই নড়াচড়া করতেকরতে পারতাম না।

৪ ঠা আগষ্ট সকাল ৯টার দিকে আমাকে জেল থেকে বের করে পূর্বের সেইঘরে ক্যাপ্টেন সাহেবের কাছে নিয়ে যায়। ক্যাপ্টেন সাহেব আমাকে প্রশ্ন করে যে, বল তুমি কি করেছো? তার উত্তরে আমি জানাই যে আমি ৭দিন ট্রেনিং নিয়েছি। তারপর অপারেশনের জন্য আমরা বগুড়া যাবার পথে”গয়েশপুর”এসে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার দলের লোক আমাকে রেখে বগুড়া চলে যায়। তখন আমি পুনরায় ভারত চলে যাই এবং কিছু দিন পর যখন ইয়াহিয়া খানসাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছেন তখন আমি দেশে ফিরে আসার সময় রাজাকারদের কাছে ধরা পড়ি। ক্যাপ্টেন আমার কথা লিখে নেয় এবং আরও বহু প্রশ্ন করে,  ভয়দেখায়, লোভ দেখায় উত্তর দেবার জন্য। আমি বলি যে যদি আমাকে মারতে মারতে মেরেও ফেলা হয় তবুও আমি এরবেশি আর কিছু বলতে পারবো না।

৭ ই আগস্ট আমাকে বগুড়া জেল থেকে বের করে” মিলিটারী পুলিশ”হাত বেঁধে গাড়ীতে করেরেল স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখানেতাদের কথা থেকে আমি বুঝতে পারি আমাকে নাটোর সামরিক জেলে পাঠান হচ্ছে। গাড়ী আসার পর মিলিটারী পুলিশ আমাকে অন্য মিলিটারীর হাতে তুলেদেয়।

গাড়ীর ভিতর তুলে আমাকে ও অন্য আরও একটি ছেলেকে ছিটের নিচে বসিয়েআমাদের ঘাড়ের উপর পা তুলে বর্বর সৈন্যরা বসে থাকতো এবং প্রত্যেক স্টেশনে গাড়ীথামলে বিহারী ও অন্যান্য সৈন্য রা এসে আমাদের দুই জনকে ভীষণভাবে মারধোর করতো। প্রত্যেক ষ্টেশনে আমাদের এই ভাবে নির্যাতন চলতে থাকে।

নাটোর রেল স্টেশন থেকে আমাদের নাটোর সামরিক জেলের কাছে নিয়ে যায়এবং বলে যে এদেরকে নতুন”মেহমান”হিসাবে প্রাথমিকভাবে কিছু”খেদমত”করে দেওয়া হোক।  এই বলে ভীষণ মারধোর আরম্ভ করে।  মারতেমারতে প্রায় জ্ঞানশূন্য অবস্থায় আমাকে জেলের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।

প্রত্যেক দিন জেলথেকে বের করে কাজ করানোর জন্য নাটোর ফুল বাগানে নিয়ে যেত।  প্রত্যেকদিন ৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো।  সকাল ৮টা থেকে রাত ১২ টা এবং৩টা থেকে ৫ টা একটানা কাজ করতে হতো এর ভিতর কোন বিশ্রাম নিতে দিতো না। সব সময়”ডবল” হিসাবে কাজ করাতো। এরপরও বর্বর সৈন্যরা চাবুক দিয়ে আমাদের প্রহার করতো।

জেলখানার ভিতর যে ঘরে আমাদের রাখা হতো সে ঘরে খুব বেশি হলে ১০/১২ জন থাকতে পারে। সেখানেআমাদের ৬০ জনকে রাখতো। রাত্রিতে শোবার কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমি যে ঘরে ছিলাম সে ঘরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ডঃকাজী সালেহ আহম্মেদ, লেকচারার মজিবর রহমান, ওয়াপদার ডিভিশনালইঞ্জিনিয়ার এম, ডি, ছারোয়ারহোসেন(রাজশাহী)ছিলেন। আমাদের মত এদের উপরও চলতো সমানভাবে নির্যাতন এবং আমাদের মতোএদেরও কাজ করতে হতো। জেলের ভিতর সর্বমোট ১৫০ জন কয়েদীবন্দী ছিল।

মোট ২৮/২৯ দিন আমি নাটোর জেলে ছিলাম। আমাদের খাবার দেবার জন্য জেল থেকে বের করে লাইন ধরাতো। আমরা যখন নিচু হয়ে খাবার নিতাম তখন বর্বর সৈন্যরা চাবুক দিয়েআমাদের প্রহার করতো। মার ছিল আমাদের একমাত্র সঙ্গী। প্রত্যেক দিন সকালে ছোট একটা পুরি ও একটু চা। দুপুরে দেয় ছটাক চাউলের ভাত ও পানির মত একটু ডাউল অথবা একটুনিরামিশ তরকারী।  বিকালে২ টা ছোট রুটি ও একটু আলুর ঝোল।  কোন সময়ই আমাদের খাবার খেয়েপেট ভরতো না।  আমরাসবাই সব সময় ক্ষুধার জ্বালায় ভুগতাম।

প্রত্যেকদিনই দেখতাম জেল থেকে ২/৩ জিনলোককে নিয়ে যেত জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য।  বিকালেতাদের যখন জেলে ফিরিয়ে আনতো তখন তাদের দেহ ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় দেখা যেত- সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরতো।

এত বিপদের মধ্যেও রাত্রির বেলা জেলখানার ভিতর গান বাজনা করতাম। কেউ গান গাইত কেউবা তালি বাজাত।  এইভাবেআমরা আমাদের দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম।
  
আমাদের কাছ থেকে’চুক্তি পত্র’ লিখে নেওয়া হয় যে যদি পুনরায় ভারত চলে যাই তবে আমার অবর্তমানে আমারপরিবারের উপর নির্যাতন চালানো হবে। জেলথেকে আমাদের বের করে প্রত্যেককে ৫ টা করে টাকা ও একটা করে সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়।  মুক্তিপাবার পর আমি ৭ই সেপ্টেম্বর পাঁচবিবি হয়ে আমার বাড়ীতে পৌঁছি।

 মুক্তি পেয়ে আমি বাড়ীআসার পর প্রায়ই পাক বাহিনী আমাকে চাপ দিত রাজাকারে ভর্তি হবার জন্য কিংবা বর্ডারস্পাইং করার জন্য।  কিন্তুআমি অসুস্থ বলে বাড়ীতে থাকতাম এবং বলতাম যে আগে ভালো হয়ে নেই।

 ২৮ শে নভেম্বর বিকাল ৪টার দিকে একজন রাজাকার আমার বাড়ীতে গিয়ে বলে যে,এখনইথানায় যেতে হবে। আমি যদিও বুঝতে পারি যে আমাকে বন্দীকরার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তবুও আমি তার সঙ্গে থানায় রওনা হই কিন্তু রাস্তায় নেমেদেখতে পাই যে পাক বাহিনী গাড়ি নিয়ে আমার বাড়ির দিকে যাচ্ছে। রাস্তার ভিতর থেকেই আমাকে তুলে নেয় এবং জয়পুরহাটে নিয়ে যায়।

 আমাকে যখন বন্দী করেগাড়ীতে তোলা হয় তখন গাড়ীর ভিতর লেঃ আলতাফ(বিহারী)বসে ছিল। আমাকেজয়পুরহাট বি, আই,ডি, সির শিক্ষানবীশ আবাসিক এলাকায় ২ নংব্যারাকে পাক বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এখানে আমাকে”মেজর আফজালের” কাছে নিয়ে যায় এবং লেঃআলতাফ আমার নামে বহু মিথ্যা অভিযোগ মেজর সাহেবের কাছে বলে এবং বলে যে আমি নাকি ২জন বিহারীকে হত্যা করেছি তা লেঃ আলতাফ দেখেছে। মেজর আমাকে এই সব কথার সত্যতা জিজ্ঞাসা করে। এক কথায় আমি সব অস্বীকার করি। তখন মেজর সাহেবের সঙ্গে আমার কিছুটা কথার কাটাকাটি হয়। এই সময়  মেজর সাহেব একজন সৈন্যকে  ডাকে এবং আমাকে ধোলাই দেবারজন্য বলে। এই সময় আমাকে এমনভাবে প্রহার করা হয়যে আমি প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি।

আমাকে বহু সময়মারধোর করার পর লেঃ আলতাফ আমাকে মেরে ফেলার জন্য মেজর সাহেবের কাছে এজাজত চায়।  মেজরসাহেব লেঃ আলতাফ কে এজাজত দেয় আমাকে মেরে ফেলার জন্য।

এই সময় আমাকে হত্যা করার জন্য লেঃ আলতাফ হোসেন আমাকে করেখোঞ্জনপুর রাস্তার উত্তর পারে মাঠের ভিতর পাক বাহিনীর ডিফেন্স- এর কাছে নিয়ে যায়, ৩/৪জন মিলিটারীর হাতে তুলে দেয় এবং বলে দেয় যে একে চাকু দিয়ে জবাই করে কিংবা বেয়োনেটদিয়ে হত্যা কর। বর্বর সৈন্যরা আমাকে হত্যা করার জন্যপ্রায় ১০০ গজ দূরে নিয়ে যায়। রাস্তাটাছিল উঁচু, আমাকে যখন নিয়েযাওয়া হচ্ছিল তখন তারা আমার চোয়ালে ঘুষি মারতে থাকে। আমি পড়ে যাই,  তারা আবার টেনে তোলে।

আমাকে হত্যা করার জন্য যখন সুবেদার সাহেব একটা চাকু বের করে এবংটেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায় আমি তখন সুবেদার সাহেবের কাছে একটু নামাজ পড়ার জন্যসময় ভিক্ষা চাই। কিন্তু সুবেদার  সাহেবআমাকে সময় দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আমিতখন জোরে চিৎকার করে সুবেদারকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকি যে, “যদি আমাকে আল্লাহর এবাদত থেকেবঞ্চিত করে হত্যা করা হয় তা হলে রোজ হাসরের ময়দানে আল্লাহর সামনে আপনাদের বিচারেরজন্য  ফরিয়াদ করবোএবং বলবো এরা আমাকে তোমার(আল্লাহ) এবাদত থেকে বঞ্চিত করে হত্যা করেছে আমি এর বিচার চাই।”

আমার এই কথা শোনার পর সুবেদার সাহেব কিছুক্ষন নীরব থাকে এবং পরেনামাজ পরার জন্য এজাজত দেয়।

 নামাজ পড়ার জন্য আমার একহাত খুলে দেয় এবং এক জগ পানি এনে দেয়।  আমিযখন নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যাই তখন পাক সেনারা তিন দিকে এল, এম, জি নিয়ে পজিশন নিয়ে থাকে।  তারাআমাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় যে পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করে হত্যা করবে।

অতঃপর এক মনে ক্বাজা নামাজসহ এশার নামাজ আদায় করতে প্রায় ২০মিনিট সময় লেগে যায়। নামাজেরমাঝখানে আমি একবার টেলিফোন বেজে ওঠার শব্দ শুনতে পাই। নামাজ শেষে মোনাজাত করে আমি বর্বর বাহিনীকে বলি যে এই বার আমিপ্রস্তুত এখন আমাকে নিশ্চিতভাবে  হত্যা করতে পারো। এই সময় একজন সিপাই আমার কাছে এসে বলল যে খোদা আপনার দোয়া কবুলকরেছেন। আপনাকে আর মারা হবে না কেননা এইমাত্র হেড অফিস থেকে ফোন এসেছে, আপনাকে সেখানে এখনই নিয়ে যাবার জন্য হুকুমদিয়েছে। 

অতঃপর আমাকে হাত বাঁধা অবস্থায়ই একটা গাড়ীতে করে বি, আই, ডি, সি, অফিসের পাক বাহিনীর হেড অফিসে নিয়ে যায় এবং এক ক্যাপ্টেন সাহেবের কাছেহাজির করে।

শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের তদবীরের ফলে ২৮ শে নভেম্বর আমিরাত্রিতেই আমি মুক্তি লাভ করি।

স্বাক্ষর/-