আল বদর কেন প্রতিষ্ঠা করা হল?
জামায়াতের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ প্রকাশ করার অর্থ দিয়েছিল আইএসআই।
আলবদর কেন প্রতিষ্ঠা করা হল, কীভাবে হলো, সে সম্পর্কে তথ্য খুব কম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা শুনেছি, জানতাম, ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের কর্মীরা প্রতিষ্ঠা করেছে আলবদর এবং তারা পেশাজীবীদের হত্যা করেছে। সঙ্ঘের প্রধান মতিউর রহমান নিজামী। আলবদরদের প্রধানও তিনি।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই মোটামুটি রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বুঝতে পারছিলেন দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে জামায়াতে আলোচনা শুরু হয় এবং করনীয় ঠিক করে জামায়াত নয়, বরং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলাম জামায়াত ই তুলাবা, এখানে যা পরিচিত ছিল ইসলামী ছাত্র সঙ্ঘ নামে।
সৈয়দ ভালি রেজা পাকিস্তানের ধর্মীয় দলগুলো নিয়ে গবেষণা করে একটি বই লিখেছেন, নাম – ‘দি ভ্যানগার্ড অব দি ইসলামিক রেভল্যুশন? দি জামাত ই ইসলামী অব পাকিস্তান।’ নসর লিখেছেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে দাঁড়ায় কারণ পাকিস্তানের কোন অংশেই তাদের কোন স্থান ছিলোনা। সরকারী সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তানে তারা পিপিপির বিরুদ্ধে এবং পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নিররাবচন করেছিল। এ প্রক্রিয়ায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জামায়াত দেখল জাতীয় রাজনীতিতে স্থান করে নিতে হলে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করাই উত্তম। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছিল ইসলামী জমিয়ত তুলাবা মে মাসে যখন তারা সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতে লাগল।
অন্যকথায় বলা যেতে পারে, পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিকভাবে নিজের যায়গা করে নেয়ার জন্য জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। কারণ, আমরা দেখি, মুক্তিযোদ্ধাদের ঠেকাতে যে সব সংস্থা গড়ে উঠেছিল, যেমন রাজাকার, শান্তি কমিটি বা আলবদর – সবখানে সর্বতোভাবে যোগ দিয়েছিল জামায়াত ও ছাত্রসঙ্ঘের কর্মিরা। অবশ্য, সেনাবাহিনীর সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ সব সময়ই ছিল। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ প্রকাশ করার অর্থ দিয়েছিল আইএসআই। বাংলাদেশ হওয়ার পরেও এই ধারা অব্যহত থাকে।
Source: আলবদর ১৯৭১ – মুনতাসির মামুন