You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১০ই ফেব্রুয়ারী, রোববার, ২৭ মাঘ, ১৩৮০

ভারত মহাসাগরে ইঙ্গ-মার্কিন রণ পাঁয়তারা

দ্বীপের নাম দিয়েগো গার্সিয়া। ভারত মহাসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপটিকে একটি বড় রকমের পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত মার্কিন ডেষ্ট্রয়ার ও সাবমেরিনের ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমেরিকা ও ব্রিটেন এর মধ্যে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। দিয়েগো গার্সিয়া সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করার জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেন ২ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার ব্যয় করবে। স্বাভাবিক কারণেই, এই ইঙ্গ-মার্কিন চুক্তির ফলে ভারত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে এবং প্রকাশ করছেন নির্ধারণ উৎকণ্ঠা। ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য যখন সমগ্র বিশ্বব্যাপী জোর দাবি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া সামরিক ঘাঁটি তৈরীর পরিকল্পনা এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলো তাই এই সামরিক ঘাঁটিকে একটি পেন্টাগনী মতলব বলে চিহ্নিত করেছে। ইন্দোনেশিয়া ভারত মহাসাগরের বুকে মার্কিন সমর সজ্জায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তানজানিয়া সহ বহু আফ্রিকান দেশ পেন্টাগনী পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা করেছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কা মার্কিন রণ পরিকল্পনার বিরোধিতায় আগাগোড়াই সোচ্চার। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারত মহাসাগরের দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে নৌঘাঁটি সৃষ্টির বিরুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন প্রচেষ্টার তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়া দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদ জানিয়েছে। মাদাগাস্কারও ইঙ্গ-মার্কিন চুক্তির প্রতিবাদ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন, দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপ পারমাণবিক নৌ ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা ফলে ভারত মহাসাগরীয় এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং তা জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। শ্রীমতি গান্ধী সামরিক ঘাঁটি সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষে ডেকে আনবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। পক্ষান্তরে ওয়াশিংটনে মার্কিন ক্রেতারা জানিয়েছেন যে, ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপ নৌ ও বিমান ঘাঁটি গড়ে তোলার জন্য ইঙ্গ-মার্কিন পরিকল্পনার পেছনে কোন আক্রমনাত্মক অভিপ্রায় নেই। কিন্তু ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা কি এই সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে ঘোষণা করা সম্ভবপর? ভারত মহাসাগরকে ‘যুদ্ধ মুক্ত’ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু সামরিক শক্তির জোরে আমেরিকা ও ব্রিটেন দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর প্রতিবাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েছে। বৃটেনের কোমরের বর্তমানে বিলীয়মান প্রায়। তাই ব্রিটেন আমেরিকার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। গার্সিয়া দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি স্থাপিত হলে সামরিক উত্তেজনা প্রশমিত হবেনা বরং উত্তেজনা ও অশান্তির ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী দেশগুলোর বেলাভূমিতে এসে আছড়ে পড়বে এবং এ এলাকার দেশগুলোর সামরিক ব্যবহার বাড়বে। সবসময় একটা নিরাপত্তাহীনতা জাঁকিয়ে বসবে। তাই এই সামরিক ঘাঁটির বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথই অনুসৃত হবে। আন্দোলনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনের সামরিক পাঁয়তারা আন্দোলিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রায় তিন শতাব্দীকাল ব্রিটেন ভারত মহাসাগর শাসন করছে এখনো বৃটেনের সেই মাতব্বরির মনোভাব দূর হয়নি। বৃটেনের দেউলে শক্তি আমেরিকার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে এখন আবার নব উদ্যমে ভারত মহাসাগরে মাতব্বরি করতে উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী এর প্রতিবাদে জাগ্রত চৈতন্যের স্বাক্ষর পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই দেখতে পাচ্ছি, প্রস্তাবিত পারমাণবিক ঘাঁটি ভারত মহাসাগরকে উত্তপ্ত না করে ছাড়বে না। বৃহৎ শক্তিগুলোর এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার নীতি কখনো শান্তিকামি বিশ্ব প্রত্যাশা করে না। এশিয়া ও আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে নিরাপদ রাখার জন্য এই এলাকাস্থিত দেশগুলোকে অন্ততঃ একটা কিছু করতে হবে।

নির্দেশ যেন বাস্তবায়িত হয়

কৃষি মন্ত্রী জনাব আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার সদস্য কর্মচারীদের এক বৈঠকে শক্তিচালিত পাম্প, গভীর ও অগভীর নলকূপ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের সাম্প্রতিক সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তারা ব্যাপক পানি সেচের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষের প্রতি কৃষকদের মধ্যে গভীর আগ্রহ লক্ষ্য করেন।
শক্তি চালিত পাম্প ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহের অগ্রগতি সম্পর্কে বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতে ৩৫০০০ শক্তিচালিত পাম্প মাঠে পৌঁছানো সম্ভব হয় সেজন্যে কৃষিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নিষ্ঠার সাথে কাজ করার উপদেশ দেন। তিনি নির্দেশ দেন যে প্রতিটি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সর্বাধিক পরিমাণ জমি পানি সেচের আওতায় আনার জন্য স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের যত্নবান হতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহেই অভিনন্দনযোগ্য। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় যে সবুজ বিপ্লবকে সার্থক করে তুলতে তৎপর হয়েছেন বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে তার পরিচয় পাওয়া যায়। তবে সব কথারই শেষ কথা থাকে। আর তা অনেক আগেও আমরা বলেছি এখনও বলছি। বাংলাদেশকে খাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতেই হবে। কেননা বিদেশের বাজারে যে হারে খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে খাদ্য আমদানি করতে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ভিক্ষা করে কোন জাতি বাঁচতে পারে না। অন্ততঃ আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার কোন উপায় থাকেনা। শুধু তাই না বিদেশের বাজারে ও খাদ্য ঘাটতি চলছে। এমতাবস্থায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এটা সোজা ও সরল কথা। এর মধ্যে কোন ঘোরপ্যাঁচ নেই।
একথা বাস্তব সত্য যে, কৃষি মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে বা বিশেষ কোনো নির্দেশ পাঠালেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কেননা নির্দেশ বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তাও তলিয়ে দেখা প্রয়োজন।
বাংলার বাণীর সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয়তে বহুবারই পাওয়ার পাম্প প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে। সবুজ বিপ্লবকে সার্থক করে তুলতে হলে পাওয়ার পাম্প, বীজ ও সার যথাস্থানে পাঠানোর প্রয়োজন। অথচ প্রতিদিনই সংবাদ পত্রের পাতা খুললেই দেখা যায় যে, বিভিন্ন স্থানে পাম্প, বীজ অথবা সারের অভাবে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমনি যেন না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, খাদ্যশস্য উৎপাদনকে আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত।

সোনালী আঁশকে আগুন থেকে রক্ষার উপায়

এতদিন পর একটা সুরাহার সন্ধান পাওয়া গেল বলে মনে হচ্ছে। গতকাল একটি স্থানীয় দৈনিক সংবাদ দিয়েছে যে, কয়েকটি পূর্ব সাবধানতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পাটের গুদামে নাকি আর সহজে আগুন লাগবে না, কিংবা আগুন লাগলো তাতে পাটের উল্লেখ্য কোনো ক্ষতিও হবে না।
সত্যিই, যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সিংহভাগ ভূমিকা পাঠকের পালন করতে হয় আর যে দেশে দিনরাত এমন পাটের গুদামে আগুন লেগে সমস্যাজর্জরিত মানুষকে আরো উদভ্রান্ত করে তোলে, সে দেশের মানুষের কাছে এমন একটা তোফা সংবাদ এক স্বর্গীয় সুখানন্দ বয়ে আনে বৈকি।
আগুন থেকে পাট রক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি নতুন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। জনৈক বিশেষজ্ঞের মতে পাটের উপর যদি সোডিয়াম সিলিকেট-এর মত কোন রাসায়নিক দ্রব্য ছিটিয়ে দিয়ে একটি পাতলা আবরণ সৃষ্টি করা যায়, কিম্বা, এই রাসায়নিক দ্রব্যে প্রস্তুত আবরণ দিয়ে পাটকে ঢেকে রাখা যায়, তবে নাকি পাটের উপর আগুনের কোনই প্রতিক্রিয়া হবে না। আবার সিলিকেট লাগানোর জন্য পাটেরও নাকি কোন রকমের ক্ষতি বা রূপান্তর হয় না, এবং খরচও নাকি খুব ‘অল্প’। পাটের গুদামে কখনো আগুন লাগলেও যাতে খুব কম ক্ষতি হয় এবং আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই যাতে আগুন নেভানো সম্ভব হয় সেজন্যে কেউ কেউ স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক ঘন্টা এবং দমকল বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী স্বয়ংক্রিয় দূরালাপনী রাখাসহ স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার সিস্টেম চালু করার মত দিয়েছেন। পূর্ণভাবে দমকল বাহিনী না এসে পৌঁছুনো পর্যন্ত কিংবা পৌঁছুনোর পরও স্প্রিংকলার সিস্টেম নাকি অগ্নিদগ্ধমান পাটের উপর ক্রমাগত পানি ঢালতে থাকবে।
কেউকে মান্ধাতার আমলের নির্মিত গুদামের পরিবর্তে আধুনিক পাটগুদাম নির্মাণ এবং পাট দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণার কথাও বলেছেন। কেউ কেউ পাটের গুদামে কনসিলড অয়েরিং, পানি রিজার্ভ ও বালু রিজার্ভ রাখার কথা বলেছেন।
যা হোক, সব মিলিয়ে একটা আশার আলো পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এভাবে সারাদেশব্যাপী পাট দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলে এবং বিভিন্ন প্রস্তাবাদি কাগজের পাতায় ঠাঁই পেলে নিশ্চয়ই একদিন সমস্যার সমাধান হওয়াও সম্ভব হবে বলে মনে হয় এবং জাতিরও অশেষ কল্যাণ সাধিত হবে। তাই প্রদত্ত বিভিন্ন প্রস্তাবাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উপযুক্ত ও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই মুহূর্তেই সফল হবেন বলেই আমরা সবাই আশা করছি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!