You dont have javascript enabled! Please enable it!

জিয়ার প্রথম বছর (প্রকাশ্য ঘটনাবলী ) 

নভেম্বরের ৮ তারিখের পত্রিকা সমুহে জাসদ বা তাহের বাহিনীর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। তাহের বাহিনী পরে তাদের ১২ দফায় জিয়ার স্বাক্ষর নিতে সক্ষম হলেও জিয়া তা পরক্ষনেই ভুলে যান। ৪-১২ নভেম্বর বিদেশী একজন রাষ্ট্রদূতের সাথে তাহের সিরাজুল আলম খানের ধারাবাহিক সভা চলে। এদিন রাষ্ট্রপতি জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এর পরিবর্তে উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিজেকে গ্রহন করে। ৮ নভেম্বর তাহের অভভুত্থান ব্যার্থ ধরে নিয়েই জলিল, জিয়াউদ্দিন নিয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, সুন্দরবন মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন এবং সন্ত্রাস শুরু করেন। ১১ তারিখ জিয়া আবারো বেতার ভাষণ দেন। ১২ তারিখে মওলানা ভাসানী সরকারকে সমর্থন দেন। এদিন পাকিস্তান ঘোষণা করে তারা শীঘ্রই বাংলাদেশে তাদের দুতাবাস খুলতে যাচ্ছে। ২০ নভেম্বর এরশাদ সেনাবাহিনীর উপ সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। ২৩ নভেম্বর জিয়া আবারও বেতার ভাষণ দেন। এদিন জাসদের প্রায় সকল শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হন। ২৬ তারিখ জাসদের বিপথগামী একটি কম্যান্ডো দল ভারতের রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে অপহরনের ব্যার্থ চেষ্টা চালায়। একই দিন রাষ্ট্রপতি সায়েম উপদেষ্টাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেন। জিয়াকে দেয়া হয় অর্থ, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, তথ্য তাওয়াব পান বিমান, ডাক ও তার, পেট্রোলিয়াম,খাদ্য, স্বাস্থ্য। ২৭ তারিখ উপদেষ্টাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক আইনে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ভাসানী সন্তোষে সভা ডাকেন। অতঃপর ভাসানী একাধারে সভা সমাবেশ করতে থাকেন সমাবেশের ভাষা একেবারেই সরকারী মুখপাত্রের মত। 

৬ ডিসেম্বর সরকার রাত ১২ টা থেকে ৬ ঘণ্টার সান্ধ্য আইন জারী করে। ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় পাক রাষ্ট্রদূত খুরশিদের নিয়োগ প্রকাশ করা হয়। খুরশিদ সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন পূর্ব পাকিস্তানে চাকুরি করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বরে সাভার স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি সায়েম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জিয়া সেনাপ্রধান হিসেবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাহিরে জিয়া প্রথম সফর করেন রাঙ্গামাটিতে সাথে ছিলেন বিনিতা রায়। ২৪ ডিসেম্বর সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান খন্দকার অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন। এদিন বেঙ্গল লেন্সার( ফারুকের বস) অধিনায়ক লেঃ কঃ মোমিনের বিদায় উপলক্ষে অফিসারস মেসে প্রীতি ভোজ হয়। ২৯ ডিসেম্বর সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের বিচার শুরু হয়। এদিন রাষ্ট্রপতি সায়েম তিন উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সাথে বৈঠক করেছেন। ৩০ ডিসেম্বর ভাসানী পুত্র নাসের খান ভাসানী অভিযোগ করেছেন বাকশালীরা বাংলাদেশের সব সম্পদ ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। জিয়ার উদ্যোগে ৩১ ডিসেম্বর সরকার দালাল আইন বাতিল করে। 

১ জানুয়ারী শফিউল্লাহ মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। ২ জানুয়ারী জহিরুদ্দিন পাকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ফজলে এলাহির কাছে পরিচয়পত্র দাখিল করেন। বিভিন্ন শহরে প্রতিষ্ঠানে জহির উদ্দিনের ব্যাপক সংবর্ধনা। ১৪ জানুয়ারী সরকার দরিদ্র লোকদের আর্থিক সাহায্য এর বিনিময়ে দেশে ব্যাপক হারে ভেসেকটমি করা শুরু করে। আন্তজার্তিক বন্ধাত্তকরন কর্মসূচীর প্রকল্প পরিচালক ঢাকায় অবস্থান করছেন। ১৫ জানুয়ারী সামরিক আদালতে আব্দুস সামাদ আজাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বিচার করতে সরকার সময় নেয় মাত্র ১৬ দিন। ৮ জানুয়ারী সরকার নতুন বিধি জারী করে যে সামরিক আইনের সমালোচনা করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড এর বিধান করে। আরেকটি বিধিতে বলে বাড়ী ভাড়া বৃদ্ধি করলে ৫ বছরের জেল। ১৬ জানুয়ারী সরকার তিন সচিবকে বরখাস্ত করে ২ জনকে অবসর দেয়। ১৭ জানুয়ারী বাংলাদেশে পাক রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ হয়। ২৩ জানুয়ারী সাবেক এমপি চিত্তরঞ্জন সুতারের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। ৩১ জানুয়ারী ছাত্র হত্যা মামলায় শফিউল আলম প্রধান সহ ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। ১ ফেব্রুয়ারী কাদের সিদ্দিকি বাহিনীর তৎপরতা নিজ চোখে দেখার জন্য মওলানা ভাসানী ইন্দিরা গান্ধীকে সীমান্তে আমন্ত্রন জানান। ৪ ফেব্রুয়ারী জামালপুরে কাদেরিয়া বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ভাসানীর বিডিআর পুলিশকে নির্দেশ। ১৪ ফেব্রুয়ারী মওলানা ভাসানী দিনাজপুরে সীমান্ত পরিদর্শন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী আলাদা আলাদা ভাবে সায়েম জিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারী রাজাকার কাসেমের জানাজায় মোস্তাকপন্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান, সোহরাব এবং আওয়ামী লীগ নেতা মিজান চৌধুরী অংশ নেন। ১ মার্চ চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নতুন ইউনিট ১৮ বেঙ্গলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিয়া। ২৬ ফেব্রুয়ারী প্রেসক্লাবে সপরিবারে জিয়ার ভোজসভায় অংশগ্রহন। সবাই স্ত্রী পাশে নিয়ে আসন নিলেও জিয়া এবং বেগম জিয়ার মাঝে বসেন এনায়েতুল্লাহ খান। ৩ মার্চ জাতীয়তা বাঙ্গালীর পরিবর্তে বাংলাদেশী ঘোষণা করা হয়।

৭ মার্চ সোহরাওয়ারদি উদ্যানে সিরাত মাহফিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের ভাষণ। সভায় ডঃ মীর ফখ্রুজ্জামান, মোঃ জমির, মোসলেহ উদ্দিন, দেওয়ান মোঃ আজরফ, জামাতের মওলানা মাসুম, জামাতের বিচারপতি বাকের, বিএ সিদ্দিকি, শর্ষিনার পীর, চর মোনাই এর পীর বক্তব্য দেন। এরা সবাই ৭১ এ পাকিস্তানের দালাল ছিলেন। টিএসসিতে বক্তব্য দেন রাজাকার পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া। ৮ মার্চ সরকার মশক নিধনে বিমান ব্যাবহার করে। ১০ মার্চ জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন বর্তমান পাকিস্তান আর ৭১ এর পাকিস্তান এক নয়। ১৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্দেশনে রাজাকার মওলানা মান্নান বক্তব্য দেন। পল্টনে পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া, মওলানা আজিজুল হক নেসারাবাদি, মওলানা মান্নান, মওলানা মতিন (এ রাজাকার জাসদে যোগ দিয়েছিলেন) ভাষণ দেন এরা সবাই ৭১ এ পাক দালাল ছিলেন। ১৮ মার্চ গাজী গোলাম মোস্তফাকে ১০ বছর শেখ আজিজকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২৩ মার্চ শোলাকিয়ায় তাওয়াব ইসলামি আদর্শ অনুসরনের জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। ২৯ মার্চ সুতা মামলায় লতিফ সিদ্দিকির ১৪ বছরের জেল হয়। ১ এপ্রিল খুলনায় জিয়ার ভাষণ। ৪ এপ্রিল জয়পুরহাটের মহিপুরে ভাসানীর মহা সমাবেশ। ৩০ এপ্রিল তোয়াবের পদত্যাগ। ১ মে সোহরাওয়ারদি উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশে জিয়ার ভাষণ। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির অনুমতি দেয়া হয়। ১১ মে ইস্তাম্বুলে ইসলামিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে জিয়া যোগ দেন। ২০ মে ভাসানী ফারাক্কা লং মার্চ করেন। ভাসানী অবশ্য জীপে ভ্রমন করে ছিলেন। ২২ মে দিনাজপুরে জিয়া জনসভা করেন।২৮ মে রাজনৈতিক দল বিধি জারী করে সরকার। ৩০ মে ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি দেয়া হয়। ২৪ জুন চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রান হিসেবে শিশুদের ২টি করে বিস্কুট দেয়া হয়। 

৩০ জুন বঙ্গভবনে অর্থমন্ত্রী হিসেবে জিয়া ৭৬ সালের বাজেট উপস্থাপন করেন। টিক্কা খান ৭১ সালে বঙ্গভবনে যেরূপ বাজেট পেশ করেছিলেন অনুষ্ঠানটি ছিল হুবুহু তার কপি। সংসদ না থাকায় উপস্থাপিত বাজেট পাশ বলে গণ্য হয়।  ৬ জুলাই চট্টগ্রামে মসজিদে আল ফালাহ উদ্বোধন করেন জিয়া। রাজাকার রফিকুল্লাহ চৌধুরী মসজিদ কমিটি প্রধান হিসাবে মসজিদের চাবি গ্রহন করেন। এদিন করাচী ঢাকা বিমান সার্ভিস চালু হয়। ৮ জুলাই ঢাকায় পাকিস্তানী হাবিব ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট এর অনুমোদনের সাথে সাথেই ১৭ জুলাই সরকার উৎখাতের মামলার রায়ে তাহেরের ফাঁসীর আদেশ হয়। অন্যান্য নেতাদের মেয়াদী কারাদণ্ড হয়। সামরিক বাহিনীতে উস্কানির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে সামরিক বিধি জারী / সংশোধন করা হয়। সবুর নতুন দল গঠন করছেন। ৪ আগস্ট আপত্তিকর প্রচার পত্র ছাপায় কামরুল ইসলামের (পরে মন্ত্রী) তিন মাসের কারাদণ্ড হয়। ৫ আগস্ট যশোরে ্নতুন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দেন জিয়া । ৭ আগস্ট সরকার উৎখাত মামলায় বিদেশী সহ ১৭ জনের বিচার শুরু। ভাসানীকে দেখতে হাসপাতালে যান জিয়া। ৯ আগস্ট ৭০ সালের আওয়ামী লীগ এমএনএ থেকে রাজাকার বনে যাওয়া পাবনার হোসেন মনসুর জিয়ার সাথে দেখা করেন। আগস্ট জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দরে জিয়া ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষনের অভিযোগ আনেন। ১৭ আগস্ট জামালপুরে সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে ৫ ৭৫ প্রতিরোধ যোদ্ধার মৃত্যু ও বিশ্বজিৎ নন্দী সহ কয়েকজন গ্রেফতার হয়। ১৫ আগস্ট কলম্বোয় জিয়া টিটো বৈঠক হয়। ৩১ আগস্ট কুমিল্লায় নতুন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠায় জিয়া। ২১ সেপ্টেম্বর সরকার উৎখাত মামলায় বিদেশী পিটার কাসটার সহ জাসদের শীর্ষ ১৭ নেতার ও ক্যাডারের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ২২ সেপ্টেম্বর ডেমোক্র্যাটিক লীগের দল হিসেবে অনুমোদন লাভ। ১ নভেম্বর যশোরে খাল কাটা কর্মসূচী শুরু। ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের দল হিসেবে অনুমোদন লাভ।

 

Posted by Dulok Ahmed on Tuesday, August 20, 2019

 

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!