You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.29 | পাক জঙ্গীশাহীর বর্বরতার প্রতিবাদে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধির পদত্যাগ | দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

পাক জঙ্গীশাহীর বর্বরতার প্রতিবাদে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধির পদত্যাগ

(স্টাফ রিপাের্টার) 

সাধারণ মানুষের উপর পাক জঙ্গীশাহীর অত্যাচারের দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি শ্ৰীটাইগার-ম্যান পদত্যাগ করেছেন। শ্ৰীটাইগারম্যান একজন মার্কিন নাগরিক। মঙ্গলবার কলকাতায় ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘােষণা করে তিনি বলেন গােটা ঢাকা শহরই যেন বন্দীশালা। পথে পথে সামরিক বাহিনী প্রাচীর খাড়া করেছে। সর্বত্র শুধু ত্রাস, আতঙ্ক। ভয়ে কেউ কারাের সঙ্গে কথা বলেন না। এই ফ্যাসিসট বর্বরতা অসহ্য।শ্ৰীটাইগারম্যান বলেন, ছয় মাস পরে ঢাকায় ফিরে চিনতেই পারলাম না। শহরটাকে জঙ্গীচক্র কী করেছে? হাজার হাজার বাঙালী আটক। তাই একজন স্থপতি, একজন মানুষ হিসাবে আমি পদত্যাগ করলাম।

মঙ্গলবারই বিশ্বব্যাঙ্কের সদর দফতরে এক তারবার্তায় টাইগারম্যান এই পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় প্রতিটি বিদেশী নাগরিক এখন এই মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।

কলকাতার একটি হােটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বারবার বলেন, আমি মানুষ। ফ্যাসিস্ট ডিকটেটর মানুষকে শুধু হত্যাই করছে না-তাদের সর্বস্ব জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

শ্ৰীটাইগারম্যান গত ১৮ সেপটেম্বর শিকাগাে থেকে ঢাকায় কাজে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গত ছ’বছরে অন্তত ১৮ বার তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ঘুরেছেন। গত বছর নির্বাচনের পর ডিসেম্বর মাসে শিকাগাে যান। তারপর এই এলেন।তিনি বলেন, একই দৃশ্য। ঢাকা বিমানবন্দেরে পৌঁছে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছি। চারদিকে থমথমে-ভাব। বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বংসী কামান। শুল্ক বিভাগের কাজ করছে সামরিক বাহিনীর লােক। তারা দেহ তল্লাসি করে বিদেশীদের অপমান করছেন। তিনি হােটেল ইন্টারকনটিনেনটালে ছিলেন-এখানেও তাকে বারবার বিরক্ত করা হয়।তাঁর বিবরণ, সারা, শহরের সেই পরিচিত বড় বড় বাড়িগুলি ধ্বংসস্তুপে পরিণত। রাস্তায় বড় বড় দেয়াল করা হয়েছে। শত শত চেক পােস্ট। ঢাকা রেডিও, সরকারী ভবনের সামনে ২০-২৫ ফুট উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তায় কোন মানুষ কথা বলে না। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে শহরে অন্ধকার নেমে আসে। এই সময় রাস্তায় কোনও লােক চলাচল করে না।

২৪ ঘণ্টা সামরিক বাহিনী, পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ, জামায়েত স্বেচ্ছাসেবকরা বন্দুক, স্টেনগান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সর্বত্র ভয় মাঝে মাঝে গােলাগুলি বিনিময়ের আওয়াজ শােনা যায়। তার পুরানাে বন্ধু এবং সহকর্মীরা ভয়ে তার সঙ্গে কথা বলেননি।

২৯ সেপ্টেম্বর ‘৭১

Reference: ২৯ সেপ্টেম্বর  ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা