You dont have javascript enabled! Please enable it! দা ইভনিং স্টার , এপ্রিল ১৭, ১৯৭১ সম্পাদকীয় পূর্ব পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ - সংগ্রামের নোটবুক

দা ইভনিং স্টার , এপ্রিল ১৭, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
পূর্ব পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ

সব সূত্র যাচাই করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে পূর্বপাকিস্তানের সর্বস্তরে এখন যা চলছে তাকে হত্যাযজ্ঞ হিসেবেই অবিহিত করতে হবে। সর্বস্তরে চলছে চিহ্নিত বাঙালি পুরোনো এবং নতুন নেতাদের হত্যাসহ স্বাধীনতাকামি বাঙালিদের দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা।এর ফলে সাময়িকভাবে কার্যকরীভাবে স্বাধীনতার দাবি একটু থিতু হয়ে এসেছে।

মুক্ত বাংলার স্বাধীনতার ডাক দেয়া রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে বিচারের অপেক্ষায় কারা -অন্তরীণ রয়েছেন। আধুনিক এবং সুসজ্জিত ৮০,০০০ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিপ্লবী বাংলার অস্ত্রস্বল্প, খাদ্যস্বল্প সেনাবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ সুবিধা করতে পারছেনা বরং এরকম খবর আসছে যে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে এবং কিছু সূত্র বলছে এই সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টার যিনি ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে গেছেন বলছেন যে সেনাবাহিনী করাচি থেকে নির্বাহী আজ্ঞামতে প্রকৌশলী, চিকিত্সক, অধ্যাপক এবং ছাত্রদের চিহ্নিত করে হত্যা করেছে এবং করে চলেছে এবং এর মূল হীনলক্ষ্য ভবিষ্যত বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে ফেলা । শুধু এটাই নয় সেনাবাহিনী ভবিষ্যত অর্থনীতিকে বিনষ্ট করবার পরিকল্পনায় খাদ্য গুদাম, প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র এবং পাটের কারখানাগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এধরনের সেনা অভিযানের খবরে যদিও অত্যুক্তি থাকে এবং ধরেও নেয়া হয় যে পূর্ব পাকিস্তানের বিপ্লবী সেনারা পরাজিত হবে কিন্তু যেসব খবর আসছে সেগুলো হৃদয়বিদারক এবং নৃশংস। যারা এই ঘটনার প্রতক্ষদর্শী নন তারাও এসব রিপোর্টে আন্দোলিত না হয়ে পারছেন না। এই পরাজয় পূর্ব পাকিস্তানের সর্বসাধারণের জন্য আরো বড় আঘাত হয়ে আসবে কেননা খুব নিকট অতীতেই তারা ভয়াবহ বন্যা, রোগ আর দুর্ভিক্ষের সাথে লড়াই করেছে। জয়ের ফলে পশ্চিম পাকিস্তান এই রক্তাক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন অভিযানে সম্ভাব্য সাফল্য দাবি করবে এবং পাঞ্জাবি আর পাঠানদের সাথে বাঙালিদের যে দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা তা আবার সামনে চলে আসবে।

আমেরিকার সরকার এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কোনো প্রতক্ষ পদক্ষেপ নিচ্ছে না, অথচ তাদের এ ব্যাপারে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানকে এই হত্যাযজ্ঞ, যেখানে এটাকে এখন গণহত্যা বলে অবিহিত করা যায়, বন্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা উচিত। শুধু তাই নয়, যুদ্ধ বন্ধ হলে যারা এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে বেঁচে যাবে তখন তাদের বৃহদাসরে খাদ্য সরবরাহ, চিকিত্সা এবং পুনর্বাসন নিয়েও তাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।