You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২৬শে জুলাই, শুক্রবার, ৯ই শ্রাবণ, ১৩৮১

গ্রিসের রাজনীতির পট পরিবর্তন!

গ্রিসের রাজনীতিতে অবশেষে পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘ ৭ বছর পর আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। গ্রিক নেতা কনস্টানটাইন ক্যারাম্যানলিস এগার বছর স্বেচ্ছায় নির্বাসিত ছিলেন প্যারিসে। বিজয়ীর বেশে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ১৯৬৭ সালে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পর এটাই প্রথম গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হতে চলেছে। গ্ৰীস সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে জনগণ উল্লসিত হয়ে জয়ধ্বনি দিতে থাকে এবং নির্বাচিত নেতা ক্যারাম্যালনিস প্রত্যাবর্তন করলে হাজার হাজার লোক বিমানবন্দরের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাগত জানায়। তাদের স্লোগান ছিল ‘গ্রিসকে রক্ষা করুন, জনগণ আপনার পক্ষে।’ মিঃ ক্যারাম্যানলিস এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ সমগ্র জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন–‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমি আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি, সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।’ সামরিক শাসন বহাল থাকাকালে গ্রিসের বহু রাজনীতিক ও সংস্কৃতিসেবী নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। তিনি সবাইকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যেই প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও নাগরিকগণ দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পূর্বে মিঃ ক্যারাম্যানলিস বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। জানা গেছে–গ্রিক সেন্টার ইউনিয়ন পার্টির নেতা ইউরিয়স কে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় অধিকাংশ সদস্যই একাধিক প্রাক্তন বেসামরিক প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতিমধ্যেই তুর্কি প্রধানমন্ত্রী মিঃ বুলেভ ইসেণ্টিট গ্ৰীক প্রধানমন্ত্রী মিঃ ক্যারাম্যানলিসকে প্রকৃত বন্ধু বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে বিচ্ছিন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে গ্রিসের নির্বাসিত রাজা কনস্ট্যানটাইন লন্ডনের একটি হোটেলে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন। তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী ক্যারাম্যানলিস হলেন ন্যাশনাল রেডিক্যাল ইউনিয়ন দলের প্রতিষ্ঠাতা। সাইপ্রাস সংকটের কালে গ্রিক সামরিক সরকারের পদত্যাগের ফলে ৬৭ বছর বয়স্ক প্রবীণ রাজনীতিক কন্সট্যান্টাইন ক্যারাম্যানলিসকে সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়। তিনি গ্রিসের প্রেসিডেন্ট ঘিঁজিকিসের কাছে নয়া প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেছেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের এই খবর প্রকাশিত হবার পরপরই রাজধানী এথেন্সে উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে। পথে পথে হাজার হাজার মানুষ গভীর আনন্দে বেরিয়ে আসে। তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা পথে পথে নাচ-গান অপারেশন চুম্বনে চুম্বনে উচ্ছল হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করার পর মিঃ ক্যারাম্যানলিস যে ভাষণ দান করেন তাতে উল্লেখ করেন–‘গণতন্ত্রের নামে কোন তামাশা আর নয়, আমি চেষ্টা করব গ্ৰীজে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। আমি জানি গ্রিসের জনগণ কি সংকটের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। আমি বিশ্বাস করি, গ্রিস জনগণ ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন। আমি আরো বিশ্বাস করি, গ্রিস সেনাবাহিনীর সত্যি সত্যিই ব্যারাকে ফিরে যাবে এবং দীর্ঘ ৭ বছর পর অসামরিক সরকারকে স্বাধীনভাবে কাজ করে যেতে দেবে।’ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর নির্বাসিত এবং স্বনির্বাসিত নাগরিক বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও শিল্পীগণ দেশে ফিরে এসেছেন। যে সকল প্রগতিশীল ও বামপন্থী পত্র পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ছিল সেগুলো আবার প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। সাইপ্রাসের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আর্চবিশপ মাকারিওস সামরিক সরকার পদত্যাগ ও বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সাইপ্রাসের সামরিক অভ্যুত্থান ও মেকারিয়সের ক্ষমতা গ্রহণের পর গ্রিসে সামরিক সরকারের পতন হয়। এবং নতুন বেসামরিক সরকারের কাছে গ্রিস সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে বেশ নাটকীয় উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ সাত বছর পর গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। এটা অবশ্যই শুভ ঘটনা। আমরা আগ্রহের সঙ্গে গ্রিসবাসীর গণতন্ত্রের পথে উত্তরনকে পর্যবেক্ষণ করবো। সামরিক বাহিনী যথার্থই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করুক–এটাই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের আশা। নতুন সরকার গ্রিসের জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন করে প্রগতির পথে অগ্রসর হবে বলে আমরা আশা রাখি। অবশ্য ভবিষ্যতেই তাদের চলার পথ গতি নিরূপণ করবে। বাস্তবেই তাদের সদিচ্ছা প্রমাণিত হবে।

অলিগলি রাজপথ

প্রায়শঃই দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় দেখা যায় বর্ষণসিক্ত রাজধানীর রাজপথ গুলোর ছবি। ছবি দেখে মনে হয় আফ্রিকা মহাদেশের চিত্র বিচিত্র জীব জেব্রার অংশবিশেষ অথবা গ্রামাঞ্চলের খানাখন্দ, ডোবা। রাস্তায় পানি জমে কাদায় কাদায় একসার হয়ে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে পথচারী ও যানবাহন কোনটার পক্ষেই নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে চলাফেরা করা মুশকিল। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিপন্ন হতে পারে পথচারীর জীবনও।
এটাতো স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, বাংলাদেশে বৃষ্টি হবেই। আষাঢ় শ্রাবণ মাসের প্রচণ্ড বর্ষায় মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। এই বর্ষার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর বর্ষার সময় ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট গুলিতে ব্যাপক ভাঙ্গন ও খানা খন্দকের সৃষ্টির সম্ভাবনাও থাকে। সুতরাং এ ব্যাপারে পূর্বাহ্নে একটু সতর্ক হলেই তো রাস্তাঘাটের ভাঙ্গনও রোধ করা যায়।
অনেক সময় দেখা যায় যে, রাস্তাঘাট মেরামতের অনুকূল পরিবেশ না থাকা সত্বেও প্রচণ্ড বর্ষণের মধ্যে রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ চলছে। যদিও প্রবল বারিপাতের মুখে ওই সমস্ত সুরকি, বালি, নুড়ি কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে সেটাই বিবেচ্য।
রাজধানীর রাজপথ ও অলিগলির দুর্দশার নেপথ্য কারণগুলো নিয়ে অনেকবারই লেখালেখি হয়েছে। দুর্দশার কারণ গুলো হল পৌরসভার কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, স্বাধীনতা-উত্তর রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্তভাবে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি এবং এক শ্রেনীর ঠিকাদারদের কারচুপি। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের ঠোকাঠুকি। পানি দপ্তর, টেলিফোন দপ্তর ও গ্যাস দপ্তরের অস্ত্রোপচার চলে প্রায়শঃই। এমনও দেখা গেছে যে, সদ্য নির্মিত অথবা সংস্কারকৃত চকচকে রাজপথের বুকে শুরু হয়েছে উল্লেখিত দপ্তরগুলোর খননকার্য। কোন দপ্তর পানির লাইন বসাবেন, কোন দপ্তর টেলিফোনের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসাবেন, অথবা গ্যাস লাইন বসানো হবে ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়তই খোঁড়াখুঁড়ি চলে। কোন দপ্তর থেকে কে কখন আসবেন রাস্তাঘাটে তা কেউ বলতে পারে না। ফলে সারা বছর ধরেই চলে খোড়াখুড়ির কাজ। ফলে রাজধানীর ৪শ’ ৪০ মাইল রাজপথ বিচিত্র আকার ধারণ করে।
খোঁড়াখুঁড়ির উপদ্রব ছাড়াও আরও উপদ্রব রয়েছে। তা হলো নাগরিক দায়িত্বহীনতা। কারো বিয়ের উৎসব বা কারো বিশেষ উৎসব শুরু হলেই রাস্তায় বাঁশ পোতাঁ খুঁটি পোঁতা আরম্ভ হয়ে যায়। কাজ এই খোঁড়াখুঁড়িতেই ইতস্ততঃ গর্তের সৃষ্টি হয়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে রাস্তায় পাশে অসংখ্য ইঁদুরের গর্তের মতো গর্ত।
এদিকে আবার গোঁদের উপর বিষফোড়ার মত একশ্রেণীর ঠিকাদারদের অদৃশ্য হস্তের কারসাজিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলোতে ভাঙন ধরে। জানা গেছে যে, এক শ্রেণীর অসাধু ঠিকাদাররা রাস্তাঘাট মেরামতের সময় ব্যবহৃত সুরকি, নুড়ি, বালি, ও ‘বীটুমীন’–এর যথাযথ মিশ্রণে কারচুপি করে থাকে। তাছাড়া ইদানিং বিটুমিনের ধারণ শক্তিও তেমন জোরালো নয়। সামান্য গরমেই তা গলে যায়। ফলে রাস্তাঘাট মেরামত বা নির্মাণের অল্পদিনের মধ্যেই ফাটল ধরে এবং অধিক চাপ বা বর্ষণে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা পৌরসভাকেই সব কিছুর জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী করতে হয়। রাস্তাঘাট মেরামত বা নির্মাণের দায়িত্ব যখন পৌরসভার তখন এ দায়িত্ব এরাবার কোন উপায় নেই তবে সমস্যা পৌরসভারও রয়েছে। পৌরসভা নিজস্ব তহবিল থেকে রাস্তাঘাট, নর্দমা, বাজার মেরামত করে থাকেন এবং এ জন্য ইতিমধ্যেই ৭০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকাও খরচ করা হয়েছে। কিন্তু এই অর্থও পর্যাপ্ত নয় এবং তাও করদাতাদের করের উপর নির্ভরশীল। সবকিছু দেখেশুনে বলতে হয় যে, রাজধানীর রাজপথ অলিগলির দুর্দশা মোচন করতে হলে ‘ভাগের মা গঙ্গা পায়না’ নীতি পরিহার করতে হবে। অন্ততঃ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে একটা সুষ্ঠু ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!