You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২২শে জুন, রোববার, ৮ই আষাঢ়, ১৩৮১

পুষ্টিহীনতার অভিশাপ

পুষ্টিহীনতা বাংলাদেশের জন্যে এক নিদারুণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শতকরা ৭০ জন মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
জানা গেছে যে, পুষ্টিহীনতার কারণে এ দেশের ১ থেকে ৫ বছর বয়সের প্রতি ১ শত শিশুর মধ্যে ২৬ জন মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া প্রতিবছর কম করে হলেও ৫০ হাজার শিশু দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, অবিলম্বে এ ব্যাপারে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের শতকরা ৬০ জন নরনারী ও শিশুর স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতা লোপ পেতে পারে।
স্থানীয় একটি দৈনিকে পুষ্টিহীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদন এর জনৈক বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, উন্নতিশীল ও উন্নয়নকামী দেশগুলোর মধ্যে আমাদের দেশে এখন পুষ্টিহীনতায় মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক। বিশেষজ্ঞরা জানান, সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রয়োজনীয় আমিষ ও শক্তির অভাবে এদেশের ১ থেকে ৫ বছর বয়সে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে গড়ে ২৬০ জন শিশু অকাল মৃত্যুবরণ করছে। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এ কারণে ১ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুদের মৃত্যুর হার হচ্ছে প্রতি এক হাজার এ ১০১.৮ জন। মেক্সিকোতে ৭৪ দশমিক ৮ জন। কানাডায় ২৮ দশমিক ৪ জন। আমেরিকায় ২৬ দশমিক ৪ জন। জাপানে ২৩ দশমিক ৭ জন এবং ইংল্যান্ডের ২২ দশমিক ২ জন।
স্পষ্টতঃই বোঝা যাচ্ছে যে, পুষ্টিহীনতার অভাবে পড়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকরা ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামগ্রিকভাবে সারাদেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। কথায় বলে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। পুষ্টিহীনতার অর্থই হলো স্বাস্থ্যহীনতা। স্বাস্থ্যহীনতার অর্থই হলো উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। একের সঙ্গে অন্যের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা যদি একজন শ্রমিক কৃষক হারিয়ে ফেলেন তাহলে তার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি আশা করা অলীক কল্পনা মাত্র।
শুধু বাংলাদেশ কেন প্রায় সকল অনুন্নত দেশগুলোই আজ পুষ্টিহীনতার শিকারে পরিণত হয়েছে। খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাই মূল চিন্তাই হলো কোন রকমে উদরপূর্তি করা। এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুষ্টিহীনতার অভিশাপ থেকে জনসাধারণকে মুক্ত করা সহজসাধ্য কাজ নয়। কোনো সরকারের পক্ষেই এককভাবে তা করা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে জনসাধারণ ও সরকার যদি সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো সমস্যার একটা সমাধান হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগের। বাংলাদেশের জনস্বার্থকে পুষ্টিহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুদুরপ্রসারী ব্যাপক পরিকল্পনা। পরিকল্পিত উপায়ে সারাদেশে শাকসবজির ফলন বাড়াতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে আমিষের অভাব পূরণে ‘ডাল’ কার্যকর। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ‘নিউট্রিশন ইনস্টিটিউট’ জাতীয় একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে পুষ্টিহীনতার অভিযোগ সম্পর্কে সজাগ করে দেওয়া হবে। পরিশেষে একথা বলা প্রয়োজন যে, পুষ্টিহীনতার পেছনে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভেজালের দৌরাত্ম্যে জনসাধারণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ভেজাল খাবার খেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে এমন দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই । সুতরাং সরকারকে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল বন্ধ করার জন্য সক্রিয় ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে আইনের ফাঁক দিয়ে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দানকারীরা অনায়াসে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা। অন্যথায় পুষ্টিহীনতার গোদের ওপর ভেজালও বিষফোঁড়া হয়ে মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে সমগ্র দেশবাসীকে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!