বঙ্গবন্ধু মামলার হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে যা আছে
স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় তিন আসামিকে।
27/01/2010
স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় তিন আসামিকে।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম এ রায় দিয়েছিলেন।
হাইকোর্টের সেই চূড়ান্ত রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে দেওয়া নিু আদালতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে হাইকোর্ট।
রায়ের শেষ অংশে হাইকোর্ট অভিমতে বলেছিল, ১২ সেনা কর্মকর্তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্মীকরণ করা হয়েছিল বলে সরকার পক্ষ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে। তারা হল, মেজর শরিফুল হক, মেজর আজিজ পাশা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর বজলুল হুদা, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন, মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ক্যাপ্টেন মাজেদ, লে. নাজমুল হোসেন আনসার, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও অপর একজন।
অভিমতে বলা হয়, এই সাক্ষ্য প্রমাণ করে না যে, দণ্ডিত আসামিরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পুরস্কার হিসেবে তা পেয়েছিলেন। কারণ, ওই সাক্ষ্য ঘটনার প্রায় এক বছর পরের। এর মধ্যে অপর তিনটি ঘটনা ঘটে গেছে।
এর একটি জেলহত্যা, অপর দু’টি ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা। পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এই সুনির্দিষ্ট ‘ইনফারেন্সে’ আসা যায় না যে, সেই ঘটনার সকালে, এই আসামিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
অভিমতে আরও বলা হয়, সরকার পক্ষ এই আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আসামিরা সেই সন্দেহের সুবিধা পাবে, যদি না সরকার পক্ষ অপর কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য দিয়ে সেই সন্দেহ দূর না করে। কিন্তু বর্তমান মামলায় সেই সন্দেহ দূর করার জন্য সরকার পক্ষ কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
রায়ে বলা হয়, ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মূলনীতি হলো, আসামি দোষী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরে নিতে হয়।
অভিমতে আরও বলা হয়, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অপরাধ যদিও একটি বিদ্রোহ প্রকৃতির, তবু অপরাধের প্রকৃতি আবেগ দিয়ে প্রভাবিত নয়। আমরা কখনোই নিশ্চিতভাবে জানব না, দণ্ডিতরা ছাড়া আর কে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাই এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ সতর্কতার সঙ্গে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
রায়ে বলা হয়, বর্তমান হত্যা ও ষড়যন্ত্রের এ মামলায় বেশিরভাগ সাক্ষীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযুক্তদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে বের করতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
হাইকোর্ট বলেছে, লে. কর্নেল ফারুক ও লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ, বিভক্ত রায়ে দুই বিচারপতি সেগুলো সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বলে একমত হতে পারেননি। তাই আমিও সেগুলো বিবেচনার বাইরে রাখছি।
লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদের (আর্টিলারি) অপর একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রমাণিত হয়েছে। তাই এই জবানবন্দি কেবল তার বিরুদ্ধে যাবে। তবে মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে জড়িয়ে তার এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিয়ে সমর্থিত না হওয়ায় এই তিন আসামির বিরুদ্ধে তা বিবেচনায় আনা হল না।
এই একই বিবেচনায় ঢাকার দায়রা জজ আদালত এ মামলায় দফাদার মারফত আলী ও এলডি আবুল হোসেন মৃধাকে খালাস দিয়েছিল।
সরকার পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেওয়া হল। তাদের মৃত্যুদন্ডের রায় বাতিল করা হল।
লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে দায়রা আদালত সঠিকভাবেই মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হল। লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) আপিল খারিজ করা হল।
হাইকোর্ট এর আগে ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিভক্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন নিু আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পাঁচজনকে খালাস দিয়েছিলো।
অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত রায় দেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআই/১০০৪ ঘ.
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি বহাল
ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
ফলে হত্যাকারীদের ফাঁসির হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলো।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহার সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চ সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে ঐতিহাসিক এ মামলায় রায় ঘোষণা করে।
বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে বিচারপতিরা এজলাসে বসেন। বিচারপতিরা ১১টা ৪৮ মিনিটে রায় পড়া শুরু করে ১১টা ৫৫ মিনিটে শেষ করেন।
আদালত বলেন, “আমাদের অভিমত হল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি ছয় আসামির বিষয়ে নিষ্পত্তি করে কোন ভুল করেননি।
“বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ মামলা দায়েরের বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যাখ্যা গ্রহণ করে আদালত কোনো ভুল করেননি।”
আরও বলা হয়, “আসামিরা ঘটনার সময় একটিভ সার্ভিসে ছিলেন না। তাই সেনা আইনে বিচার না করে সাধারণ আইনে বিচার করায় আইনি কোন ভুল ছিলনা।
“বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিদ্রোহের জন্য নয়।
রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এসব কারণে আসামিদের আপিল খারিজ করা হল।”
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ন্যায় ও সত্যের জয় হয়েছে।”
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “জাতি ন্যায় বিচার পেয়েছে।”
আসামি পক্ষের একজন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “হাইকোর্টে পুরো রায় বহাল রয়েছে। পলাতক সাতজন ফিরে এলে বিলম্ব মার্জনার আবেদন করতে পারবে।”
মামলার বাদি আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম বলেন, “রায়ে আমি খুব খুশি। আজ জাতির প্রত্যাশা পূরণ হল। আমার সঙ্গে সঙ্গে সারা বাংলার মানুষও খুশি।”
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, “৩৪ বছর পর আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হল।”
রায় ঘোষণার পরপরই রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক ১৫ আগস্টে বাবা-মা হারানো বঙ্গবন্ধুর নাতি শেখ ফজলে নূর তাপসকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠেন।
রায় ঘোষণার খবরে আদালত প্রাঙ্গণসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাগত মিছিলের খবর আসছে।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আপিল বিভাগের ১ নং বিচারকক্ষে এ মামলার রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার সময় আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আদালত কক্ষের বাইরেও উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ পালিয়ে আছেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে।
পলাতক অবস্থায় আরেক আসামি আব্দুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যায়।
ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে সিসিটিভি, আর্চওয়ে। র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা আদালতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের রায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে খালাস দেন পাঁচ আসামিকে। অপরদিকে অপর বিচারপতি নিু আদালতে দেওয়া ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন।
ঢাকা, জানুয়ারি ২৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে খালাস দেন পাঁচ আসামিকে। অপরদিকে অপর বিচারপতি নিু আদালতে দেওয়া ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন।
২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ বিভক্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন নিু আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পাঁচ জনকে খালাস দিয়েছিলেন।
অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত রায় দেন।
বিচারপতি মো. রুহুল আমিন তার রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে দেওয়া নিু আদালতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
অপরদিকে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তার রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।
বিচারপতি মো. রুহুল আমিন তার রায়ে বলেছেন, এই মামলার বিষয়বস্তু শুধু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নিহত তার আত্মীয়স্বজন হত্যাকাণ্ড। যদিও এর সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মনি ও মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যার তিনটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। সে তিনটি ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।
তিনি রায়ে আরও বলেন, ষড়যন্ত্রের অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকলেই হবে- যে কোনো ব্যক্তির কার্যক্রম, বিবৃতি ও লেখা অপরাধ সংগঠনে ষড়যন্ত্র করেছে। কোনো ব্যক্তি কথা বা কাজের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে পারে। সকল ষড়যন্ত্রকারীকে অভিন্ন উদ্দেশ্যে একমত হতে হবে।
বিচারপতি রুহুল আমিন রায়ে বলেন, দণ্ডবিধির ৩৪ ধারার অভিন্ন ইচ্ছার উপাদান হলো কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অপরাধমূলক কাজ করার জন্য কতিপয় ব্যক্তির মনের মিল। এরকম ইচ্ছা ঘটনাস্থলেও হতে পারে।
মামলা দায়েরের বিলম্বের যথেষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রায়ে তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কোর্ট মার্শালে বিচার করা হয়েছে বলে আসামিপক্ষের যুক্তি বিবেচনার অবকাশ নেই। কারণ, কোর্ট মার্শাল হওয়ার বিষয়ে কোনো নথি উপস্থাপন করা হয়নি।
বিচারিক আদালত দণ্ডিতদের ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে রায় দিয়েছেন সে বিষয়ে বিচারপতি মো. রুহুল আমিন রায়ে বলেন, এটা সত্য যে বিচারিক আদালত রায় কার্যকরের বিষয়ে প্রথম অংশে ‘একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন তা আইনে নেই। তাই ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি বাতিল করা হল। তবে অপর অংশে বিচারিক আদালত ‘ফাঁসিতে ঝুলাইয়া’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে কথা বলেছেন তা বিদ্যমান প্রথা বলে বহাল রাখা হলো।
বিচারপতি খায়রুল হক সাক্ষ্য-প্রমাণ আলোচনা করে তার রায়ের অভিমতে বলেছেন, স্বাধীনতার সময় থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সেনাবাহিনীকে অস্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে মেজর ডালিম তার বাড়ি তল্লাশি করে। এই কারণে মেজর ডালিম ও মেজর নূর চাকরি হারায়।
সাক্ষ্য-প্রমাণ আলোচনা করে তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের মার্চে কুমিল্লার বার্ড বা দাউদকান্দিতে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয় ফারুক-রশিদসহ মূল ষড়যন্ত্রকারীরা তা লালন করে। আর ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ পায় বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ডে।
বিচারপতি খায়রুল হক রায়ে বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে রয়েছে, ঘটনার সময় মেজর বজলুল হুদা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর নূর, মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সৈয়দ ফারুক রহমান ট্যাংক নিয়ে সেনানিবাস থেকে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরের দিকে যায়। মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মেজর ফারুক নাইট প্যারেডে ছিলেন। তিনি রায়ে দণ্ডিত অপর আসামিদের অবস্থান ও কার্যকলাপ তুলে ধরেন।
তিনি রায়ে আরও বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায়, আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা। এটি একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, এর ব্যাপক উদ্দেশ্য ছিল। হত্যাকারীরা জানত, এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই তারা একটি বিরাট ক্যানভ্যাসে পরিকল্পনা নিয়েছিল, যাতে এই হত্যাকাণ্ডের কেউ কোনো প্রতিবাদ না করতে পারে। হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা।
রায়ে বিচারপতি হক বলেন, যদিও কিছু আসামি হত্যাকাণ্ড স্থলের বেশ দূরে ছিল কিন্তু তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতিসহ অন্যদের হত্যা করা।
তিনি রায়ে আরও বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে আরও দেখা যায়, পুরো সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। কেবল ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার রেজিমেন্ট ও সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টের হাতে গোনা কিছু কর্মকর্তা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
রায়ের শেষ অংশে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছু অসন্তুষ্ট সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে। যেভাবে নৃশংস ও নির্দয়ভাবে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয় তাতে দণ্ড কমানোর কোনো সুযোগ নেই। দণ্ডিতদের কেউই অনুকম্পা পেতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালত ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আদেশে এও বলেছেন, ওই প্রক্রিয়া কঠিন হলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। আইনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অন্য কোনো বিধান নেই। তাই ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ আইনত নয় বলে সংশোধন করা হলো। দণ্ডিতদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ ধারার বিধানমতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমআই/১০০০ ঘ.
সাজা কমানোর আবেদন আসামি পক্ষের
24/01/2010
বঙ্গবন্ধু মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জনের সাজা কমানোর আবেদন জানিয়েছে তাদের কৌঁসুলি।
ঢাকা, জানুয়ারি ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জনের সাজা কমানোর আবেদন জানিয়েছে তাদের কৌঁসুলি।
রোববার আপিল বিভাগে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানিতে এ আবেদন জানান আসামি বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আল মামুন।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত শুনানি চলে।
মামুনের শুনানির পর সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।
শুনানিতে মামুন ১৫টি দিক (পয়েন্ট) তুলে ধরে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনার ইনডেমনিটি রহিত করা হলেও এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়নি।
“আইন বাতিল হলেও ওই ঘটনা তো বাতিল হয়নি। তাই এ বিষয়ে মামলা হতে পারে না। এটা আইনবিরোধী।”
১৫ আগস্টের ঘটনাকে বিদ্রোহ উল্লেখ করে মামুন বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর লোক নয়। তাই সামরিক আদালতে তার বিচার হবে না বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলো। কিন্তু তিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি অব্যশ্যই সামরিক বাহিনীর লোক। সে ক্ষেত্রে এ হত্যা মামলার বিচার সামরিক আদালতে না করে সাধারণ আদালতে করে আইন ভঙ্গ করা হয়েছে।”
প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে তিন খুনি
09/01/2010
বঙ্গবন্ধু মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কারাবন্দি পাঁচ খুনির মধ্যে তিনজন বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও এ কে এম মহিউদ্দিন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছে।(বিস্তারিত)
ঢাকা, জানুয়ারি ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কারাবন্দি পাঁচ খুনির মধ্যে তিনজন বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও এ কে এম মহিউদ্দিন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
অপর দুজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেনি।
তবে এ দুই জন কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, তাদের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় রিভিউর জন্য আবেদন করবেন।
খুনিদের মধ্যে ওই পাঁচজনই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।
তিনজনের ক্ষমার আবেদন রোববার সকালেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মহাপরিদর্শক। একইসঙ্গে যাবে রিভিউ আবেদন নিয়ে বাকি দুইজনের লিখিত বক্তব্যও।
রিভিউ আবেদনের বিষয়ে আসামি পক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আল মামুন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রিভিউ আবেদন করার জন্য আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সুযোগ রয়েছে।
কারা অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক জানান, বিধি অনুযায়ী মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষরের সাত দিনের মধ্যে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন জানাতে হয়। শনিবারই ওই সময় শেষ হলো।
তিনি বলেন, তিনজন প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করায় এবং বাকি দুজন রিভিউ আবেদনের কথা জানানোয় কারাবিধি অনুযায়ী তাদের ফাঁসির সব কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে।
“এরপরও যদি দুই জন প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করে, তাহলে তাও যথাযথভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে”, বলেন কারা মহাপরিদর্শক।
এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জবাব পাওয়ার পরই সময় গণনা শুরু হবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল ইসলাম জানান, এ সময়ের মধ্যে কারাবিধি অনুযায়ী দণ্ডিতরা সব সুযোগ-সুবিধা পাবে।
গত ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আপিল খারিজ করে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর গত ৩ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আবদুল গফুর আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন শনিবার নোয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অচিরেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হবে।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক ২২ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আসামিরা রিভিউ আবেদন করলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলেও ফাঁসি কার্যকর স্থগিত থাকবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, বিচারিক আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারির ২১ দিনের পর, কিন্তু ২৮ দিনের আগে ফাঁসি কার্যকর হবে।
খুনিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি রোববার
31/12/2009
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মৃত্যু পরোয়ানা আগামী রোববার জারি হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, জানুয়ারিতেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব। (আরো তথ্যসহ)
ঢাকা, ডিসেম্বর ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মৃত্যু পরোয়ানা আগামী রোববার জারি হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, জানুয়ারিতেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব।
তিনি বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ ওই পরোয়ানায় স্বাক্ষর করবেন।
বিচারকের স্বাক্ষরের পর লাল খামে পুরে ওই পরোয়ানা পাঠানো হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানেই রয়েছে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পাঁচজন।
তারা হচ্ছে- বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিন।
গত ১৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু ডিসেম্বর মাস জজ আদালতে ছুটি থাকায় মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়নি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলেও এতদিন শীতকালীন বন্ধের কারণে নিু আদালত মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করতে পারেনি। ৩ জানুয়ারি (রোববার) আদালত খুলবে। ওই দিনই আদালত পরোয়ানায় স্বাক্ষর করবেন।”
দণ্ডপ্রাপ্তদের মৃত্যু পরোয়ানা কে জারি করবেন তা নিয়ে একটি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিলো জানিয়ে শফিক বলেন, “এখন এটা চূড়ান্ত হয়েছে। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতই পরোয়ানা জারি করবেন।”
এর আগে আইনমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এ রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
মন্ত্রী বলেন, “আইন অনুযায়ী মৃত্যু পরোয়ানা জারির ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যেই রায় কার্যকর করা হবে। এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।”
১৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
রায়ের অনুলিপি পেয়েছে আসামীপক্ষ
22/12/2009
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেয়েছে আসামীপক্ষ। আসামীপক্ষ ত্রিশ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন দায়ের করবে বলে তাদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
ঢাকা, ডিসেম্বর ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেয়েছে আসামীপক্ষ। আসামীপক্ষ ত্রিশ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন দায়ের করবে বলে তাদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু মামলার রায়ের অনুলিপি পেয়ে আসামী বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্ধবন্ধু হত্যা মামলার আপিলের রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। আগামী ২১ জানুয়ারির আগেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন দায়ের করব।”
তিনি বলেন, “রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করা হবে- এ বিষয়টি আবারও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ও কারা কর্তৃপক্ষকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। রায়ের দিন ১৯ নভেম্বর এ বিষয়টি জানানো হয়েছিল।”
বিধি মোতাবেক রায় কার্যকর স্থগিত থাকবে জানিয়ে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে রিভিউ দায়ের করা হবে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রায় কার্যকর করা হলে তা হবে হত্যাকাণ্ডের শামিল।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিভিন্ন অসঙ্গতি রিভিউ আবেদনে তুলে ধরা হবে বলে ব্যারিস্টার মামুন জানান।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী সৈয়দ ফারুক রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারী) আইনজীবী খান সাইফুর রহমানও রায়ের অনুলিপি পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, রায় রিভিউ করার আবেদন জানানো হবে।
অপর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের কৌসুলি আবদুর রেজ্জাক খান জানান, রায়ের অনুলিপি হাতে এসেছে। বিচারিক পদ্ধতি ও রীতি অনুযায়ী কোনো আবেদন করার কথা জানানো হলে দন্ড কার্যকর করা হয়না।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারিক আদালত মৃত্যুপরোয়ানা জারির ২১ দিনের আগে নয়, ২৮ দিনের পরে নয়- এই সময়ে ফাসি কার্যকর হবে।
তবে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলি আনিসুল হক বলেন, আসামীরা যেহেতু রিভিউ আবেদন করার কথা জানিয়েছেন, মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলেও তা কার্যকর স্থগিত থাকবে।
তিনি জানান, আসামীপক্ষ রায়ের কপি হাতে পাওয়ায় এখন থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দায়ের করতে হবে।
গত ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু মামলার চুড়ান্ত রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার এ রায়ে সাক্ষর করেন রায় প্রদানকারী আপিল বিভাগের পাচ বিচারপতি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/এইচএ/২১৫০ ঘ.
বঙ্গবন্ধু মামলার রায়ের কপি কারাগারে প্রেরণ
21/12/2009
বঙ্গবন্ধু মামলায় রায়ের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচারিক আদালত, আইন মন্ত্রণালয়, কারা কর্তৃপক্ষ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা, ডিসেম্বর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু মামলায় রায়ের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচারিক আদালত, আইন মন্ত্রণালয়, কারা কর্তৃপক্ষ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. শওকত সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু মামলায় রায়ের অনুলিপি সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বিচারিক আদালত, কারাকর্তৃপক্ষ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুলিপি পেয়েছে বলে জানিয়েছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি ও নথি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এ রায় ও নথি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যাবে। বিচারিক ওই আদালত রায় ও নথি পেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে।
তিনি বলেন, এই মৃত্যু পরোয়ানা যাবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। এর ২ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।
এদিকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি এখনো পাননি জানিয়ে বলেন, নির্ধারিত ত্রিশ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রায় রিভিউ করার আবেদন জানানো হবে-এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়েছে। এজন্য দন্ড কার্যকরের কথা আপাতত আসছে না।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাক্ষর করেন।
গত ১৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল খারিজ হয়।
রায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ তিরস্কার
20/12/2009
বঙ্গবন্ধু মামলায় রায়ে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ‘নিষ্ক্রিয়তার জন্য’ তৎকালীন সরকারকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
ঢাকা, ডিসেম্বর ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু মামলায় রায়ে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ‘নিষ্ক্রিয়তার জন্য’ তৎকালীন সরকারকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
রায়ের অনুলিপি নেওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আপিল বিভাগের রায়ে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারে নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সভ্য সমাজে এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা দুর্ভাগ্যজনক ও কলঙ্কজনক।”
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাক্ষর করেন।
গত ১৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল খারিজ হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, বিচারপতি মো. তাফাজ্জল ইসলাম রায় দিয়েছেন। বিশেষ বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা ওই রায়ে একমত পোষণ করেছেন। এর মধ্যে তিনজন বিচারপতি ব্যক্তিগত মতামতও দিয়েছেন।
মাহবুবে আলম রায়ের কিছু অংশ তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “ফৌজদারি মামলায় যে কোনো নাগরিকের বিচার চাওয়ার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সবার বিচার পাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর এটাকে সমুন্নত রাখতে পারেনি তৎকালীন সরকার। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।”
আসামি পক্ষের এক কৌঁসুলি আসামিদের শাস্তির মাত্রা কমিয়ে যাবজ্জীবনের আবেদন জানিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা যেভাবে পরিকল্পিতভাবে নির্মম ও জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের মৃত্যুদণ্ড কমানোর সুযোগ নেই।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ, এ কে এম মহিউদ্দিন ও বজলুল হুদাকে ৩০২, ১২০ ও ৩৪ ধারায় এবং সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে ৩০২ ও ১২০ ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিলো সামরিক অভ্যূত্থান। রায়ে বলা হয়েছে, এটি অভ্যুত্থান ছিলো না, ছিলো পরিকল্পিত হত্যা। উদ্দেশ্যই ছিলো বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে হত্যা করা।
এতে আরো বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর সাহায্যে যেন এগিয়ে আসনে না পারেন, সে জন্য আগেই আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনিকে হত্যা করা হয়।
মামলার এজাহার দায়েরে বিলম্বের যে যুক্তি আসামি পক্ষ তুলে ধরে, সে বিষয়ে রায় উদ্ধৃত করে মাহবুবে আলম বলেন, “জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছেন। তারা পালানোর সুযোগও পেয়েছে। তৎকালীন সরকারের সময় তারা (খুনিরা) নানা পার্টি করেছে, সংসদেও গেছে। এ অবস্থায় কোনো ব্যক্তির পক্ষে এজাহার দায়ের ছিল কঠিন।”
বঙ্গবন্ধু মামলার রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষর
17/12/2009
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়ে বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করেছেন পাঁচ বিচারপতি। (আরো তথ্যসহ)
ঢাকা, ডিসেম্বর ১৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়ে বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করেছেন পাঁচ বিচারপতি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বিচারিক আদালত এখন রায়ের কপি পেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। এরপর থেকে ফাঁসি কার্যকরের সময়সীমা গণনা শুরু হবে। আসামীপক্ষ রিভিউ আবেদন করলেও এজন্য সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাক্ষর করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।
পুরো রায়ে চার বিচারপতি নিজস্ব মতামত দিয়েছেন এবং বিচারপতি বিকে দাস চার জনের মতামতে নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামি বজলুল হুদা ও মহিউদ্দিন আহমেদের আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তারা রায়ের চূড়ান্ত কপি সংগ্রহ করে রিভিউ পিটিশন দায়ের করবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষর করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিজের চোখে রায় ও রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষর দেখে এসেছি। মূল রায় দিয়েছেন বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম। অন্যান্য বিচারপতিরাও এর সঙ্গে একমত পোষণ করে নিজস্ব বক্তব্য লিখেছেন।
“এখন রায়ের কপি ও মামলার নথি দায়রা জজ আদালতে চলে যাবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আদেশ যাবে জেলখানায়।”
তিনি আরও বলেন, “আসামিপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে চাইলে করতে পারবেন। এজন্য সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হবে না। আসামিরা ফাঁসি কার্যকর স্থগিতের চেষ্টা করলে করতে পারেন।”
তবে রিভিউ দায়ের করা হলে দ্রুত এর শুনানি করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
মাহবুবে আলম বলেন, “রিভিউ দায়েরের ৩০ দিনের সময় গণনা ও বিচারিক আদালতের আদেশ দেওয়ার বিষয়টি আলাদা। বিচারিক আদালত রায়ের কপি পেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। এরপর থেকে ফাঁসি কার্যকরের সময়সীমা গণনা শুরু হবে। আসামিরা কবে রিভিউ আবেদন করবেন এজন্য বিচারিক আদালত বসে থাকবে না।”
কবে নাগাদ রায়ের কপি পাওয়া যাবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আজই (বৃহস্পতিবার) রায়ের কপি পাওয়ার চেষ্টা করবো। আজ না পেলে রোববার পাবো।”
এদিকে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামি বজলুল হুদা ও মহিউদ্দিন আহমেদের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চূড়ান্ত কপি সংগ্রহ করে রিভিউ পিটিশন দায়ের করবো।”
গত ১৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ পালিয়ে আছেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে।
পলাতক অবস্থায় আরেক আসামি আব্দুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
রায়: বিদ্রোহ নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র
19/11/2009
বঙ্গবন্ধু মামলার আপিলের চুড়ান্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছে, রাষ্ট্রপক্ষ দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছ। এটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মামলা, বিদ্রোহের মামলা নয়। তাই সাধারণ আইনে এ মামলার বিচারে কোনো বাধা ছিল না।
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু মামলার আপিলের চুড়ান্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছে, রাষ্ট্রপক্ষ দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছ। এটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মামলা, বিদ্রোহের মামলা নয়। তাই সাধারণ আইনে এ মামলার বিচারে কোনো বাধা ছিল না।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বঙ্গবন্ধু মামলার রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে এই অভিমত ব্যক্ত করেছে।
পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড কমানোর পক্ষে আপিলকারীরা তাদের যথাযথ যুক্তি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আপিলকারীদের মৃত্যুদণ্ডের হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।
আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছে, “এ রায় দেওয়ার যুক্তি পরে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। আমরা আদেশ দিচ্ছি যে, আপিলকারী মেজর মো. বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) এবং মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) হাইকোর্টের ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল এবং ২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের রায়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি লিভ আবেদন দায়ের করে।”
আদালত বলেন, “নিচের যুক্তিগুলো বিবেচনার জন্য আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ (লিভ মঞ্জুর) করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে: ১. হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের দুই বিচারক দুটি আলাদা এবং বিভক্ত রায় দিয়েছেন, তৃতীয় বিচারপতি দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামির বিষয় এবং পুরো রায়টি বিবেচনা না করে কেবল দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির মামলা বিবেচনা করে আইনগতভাবে মৌলিক ভুল করেছেন।
“২. মামলা দায়েরে ২১ বছরের অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়েছে। এই অযৌক্তিক বিলম্ব আপিলকারীদের মিথ্যাভাবে জড়ানোর অসৎ উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনার বানোয়াট গল্পের কথাই বলে। হাইকোর্ট বিভাগ এই বিষয়টি বিবেচনা না করে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আইনগতভাবে ভুল করেছে।
“৩. সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, এটি বিদ্রোহের পরিণতিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মামলা, এটি সাধারণ হত্যাকাণ্ডের মামলা নয়। তাই আপিলকারীদের সাধারণ ফৌজদারি আদালতে যে বিচার হয়েছে তা বাতিলযোগ্য।
“৪. সাক্ষ্য-প্রমাণে একথা বলা যায় না যে এটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা সংঘটনের মামলা। কিন্তু এটি তৎকালীন মুজিব সরকারকে পরিবর্তনের জন্য বিদ্রোহ সংঘটনের ষড়যন্ত্রের মামলা। তাই আসামিদের দণ্ড বেআইনি।”
“৫. রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে আপিলকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারার হত্যা ও অভিন্ন উদ্দেশ্যে হত্যার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই গুরুতরভাবে ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়েছে।”
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “উপরের যুক্তিগুলোতে আমাদের মতামত হলো:
১. ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৮ ও ৪৩৯ ধারার বিধান মতে তৃতীয় বিচারপতির একক এখতিয়ার হলো তিনি কোন কোন পয়েন্টে যুক্তিতর্ক শুনানি গ্রহণ করবেন। এতে বলা যায়, তিনি (তৃতীয় বিচারপতি) মতভিন্নতার অংশটুকু নিষ্পত্তি করতে সম্পূর্ণ স্বাধীন। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের দুই বিচারপতির ছয় আসামির বিষয়ে মতভিন্নতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা রয়েছে তৃতীয় বিচারপতির। দ্বৈত বেঞ্চের দুই বিচারপতি যে ৯ আসামির বিষয়ে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি, সে সিদ্ধান্তের বিষয়ে তৃতীয় বিচারপতি একমত ছিলেন।
“২. মামলা দায়েরের বিলম্বের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যাখ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণের বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ বিশ্বাস করেছেন। এই বিষয়ে দুই আদালতের (বিচারিক ও হাইকোর্ট) অভিমত একই হওয়ায় এতে আমাদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।
“৩. হত্যার অপরাধ সেনা আইনের ৫৯ (২) ধারায় বিচারের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো অপরাধী দায়িত্বরত (অ্যাকটিভ সার্ভিসে) অবস্থায় অপরাধ করলে এ ধারা প্রযোজ্য হবে। কিন্তু আপিলকারীরা সেনা আইনের ৮(১) ধারায় অ্যাকটিভ সার্ভিসে ছিলেন না, তাই সাধারণ ফৌজদারি আদালতে তাদের বিচারে বাধা নেই। এমনকি সেনা আইনের ৮(২) ধারার সংজ্ঞায় এটিকে বেসামরিক অপরাধ ধরে নেওয়া হলেও ওই আইনের ৯৪ ধারা মতে ওই অপরাধের বিচারে আইনগত কোনো বাধা নেই।
“৪. এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই যে বিদ্রোহের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের অন্য সদস্য ও তিন নিরাপত্তা কর্মীর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আমাদের মতে, এটি ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিদ্রোহ সংঘটনের মামলা নয়। বরং এটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মামলা।
“৫. হাইকোর্ট বিভাগ বিশ্বাস করেছে যে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে আপিলকারী এবং অন্য দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে যে হাইকোর্ট বিভাগ সাক্ষ্য-প্রমাণের যথাযথ মূল্যায়ন না করে আপিলকারীদের ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে কার্যত অবিচার করেছে। তাই আমরা হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখতে পাই না।
“৬. বিশেষ অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড কমানোর পক্ষে আপিলকারীরা তাদের যথাযথ যুক্তি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা হাইকোর্টের বহাল রাখা আপিলকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিচারিক আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আপিলকারীদের আপিল, জেল আপিল ও ফৌজদারি রিভিউ আবেদন খারিজ করা হলো। রায় কার্যকর স্থগিতের এই আদালতের আদেশ খারিজ করা হলো। এই সংক্ষিপ্ত আদেশ রায়ের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/পিবি/এসএম/আরবি/আরএ/এমআই/জিএনএ/এইচএ/১৯৪৭ ঘ.
ঐতিহাসিক রায়ে প্রতীক্ষার অবসান
19/11/2009
মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকলো বঙ্গবন্ধুর পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনির। তাদের আপিল খারিজ করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখার চূড়ান্ত আদেশ দিয়েছে আদালত।
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকলো পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনির।
স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারাবন্দি পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখার চূড়ান্ত আদেশ দিয়েছে আদালত।
আপিল খারিজ হওয়া পাঁচ আসামি হচ্ছেন বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ রায়ে জাতি ন্যায় বিচার পেয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে ৩৪ বছর আগে সংঘটিত ওই হত্যাযজ্ঞের বিচার পর্বের কার্যত যবনিকাপাত হলো। অবসান হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ও আবেগ-জাগানিয়া হত্যাকাণ্ডটির বিচার নিয়ে জাতির প্রতীক্ষার প্রহরের।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে মাত্র সাত মিনিটে রায়টি পড়ে শোনান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম। প্রথম অংশে আদালত বলেন, “আমাদের অভিমত হল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি ছয় আসামির বিষয়ে নিষ্পত্তি করে কোন ভুল করেননি।”
“রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এসব কারণে আসামিদের আপিল খারিজ করা হল”, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে রায় পড়া শেষ করেন বিচারপতি।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
রায় শুনে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক ১৫ আগস্টে বাবা-মা হারানো বঙ্গবন্ধুর নাতি শেখ ফজলে নূর তাপসকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এ রায়কে ‘ন্যায় ও সত্যের জয়’ বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সকালে দেশে ফেরা বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আসামি পক্ষের একজন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাইকোর্টের পুরো রায়ই বহাল রয়েছে।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম বলেছেন, তার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু মামলার হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়
18/11/2009
স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় তিন আসামিকে।
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)–স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় তিন আসামিকে।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম এ রায় দিয়েছিলেন।
হাইকোর্টের সেই চূড়ান্ত রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে দেওয়া নিু আদালতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে হাইকোর্ট।
রায়ের শেষ অংশে হাইকোর্ট অভিমতে বলেছিল, ১২ সেনা কর্মকর্তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্মীকরণ করা হয়েছিল বলে সরকার পক্ষ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে। তারা হল, মেজর শরিফুল হক, মেজর আজিজ পাশা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর বজলুল হুদা, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন, মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ক্যাপ্টেন মাজেদ, লে. নাজমুল হোসেন আনসার, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও অপর একজন।
অভিমতে বলা হয়, এই সাক্ষ্য প্রমাণ করে না যে, দণ্ডিত আসামিরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পুরস্কার হিসেবে তা পেয়েছিলেন। কারণ, ওই সাক্ষ্য ঘটনার প্রায় এক বছর পরের। এর মধ্যে অপর তিনটি ঘটনা ঘটে গেছে।
এর একটি জেলহত্যা, অপর দু’টি ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা। পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এই সুনির্দিষ্ট ‘ইনফারেন্সে’ আসা যায় না যে, সেই ঘটনার সকালে, এই আসামিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
অভিমতে আরও বলা হয়, সরকার পক্ষ এই আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আসামিরা সেই সন্দেহের সুবিধা পাবে, যদি না সরকার পক্ষ অপর কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য দিয়ে সেই সন্দেহ দূর না করে। কিন্তু বর্তমান মামলায় সেই সন্দেহ দূর করার জন্য সরকার পক্ষ কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
রায়ে বলা হয়, ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মূলনীতি হলো, আসামি দোষী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরে নিতে হয়।
অভিমতে আরও বলা হয়, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অপরাধ যদিও একটি বিদ্রোহ প্রকৃতির, তবু অপরাধের প্রকৃতি আবেগ দিয়ে প্রভাবিত নয়। আমরা কখনোই নিশ্চিতভাবে জানব না, দণ্ডিতরা ছাড়া আর কে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাই এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ সতর্কতার সঙ্গে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
রায়ে বলা হয়, বর্তমান হত্যা ও ষড়যন্ত্রের এ মামলায় বেশিরভাগ সাক্ষীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযুক্তদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে বের করতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
হাইকোর্ট বলেছে, লে. কর্নেল ফারুক ও লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ, বিভক্ত রায়ে দুই বিচারপতি সেগুলো সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বলে একমত হতে পারেননি। তাই আমিও সেগুলো বিবেচনার বাইরে রাখছি।
লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদের (আর্টিলারি) অপর একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রমাণিত হয়েছে। তাই এই জবানবন্দি কেবল তার বিরুদ্ধে যাবে। তবে মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে জড়িয়ে তার এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিয়ে সমর্থিত না হওয়ায় এই তিন আসামির বিরুদ্ধে তা বিবেচনায় আনা হল না।
এই একই বিবেচনায় ঢাকার দায়রা জজ আদালত এ মামলায় দফাদার মারফত আলী ও এলডি আবুল হোসেন মৃধাকে খালাস দিয়েছিল।
সরকার পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেওয়া হল। তাদের মৃত্যুদন্ডের রায় বাতিল করা হল।
লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে দায়রা আদালত সঠিকভাবেই মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হল। লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) আপিল খারিজ করা হল।
হাইকোর্ট এর আগে ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিভক্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন নিু আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পাঁচজনকে খালাস দিয়েছিলো।
অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত রায় দেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/এসএইচ/০২৫৫ ঘ.
বঙ্গবন্ধু মামলার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের রায়
18/11/2009
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়।
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে খালাস দেন পাঁচ আসামিকে। অপরদিকে অপর বিচারপতি নিু আদালতে দেওয়া ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন।
২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ বিভক্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন নিু আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পাঁচ জনকে খালাস দিয়েছিলেন।
অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত রায় দেন।
বিচারপতি মো. রুহুল আমিন তার রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে দেওয়া নিু আদালতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
অপরদিকে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তার রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।
বিচারপতি মো. রুহুল আমিন তার রায়ে বলেছেন, এই মামলার বিষয়বস্তু শুধু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নিহত তার আত্মীয়স্বজন হত্যাকাণ্ড। যদিও এর সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মনি ও মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যার তিনটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। সে তিনটি ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।
তিনি রায়ে আরও বলেন, ষড়যন্ত্রের অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকলেই হবে- যে কোনো ব্যক্তির কার্যক্রম, বিবৃতি ও লেখা অপরাধ সংগঠনে ষড়যন্ত্র করেছে। কোনো ব্যক্তি কথা বা কাজের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে পারে। সকল ষড়যন্ত্রকারীকে অভিন্ন উদ্দেশ্যে একমত হতে হবে।
বিচারপতি রুহুল আমিন রায়ে বলেন, দণ্ডবিধির ৩৪ ধারার অভিন্ন ইচ্ছার উপাদান হলো কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অপরাধমূলক কাজ করার জন্য কতিপয় ব্যক্তির মনের মিল। এরকম ইচ্ছা ঘটনাস্থলেও হতে পারে।
মামলা দায়েরের বিলম্বের যথেষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রায়ে তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কোর্ট মার্শালে বিচার করা হয়েছে বলে আসামিপক্ষের যুক্তি বিবেচনার অবকাশ নেই। কারণ, কোর্ট মার্শাল হওয়ার বিষয়ে কোনো নথি উপস্থাপন করা হয়নি।
বিচারিক আদালত দণ্ডিতদের ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে রায় দিয়েছেন সে বিষয়ে বিচারপতি মো. রুহুল আমিন রায়ে বলেন, এটা সত্য যে বিচারিক আদালত রায় কার্যকরের বিষয়ে প্রথম অংশে ‘একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন তা আইনে নেই। তাই ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি বাতিল করা হল। তবে অপর অংশে বিচারিক আদালত ‘ফাঁসিতে ঝুলাইয়া’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে কথা বলেছেন তা বিদ্যমান প্রথা বলে বহাল রাখা হলো।
বিচারপতি খায়রুল হক সাক্ষ্য-প্রমাণ আলোচনা করে তার রায়ের অভিমতে বলেছেন, স্বাধীনতার সময় থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সেনাবাহিনীকে অস্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে মেজর ডালিম তার বাড়ি তল্লাশি করে। এই কারণে মেজর ডালিম ও মেজর নূর চাকরি হারায়।
সাক্ষ্য-প্রমাণ আলোচনা করে তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের মার্চে কুমিল্লার বার্ড বা দাউদকান্দিতে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয় ফারুক-রশিদসহ মূল ষড়যন্ত্রকারীরা তা লালন করে। আর ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ পায় বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ডে।
বিচারপতি খায়রুল হক রায়ে বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে রয়েছে, ঘটনার সময় মেজর বজলুল হুদা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর নূর, মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সৈয়দ ফারুক রহমান ট্যাংক নিয়ে সেনানিবাস থেকে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরের দিকে যায়। মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মেজর ফারুক নাইট প্যারেডে ছিলেন। তিনি রায়ে দণ্ডিত অপর আসামিদের অবস্থান ও কার্যকলাপ তুলে ধরেন।
তিনি রায়ে আরও বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায়, আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা। এটি একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, এর ব্যাপক উদ্দেশ্য ছিল। হত্যাকারীরা জানত, এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই তারা একটি বিরাট ক্যানভ্যাসে পরিকল্পনা নিয়েছিল, যাতে এই হত্যাকাণ্ডের কেউ কোনো প্রতিবাদ না করতে পারে। হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা।
রায়ে বিচারপতি হক বলেন, যদিও কিছু আসামি হত্যাকাণ্ড স্থলের বেশ দূরে ছিল কিন্তু তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতিসহ অন্যদের হত্যা করা।
তিনি রায়ে আরও বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে আরও দেখা যায়, পুরো সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। কেবল ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার রেজিমেন্ট ও সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টের হাতে গোনা কিছু কর্মকর্তা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
রায়ের শেষ অংশে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছু অসন্তুষ্ট সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে। যেভাবে নৃশংস ও নির্দয়ভাবে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয় তাতে দণ্ড কমানোর কোনো সুযোগ নেই। দণ্ডিতদের কেউই অনুকম্পা পেতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালত ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আদেশে এও বলেছেন, ওই প্রক্রিয়া কঠিন হলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। আইনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অন্য কোনো বিধান নেই। তাই ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ আইনত নয় বলে সংশোধন করা হলো। দণ্ডিতদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ ধারার বিধানমতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/আরএ/এসএইচ/০২০৫ ঘ.
বঙ্গবন্ধু মামলা: ঘটনাপঞ্জি
18/11/2009
স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়।
ঢাকা, নভেম্বর ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)– স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। এ ঘটনার দীর্ঘ ২১ বছর পর দায়ের করা হয় মামলা। ১৯৯৮ সালে বিচারিক আদালত ১৫ আসামির ফাঁসির রায় দেয়। এরপর হাইকোর্ট প্রথমে বিভক্ত রায় দিলে পরে তৃতীয় বিচারপতি ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেয়। হত্যার ৩৪ বছর পর বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ মামলাটির চূড়ান্ত রায় দিতে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঘটনাক্রম:
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫: এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খন্দকার মোশতাক সরকার ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে।
১২ নভেম্বর, ১৯৯৬: আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করে।
২ অক্টোবর, ১৯৯৬: হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় ২৪ আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
১৫ জানুয়ারি, ১৯৯৭: তদন্ত শেষে পুলিশ ২৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে।
১২ মার্চ, ১৯৯৭: চার আসামি মারা যাওয়ায় ২০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু।
৭ এপ্রিল, ১৯৯৭: একই আদালত ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
৮ নভেম্বর, ১৯৯৮: দেড়শ’ কার্য দিবস শুনানির পর ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই রায়ের পর এর বিরুদ্ধে কারাবন্দি চার আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব) বজলুল হুদা, বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ হাইকোর্টে আপিল করেন।
২৮ জুন, ২০০০: হাইকোর্টের বিচারপতিরা কয়েক দফা বিব্রত হওয়ার পর ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু।
১৪ ডিসেম্বর, ২০০০: ৬৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ মামলায় বিভক্ত রায় দেয়। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অপর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০১: হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের আদালতে মামলার শুনানি শুরু।
৩০ এপ্রিল, ২০০১: তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেয়। চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ১২ আসামির মধ্যে পরে ওই বছরই কারাবন্দি চার আসামি আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে।
১৩ র্মাচ, ২০০৭: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি ল্যান্সার এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার।
১৮ জুন, ২০০৭: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামী ল্যান্সার এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
২৪ জুন ২০০৮: ল্যান্সার মহিউদ্দিনের জেল আপিল।
২ আগস্ট, ২০০৭: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের দায়ের করা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন।
৭ আগস্ট ২০০৭: বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি জয়নাল আবেদীন ও বিচারপতি মো. হাসান আমিনের আপিল বিভাগের বেঞ্চ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শুরু করে।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৭: আপিল বিভাগ ২৫ কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ করে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ (লিভ মঞ্জুর) করে।
৩০ অক্টোবর, ২০০৭: পেপারবুক তৈরি করে জমা দিতে আসামি পক্ষের শেষ সময়। তারা পেপারবুক ও যুক্তির সংক্ষিপ্তসার আদালতে জমা দেয়।
২৩ আগস্ট, ২০০৯: রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির সংক্ষিপ্তসার আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়।
২৪ আগস্ট, ২০০৯: আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানির জন্য ৫ অক্টোবর তারিখ ধার্য করে দেন।
৪ অক্টোবর, ২০০৯: মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন।
৫ অক্টোবর ২০০৯: মামলার আপিল শুনানি শুরু।
১৫ অক্টোবর ২০০৯: আপিল আবেদনের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু।
১২ নভেম্বর ২০০৯: শুনানি শেষে ১৯ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/আরএ/এএনএস/এসএইচ/২১৫৫ ঘ.
বঙ্গবন্ধু হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন মহিউদ্দিন, বজলুল, পাশা ও নূর
13/10/2009
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, মেজর আজিজ পাশা ও মেজর নূর সরাসরি জড়িত ছিলেন। তবে আসামিদের যারা সেদিন বঙ্গবন্ধু ভবনে যায়নি, তারাও জড়িত বলে ধরা হবে।
ঢাকা, অক্টোবর ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, মেজর আজিজ পাশা ও মেজর নূর সরাসরি জড়িত ছিলেন। তবে আসামিদের যারা সেদিন বঙ্গবন্ধু ভবনে যায়নি, তারাও জড়িত বলে ধরা হবে।
এ মামলায় হাইকোর্টে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায়ে এর উল্লেখ রয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে তা সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু মামলার সপ্তম দিনের শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বিচারপতি হকের রায়ের অংশ পড়ে শোনান।
বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪১ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। দুপুর ১টা দেড়টার পর শুনানি শেষ হয়।
শুনানির পর মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতি খায়রুল হক তার রায়ে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, মেজর আজিজ পাশা ও মেজর নূর নিয়োজিত ছিলেন। তারা চারজনই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।”
খায়রুল হকের রায়ে বলা হয়, আসামিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি তারা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। তার পরিবারের সব সদস্যদের হত্যা করেছে তারা।
মামুন বলেন, “রায়ে বলা হয়, এ হত্যাকাণ্ড যাতে কেউ ঠেকাতে না পারে এজন্য আসামিরা সব ব্যবস্থা নিয়েছে।”
বিচারপতি খায়রুল হক তার রায়ে আরও বলেন, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানসহ যারা হত্যার দিন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যায়নি, তারাও এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলেই ধরা হবে।
কারণ তারাও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার একই উদ্দেশ্য নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল ও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করেছিল, রায় উদ্ধৃত করে মামুন বলেন।
বিচারপতি হকের রায়ে আরও বলা হয়, ধানমণ্ডি, কলাবাগান ও রক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছিল। ফারুক রহমান ৪৬ ব্রিগেডের সামনে ট্যাংকের গোলা নিক্ষেপ করেছিল। এর ফলে ৪৬ ব্রিগেডের সেনারা ভয় পেয়ে যায়।
ব্যারিস্টার মামুন বলেন, “রায়ে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছে। সবার ওপর সেই সরকারকে চাপিয়ে দিয়েছে।”
মামুন জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাধারণ সৈনিক, পুলিশ, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা জড়িত ছিল না বলে বিচারপতি হকের রায়ে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপার বুকের ১৪৭৪ থেকে ১৫৪৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে শোনানো হয়। এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষ্য, নিু আদালতের রায়, হাইকোর্টের রায় ও আপিল মঞ্জুরের আদেশসহ সব কাগজপত্র পেপারবুকে সন্নিবেশিত থাকে।
ব্যারিস্টার মামুন বলেন, “আজ (মঙ্গলবার) বিচারপতি খায়রুল হকের রায় পড়া শেষ করে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে বজলুল হুদা, ফারুক, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), সুলতান শাহরিয়ার খানের একটি আবেদন আদালতে পড়ে শুনিয়েছি। এরপর তৃতীয় বিচারপতির রায় পড়া শুরু করেছি।”
বঙ্গবন্ধু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আসামি পক্ষের আপিল শুনানির জন্য গত ৪ আগস্ট বেঞ্চ গঠনের পরদিন এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু মামলার আপিল শুনানি গ্রহণে গঠিত বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- মো. আবদুল আজিজ, বি কে দাস, মো. মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)।
এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করতে সরকার ১৮ জন আইনজীবীকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দিয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২৪ জনকে আসামি করে মামলা হয়।
বিচারিক আদালত ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগের পরপরই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আপিল শুরুর উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির নিয়মিত আপিলের শুনানি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে ছিল।
২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
বর্তমানে কারাবন্দি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শরিফুল হক ডালিম ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদসহ কয়েকজন পলাতক রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/আরএ/এমআই/১৭০০ ঘ.
‘আসামিরা বিভিন্ন সরকারের আনুগত্য পেয়েছে’
12/10/2009
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার হাইকোর্টের রায়ের সাক্ষ্য-প্রমাণে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা ও পুনর্বাসন করেছিল। ঘটনার পরপরই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান।
ঢাকা, অক্টোবর ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)–বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার হাইকোর্টের রায়ের সাক্ষ্য-প্রমাণে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা ও পুনর্বাসন করেছিল।
ঘটনার পরপরই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান।
সোমবার এ কথা শুনেছে বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। সকাল নয়টা ৪২ মিনিটে ষষ্ঠদিনের মতো এ শুনানি হয়ে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে এ দিনের মতো শেষ হয়।
শুনানির পর আসামি বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতি এটিএম খায়রুল হকের রায় পড়েছি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদার ব্যাপারে রায়ের অংশ থেকে পাঠ করেছি। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যও পাঠ করে শোনানো হয়েছে।”
বিচারপতি খায়রুল হকের রায় উদ্ধৃত করে মামুন বলেন, “এতে আসামিদের হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিিহ্নত করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।”
“ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তৎকালীন কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আদালতে ওই রকমের বক্তব্য দেননি। তারপরও বিচারপতি খায়রুল হক তার বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন”, বলেন মামুন।
তিনি আরও জানান, বিচারপতি খায়রুল হক রায়ে বলেছেন কর্নেল ফারুকসহ অন্য আসামিরা বিভিন্ন সরকারের আনুগত্য পেয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, তারাই প্রকৃত খুনি। রায়ে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপার বুকের ১২৪০ থেকে ১৪৭৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে শোনানো হয়।
শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “কর্নেল শাফায়েত জামিল তার সাক্ষ্যে বলেছেন মেজর ডালিম কিভাবে অস্ত্রের মুখে মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকে জিম্মি করেছিলেন। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে।
ওই রায় উদ্ধৃত করে তিনি আরও জানান, সেখানে এটাও উল্লেখ আছে, কিভাবে খুনিদের বিদেশি দূতাবাসে পাঠানো হয়েছিল। খন্দকার মোশতাক খুনিদের সূর্যসন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। পাকিস্তান এ ঘটনার পর পরই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
শাফায়েত জামিল তার সাক্ষ্যে বলেছেন, দায়মুক্তি (ইমডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার খুনিদের রক্ষা করেছে। জানান রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “পঁচাত্তরের ঘটনার পর পর জেনারেল সফিউল্লাহ ছিলেন বিপর্যস্ত ও কর্নেল শাফায়েত জামিল ছিলেন অস্ত্রের মুখে জিম্মি। কিন্তু ওই সময় জিয়াউর রহমান ছিলেন অত্যন্ত স্বাভাবিক।”
বঙ্গবন্ধু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আসামি পক্ষের আপিল শুনানির জন্য গত ৪ অক্টোবর বেঞ্চ গঠনের পরদিন এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে ২৪ জনকে আসামি করে মামলা হয়।
আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগের পরপরই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আপিল শুনানি শুরুর উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির নিয়মিত আপিলের শুনানি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে ছিল।
২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
বর্তমানে কারাবন্দি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শরিফুল হক ডালিম ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদসহ বাকিরা পলাতক রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/এমইউএস/এসএইচ/১৬০৯ ঘ.
‘১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়া জড়িত ছিলেন’
08/10/2009
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী) যে জবানবন্দি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার তা শুনেছে আপিল বিভাগ। ১৯৯৬ সালের ২৭ নভেম্বর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মহিউদ্দিন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট-এর ঘটনার সঙ্গে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে তার মনে হয়েছে।
ঢাকা, অক্টোবর ০৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী) যে জবানবন্দি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার তা শুনেছে আপিল বিভাগ।
১৯৯৬ সালের ২৭ নভেম্বর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মহিউদ্দিন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট-এর ঘটনার সঙ্গে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে তার মনে হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সৈয়দ ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদের ব্যাপারে জিয়া কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি বলেও মহিউদ্দিন তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানির চতুর্থ দিনে মৃত্যুদণ্ডিত আসামি বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এ জবানবন্দি উপস্থাপন করেন। পরে এ হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তিতে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আগামী ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবী ঘোষণা করেন।
শুনানি শেষে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও আর্টিলারি মহিউদ্দিন আহমেদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পড়ে শুনিয়েছি।”
দিনের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু মামলার আপিলের বিষয়বস্তু নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আসামি পক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনকে সতর্ক করেছে আদালত।
আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ তাকে সতর্ক করে। আদালত এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্যও গণমাধ্যমকে বলেছে।
এর আগে গত সোমবার আদালত বঙ্গবন্ধু মামলার আপিলের বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্যের ক্ষেত্রে আইনজীবী ও সংবাদ মাধ্যমকে সংযত হওয়ার নির্দেশ দেয়।
শুনানি শেষে আসামি বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) পেপারবুকের ৯৮৪ থেকে ১১৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়া হয়েছে। বিচারপতি মো. রুহুল আমিনের রায় পড়া শেষ হয়েছে। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের রায় পড়া শুরু হয়েছে।”
এ মামলার পেপার বুক ১ হাজার ৫৩০ পৃষ্ঠা সম্বলিত। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষ্য, নিু আদালতের রায়, হাইকোর্টের রায় ও আপিল মঞ্জুরের আদেশসহ সব কাগজপত্র পেপারবুকে সন্নিবেশিত থাকে।
মামুন বলেন, “ফারুক রহমান ঘটনার আগের রাতে বলেছেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। এভাবে চললে দেশ ভারতের কর্তৃত্বে চলে যাবে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে তুলে এনে অরাজকতা দূর করার জন্য রেসকোর্স বা অন্য কোনও ময়দানে ভাষণ দিতে বলা হবে। এতে যদি বাধা আসে, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে।”
মামুন জানান, বঙ্গবন্ধু মামলার আপিলের বিষয়বস্তু নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রে সংশোধনী ছাপানোর ব্যবস্থা নিতে তাকে আদালত বলেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ এ মামলা সম্পর্কে কল্পনাপ্রসূত কোনও বক্তব্য না ছাপতে বলেছে আদালত। এ জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রকে সতর্ক করা হয়েছে।”
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চে সকাল ৯টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শুনানি চলে।
বঙ্গবন্ধু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আসামি পক্ষের আপিল শুনানির জন্য রোববার বেঞ্চ গঠনের পর সোমবার এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
শুরুর দিন সুপ্রিম কোর্টের ৩ নম্বর বিচার কক্ষে শুনানি হলেও তা পরিবর্তন করে মঙ্গলবার থেকে শুনানি চলছে ২ নম্বর বিচার কক্ষে। এ কক্ষটি আগের কক্ষের চেয়ে বড়। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আদালত কক্ষে ঢোকার পথে বসানো হয়েছে একটি আর্চওয়ে।
মাহবুবে আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু মামলাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু মামলার আপিল শুনানি গ্রহণে গঠিত বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- মো. আবদুল আজিজ, বি কে দাস, মো. মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)।
এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করতে সরকার ১৮ জন আইনজীবীকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দিয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২৪ জনকে আসামি করে মামলা হয়।
বিচারিক আদালত ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
আপিল বিভাগের নতুন বেঞ্চ গঠনের পর মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “এর মধ্য দিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হলো।”
আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগের পরপরই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আপিল শুরুর উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির নিয়মিত আপিলের শুনানি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে ছিল।
২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
বর্তমানে কারাবন্দি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শরিফুল হক ডালিম ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদসহ বাকিরা পলাতক রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/আরএ/এমআই/এসএইচ/১২২০ ঘ.
‘বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয় কুমিল্লায়’
11/10/2009
বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো কুমিল্লায়। যড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ পায় ঢাকা সেনানিবাসের বালুরঘাটে। আর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে।
ঢাকা, অক্টোবর ১১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)–বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো কুমিল্লায়। যড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ পায় ঢাকা সেনানিবাসের বালুরঘাটে। আর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে।
বঙ্গবন্ধু মামলার পঞ্চম দিনের শুনানিতে রোববার এ কথা শুনেছে বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ।
দুই দিন বিরতির পর এ মামলার আপিল শুনানি রোববার আবার শুরু হয়। সকাল ৯টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শুনানি চলে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এ মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায় পড়েন। তিনি পেপারবুকের ১১৪০ পৃষ্ঠা থেকে ১২৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ করেন।
শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “হাইকোর্টের রায়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সকলপক্ষের যুক্তি তুলে ধরেছেন। রায়ে কিছু কিছু আইনের ধারা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মামলার নজির তুলে ধরা হয়েছে। রায়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
“সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আইনজীবীদের বক্তব্যে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দেখতে পান খন্দকার মোশতাক আহমেদের কুমিল্লার দাউদকান্দির বাড়ি ও কুমিল্লার র্বার্ড (পল্লী উন্নয়ন একাডেমি) থেকে ষড়যন্ত্রের শুরু হয়। এ মামলার এজাহারে সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মাহবুবুল আলম চাষী এক টেবিলে বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন বলে উল্লেখ আছে। এরই ধারাবাহিকতায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটে।”
আনিসুল হক আরও জানান, সাক্ষ্যপ্রমাণে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দেখতে পান, এই হত্যাকাণ্ডটি যথেষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়েছে। এখানে কিছু কিছু আসামি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও ১৯৭৫ সালের মার্চ থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তা বাস্তব রূপ নেয়।
“তৎকালীন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিরাজুল হকের বক্তব্যে আছে, ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় জিয়াউর রহমানকে। মোশতাকের সঙ্গে এ মামলার আসামি সেনা কর্মকর্তাদের কুমিল্লার বার্ডে একাধিক বৈঠক হয়। সেখানে এই ষড়যন্ত্র লালন করা হয়। ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত রূপ পায় সেনানিবাসের বালুর ঘাটে।”
হাইকোর্টের রায় উদ্ধৃত করে আনিসুল হক বলেন, “পঁচাত্তরের মার্চে যে ষড়যন্ত্রের শুরু হয়, তার চূড়ান্ত পরিণতি হয় মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে।”
আসামি বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন শুনানির পর সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায় পাঠ করা চলছে। ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা কোন ষড়যন্ত্র করেননি।”
তিনি বলেন, “যখন একটি ঘটনা হত্যা মামলায় পরিনত হয় তখন আর ষড়যন্ত্রের কোন অভিযোগ হবে না। কারণ, দুটি অভিযোগের শাস্তিই মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তার রায়ে এটি মেনে নেননি। তিনি তার রায়ে বলেছেন, ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের জন্য আলাদা অভিযোগ হবে।
ব্যারিস্টার মামুন বলেন, “আসামি বজলুল হুদার পক্ষ থেকে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য আলাদা বিচারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।”
ব্যারিস্টার মামুন বলেন, “বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এ মামলার সাক্ষী তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তার রায়ে বলেছেন, ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করা হয়। তার চেয়ে এক স্তর ওপরে ছিলেন জিয়াউর রহমান। এ নিয়ে জিয়াউর রহমানের মনে অসন্তোষ ছিল।
“এ ছাড়া তখন অস্ত্র উদ্ধারের নামে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। পুলিশকে সহযোগিতার জন্য রক্ষীবাহিনী করা হয়। কিন্তু অপপ্রচার চালানো হয়েছিল যে সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে এই বাহিনী গঠন করা হয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই অপপ্রচার চালায়।
ব্যারিস্টার মামুন আরও বলেন, “কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে তার পা হারান। মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনায় এই অসামর্থ্যের পরও তাকে সেনাবাহিনীতে রাখা হয়। ১৯৭৪ সালের শুরুর দিকে কর্নেল তাহের সফিউল্লার কার্যালয়ে যান। সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব জিয়ার ওপর ছেড়ে দিতে বলেন। তখন কর্নেল জিয়াউদ্দিন সরকারের সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লেখেন। সফিউল্লাহ তাকে এই নিবন্ধটি প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। সফিউল্ল্াহ কর্নেল জিয়াউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে যান। কিন্তু জিয়াউদ্দিন নিবন্ধটি প্রত্যাহার না করায় সফিউল্লাহ তাকে বরখাস্ত করেন।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ২ নম্বর বিচার কক্ষে এ মামলার শুনানি হয়। শুরুর দিন ৩ নম্বর বিচার কক্ষে শুনানি হলেও পরে তা ২ নম্বর বিচার কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। ২ নম্বর কক্ষটি আগেরটির চেয়ে বড়।
এরআগে বৃহস্পতিবার পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী) যে জবানবন্দি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার তা শোনে আপিল বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু মামলার আপিলের বিষয়বস্তু নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে আদালত। পাশাপাশি এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্যও গণমাধ্যমকে বলা হয়।
বঙ্গবন্ধু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আসামি পক্ষের আপিল শুনানির জন্য গত ৪ আগস্ট বেঞ্চ গঠনের পরদিন এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু মামলার আপিল শুনানি গ্রহণে গঠিত বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- মো. আবদুল আজিজ, বি কে দাস, মো. মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)।
এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করছেন ১৮ জন আইনজীবী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২৪ জনকে আসামি করে মামলা হয়।
বিচারিক আদালত ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগের পরপরই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আপিল শুরুর উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির নিয়মিত আপিলের শুনানি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে ছিল।
২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
বর্তমানে কারাবন্দি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শরিফুল হক ডালিম ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদসহ বাকিরা পলাতক রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/এমআই/এসএইচ/২০৩১ ঘ.