You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পয়গাম
৫ই মার্চ ১৯৬৯
শহীদদের লহু ও মাতার অশ্রু বৃথা যাইতে দিবনা : মুজিব

টুঙ্গীপাড়া, (ফরিদপুর) ৩রা মার্চ।- আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান শুক্রবার এখানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে বলেন যে, পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জনসাধারণ সাম্প্রতিক নজির বিহীন সরকার বিরোধী আন্দোলনে প্রভূত পরিমাণ রক্ত এবং অশ্রু দান করিয়াছেন এবং আমি বিশ্বাস করি অসংখ্য শহীদদের রক্ত এবং শোকাত্ত মাতাদের লোনা অশ্রুজল কখনও বৃথা যাইবেনা।
তিনি বলেন যে, জনগণের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য দেশব্যাপী অবিশ্রান্ত এবং অবিরাম গণ আন্দোলন দুই অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি করিয়াছে পাকিস্তানের ইতিহাসে তাহা তুলনাহীন।
২৮শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা হইতে তাহার নিজের বাড়ীতে আগমণের পর হইতে শেখ মুজিবকে একনজর দেখিবার জন্য খুলনা, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর এবং যশোর হইতে হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটে। দূর-দূরান্তর হইতে জনসাধারণ নৌকা, ফেরী, লঞ্চ এবং এমনকি পায়ে হাটিয়াও তাহার গৃহে আগমন করে এবং নেতাকে সম্বর্ধনা জানান। তাহার সম্বর্ধনা উপলক্ষে ছোট গ্রামে যেন মানুষের মেলা বসিয়া যায়।
রবিবার শেখ মুজিব এক উল্লাসিত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণদান কালে বলেন যে, দেশের উভয় অঞ্চলের জনগণের আপোষহীন দুর্বার সংগ্রামের ফলেই তিনি মুক্তিলাভ করিয়াছেন এবং সরকার তথাকথিত ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাখ্যান করিতে বাধ্য হইয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলেই সরকার দেশের উভয় অঞ্চলের শত শত নিরাপত্তা বন্দী এবং রাজনৈতিক মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্তি দান করিতে বাধ্য হইয়াছে। তিনি বলেন যে, সকল প্রশংসা জনগণের প্রাপ্য।
ঢাকা, লাহোর, রাওয়ালপিণ্ডিসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় তাঁহাকে অভূতপূর্ব সম্বর্ধনা দানের বিষয়ে উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিব বলেন, সব স্থানে জনগণের মনোবলের যে অভিব্যক্তি প্রকাশিত হইয়াছে, উহাতে তাহার আস্থা দৃঢ়তর হইয়াছে যে, কোন শক্তিই পার্লামেন্টারী ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব, বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন, আওয়ামী লীগের ৬ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, এক ইউনিট বাতিল, ছাত্র বেতন হ্রাস, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, সাধারণ লোকদের জন্য শিক্ষার দুয়ার সম্প্রসারণ, জনগণের উপর হইতে করের বোঝা হ্রাস, মেহনতী শ্রমিক সাধারণের মজুরী বৃদ্ধি এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার পুনঃপ্রবর্তন প্রভৃতি গণদাবী উপেক্ষা করিতে পারিবে না।
তিনি তাহার দলীয় ছয় দফা এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবী বাস্তবায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
শেখ মুজিব তাঁহার বক্তৃতায় প্রেস এণ্ড পাবলিকেশনন্স অর্ডিন্যান্স বাতিল, সাম্প্রতিক গুলীবর্ষণ সম্পর্কে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং সাম্প্রতিক গুলীবর্ষণের ফলে নিহত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দানের দাবীর পুনরুল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান ঐক্যবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে বর্তমান গণ আন্দোলন অব্যাহত রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিয়া স্বার্থান্বেষী মহলের উস্কানির বিপদ সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকিবার জন্য জনসাধারণ এবং বিশেষ করিয়া রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!