ভাসানীর ব্যাপারে শেখ মুজিব
মওলানা সাহেব ইস্কান্দার মির্জার সাথে গোপন সন্ধিতে যোগ দিয়েছেন।
যোগ দিয়েছেন ‘সোহরাওয়ার্দী নিধন’ যজ্ঞে।
::::::::::::::::::::::::::::::::::
পুঁজিপতিদের কাছে পাকিস্তানকে কি বন্ধক দেওয়া হলো জীবনের তরে? মাওলানা ভাসানী সাহেব কোথায়? কি বলেন? আইয়ুব সাহেবের হাতকে শক্তিশালী করে পুজিপতি ও সম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে বের করে এনে সোসালিস্ট ব্লকে যোগ দিতে তিনি নাকি সক্ষম হবেন! তাই তিনি আইয়ুব সাহেবের সমস্ত অগণতান্ত্রিক পন্থাকে সমর্থন করেছেন। আর আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলকে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল বলে গালি দিয়েছেন। এখন তো প্রমাণ হয়ে গেছে মাওলানা সাহেব ও তাহার দলের কিছু সংখ্যক লোক সাম্রাজ্যবাদীদের দালালের দালালি করেছেন।আমার এক বন্ধু এমপিএ ছিলেন ১৯৫৭ সালে। মাওলানা সাহেব যখন ন্যাপ করলেন ইস্কান্দার মির্জার সাহায্যে প্রগতিশীল বৈদেশিক নীতির ধুয়া তুলে, তখন ন্যাপ পার্লামেন্টারি পার্টি গঠন করে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন উঠাইয়া নিলেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো। তখন তিনি ন্যাপের এক পার্টি মিটিংয়ে বলছিলেন, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা চলবে না। কে এস পি, নিজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ কোয়ালিশনকে সমর্থন করা উচিৎ। তখন কিছু কিছু সদস্য তার প্রতিবাদ করে বলছিলেন, এই সমস্ত দল কি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন করতে পারে? এঁরা ইস্কান্দার মির্জার দালালি করছে। ইস্কান্দার মির্জা আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারকে ধ্বংস করতে চায়। আওয়ামী লীগ তো বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে, ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। যুক্ত নির্বাচনের জন্য যুদ্ধ করছে। কেমন করে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে এই সমস্ত নীতি বিবর্জিত দলদের সমর্থন করতে পারা যায়! মওলানা ভাসানী সাহেব তার উত্তর দিয়েছেন এইকথা বলে, মিশরের নাসের যদি সমাজতন্ত্র করতে পারে, তবে ইস্কান্দার মির্জাকেও একবার পরীক্ষা করে দেখলে অন্যায় কি? এরপরেই জানা গেলো মওলানা সাহেব ইস্কান্দার মির্জার সাথে গোপন সন্ধিতে যোগ দিয়েছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী নিধন’ যজ্ঞে। তার নীতি আমার জানা আছে। জেলে বসে আইয়ুব সাহেবের কাছে কি কি চিঠি দিয়েছেন তাও আমার জানা আছে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর দিন ফুরাইয়া এসেছে। একটু দেরি করুণ দেখতে পাবেন, আপনার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতা, আইয়ুব খান সাহেবের রূপ। বৃদ্ধকালে সরকারি ব্যয়ে একটু বিদেশে ঘুরবার সুযোগ পেয়েছেন। দুনিয়া দেখতে কেহ আপত্তি করে না। জনগণের সাথে আর ছল চাতুরি না করাই শ্রেয়। আওয়ামী লীগ কর্মীরা ও জনগণ যখন জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও গণতন্ত্রের দাবির জন্য গুলি বুক পেতে নিতেছে, যখন কারাগার ভরে গিয়াছে তখন তাহার দলেরই দুই একজন নেতা এর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদীর হাত দেখতে পেয়েছেন। এই অত্যাচারের প্রতিবাদও করেন নাই। জনগণ এঁদের চিনে ফেলেছে, সে সম্বন্ধে আমার কোনো সন্দেহ নাই।
#কারাগারের_রোজনামচা #ভাসানীর_ব্যাপারে_বঙ্গবন্ধু