মুক্তিযুদ্ধের জনপ্রতিনিধিরা অবহেলিত
একাদশ অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে গেরিলাদের অবিস্মরণীয় অবদান ছিল তার যথাযথ মূল্যায়ন, মর্যাদা বা সম্মান দেয়া হয়নি। তেমনিভাবে চতুর্দশ অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জনপ্রতিনিধিদের এখন পর্যন্ত মূল্যায়ন করা হয়নি। তাদের সুনির্দিষ্ট আইনিকাঠামাের মাধ্যমে যথাযথভাবে সম্মান জানানাের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরকার গঠন করেন এবং দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার বিন্নি কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের অবহেলা করে বা বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লিখিত হতে পারে না। যুদ্ধপ্রশিক্ষণে, যুদ্ধক্ষেত্রে বা রণাঙ্গণে প্রায় সর্বত্রই জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত । এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে। জনপ্রতিনিধিরা যদি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যথার্থ ভূমিকা পালন না করত তাহলে জেনারেল টিক্কা খান ৮৮ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যদের সামরিক আইনে বিচার করে দন্ডাদেশ দেয়ার কথা কেন ঘােষণা করেছিলেন? সেক্ষেত্রে তুলনা হিসেবে নয়, ইতিহাসের সত্যকে তুলে ধরার জন্য এ প্রশ্ন উঠতেই পারে একমাত্র মুক্তিবাহিনীর সেনাপ্রধান জেনারেল ওসমানী ব্যতিত অন্যকোন সামরিক অধিনায়কদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সামরিক জান্তার পক্ষ হতে কোনাে অভিযােগ গঠন করা হয়েছিল কিনা? হয়ে থাকলে কী ধরণের অভিযোেগ তাদের বিরুদ্ধে আনীত হয়েছিল সাধারণ নথিপত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সকল কৃতিত্বই তারা করায়ত্ত করে বসে আছে। অন্যদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার অন্ধকারে ফেলে রাখা হয়েছে। কত জন জনপ্রতিনিধি খেতাব বা পদক পেয়েছেন? স্বাধীনতা পুরস্কার কিংবা বিশেষ কোন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কিনা তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা উচিত। অন্যদিকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে সামরিক কর্তৃপক্ষ জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গ্রামের সাহসী যুবকদের সংগঠিত করেছেন ‘৭১ সালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। প্রশিক্ষণ পেয়ে গ্রামের শান্ত নিরীহ যুবকটি হয়ে উঠেছে দুঃসাহসিক যােদ্ধা। জীবন দিয়েছেন। রক্ত দিয়েছেন। তাঁদের জন্য লেখা হবে না কোনাে গৌরব গাথা। বিজন পথে, জঙ্গলে, নদীর পারে, ধান ক্ষেতে কিংবা বিস্মৃতির কাদা মাটিতে নীরব কোলাহলে তারা মৃত্যুঞ্জয়ী। তাঁদের জন্য নেই কোনাে চিহ্নিত কবর । নামফলক। কিংবা স্মৃতিসৌধ। সাহসী সেই যােদ্ধাদের আত্মবলিদানের ফলশ্রুতিতে কতিপয় নামধারী আমরা ছিনিয়ে নিয়েছি তাদের প্রাপ্য পদক, খেতাব, সম্মান এবং মর্যাদা। তাদের গৌরবময় কৃতকর্মকে লুণ্ঠন করে অনেকেই ভূষিত হয়েছেন নানা রাষ্ট্রীয় খেতাবে, নির্লজ্জতার মেডেলে । যদিও তাদের অনেকেই গর্জিত কামানের সুদূরে অথবা যুদ্ধফ্রন্ট থেকে তাদের দূরতম অনুপস্থিতি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই গণযুদ্ধ। এ যুদ্ধ সামরিক যুদ্ধ নয়। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জনগণের যুদ্ধ। এ যুদ্ধ বাঙালি জাতির অস্তিত্বের লড়াই। পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাত্র ৪ হাজার বাঙালি সেনা অফিসার নিয়ে গড়ে ওঠে নিয়মিত বাহিনী। পাকিস্তানি সেনা কাঠামােয় গড়ে ওঠা অফিসারদের কতিপয় ব্যতিক্রম ব্যতীত অধিকাংশ সেনাকর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিতে হয়েছে আত্মরক্ষার জন্য, যেমন জেনারেল ওসমানী বলেছেন, এদের উপর আক্রমণ’ না হলে সম্ভবত এরা ‘নিরপেক্ষই থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক যুদ্ধ আর এরা ছিলেন রাজনীতি থেকে যােজন দূরে।
অথচ অনিয়মিত বাহিনী যারা গেরিলাযােদ্ধা তারা এসেছেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, জীবন যুদ্ধে লড়তে গিয়ে শিখেছে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতির অস্তিত্ব, বাঁচা মরার প্রশ্ন এবং বেকারত্ব, দারিদ্র্য, শাসন ও শােষণের চক্রকে ছিন্ন ভিন্ন করার প্রতিজ্ঞা। তারা এসেছেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে, তার প্রেরণায়, নির্দেশে ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে। এদের সংখ্যা অগণিত। শক্র হননের পদচারণায় বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদ ছিল কম্পিত। তাদের আকস্মাৎ আক্রমণে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ছিল ভীতসন্ত্রস্ত। পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজী বলেছেন, “গেরিলারা আমার চোখ অন্ধ ও কান বধির করে ফেলেছে।” ঈমান মাঝি শক্রর খালে ঢুকিয়ে দিয়েছে নৌকা, বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান জয়গুরু, গ্রামের শিক্ষকের ছেলে মিন্টু, টগবগে খালেক সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে কেমন করে মৃত্যুকে অতিক্রম করেছে তার ইতিহাস কেউ লিখবে না। খেতাব পাবে। পদক পাবে না । বীরত্বের সনদ পাবে না। হাজারাে গেরিলার আত্মবলিদানের মহিমায় তাঁদের জন্য কোনাে বিশেষ দিবস নেই। কেন নেই? মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে সামরিক অধিনায়করা মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছে। জনযুদ্ধকে সামরিক যুদ্ধের তকমা এঁটে দিতে চেয়েছে। করেছেও। খেতাব দেয়ার তকমা দেয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের। জনযুদ্ধের নায়ক দুঃসাহসিক গেরিলারা আজ রাষ্ট্র, সমাজে ও পরিবারে অবহেলিত, অবাঞ্ছিত ও মর্যাদাহীন। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের দেশপ্রেমিক বরেণ্য সংগঠক ইতিহাসে তারাও কি চিরকাল উপেক্ষিত থাকবেন? ইদানীং ভিনদেশী যুদ্ধবীরদের খেতাব দেয়া হচ্ছে ভালাে কথা।
তাই বলে দেশীয় মুক্তিযােদ্ধা সংগঠক তারা কি অনাগত কাল ধরে অপাঙক্তেয় থাকবে? ‘৭০ সালের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যারা জাতীয় অস্তিত্বের ভয়াবহ ক্রান্তিলগ্নে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার অমূল্য দলিল অনুমােদনের ঐতিহাসিক দায় গ্রহণ করেছিলেন। গঠন করেছিলেন গণ-পরিষদ ও স্বাধীনতার সনদ। অনুমােদন করেছিলেন রাষ্ট্রীয় কাঠামাে এবং মুজিবনগর সরকার। আবার তারাই ছুটে গিয়েছেন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিবেশী ভারতীয় সীমান্তের কয়েক হাজার মাইলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রাম থেকে আসা যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহিত ও সংগঠিত করতে।মূলত সেদিন কয়েক শ’ ক্যাম্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রায় সাড়ে তিন শ’ গণপরিষদ সদস্য। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মুক্তিযুদ্ধে যােগদানের আকাঙ্ক্ষায় ছুটে আসা হাজারাে যুবক যারা পেয়েছে আশ্রয়, খাদ্য, ন্যূনতম চিকিৎসা, সর্বোপরি শত্রু হননের জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণ। সীমান্তজুড়ে এই ক্যাম্পগুলাে ছিল মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি। তার সংগঠক ছিলেন জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা। প্রায় সকলেই আজ অবহেলিত উপেক্ষিত ও মর্যাদাহীন। যারা নিয়মিত বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের ভাগ্যে বীরউত্তম জাতীয় নানা ধরনের খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন স্বাধীনতা খেতাব । গ্রাম-গঞ্জে, নগরে-প্রান্তরে যারা যুদ্ধ করেছে এইসব কনভেনশনাল বাহিনীর অধিকর্তাদের পক্ষে এসব দুঃসাহসিক অকুতােভয় গ্রামীণ যােদ্ধাদের গৌরবময় যুদ্ধকীর্তি অজ্ঞাত বিধায় এদের ভাগ্যে জোটেনি রাষ্ট্রীয় সম্মানের বরমাল্য।
লড়াইয়ের মাঠে প্রত্যক্ষভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব কর্তব্য পালনের জন্য যে শতাধিক জনপ্রতিনিধিদের পাকিস্তান সামরিক ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের অভিযােগে অভিযুক্ত করেছিল, যাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, আত্ম-পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল সে কষ্টকর অথচ গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস কোনােদিনও রাষ্ট্র বা সরকার জানতে চায়নি। গবেষণা হয়নি কীভাবে গ্রামে-গঞ্জে, প্রান্তরে জনযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। রাতের আঁধারে অথবা ঘন বৃষ্টির অস্বচ্ছ অন্তরালে শত্রু হননের নিদারুণ প্রত্যয়ে নিজের জীবনকে করেছে উৎসর্গ, তাদের পেছনে জনগণের প্রতিনিধিদের প্রতিনিয়ত বেদনা-বিধুর মুহূর্তগুলাে, প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘটনাবলি, কীভাবে গেরিলাদের আত্মজ-অভিভাবকত্বে রক্তাক্ত যুদ্ধস্মৃতি তাদেরকে একাত্ম করেছিল, এক দেহ ও সত্তায় রূপান্তরিত হয়েছিল সে ইতিহাস এখনাে লেখা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণই থেকে যাবে যদি এই ভিত্তিভূমির অসম সময়ের দুঃসাহসিক সারথিদের কীর্তিময় ভূমিকা জাতীয় মর্যাদার অভিধায় অভিসিক্ত না হয় ।
এদের রাষ্ট্রীয় সম্মান বা পদক দেয়া হয়নি কেন?
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের যে সকল সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা ধরনের অপবাদ দেয়া হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধে তারা যথার্থভাবে অংশগ্রহণ করেননি। বিভিন্নভাবে রণাঙ্গন থেকে দূরে থেকে তারা বিলাসী জীবন-যাপন করেছেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা ভিন্নতর । সিংহভাগ এম,এন,এ ও এম.পিগণ অর্থাৎ গণপরিষদ সদস্যবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকেই যে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন সামন্যতম গবেষণায় তা বেরিয়ে আসবে। অচেনা ও অজানা জায়গায় নিদ্রাহীন দিন যাপনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দীর্ঘ ৯ মাস তাদের অধিকাংশ দারা পুত্র পরিবার থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। শুধু পরিবার কেন, নিজের সুখ-সুবিধার দিকেও তাকাবার অবসর পাননি। সরকার গঠন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সনদ অনুমােদন ও মুজিবনগরের সরকার গঠনে অনেকে অংশগ্রহণ না করতে পারলেও সাবারই দৃপ্ত শপথ ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা।
কেউ শরণার্থীদের দেখাশােনা করেছেন, কেউ বা চিকিৎসা পরিচালনা করেছেন। অনেকেই সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ফলে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের ঘরবাড়িতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার দোসররা অগ্নিসংযােগ করেছে। আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করেছে। ব্যক্তিগতভাবে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে লেখকের ও তার আপনজনদের ভাই চাচা মামা তাদের প্রত্যেকের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়া হয়। আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করা হয়। ৮০ বছরের বৃদ্ধ মা আশ্রয়হীন হয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছিন্নমূল মানুষের মতাে ছুটে বেড়িয়েছে। সেদিন আতঙ্ক, ভয়ের কারণে অনেকেই তাদের পরিজনদের ঠাই দেয়নি। খাদ্য নেই। আশ্রায় নেই। অর্থ নেই। এই অবস্থায় বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও আপনজনদেরকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনকেই ধ্যান ও জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। সেদিন যদি গণপরিষদের এসব সম্মানিত সদস্য ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করতেন তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তা হতাে এক ভয়ঙ্কর সর্বনাশা কাণ্ড। স্বাধীনতার সংগঠকদের দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছর উপেক্ষা করা হয়েছে। যেমন উপেক্ষা করা হয়েছে তাদের আশ্রয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা যােদ্ধাদের । এদের যথাযথ সম্মান আজও দেয়া হয়নি। এখানে একটি কথা স্পষ্ট করেই বলা যেতে পারে লেখকের নির্বাচনী এলাকা পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর এলাকার এক বিস্তীর্ণ জনপদ নিয়ে । মুক্তিযােদ্ধা, গণপরিষদ সদস্য ও গেরিলা যােদ্ধাদের বাড়িঘর ধ্বংস আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে আটক করে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে মানুষ অবলােকন করেছে পাবনা জেলার বেড়া থানার অন্তর্গত উপসেনাপ্রধানের বাড়িতে বা তার নিকটতম আত্মজনের বাড়ি ধ্বংস করেনি বা তাদের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে এ সংবাদ পাওয়া যায়নি। যা আজও অজ্ঞাত।
গণপরিষদের সদস্যবৃন্দের যদি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা না থাকত তাহলে পাকিস্তান সামরিক জান্তা সামরিক ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, হত্যা-খুন ও ধর্ষণের অভিযােগে কেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল? শুধু তাই নয়, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এমনকি বরেণ্য শিক্ষকদের কারাদণ্ডে বা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। আজ যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বড় বড় খেতাব ও পদবি নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে সুবিধা ও সম্মান গ্রহণ করে থাকেন স্বাভাবিকভাবেই তারা সম্মানিত ব্যক্তি এবং গর্ব ও অহংকারের পাত্র। প্রশ্ন উঠতেই পারে যারা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন সেই সংগঠকদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে কেন সম্মান প্রদান করা হয়নি? দেয়া হয়নি স্বাধীনতার গৌরবজনক বিশেষ পদক। সেদিন যাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সামরিক জান্তা মামলা দায়ের করেছিল, মৃত্যুদণ্ডের আদেশ জারি করেছিল, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল, ইতিহাসে আজও যারা অপাঙক্তেয় তাদের নাম পরিচয় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। সেদিন যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল সেই মহান ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা তুলে ধরে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাইগণপরিষদের সংগঠক ও বীর গেরিলা যােদ্ধাদের নামে কেন পদক দেয়া হয়নি? এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক কারণে এই অধ্যায়ে তাদের স্বর্ণোজ্জ্বল নামগুলাে লিখে রেখে যেতে চাই। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসনকর্তা লে. জে. টিক্কা খান ঢাকা, বাকেরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের পাঁচ ব্যক্তিকে ‘৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল ৮ ঘটিকায় ঢাকাস্থ দ্বিতীয় রাজধানীতে এক নম্বর সেক্টরের সামরিক আইনের সাব-এ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাছে হাজির হওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক আইনবিধি ও সামরিক আদেশ অনুযায়ী আনীত কতিপয় অভিযােগের জবাবদানের জন্য তাদের হাজির হতে নির্দেশ হয়েছে। তারা হাজির হতে ব্যর্থ হলে এম এল।
আর -৪০ অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হবে। এসব নাম পরিশিষ্টে উল্লেখ করাই রীতি। কেননা এদের উত্তরাধিকার ও নতুন প্রজন্ম যেন এদের নগণ্য মনে না করেন। সেজন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহকর্মী। হিসেবে ইতিহাসে এদের অমরকীর্তি অক্ষয় এবং যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে এবং তাদের মহান ত্যাগ তিতিক্ষা ও আদর্শ চিরঞ্জীব হয়ে থাক এই লক্ষ্যে বইটির অন্তর্গর্ভে স্বর্ণোজ্জ্বল অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাক সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই মহান ব্যক্তিদের নাম লিপিবদ্ধ করতে আমার বিবেক আমাকে তাড়া করেছে। দেশে দেশে যারা এভাবে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, আত্মত্যাগ ও আত্মবলিদান করেছেন ইতিহাসে তাদের নাম এবং ফলক চিরকাল দৃশ্যমান হয়ে থাকে। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা করেছে। তাদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ হয়তাে অনেকের কাছে বিসদৃশ মনে হতে পারে কিন্তু আমার বিবেচনায় তাদের নাম, তাদের ত্যাগ, আদর্শের প্রতি আনুগত্য সােনার বাংলা গড়ার দৃষ্টান্ত সৃষ্টির উপদান হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি। কোনাে দিন কোনাে কালে যদি কোনাে গবেষক কিংবা ইতিহাসবিদ এসব জনপ্রতিনিধির মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করতে চান সে লক্ষ্যে নামগুলাে লিপিবদ্ধ হলাে। আশা করি পাঠকেরা সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। এখানে আরাে একটি গুরুতর প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রশ্নটি সঠিক কিংবা বেঠিক আজও তা আমি জানি না। তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে যখন এ পর্যন্ত কোনাে ইতিহাস, তথ্য বা লেখনীতে এমন নাম পাওয়া যায়নি যারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক, অথবা সেক্টর কমান্ডার কিংবা সাব সেক্টর কমান্ডার তাদের নামে পাকিস্তান সামরিক জান্তা কোনাে মামলা দায়ের করেছিল কিনা?
করে থাকলে তা প্রকাশ করলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। এমনকি আমার ব্যক্তিগতভাবে জানা আছে আমার বাড়ি থেকে একই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান এ কে খন্দকার তার বাড়িতে কোনােদিন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কোনাে লােক হানা দিয়েছিল কিনা। কিংবা তার বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল কিনা আমার মনােজগতে এই প্রশ্নটি রয়ে গেছে অথচ প্রায় প্রতিটি জনপ্রতিনিধির বাড়ি-ঘর দগ্ধ হয়েছে। আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে কিংবা রাজাকার আলবদরদের অত্যাচারে গ্রাম-ছাড়া করা হয়েছে, কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধকে সামরিক যুদ্ধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, বিশেষ দিবস পালন করেন, পদক বা খেতাবে ভূষিত হয়ে আলােকোজ্জ্বল পাদপ্রদীপের সামনে গর্ব ঔদ্ধত্য মস্তকে অভ্রভেদি হয়ে উঠেছেন তাদের কাছে আমার এ বিনীত প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাদের দায়িত্ব এ বিষয়টি পরিষ্কার করা। কেবল ইতিহাস পর্যালােচনায় তাদের ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে একজনের গর্বিত নাম, তিনি হলেন, সেনাবাহিনী প্রধান এম.এ.জি ওসমানী। জেনারেল ওসমানীকে সামরিক আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ ঢাকা, ১৩ মে। ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক যে আদেশ দেন নিচে তা দেয়া হলাে:-১। ৪০ নম্বর সামরিক আইন বিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে আমি ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জে টিক্কা খান এস.পি.কে.পি এস সি আপনি কর্নেল এম.এ. জি ওসমানীকে আপনার বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২১, ১২৩, ১৩১ ও ১৩২ নম্বর ধারা এবং ১০ ও ১৪ নম্বর সামরিক আইনবিধি অনুযায়ী আনীত অভিযােগের জবাব দেয়ার জন্যে ১৯৭১ সালের ২০ মে সকাল আটটার সময় ঢাকার দ্বিতীয় রাজধানী ১ নম্বর সেক্টরের উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের সামনে হাজির হতে আদেশ দিচ্ছি।
২। যদি আপনি উপরের উল্লেখ মতাে হাজির হতে ব্যর্থ হন তা হলে আপনার অনুপস্থিতিতেই ৪০ নম্বর সামরিক আইন বিধি অনুযায়ী আপনার বিচার করা হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কার্যরত, কর্মরত কতজন সহকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী অংশ নিয়েছিলেন তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব থাকলে আজকে সরকারি চাকুরেদের মধ্যে ভুয়া মুক্তিযােদ্ধার সনদ নিয়ে মিথ্যাচার করার সুযােগ থাকত না। যারা ভুয়া মুক্তিযােদ্ধা সেজে ভুয়া সনদ নিয়েছেন তারা শুধু নিজেদের অপমান করেননি গােটা মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করেছেন। ব্যক্তির স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সনদকে ব্যবহার করেছেন, এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? প্রায়শই বলা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা | মুক্তিযুদ্ধের সময় বাজেভাবে সময় কাটিয়েছে। তারা আরাম আয়েশ করেছে। হােটেলে ফুর্তি করেছে। রণাঙ্গনে যায়নি। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এসব অভিযােগ সর্বাংশে সঠিক নয়। তাদের জবাবে নিচের ক্যাম্পগুলাে কারা পরিচালনা করেছে তার একটি তালিকা এখানে উদ্ধৃত করা হলাে। বিজন জঙ্গলে, খােলা মাঠে বা কোনাে সুবিধাবঞ্চিত স্থানে ক্যাম্পগুলাে স্থাপিত হয়েছিল। যা প্রায়শই ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টার্গেটের আওতার মধ্যে। সে সব স্থানে বসেই এসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আগত হাজার হাজার ছেলের সঙ্গে একত্রে অবস্থান করেছে। ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের এই ক্যাম্পগুলােই ছিল ভিত্তিমূল। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ (এম,এন,এ) এবং পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের (এম.পি.এ) সদস্যগণের অধিকাংশ সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অনেকেই শর্ট সামরিক ট্রেনিং নেন। রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই নেতৃবৃন্দের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই স্বাধীন বাংলার নিয়মানুগ, বৈধ এবংগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়েছিল।
চরম দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝেও এই সকল রাজনৈতিক নেতৃত্ব অতুলনীয় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারত সীমান্তের দুর্গম ও জনমানব বসতিযােগ্য নয় এমন স্থানে পরিচালনা করছিলেন যুব ক্যাম্প ও ট্রেনিং ক্যাম্প। শত অসুবিধা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার ছাত্র যুবককে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন অহর্নিশ। নিচে যুব-ক্যাম্প ও ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনায় যে সব এম.এন.এ ও এম.পি.এ নিয়ােজিত ছিলেন তাদের মধ্যে ১. সিঙ্গাবাদ (মালদা), খালেদ আলী মিয়া এম,এন,এ, আমজাদ হােসেন এম.পি.এ ২. বাঙালিপুর (মােহরতীপুর), মােঃ বায়তুল্লাহ এম.এন.এ রাজশাহী, মােঃ আবদুল জলিল (আওয়ামী লীগ নেত) ৩, ডালিম গাঁ (পঃ দিনাজপুর), এস.এম. ইউসুফ এম.পি.এ, ৪. গাঙ্গরামপুর (পঃ দিনাজপুর), শাহ মাহাতাব এম.এন.পি ৫. কাটলা (প, দিনাজপুর), খতিবুর রহমান এম,পি,এ ৬, মালন (পঃ দিনাজপুর), আজিজুর রহমান এম.এন.এ, একরাম-উল হক এম.পি.এ ৭. প্রাণ সাগর (পঃ দিনাজপুর), আব্দুর রহিম এম.পি.এ, আবেদ আলী, এডভােকেট ৮, কুসমুণ্ডী (বাটেশ্বরী), মােসেদ আলী এম.এন.এ, এস.এ.বারী এটি, (ন্যাপ নেতা) ৯, মালঞ্চ (কুরমাইল), অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এম,এন,এ ১০, ত্ৰিমুহনী (বালুরঘাট), মােজাফফর হােসেন এম.পি.এ ১১. মাহীনগর (বালুর ঘাট), মােকলেসুর রহমান, ১২. পেরিলা (মালদা), আবদুস সালাম এম.পি,এ, ১৩, জলংগী (মালদা), আবদুস সালাম এম.পি.এ, ১৪, শেখ পাড়া (মালদা), জিল্লুর রহমান এম.পি.এ ১৫. লালগােলা (মালদা), রিয়াজউদ্দিন আহমদ এম.পি.এ ১৬. দেওয়ানগঞ্জ (কুচবিহার), আফসার আলী এম,এন,এ, আবদুর রহমান চৌধুরী এম.পি.এ ১৭. হলদী বাড়ি (জলপাইগুড়ি), আশরাফুল ইসলাম এম.পি.এ ১৮, ওকেরা বাড়ি (জলপাইগুড়ি), আবুল হােসেন এম.পি.এ ১৯, কুচবিহার, গােলাম হাবিব, আবদুর রহমান এম,পি,এ ২০. দিনহাটা (কুচবিহার), মােতাহার হােসেন তালুকদার এম.পি.এ ২১. চৌমারী (কুচবিহার), মােজাহার চৌধুরী এম.পি.এ, আবদুল হাকিম এম.পি.এ ২২. সাহেবগঞ্জ (কুচবিহার), মােজাহার চৌধুরী এম.পি.এ, আবদুল হাকিম এম.পি.এ ২৩. চৌধুরী হাট (কুচবিহার), শামসুল হক চৌধুরী এম.পি.এ, মােজাহার চৌধুরী এম.পি.এ ২৪, নাজির হাট (কুচবিহার), শামসুল হক চৌধুরী এম.পি.এ ২৫, ঝাউকাটি (কুচবিহার), মাে মজিবুর রহমান, শামসুল হক চৌধুরী এম.পি.এ ২৬, শীতালকুঠি (দহগ্রাম), সিদ্দিকি হােসেন এম.এন.এ ২৭. শাহিদ কর্নার (দিনহাটা), আহমদ তফিজউদ্দিন এম.এন.এ ২৮, দহগ্রাম (কুচবিহার ), সিদ্দিকুির রহমান এম.পি.এ ২৯, বামুনহাট (কুচবিহার), এ. হাকিম এম.পি.এ ৩০. মরণতলী (মানকারচর), ড. মফিজুর রহমান এম.পি.এ, নূরুল ইসলাম ৩১. খােচাবাড়ি (কুচবিহার), ওয়ালিউর রহমান এম.পি.এ ৩২. গিতালদহ (কুচবিহার), আবুল হােসেন এম.পি.এ ৩৩. সিতাল (কুচবিহার), হামিদুর রহমান এম.পি.এ ৩৪. নাগের গিধরী (কুচবিহার), করিমুদ্দীন আহমেদ এম.পি.এ ৩৫. মানকের চর (কুচবিহার),
তাহেরুল ইসলাম এম.পি.এ ৩৬. রানাঘাট (নদীয়া), আসাদুজ্জামান এম.পি.এ, জে.কে.এম.এ আজিজ ৩৭. কচুয়াডাঙ্গা (নদীয়া), তফিজুদ্দিন আহমেদ এম.পি.এ, ৩৮, বেতাই (নদীয়া), মােঃ মহিউদ্দিন এম.পি.এ ৩৯, করিমপুর (নদীয়া), ইসমাঈল হােসেন এম.পি.এ গােলাম কিবরিয়া এম,পি.এ, আব্দুর রউফ এম.পি.এ ৪০, শিকারপুর (নদীয়া) আজিজুর রহমান আক্কাস এম.এন.এ ৪১. কল্যাণী (নদীয়া), হেদায়েত হােসেন এম.পি.এ ৪২. ডােমপুকুর (নদীয়া), ইউনুস আলী এম.পি.এ ৪৩, তাকিপুর (বারসাত), নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এম.পি.এ, ৪৪. জয়বাংলা-১ (হাড়) শ্রমিক, আঃ মান্নান এম.এন.এ ৪৫. নৈহাটি (বারসাত), এ. লতিফ খান। এম.পি.এ ৪৬. হাসনাবাদ, এ গফুর এম.এন,এ, নূরুল ইসলাম এম. পি. এ ৪৭. হিঙ্গলগঞ্জ, মির্জা আফজাল হােসেন ৪৮, হাকিমপুর, কেরামত আলী, মুশাররফ হােসেন ৪৯. তেতরা, খয়বর হােসেন এম.পি.এ ৫০. আমলানী, সউগাতুল আলমগীর এম.এন.এ ৫১. ধলতিতা, সৈয়দ কামাল বখত এম.পি.এ ৫২. নীলগঞ্জ, ফণীভূষণ মজুমদার এম.পি.এ ৫৩. কল্যাণগড়, এ.কে.এম, ইসমাইল মিয়া এম.পি.এ ৫৪, পানিহাটি, শিবুপ্রসাদ ঘোেষ ৫৫. জয় বাংলা-২ বগা, অধ্যাপক আবু সুফিয়ান ৫৬, কাদিরহাট (দমদমের কাছে), নজির আহমদ তালুকদার এম.পি,এ, আমজাদ হােসেন ৫৭, ভােলাঘাট (আদমপুর মালদা), হামিদুর রহমান এম.পি.এ ৫৮, ডাকী, মি, সুধীর বিশ্বাস ও মাহমুদ চৌধুরী ৫৯. শিলা (ডাওকী), আবদুল হক, এম, এন,এ, মানিক মিয়া ৬০. বালাট (ডাওকী), আব্দুল হামিদ এম.পি.এ ৬১. বারসারা (ডাওকী), আব্দুল হামিদ এম.পি.এ, ৬২. ঢালিখােলা (বনগাঁ), সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এম.পি.এ, এ জোহা, এম, এন,এ ৬৩. ঘােষপুর (বনগাঁ), মােমিনউদ্দিন আহমেদ এম.পি.এ, হামিদউজ্জামান এম.পি.এ ৬৪. চাপাবাড়িয়া, নূরুল ইসলাম মধুর এম.এন.এ ৬৫, চানপাড়া, মতিউর রহমান এম.পি.এ ৬৬. পন্টা, মােঃ আবু সুফিয়ান ৬৭. মাজদিয়া (কুষ্টিয়া সীমান্ত), আবুল ইসলাম এম.পি.এ ৬৮, লালগােলা, আবদুল হাদী এম.পি.এ ৬৯. কচুয়া ডাঙ্গা, এ রব (বগা মিয়া) এম.পি.এ ৭০. বকিমপুর, আজিজুল হক এম.পি.এ ৭১. সেলুনিয়া (ত্রিপুরা), শহিউদ্দিন ইস্কান্দা এম.পি.এ ৭২. বেলতলী, আবদুর রহমান, শ্রমিক নেতা ৭৩, ছােটখােলা, সিরাজউদ্দিন, আবদুল কুদ্স (ছাত্রলীগ নেতা) ৭৪. রাজানগর, খাজা আহমদ, এম,এন,এ, তালেব আলী এম.পি.এ ৭৫. পানাহােলা, বিসমিল্লাহ মিয়া, মােঃ হানিফ এম.এন.এ ৭৬, কাঠালিয়া, জালাল উদ্দিন এম.পি.এ, ৭৭. শ্রীনগর, ক্যাপ, সুজাত আলী এম.এন.এ ৭৮, মেলাগড়, রাজা মাি এম.পি.এ ৭৯, হারিনা (ত্রিপাড়া), প্রঃ খােরশেদ আলম এম,এন,এ ৮০. নরসিংগড়, এম,এ. হান্নান এম,পি,এ, মান্নান এম.পি.এ ৮১. মােহনপুর, দেওয়ান আবদুল আব্বাস এম.পি.এ ৮২. গােকুল নগর, সফিউদ্দিন এম.পি.এ, ৮৩, তুরা (মেঘালয়), শামসুল হক এম.পি.এ ৮৪. শিলং, আবদুল মােনতাকিম চৌধুরী এম.এন.এ ৮৫. ডালু (মেঘালয়), রফিকউদ্দিন ভূইয়া এম,এন,এ ৮৬. সুভাষ পল্লী (কুচবিহার), টিপু বিশ্বাস (রাজনৈতিক কর্মী) ৮৭. মাচাং পানি (তুরা), অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এম.সি.কলেজ, ময়মনসিংহ ৮৮. নাচুয়াপাড়া, কুদরতউল্লাহ মণ্ডল এম.পি.এ ৮৯. শিববাড়ী, হাতেম আলী খান
এম.পি.এ ৯০. উদয়পুর, আবদুল্লাহ হারুন এম.পি.এ ৯১, বাঘমারা, এ.মজিদ (তারা মিয়া) এম.পি.এ ৯২. শিলচর, সাইদুর রহমান ৯৩. আলম বাজার, ঐ ৯৪, পল্টনা, ক্যাপ্টেন সুজাত আলী এম.এন.এ ৯৫. মহেন্দ্রগঞ্জ, করিমুজ্জামান তালুকদার, এম.পি.এ, আবদুল লতিফ সিদ্দিকি এম.পি.এ ৯৬. বংড়া, আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগ কর্মী ৯৭. ছাইমরা, মােস্তফা শহীদ এম,এন,এ ৯৮, বড় খাসিয়া, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এম.এন.এ ৯৯. খেয়ালী, আব্বাস আলী খাঁ, এম.পি.এ ১০০. তাকি (বনগাঁ), প্রফেসর এম.এ রউফ। গেরিলা বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে এই ক্যাম্পগুলাে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। এখানে প্রথমে তারা পেয়েছে আশ্রয়, খাদ্য ও নিরাপত্তা। এখান থেকেই তাদের প্রাথমিক শারীরিক ট্রেনিং শুরু হয়েছে। অনেক ক্যাম্পেই গেরিলা ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি অপারেশনাল ক্যাম্প হিসেবে কাজ করেছে। এ সম্পর্কে কাজী সামসুজ্জামান লিখেছেন-“মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব মুক্তিযুদ্ধ শিবির গড়ে তােলা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই কুরমাইল ক্যাম্প।
এই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন পাবনা থেকে নির্বাচিত এমএনএ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এই ক্যাম্পটি দুইভাগে বিভক্ত ছিল। একটি ছিল অপারেশন ক্যাম্প এবং অন্যটি যুব অভ্যর্থনা শিবির। প্রায় দুই হাজার যুবক এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। এদের মধ্যে থেকেই প্রাক্তন পুলিশ, ই.পি.আর, আনসার এবং ছাত্রলীগের সদস্যদের সমস্বয়ে গড়ে তােলা হয়েছিল অপারেশন ক্যাম্প। এই অপারেশন ক্যাম্পের প্রধান কাজ ছিল পার্বতীপুরহিলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে রেল চলাচল ব্যাহত করা এবং পাকবাহিনীর হাত থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের জানমাল রক্ষা করা। আমরা যখন ঐ ক্যাম্পে পৌছালাম তখন দুপুর হয়ে গেছে। ঘুরে ঘুরে ক্যাম্পের খাখবর। নিলাম। ক্যাম্পের প্রশাসন বিশেষ করে ক্যাম্পের নিজস্ব হাসপাতাল সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছিল। এ সম্পর্কে স্বাধীন বাংলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান এক সপ্তাহব্যাপী উত্তরবঙ্গের ক্যাম্পগুলাে পরিদর্শন করে একটি লিখিত রিপাের্টের একাংশে বলেছেন—“Islampur which we visited on 12© is a mixed force-student camp. A.M. EPR-110 and S-100. Camp in Charge Fazlul Mia finds his authority questioned by the BSF-EPR clique. He is afraid to stay in the camp site. Trainees complain they have to tend to cows, kitchen 2 mile from camp. Money inflow from across the border reported. But there is provision for the increase in strength upto 500. Raigunj (Malone) was visited same day, where there are two camps I mile apart. Azizur Rahman in charge of both camps whose composition is M 54, EPR 61 and TS 10 for the operation camp, and S 125 for the other one which consists mostly of Hindu College students (60%) space short, On 13.71 “we visited what may be termed the best camp: Kurmail. present strength 700. Of these about 400 participated in guard of honour and listened to the ministers inspiring speech, drenched in heavey rain. Already 1000 have been sent for training (228+300+400). Trainer EPR. No ration, Active work by Prof. Abu syeed, camp in Charge.
Bangalipur is 7 miles from Kurmail. Here we saw 143, 73 having joined the Rajiganj army camp. Another 89 will return soom. 4 grenades, 16 rifles and 3 stens in stock. Camp in Charge Md. Jalil. They submitted reposition. A general conclusion may be reached from the experience in visiting these camps. Wherever he force and students gave been segregated good results have been observed.
The Following suggestions may be made from the experience of the tour.
1. The EPR, BSF and the students training camps should be all segregated.
2. A uniform better ration should be given to the trainees with immediate effect.
3. The Central office of the BDMSS Samiti should immediately take steps regarding Coochbehar. The situation in that district calls for quick action.”
এখানে পর্যবেক্ষণ করা যাবে যে সমস্ত ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেই সকল ক্যাম্পেই বাংলাদেশ থেকে আগত তরুণরা আস্তানা খুঁজে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান কর্তৃক মুজিবনগর সরকারের কাছে পেশ করা রিপাের্টটি তার প্রকৃষ্ট প্রকাশ।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধ সত্যের মুখোমুখি – অধ্যাপক আবু সাইয়িদ