আলবদর বাহিনীর নামকরণ
আলবদররা ছিল ডেথ স্কোয়াড । রাজাকার বাহিনীর পরপরই এটি গঠিত হয় । তবে, রাজাকার অধ্যাদেশের মতাে কোনাে আইনগত বিধান এর ভিত্তি নয় । কিন্তু, পাকিস্তানী বাহিনীর প্রেরণায় এরা সংগঠিত হয় এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদের যােগাযােগ ছিল গভীর। আলবদর বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ হানাদার বাহিনীই যুগিয়েছে। রাও ফরমান আলির নােটে আলবদরদের উল্লেখ আছে। অবশ্য, সরকারিভাবে পাকিস্তানী বাহিনী তা অস্বীকার করেছে। আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী জামায়াত ইসলামের নেতা মতিউর রহমান নিজামী । ৭ নভেম্বর ১৯৭১ সালে তারা ‘আলবদর দিবস’ পালন করে । ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে নিজামী ‘দৈনিক সংগ্রাম’-এ আলবদর বাহিনী সম্পর্কে লেখেন- ‘…আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনার সহযােগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ ছাত্র সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে। বদর যুদ্ধে মুসলিম যােদ্ধাদের সংখ্যা ছিল তিনশত তের । এই স্মৃতিকে অবলম্বন করে তিনশত তের জন যুবকের সমন্বয়ে এক একটি ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বদর যোদ্ধাদের সেই সব গুণাবলীর কথা আমরা আলােচনা করেছি, আলবদরের তরুণ মুজাহিদদের মধ্যে ইনশাআল্লাহ, সেই সর্বগুণাবলী আমরা দেখতে পাব।’ পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে গঠিত আলবদরের যুবকেরা এবারে বদর দিবসে নতুন করে শপথ নিয়েছে, তাদের তেজোদ্দীপ্ত কর্মীদের তৎপরতার ফলেই বদর দিবসের কর্মসূচি দেশবাসী তথা দুনিয়ার মুসলমানের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে । ইনশাআল্লাহ বদর যুদ্ধের বাস্তব স্মৃতিও তারা তুলে ধরতে সক্ষম। তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে পর্যদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উডডীন করবে ।আবু সাইয়িদ জানাচ্ছেন, আলবদর বাহিনীর গঠনের সূত্রপাত জামালপুর শহরে। পাকিস্তানি বাহিনী ২২ এপ্রিল জামালপুর দখল করে নিলে, জামালপুরের ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফ হােসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় । “জামালপুর মহকুমায় আলবদর বাহিনী কর্তৃক ৬ জন মুক্তিবাহিনীকে হত্যার মাধ্যমে তাদের কৃতিত্ব প্রকাশিত হয়ে পড়লে জামায়াত ইসলামী নেতৃত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হয় যে, রাজাকারদের চেয়ে উন্নততর মেধাসম্পন্ন রাজনৈতিক সশস্ত্র ক্যাডার গড়ে তােলার সুযােগ বর্তমান।…. আগস্ট মাস হতেই সারাদেশে ইসলামী ছাত্রসংঘকে আলবদরে রূপান্তরিত করা হয় এবং নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ও ডিসেম্বরের প্রথম পক্ষে তাদের বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা দিয়ে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার জন্য পাঠান হয়। তাদের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষার নামে বুদ্ধিজীবী হত্যায় নামান হয় ।”
Reference:
আলবদর ১৯৭১ – মুনতাসীর মামুন
সংগ্রামের নোটবুক