You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১১ই ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৩৮০

বঙ্গবন্ধুর তৎপরতা দেখে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত পরশুদিন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি এক নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশে বঙ্গবন্ধু আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মওজুত সকল মালামালের একটা পূর্ণ বিবরণী চেয়ে পাঠিয়েছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যেই একুশ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল নিয়োগ করেছেন এ ব্যাপারে। দেশের সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের হিসাব কেন প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন তা সবারই জানা রয়েছে। সম্প্রতি আকস্মিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর সফর করেছেন বঙ্গবন্ধু। ঐ সফরের সময় বন্দরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের যে চরম অব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু সরেজমিনে দেখে এসেছেন তাঁরই প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখিত এ নির্দেশ। বঙ্গবন্ধু জানতে চেয়েছেন- কি পরিমান বৈদ্যুতিক সাজসরঞ্জাম দেশে রয়েছে এবং আর কি পরিমাণ দরকার। একটি ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সাজ-সরঞ্জাম কাজে লাগাতে হবে বলেই পূর্ণ হিসাব প্রয়োজন।
কয়েকদিন পূর্বে বঙ্গবন্ধু গোদনাইল পাট গুদাম আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করেছেন। সেখানেও তিনি পাটের অব্যবস্থা দেখে এসেছিলেন। গোদনাইল পাট গুদাম পরিদর্শনেরও পূর্বে প্রধানমন্ত্রী আকস্মিকভাবে আদমজী জুট মিল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আদমজীতে গিয়ে তখন তিনি জেনারেল ম্যানেজারসহ পাঁচজন ম্যানেজারকে সাসপেন্ড করেছিলেন। সেদিন চট্টগ্রাম বন্দর সফর করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কয়েকজন অফিসারকে সাসপেন্ড করেছেন। সবগুলো স্থানেই বঙ্গবন্ধু সরেজমিনে কতকগুলো চরম অব্যবস্থা দেখে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর আকস্মিক সফরে দেশব্যাপী একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি দেশের আপামর মানুষের যে অকৃত্রিম ভালবাসা ও বিশ্বাস রয়েছে তা আর একবার জাগরুক হয়েছে তার সাম্প্রতিক আকস্মিক সফরের মধ্য দিয়ে।
মানুষের কল্যাণের জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন যে উৎসর্গীকৃত একথা দেশবাসী মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আর সে কারণেই তার ব্যস্ততা জনগণকে আকর্ষণ করে থাকে। কিন্তু জনগণের মাঝে আজ প্রশ্ন উঠেছে অন্য কারণে। তাহলো, বিভিন্ন বিভাগের মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা দেখে। আদমজী জুট মিল, গোদনাইলের পাটের গুদাম বা চিটাগাং বন্দর পরিদর্শন করে বঙ্গবন্ধুকে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে তা বিভাগীয় মন্ত্রীরাও পারতেন। আর জনগনের মনে সে কারনণেই প্রশ্ন উঠেছে অন্যান্য বিভাগীয় মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালনের বিষয় নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে যদি পাট দফতর, শিল্প দফতর এবং বিদ্যুৎ দফতর দেখতে হয় তাহলে বিভাগীয় মন্ত্রীদের দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর তৎপরতাকে স্বাগত জানাই। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগীয় মন্ত্রীদেরকেও নিজস্ব দায়িত্ব পালনে তৎপর হবার আহ্বান জানাবো। নিজের যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ সব সময় আসেনা। দেশের মানুষের খেদমত করার ভাগ্যও সবার হয় না। অতএব মন্ত্রীরা বঙ্গবন্ধুর তৎপরতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন আমরা বিশ্বাস করি।

যুবমানসের কর্মোদ্যম যথার্থভাবে ব্যবহৃত হোক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক দল তরুণ ছাত্র-শিক্ষক ঢাকার অদূরে জিরাবো এবং এনায়েতপুর গ্রামের কৃষি উৎপাদনের পরীক্ষামূলক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট এই দলে ৩ জন ছিলেন শিক্ষক। তারা জিরাবো ও এনায়েতপুরের চাষি ভাইদেরও সহযোগিতা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ শিক্ষার সর্বোচ্চ পাদপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী মাননীয় শিক্ষক, উচ্চশিক্ষা গ্রহণরত ছাত্র এবং বাংলার প্রাণ চাষি ভাইদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলে। তাদের প্রকল্পের বিষয় ছিল পতিত জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ইরি-২০ ধানের চাষ। বলা বাহুল্য, তাঁদের প্রকল্পের মাধ্যমে যে সাফল্যের আশা তাঁরা পোষণ করেছিলেন- সফলতা এসেছে তার চাইতে বেশি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত গ্রীষ্মাবকাশের ছুটিতে ছাত্র ভাইয়েরা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শ্রমিক ভাইদেরকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অধিক উৎপাদন সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানদানের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বগুড়া আজিজুল হক কলেজের এক দল ছাত্রভাইও স্বেচ্ছামূলক কাজের মাধ্যমে দেশপ্রেম ও সমাজ কল্যাণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের সে কাজে সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু দশ হাজার টাকা দান করে তাদেরকে আরো উৎসাহিত করেছেন, তাদের কাজে আরো অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। কিছু দিন আগে মুক্তিযোদ্ধা সমিতির সদস্য বন্ধুরা পরিচ্ছন্ন অভিযানের কর্মসূচী নিয়েছিলেন। তারুণ্যের জয়গান করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা মুনিঋষি এবং বুদ্ধিজীবী ব্যক্তি। তরুণদের কর্মোদ্যম ও দুর্বার কর্মপ্রেরণার কাছে সকল বাধাই ধূলিসাৎ হয়েছে সব সময়। আমাদের দেশের তরুণদের উদ্দীপনা ও দেশপ্রেমের কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বশেষ স্বাধীনতা সংগ্রামে তারা যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা এক নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সুতরাং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কাজে তরুণ সমাজও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন সে কথা আমরা সব সময় বলে এসেছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি যথাসময়ে তা করা হয়নি। আজকে বিভিন্ন বাস্তব কার্যকলাপের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে যে কর্মোদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা দেশ ও জাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে শুভলক্ষণ। এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস কিছুটা বিলম্বে হলেও এই তরুণ সমাজের এই কর্মোদ্যমকে যথাযথ কাজে লাগানোর কার্যকর ব্যবস্থা করতে পারলে লাখ লাখ বেকার অস্থিরচিত্ত যুবকদের শুধু পুনর্বাসনই হবে না উপরন্তু তাদের কর্মফলে দেশ ও জাতি উন্নয়নের দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। সুতরাং আর কালবিলম্ব না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিভাগ, কৃষি ও শিল্প বিভাগ, সমাজ কল্যাণ দফতর ও পরিকল্পনা বিভাগ যৌথভাবে এই যুব সমাজের কর্মোদ্যমকে যথার্থভাবে দেশবাসী ও জাতির কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারেন বলে আমরা মনে করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!