জেলে বঙ্গবন্ধুর কোরবানির ঈদ (২২শে মার্চ ১৯৬৭ ।বুধবার)
মোশতাক সহ সকলের কথা লিখেছেন তিনি ডায়েরীতে।
নামাজ বন্ধ রেখে তাঁকে নিতে আসলেন জেলার সাহেব।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
আজ কোরবানির ঈদ। গত ঈদেও জেলে ছিলাম। এবারও জেলে। বন্দি জীবনে ঈদ উদযাপন করা একটি মার্মান্তিক ঘটনা বলা চলে। বার বার আপনজন বন্ধু-বান্ধব, ছেলেমেয়ে, পিতামাতার কথা মনে পড়ে।ইচ্ছা ছিল না নামাজে যাই। কিইবা হবে যেয়ে, কয়েদিদের কি নামাজ হয়! আমি তো একলা থাকি। আমার সাথে কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে থাকতে দেয় না। একাকী কি ঈদ উদযাপন করা যায়? জেলার সাহেব নামাজ বন্ধ করে রেখে আমাকে নিতে আসেন। তাই যেতে বাধ্য হলাম। মোশতাককে আনা হয়েছে রাজশাহী জেল হতে গত মে মাসে। ঢাকা থেক পাবনা জেলে বদলি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাজউদ্দীন এখনও ময়মনসিংহ জেলে আটকে আছে। মোশতাক, জালাল, মোমিন সাহেব, ওবায়দুর রহমান ও নারায়নগঞ্জের মহিউদ্দিন নামাজে আসে নাই। পুরানা হাজত থেকে মনি, হালিম আরও অনেকে এসেছে।১/২ ওয়ার্ড থেকে রুহুল আমিন, প্রতাপউদ্দিন সাহেব, আবদুস সালাম খান ও অনেকে এসেছে। সকলের সাথেই দেখা হয়ে গেল। মোশতাকের শরীর খারাপ হয়ে গেছে। ১০ সেল থেকে নূরুল ইসলাম আমার সাথেই নামাজে যায়। তাকে সিলেট জেল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর টিবি ভাল হয়ে গিয়েছে।শাহ মোয়াজ্জেম হাইকোর্ট থেকে হেবিয়াস কার্পাস করে মুক্তি পেয়ে হাজতে আছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুইটা মামলা আছে। একটি জামিন পেয়েছে আর একটি জজকোর্ট থেকে জামিন পায় নাই। এখন হাইকোর্টে যেতে হবে। শাহ মোয়াজ্জেম একজন এডভোকেট, তাঁর জামিন না দেওয়ার কি কারণ বুঝতে পারলাম না। বাড়ি থেকে খাবার পাঠাইয়াছিল। আমি শাহ মোয়াজ্জেম, নূরুল ইসলাম, নূরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে খেলাম। হ্যা খেতে হবে। রেণু বোধ হয় ভোর রাত থেকেই পাক করেছে, না হলে কি করে ১২টার মধ্যে পাঠাল!নামাজ পড়ার পরে শত শত কয়েদি আমাকে ঘিরে ফেলল। সকলের সাথে হাত মিলাতে আমার প্রায় আধাঘন্টা সময় লেগেছিল।
#সংগ্রামের_নোটবুক
সূত্র – #কারাগারের_রোজনামচা #কারাগারে_বঙ্গবন্ধুর_ঈদ