You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.30 | নিউইয়র্ক টাইমস, বুধবার, ৩০ জুন, ১৯৭১ “পাকিস্তানকে সাহায্য দেওয়া কেন?” - সংগ্রামের নোটবুক

নিউইয়র্ক টাইমস, বুধবার, ৩০ জুন, ১৯৭১
“পাকিস্তানকে সাহায্য দেওয়া কেন?”

মাসব্যাপী বাকচাতুরী ও ছলাকলা শেষে, রাষ্ট্রবিভাগ পরিশেষে এটা স্পষ্ট করে, পূর্ব পাকিস্তানে নিপীড়ন চালিয়ে বিশ্বকে মর্মাহত করা সত্ত্বেও প্রশাসন পাকিস্তান সরকারকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। এই অবিশ্বাস্য নীতিগত সিদ্ধান্ত বোধশক্তিকে উপেক্ষা করে।

পূর্বের ন্যায় (পাকিস্তানকে) সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দেশে-বিদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে। জনগন, কংগ্রেসের সদস্যবৃন্দ এবং অন্ততপক্ষে একটি আগ্রহী বিদেশী সরকার (ভারত) বিশ্বাস করে (অবশ্য সবসময় চতুরতার সাথে) যে সকল প্রকার সামরিক সহায়তা এবং পাকিস্তানের জন্য কোনো নতুন উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত রাখা উচিত যতক্ষন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের দিকে প্রগতি না আসে। এই প্রতারণার প্রকাশ বিশেষ করে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ করবে, এছাড়াও কিছুদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন ত্যাগ করার পূর্বে পাকিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে তার যে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সেটা এখন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিন্দিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক সাহায্য চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাংক ও এগারো জাতির সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তান সাহায্য সংঘের প্রকাশ্য অবাধ্যতায় ফেলে দিয়েছে, যা বর্তমানে ইসলামাবাদে নতুন সাহায্য প্রদানের অঙ্গীকার করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিক্সন প্রশাসন অতীতে বারবার নির্দেশ দিয়েছে, পাকিস্তানের সম্মানার্থে একতরফা কোন সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলার জন্য তার নীতি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃক বেশি বেশি সাহায্য আন্তর্জাতিক বরাত দিয়ে পাঠানো।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন তাঁদের সাহচর্য সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কারণ এটাকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার শামিল। কিন্তু একই সময়ে তারা যুক্তি দেখান যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কতৃক পূর্বাঞ্চলে একটা রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চালিয়ে যেতে হবে। দুইভাবে এটা তারা করতে পারবে না।

আমেরিকা কতৃক চিরস্থায়ী সাহায্য সত্যিকার অর্থে পাকিস্তানে সামরিক শাসন প্ররোচিত প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কোন কাজে আসবেনা যেমনটা এথেন্স জান্তার জন্য আমেরিকার অবিরাম সমর্থন গ্রীসের জনগনকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। তবে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিপীড়ন করার স্বাক্ষরিত নীতির অসমর্থনযোগ্য অবস্থানে ফেলে দিবে যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার বাঙালি নির্মম ও অবিরাম গণহত্যার শিকার হয়েছে। ইতোমধ্যে এই নীতিগুলো ছয় মিলিয়ন পূর্ব পাকিস্তানিদের ভারতে নির্বাসিত করেছে যেখানে তাদের উপস্থিতি মারাত্মক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও গার্হস্থ্য এবং এমনকি আন্তর্জাতিক সংঘাতের একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি সৃষ্টি করছে।

রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধারের সাম্প্রতিক প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের জন্য সামান্য আশা জাগাচ্ছে, যেহেতু তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ দলকে বহিষ্কার করছে, যে দল অতীতে পাকিস্তানে অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয় লাভ করেছে এবং গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে অপরিবর্তিত জাতীয় বৈঠকে চরম সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে, কেউ এটা পারতেন? পাকিস্তানকে অতিরিক্ত সামরিক বা উন্নয়নমূলক সাহায্য ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক উন্নয়নে তার দেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নৈতিকভাবে কিভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে সেটা ওয়াশিংটন ব্যাখ্যা করেছে?