You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৯৭১ সালের ৮ ই ডিসেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার সকালে ৭ টার সময় আমি ভারতের খবর শুনছি। এমন সময় ৬জন বিহারী অস্ত্রশস্ত্র সহ আমাদের বাড়ী গিয়ে আমাকে ডাকে। আমিও রেডিও বন্ধ করে তাদের সম্মুখে এসে হাজির হই। আমাকে জিজ্ঞেস করল,  তোমার বাবা কোথায়?  আমি জবাব দিই, ঘুমিয়ে আছেন। আমি আমার বাবাকে ডেকে দিই। বাবা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা বাবাকে বলে তোমার বড় ছেলে কোথায়? আব্বা তার প্রতি উত্তরে বলেন, ছেলে কোথায় তা আমি বলতে পারি না। তারা আব্বা ও আমাকে সাথে করে পাকদালালরা কুমারখালী বাজারে নিয়ে আসে। সেই সময় শান্তিকমিটির দালাল একটা ফাঁকা ফায়ার করে অন্যান্য লোকজনকে সেখান হতে তাড়িয়ে দেয়। অতঃপর আব্বাসহ আমাকে ও অন্য একজনকে শান্তি কমিটির দালালের নির্দেশে গড়াই নদীর ধারে নিয়ে যায়। নদীর ধারে একটি ঘর ছিল সেখানে নিয়ে আমাদেরকে উক্ত ঘরের মধ্যে কিছু সময় রাখে। তারপর আমাকে পানির কিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিচিত এক পাক দালাল রাইফেল উচু করার সাথে সাথে আমি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সাতার কাটতে কাটতে নদীর পরপারের দিকে চলে যাই। আমাকে লক্ষ্য করে উক্ত দালাল বৃষ্টির ন্যায় এলোপাতারিভাবে গুলি ছুড়তে থাকে। আমি নদীর অপর পারে গিয়ে উঠি এবং হাটতে থাকি। এর মধ্যে একটা গুলি গিয়ে আমার হাতে লাগে। ঐ অবস্থাতেই আমি চলতে থাকি।এমন সময় অন্য একটা গুলি এসে আমার পায়ে লাগে। তখন আমি পড়ে যাই। পড়ে যাবার পরপরই দুটো ফায়ার হয়। আমার আব্বা ও সেই লোকটাকে তারা গুলি করে নদীতে ফেলে দেয়। তার কিছুক্ষন পর একজন রাজাকার নদী সাঁতরিয়ে আমাকে ধরার জন্য রওয়ানা হয়ে যায়। তখন আমি মৃত অবস্থায় বালির মধ্যে পড়ে থাকি। আমাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সে নদী পার হয়ে চলে যায়। আনুমানিক ঘন্টা তিনেক পর আমার কয়েকজন প্রতিবেশী আমাকে মৃত জেনে নৌকা নিয়ে আমাকে আনার জন্য যায়। কিন্তু আমি বেঁচে আছি জেনে তারা ধরাধরি করে আমাকে নৌকায় তুলে বাড়ী নিয়ে আসে এবং আমার চিকিৎসা করায়। দেশ স্বাধীন হবার পর আমাকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান হতে কিছুদিন পর আমাকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাজশাহী হাসপাতালে পাঁচ মাস চিকিৎসা করার পর আমি বাড়ী চলে আসি।

স্বাক্ষর।।-
মোঃ শহীদুল আলম
গ্রাম- তেবাড়িয়া
কুমার খালী
কুষ্টিয়া

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!