নিউজ উইক, ৮ নভেম্বর, ১৯৭১
যুদ্ধ অত্যাসন্ন
স্বাধীন দেশ হিসেবে বিগত ২৪ বছরে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান সাধারণ বিষয় নিয়ে বিবাদ করবার সীমাহীন সামর্থ্য দেখিয়েছে। তারা কাশ্মীর এবং র্যান অব কাচ নামে পরিচিত পশ্চিমাঞ্চলের কিছুটা নিয়ে সীমাহীন বিবাদ করে চলেছে এবং ছয় বছর আগে একটি সংক্ষিপ্ত তবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল। একজন পশ্চিমা কুটনীতিকের ভাষ্য মতে এই দুইদেশ কখনো সত্যিকার অর্থে শান্তিপুর্ন সহাবস্থানে ছিলোনা। এবং অবশ্যই গত সপ্তাহে তারা এমনটা ছিলনা। ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান ৩০০০ মাইলের সীমান্ত জুড়ে ব্যাপক সৈন্য মোতায়েন করেছে। অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই মনে করছেন যে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সফর যা এই সপ্তাহে হবার কথা তা এই ভাষ্যই দিচ্ছে যে ইন্ডিয়া খুব সম্ভব এই যুদ্ধে সাময়িক ভাবে জড়াবে। কিন্তু দুই জাতির মনেই এই অশুভ ভাবনা উঁকি দিচ্ছে যে এই অপ্রত্যাশিত যুদ্ধে আজ হোক বা কাল হোক দুই দেশই জড়িয়ে পরবে।
নিঃসন্দেহে, পাকিস্তান থেকে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাঁতে অস্থিরতা কমেনি। ইন্ডিয়ার অপ্ররোচিত কামান ও মর্টার হামলায় পুর্ব পাকিস্তানে ১৫০ বেসামরিক লোকের প্রাণ গিয়েছে। এর জবাবে পাকিস্তান সরকার (মোঃ ইয়াহিয়া খান)-এর হামলায় দুইদিনে প্রায় ৬০০ জন ভারতীয় সৈনিক এবং প্রতিনিধি প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, যে সমস্ত মর্টারের আঘাতে বেসামরিক লোকজনের প্রাণ গিয়েছে তা দুই ইঞ্চি মর্টার এবং স্বল্প পাল্লার বন্দুকের আঘাতে হয়েছে, যা কোনভাবেই ইন্ডিয়ার নয়। এবং তারা আরো বলছেন যে, পাকিস্তান ভারতীয় প্রতিনিধি বা চর বলতে পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালি বিদ্রোহীদের বুঝাচ্ছে, যারা এপ্রিল থেকেই পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। ইন্ডিয়াতে এই দাবি বেশ জুরালো; নয়া দিল্লী থেকে একটি হামলার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে পাকিস্তানি হামলাকারীদের এবং একটি মর্টার ব্যারেজের আক্রমনে ৬ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন। ভারতে একজন আমেরিকান পর্যবেক্ষকের ব্যক্তিগত অভিমত এই যে, পাকিস্তানি প্রতিবেদন গুলো আসলে এমন ভাবে সাজানো হয় যাতে তাদের দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের সপক্ষে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়।
পাকিস্তানের জন্য এটা মনে হয় অপ্রয়োজনীয়। পাকিস্তানি সংবাদপত্রগুলোর “সর্বসম্মতি ক্রমে দিল্লী পাকিস্তানকে আক্রমণের জন্য তৈরি” এবং “ভারতকে ধ্বংস করে দাও” এমন শিরোনাম দিয়ে সাজানো। হোন্ডা- মটর সাইকেল, ঘোড়া দিয়ে টানা গাড়ি ইত্যাদিতে ষ্টিকার লাগানো। “ইন্ডিয়া আগুন নিয়ে খেলছে এবং এই আগুনেই সে পুড়ে মরবে”। পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নিউজ উইক এর একজন জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতা জনাব আরাউদ ডি বর্ছগ্রেইভ কে বলেছেন যে, “এইবার আমরা ইন্ডিয়ার একটা বিরাট অংশ দখল করে নেব”। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান সহ অন্যান্য ব্যক্তি সমূহের বিবৃতিতে যুদ্ধে যাবার মত এত জোরালো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ইন্ডিয়ার সাথে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তে তাদের পতাকা উড়াতে দেখা যাচ্ছেনা, সে স্থানে প্রায় নয়টি ডিভিশনে তাদের সৈন্য বাহিনীর সংখ্যা ভারতীয় বাহিনীর তুলনায় একেবারে নগণ্য। গত সপ্তাহে নিউজ উইকের ম্যানার্ড পার্কার ভারতীয় সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে সৈন্যদের মাঝে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস লক্ষ্য করেছেন, বলতে গেলে তারা যুদ্ধ জয়ের পুর্ভাবাস পেয়ে গিয়েছে এমন মানসিকতা ধারণ করে আছে।
পার্কার-এর প্রতিবেদন
শরতের ধোয়াচ্ছন্ন রোদ গায়ে মেখে পাঞ্জাব অত্যাশ্চর্য সুন্দর হয়ে উঠেছে, যেখানে কৃষকেরা গমের শেষটুকু কেটে ঘরে তুলছে, লেবু কাটছে, এবং ফিরোজা পাখিরা আকাশে মুক্তার মত ঝকমক করছে। কিন্তু সত্যিকার পরিস্থিতি এমন ছিমছাম ও নীরব নয়। এই ভূমি বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য- পাগড়ী মাথায় শিখ, পাঞ্জাবী, কালো বর্নের গুর্খায় ছেয়ে আছে, এবং এই অঞ্চল যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আড়াল করে একটা থমথমে পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। পাকিস্তানি সীমান্তের কাছে ভারতের সবচেয়ে বর শহর অমৃতসরে একটা খড়ের গাদা হটাত করে চলতে শুরু করলে বুঝা গেল ওটা আসলে ছদ্মবেশে থাকা একটা ট্যাকং, এবং এর পেছনে দৃষ্টি পরতেই দেখা গেল মাটির বাংকারের পেছনে একটা ১০৬ মি মি এর কামান বিধ্বংসী গান ও সৈন্য। ছদ্মবেশী সৈন্যরা সীমান্ত এলাকায় ঘুরাঘোরি করছে যাতে পাকিস্তানি অনুচরদের ধরতে পারে, এবং প্রতিটি সেতুতে ডিনামাইট লাগিয়ে রাখা হয়েছে যেন প্রয়োজন হলে পাকিস্তানি অগ্রসরমান সৈন্যদের থামাতে এগুলো দ্রুত গুড়িয়ে দেয়া যায়। “যুদ্ধ অবশ্যই হবে”, এমনটাই বলছিলেন একজন শিখ সার্জেন্ট। “আমরা শুধু সময়টা জানি না।”
ভারতীয়রা আগত এই যুদ্ধে যে জিতবে তাতে শুধু আত্মবিশ্বাসীই নয়, তারা মনে করছে পাকিস্তানকে তারা ভারতীয়দের জন্য সুবিধা হয় এমন কোন চুক্তিতে রাজী করাতে পারবে। “এইবার সীমান্তে আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না”, একজন মেজর এমনটা বলছিলেন, “পাকিস্তানীরা হয়তই একদিকে প্রতিরোধ করতে পারবে কিন্তু আমরা তার বিপরীতে পাঁচ দিক দিয়ে আক্রমণ করব এবং এইবার আমরা জিতব। এটা তাদের জন্য শেষ যুদ্ধ হতে পারে” । পাঞ্জাব যে সুরক্ষিত থাকবে এটা বুঝাবার জন্য তারা চারদিক দিয়ে পাঞ্জাবের গুরুত্বপুর্ন শহরগুলো বিপুল সংখ্যক ট্যাঙ্ক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। এবং বাদ্য বাজিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা রাস্তায় এবং গ্রামের প্রধান জায়গা গুলোতে তাদের বীরত্ব এবং যুদ্ধংদেহী মনোভাবের ঘোষণা দিচ্ছে, আর আশ্বস্ত করছে এই বলে যে সম্পূর্ণ যুদ্ধ পাকিস্তানের মাটিতে হবে, ভারতের মাটিতে একটি শেলও পরবে না।
যোগাযোগ
ভারতীয়রা যতই যুদ্ধংদেহী হোক না কেন, বর্ডারে একদম বিপরীত- শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফিরোজপুরের কাছে একটা ক্রসিং পয়েন্টে কিছু পাকিস্তানি রেঞ্জার দের ভারতীয় গার্ডদের সাথে মজা করতে দেখা যাচ্ছে, এবং যখন কোন কর্মকর্তা থাকছে না তখন ভারতীয়রা চিনির বিনিময়ে পাকিস্তান থেকে সিগারেট নিচ্ছে। সীমান্তে ট্রাফিক যথারীতি, যেমন- হয় শরনার্থীরা আশ্রয় প্রার্থনা করছে অথবা ডালিম বোঝাই ট্রাক পারাপার হচ্ছে, এবং ভারতীয় কাস্টমস পরিদর্শক দাবি করছেন যে, “তরুণ পাকিস্তানি অভিবাসীরা শুধু হাশিষেই আগ্রহী”। কিন্তু এই যোগাযোগ শুধু যে চুপিসারে বা শুধুই যে অর্থনৈতিক তা কিন্তু নয়। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার দিলজিত সিং নিয়মিত পাকিস্তানিদের সাথে সীমান্তে মিশছেন এবং প্রকাশ্য চা পান করছেন। উনাকে পাকিস্তানিরা বলেছেন যে, “সাহিব, আমরা যুদ্ধ চাই না। ওদের পুর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ করতে দাও, আমরা এখানে যুদ্ধ করতে চাইনা”। দিল্লীতে একজন পশ্চিমা কুটনীতিক অবশ্য বলছেন যে, “এই আশা হয়ত পুরন হবে না, যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। এটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।”
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের সাথে কথোপকথন
পুর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহী গেরিলাদের সাথে সংঘাত এবং ইন্ডিয়ার সাথে আরেকটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোঃ ইয়াহিয়া খান নিউজ উইকের জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আরাউদ ডি বর্ছগ্রেইভকে গত সপ্তাহে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের এই সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে উনি উনার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। উনার বক্তব্যের সারসক্ষেপ নিচে দেওয়া হলঃ
যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে
এটা বলার কোন কারন নেই যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে না, কারণ যুদ্ধ আসন্ন। ভারতীয়রা এরমধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছে, এবং সাধারণভাবে এই মুহুর্তে গতানুগতিক যুদ্ধ চলছে না শুধুমাত্র একটি কারণে, আর তা হল আমরা তাদের পালটা হামলা করছি না। ভারতীয়রা প্রতি ২৪ ঘন্টায় পুর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ১৫০ থেকে ৩০০০ কামান এবং মর্টারের গোলা ছুড়ছে। পুর্ব পাকিস্তানি গেরিলারা সেঁতু, বৈদ্যুতিক খুঁটি ধ্বংস করছে, এমনকি ঐদিন একটি খাদ্যবাহী জাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছে। ভারতীয়রা ২৩ টি গ্যারিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে, বেসামরিক লোকদের সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমাদের প্রতিদিন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ভারত যদি আমদের ভূমি দখল করতে চায় এবং একটি পুতুল বাংলাদেশী সরকার ক্ষমতায় বসাতে চায় তাহলে তা যুদ্ধে রুপ নেবে।
ভারতের সামরিক শক্তি প্রসঙ্গে
আমরা কিভাবে এমন একটি সামরিক শক্তির (ভারতীয় মিলিটারি) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব যেখানে তারা আমাদের সামরিক শক্তি থেকে পাঁচগুণ এগিয়ে রয়েছে? কিন্তু আমরা যদি আক্রান্ত হই তবে অবশ্যই পাল্টা আঘাত হানব। তাদের (ভারতীয় সামরিক বাহিনী) সামরিক বাহিনী অনেকদিক দিয়েই সয়ংসম্পুর্ন এবং আকারে বিশাল। যদি তারা এই পরিস্থিতিতে দিনে ৩০০০ এর মত শেল নিক্ষেপ করতে পারে তবে বুঝতে হবে যে তাদের হাতে প্রচুর গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে। এই মুহুর্তে আমাদের পক্ষে এরকম করাটা বিলাসিতা।
পাকিস্তানকে চীনের সাহায্য প্রসঙ্গে
চীন আমাদের উপর কোন হামলা সহ্য করবে না। আমরা সব ধরনের সামরিক সরঞ্জামাদি-গোলাবারুদ ইত্যাদি পাব, প্রয়োজন হলে তাদের আর্মির শারীরিক উপস্থিতি। আমরা কিছু জিনিস তাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে পাই, আর বিপরীতে আমরা তাদের কিছু দেই। চীনের সাথে আমাদের ২৫ বছরের সুদ মুক্ত ঋণ চুক্তি রয়েছে। গত বছর যখন পিকিং সফরে গিয়েছিলাম, আমি তাদের সাথে ৫ বছরের প্রকল্পের জন্য ২০০ মিলিয়ন অর্থমুল্যের সুদ্মুক্ত সাহায্যের চুক্তি করে এসেছি।
আলোচনা প্রসঙ্গে
আমি তাড়াহুড়া করতে চাই না। আমি চেষ্টা করছি যেন পরিস্থিতি আস্তে আস্তে শান্ত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য আমি বারংবার ইউ থান্ট-এর প্রস্তাব স্বীকার করেছি, এমনকি পুর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসা শরনার্থীদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত পর্যবেক্ষন। ৯ মিলিয়ন পুর্ব পাকিস্তানি শরনার্থী হয়েছে এই হিসাব আমি স্বীকার করি না- যদি নিরপেক্ষ গণনা হয় তবে তা ৪ মিলিয়নের অধিক হবে না। তবে, সে সংখ্যা যাই হোক, মার্চের পরে যারা শরনার্থী হয়েছে, তারা যদি পুর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসে, আমি তাদের পাকিস্তানি নাগরিক বলেই স্বীকার করে নেব। তবে তা অতি অবশ্যই জাতিসংঘের মাধ্যমে হতে হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে
বাঙ্গালিদের সাথে কেউই ন্যায়সঙ্গত আচরণ করেনি। আমরাও ভুল করেছি, এখানে আমরা বলে আমি পুর্ব পাকিস্তানিদেরও বুঝাচ্ছি, যারা স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান এবং অগ্রজ ছিলেন। পুর্ব পাকিস্তানের অবস্থা নিদারুন এবং নিম্নগামী ছিল, এবং এর উন্নয়নের জন্য আমরা মনোনিবেশ করিনি। এবার আমরা শেষবারের মত চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ নতুন সংবিধান ঘোষণা করা হবে। তারা আমাদের থেকে ১০০০ মেইল দূরে, তাই এটাই স্বাভাবিক হবে যে, তারা যেন সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার নিজেরাই সমাধান করতে পারে। এটা প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং করারোপ ব্যতীত আর সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে
অনেকেই হয়ত আমাকে বিশ্বাস করবেন না, তবে আমি মনে করি তিনি(মুজিব, যিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জন্য মামলায় বিচারাধীন) যদি ফিরে যান(পুর্ব পাকিস্তানে) তবে তাঁর নিজের লোকেরাই এত সব দুর্ভোগের জন্য দায়ী করে তাঁকে হত্যা করবে। যে কোন বিচারে, এটা একটা বিবেচনার বিষয়। তিনি আমার সাথে দুই বছর ধরে অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কথা বলেছেন, তারপর নিজের অবস্থানে ফিরে গিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি সশস্র বিদ্রোহী দল গড়ে তুলেছেন এবং নিজে পরিচালনা করেছেন। এই বিদ্রোহকে দমন করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা। অন্য যেকোন সরকার হলেও তাই করত। এই ব্যক্তিকে আমি এখন কী করে আলোচনার জন্য ডাকি? এই ব্যক্তি এখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং সামরিক বাহিনীর একাংশকে রাষ্ট্রবিরুদ্ধ কাজে উস্কানি দেবার দায়ে অভিযুক্ত। তাঁর জন্য এ কে ব্রোহী, যিনি সবচেয়ে ভাল আর সন্মানিত আইনজীবী, তিনি লড়ছেন। ব্রোহী এই কেইস নিতেন না যদি তিনি ভাবতেন যে মিলিটারি কোর্টে কোন ধরণের হাংকি-পাংকি হতে যাচ্ছে। আমি মুজিবকে প্রথমে গুলি করে পরে তাঁর বিচার করতে পারতাম না যেহেতু কিছু কিছু সরকার এরকম করে থাকে, আবার তাঁকে হঠাত করে ছেড়েও দিতে পারি না। এটা একটা বিরাট দায়িত্বের ব্যাপার। তবে, জাতি যদি তাঁর মুক্তি চায়, আমি তাঁকে মুক্তি দেব।
একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে
ভারতীয়রা এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুর্ব বঙ্গ এবং আসাম শীঘ্রই এতে যোগ দেবে, এবং এর মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়ন-এর ভাঙ্গনের শুরু হবে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এই মহিলার (মিসেস গান্ধী) শুভবুদ্ধি হোক।