৩০ শে মার্চ যখন গোলাগুলি শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্টে সেই সময় আমি হাসপাতালে ডিউটিরত ছিলাম। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ৬/৭ জনের এক পাঞ্জাবী দল হসপিটালে আসে এবং বলে তোমরা বন্দী।
৩০ তারিখের পর হতে প্রতি রাতে ৭/৮ বার করে হসপিটাল চেক করতো। তারা বলতো যে কোন পুরুষ মানুষ তোমরা লুকিয়ে রেখেছো। এটা একটা বাহানা ছিলো। ১১ই এপ্রিল তারিখে সামরিক হাসপাতালের ষ্টাফ বাদে যে সমস্ত মহিলারা প্রাণ ও ইজ্জতের ভয়ে হসপিটালে আশ্রয় গ্রহন করেন তাদের সবাইকে রাত অনুমান ১ টার দিকে নিজ নিজ ঘরে ফিরিয়ে দেবে বলে নিয়ে যায়। উক্ত মহিলারা সবাই ছিলেন ই,পি,আর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের ও বেসামরিক লোকদের স্ত্রী, কন্যা ও শিশু। প্রথমে তাঁদের আর্টিলারীরা ঘরে নিয়ে আটকে রাখে।
উক্ত ছয় সাত ঘরে ভদ্রমহিলারা ছিলেন। উক্ত এলাকাতে যারা পাহারা দিত সেই পাকসেনারা দু’জন ঘরের দরজা জোর করে ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে এবং দুজন ভদ্রমহিলার উপর অত্যাচার করে। একজন ভদ্রমহিলার পেটে যে বাচ্চা ছিলো তা এই অমানুষিক অত্যাচারের ফলে নষ্ট হয়ে যায়।
এই ঘটনার পর উক্ত এলাকা হতে ৪ জন অভুক্ত রেখে বন্দী মহিলাদের সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়।
লেডী ডাক্তার এবং দুজন সিসটার এবং আয়া ছিলো তিনজন। সবাইকে হসপিটালে বন্দী করে রাখে। দুইমাস হসপিটালে সিসটার জুজুভিনের ঘরে থাকেন বাকী ষ্টাফরা। একটা ঘরে সবাইকে বন্দী করে রাখে। প্রায় প্রতিরাতে পাকসেনারা উক্ত ঘরে এসে তল্লাসী চালাতো। দুই মাস পর সবাই লেডী ডাক্তারের বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
একদিন দেখি যে একজন বাঙ্গলী যুবকের দেহ হতে রক্ত বের করে নিয়ে তাকে হত্যা করে। ছেলেটির শেষ কথা ছিলো “মা, স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলাম না”।
ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে ১০ নং পুকুরের ধারে দুইজন অজ্ঞাত পরিচিত মহিলাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশ ওখানে পড়ে ছিলো। দুজন শিশুও ছিলো।
টিপসহি
নূর জাহান
সুইপার, সি,এম,এইচ মহিলা বিভাগ
যশোর ক্যান্টনমেন্ট
২২/৩/৭৩