You dont have javascript enabled! Please enable it!
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত গণসংবর্ধনা সভায় দেয়া তাঁর বক্তৃতাটি পাঠকের জন্য এটি অডিও করে দিয়েছেন কণ্ঠযোদ্ধা Tahia Tabassum Trena.
এটি অডিও আকারে ওয়েবসাইটে দেয়া হল। পূর্নাঙ্গ টেক্সটও যুক্ত হয়েছে। ভিডিও আকারে ইউটিউবেও দেয়া হয়েছে। আপনি যেখানেই থাকুন খুব সহজেই ভাষণটি শুনতে পারেন। ধীরে ধীরে সংগ্রামের নোটবুক বঙ্গবন্ধুর প্রায় চারশত ভাষণ পাঠকের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
অডিও শুনুন –

গণসংবর্ধনা সভায় বক্তৃতা

২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

রমনা রেসকোর্স

 

…সংগ্রাম করে আমি আবার কারাগারে যাব,  কিন্তু মানুষের প্রেম ভালোবাসার ডালি নিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। আলোচনায় আমি অবশ্যই যাব – কারণ নির্ভীক ও আপসহীনভাবে কীভাবে দাবী পেশ করতে হয় আমি তা জানি। দাবী আদায় না হলে আবার আমি সংগ্রামকে দুর্বার হতে দুর্বার করে তুলবো। আবার আমি কারাগারে যাব। আবার ছাত্র-জনতা সংগ্রাম করে জেল থেকে আমাকে বের করে আনবে। আমি আঞ্চলক স্বায়ত্তশাসন চাই। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত স্বার্বভৌম পার্লামেন্ট চাই। এবং রাজনীতি অর্থনীতি,  চাকরী-বাকরী অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্ব পর্যায়ে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব চাই। আমি শ্রমিকের শ্রমের ন্যায্য মূল্য চাই। কৃষকের উৎপন্ন দ্রব্যের উপযুক্ত মূল্য চাই। সাংবাদিকদের ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাই।

 

পাকিস্তানের দুইটি অঞ্চল – পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। এই দুই অঞ্চলের জন্য আমি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন চাই। পশ্চিম পাকিস্তানিরা যদি এক ইউনিট বাতিল করতে চায় তবে অবশ্যই এক ইউনিট বাতিল করতে হবে এবং সাবেক প্রদেশগুলি ‘প্রাদেশিক’ স্বায়ত্তশাসনের অধিকারী হবে।

 

আন্দোলন আমাদের চলবেই। কিন্তু যে প্রকারেই হোক আমাদের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। সরকারকেও সর্বপ্রকার উস্কানিমূলক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।…

 

দীর্ঘ দুই বৎসর নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকার পর একদিন শুনলাম,  সরকার আমাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বাস করি নাই। অবিশ্বাসে ভর করে কারাগার ফটকে এসে দেখি,  আশঙ্কা অমূলক নয়। সঙ্গীন উঁচিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা দণ্ডায়মান। ওরা আসলো,  ‘শেখ সাহেব,  আপনাকে আবার গেপ্তার করা হইলো।’ আমি জানিতে চাইলাম,  ‘কোন আইনে?’ ওরা  কি সৰ বললো বুঝি নাই। একটা গাড়ি দেখাইয়া বললো,  ‘উঠেন।’ মনে মনে চরমক্ষণের জন্য প্রস্তুত হলাম। বললাম,  ‘এক মুহূর্ত সময় চাই।’ এই মুহূর্তে কারাগারের সামনের রাস্তা থেকে এক মুঠ মাটি নিয়ে কপালে লাগিয়ে খোদার কাছে আকুতি জানালাম,  “এই  দেশেতে জন্ম আমার,  যেন এই দেশেতেই মরি।”

 

জ্ঞ্যান আহরণের পথে এই সরকার যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছেন যার নজির বিশ্বে বিরল। আমরা মীর্জা গালিব, সক্রেটিস, সেক্সপিয়ার, এরিস্টটল, ডানতে, লেনিন, মাওসেতুং পড়ি জ্ঞ্যান আহরণের জন্য আর দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করিয়া দিয়াছেন রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙ্গালী কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখিয়া যিনি বিশ্বকবি হইয়াছেন। আমরা এই ব্যবস্থা মানি না – আমরা রবীন্দ্রনাথ পড়িবই, আমরা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাহিবই এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত এই দেশে গাওয়া হইবেই। আমি রেডিও এবং টেলিভিশনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর হইতে সর্বপ্রকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করিয়া অবিলম্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচারের দাবী জানাই।

 

 

Reference:

এই দেশ এই মাটি (প্রবন্ধ, বক্তৃতা, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার) – শেখ মুজিবুর রহমান, পৃষ্ঠা ৯৯-১০২, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মো জাহিদ হোসেন, ২০০৮, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমী

বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্র, সংগ্রামের নোটবুক

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!