You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইন্দিরা তখন হাসিনা-রেহানার জন্য কী করেছিলেন?
(বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর)

 

তবে হুমায়ুন রশিদ সাবের ওয়াইফ, উনি যথেষ্ট করছেন। আমাদের কাভার উনি গাড়িতে করে কার্লশ্রূয়ে (Karlsruhe) পৌঁছে দিলেন। আমাদের হাতে এক হাজার ডাস মার্ক (Deutsche Mark) দিয়ে দিলেন – যে তােমাদের হাতে তাে টাকা পয়সা… । তারপর একটা স্যুটকেইস বের করে গরম কাপড় ভরে দিলেন – যে যেখানেই থাকো – এখানে না থাকলেও তাে লাগবে – কোথায় পাবা কীভাবে কিনবা। বােধ হয় ঐ সময় ওনার ঐ স্নেহটা ভালােবাসাটা বা একটা আস্থা এটা আমাদের জন্য খুব দরকার ছিলাে। জার্মান গভমেন্ট বলল যে আমরা যদি চাই ওখানে পলিটিকাল এসাইলাম নিয়ে থাকতে পারবাে। আর মিসেস গান্ধী সাথে সাথে ওনার এম্বাসেডরকে বললেন আমাদের এম্বাসেডর হুমায়ুন রশিদ সাহেবের সাথে যােগাযােগ করতে। মার্শাল টিটো, তিনি তার এম্বাসেডর দিয়ে যােগাযােগ করলেন। তখন একটাই চিন্তা ছিলাে আমরা দেশে যাবাে দেশে যাবাে। মিসেস গান্ধী যেহেতু উনি মেসেজ পাঠালেন। ব্যবস্থা হল যে আমরা ইন্ডিয়াতে চলে আসবাে। মিসেস গান্ধী আমাদের দেখাশােনা করার জন্য একজন অফিসার ঠিক করে দিয়েছিলেন। একটা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা, সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে দিলেন, আর ওয়াজেদ সাহেবকে একটা চাকরীও দিলাে। এটমিক এনার্জি মিনারেলস ডিভিশনে চাকরী দিয়ে দিলাে। মিসেস গান্ধীর সবচেয়ে বড় জিনিস ছিলাে উনি খুব মানবিক চরিত্রের, আর আমাদেরকে খুবই স্নেহের চোখে দেখতেন।একবার আমরা আজমির শরিফে গিয়েছিলাম, আমি রেহানা বাচ্চাদের নিয়ে। তাে আমরা ওখানে থাকতে উনি একটা এপয়েন্টমেন্ট দিল ওনার সঙ্গে দেখা করার। আবার আমরা আসার সময় গাড়িটা নষ্ট হল। তাতে সময় নষ্ট হয়ে গেল। তখন রেহানা বলল যে এই বাচ্চাকাচ্চা আবার তৈরি-টৈরি করে নিয়ে যাওয়া তাে সম্ভব না। তাে, তুমি একটা কাজ কর, তুমি একাই চলে যাও। তাে কোনমতে গাড়ি থেকে নেমে শুধু কাপড়-টাপড় চেঞ্জ করে একটু গােসল-কাপড়টা চেঞ্জ করেই আমি দৌড়ালাম ওনার সঙ্গে দেখা করতে। তাে উনি আমার মুখটা দেখে তাে কথা বলার পরে বলে কি, “তুমি …তুমি কিছু খেয়েছ? তুমি অমলেট খাবে? টোস্ট খাবে? চা খাবে?” উনি উঠে যেয়ে বলল, এবং সেই অমলেট এবং টোস্ট আর চা – নিজে কাপে চা ঢেলে দিলেন। আমাকে বলল, “তুমি খাও। মুখটা একদম শুকনা, তুমি কিছু খাওনি”। আসলে এই যে স্নেহটা – ওনার ভালােবাসাটা – মানে এতাে মানে ঘরােয়াভাবে উনি ব্যবহার করলেন যে এটা ভােলা যায়না। এটা খুব মনে লাগে। সত্যি কথা বলতে কি ঐ সময়, সব হারাবার পর ওনার সামনে যেয়ে ঐটুকুই অনুভূতি হচ্ছিলাে যে, “না, আমাদের জন্য কেউ আছে”। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ওনার যে অবদান।
(- শেখ হাসিনা)
::::::::::::::::
– Hasina: A Daughter’s Tale
– Text Compiled by – সংগ্রামের নোটবুক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!