You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১৪ই জুলাই, রবিবার, ২৯শে আষাঢ়, ১৩৮১

মধ্যপ্রাচ্য সফরে বাণিজ্যমন্ত্রী

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী পরশু ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সে দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের মৈত্রী বন্ধন আরও দৃঢ় করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পরিসর বাড়ানোই এই সফরের লক্ষ্য। সফরকালে তিনি ইরাক, মিশর, এবং সুদান যাবেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরসূচিতে এই তিনটি দেশ ছাড়াও অন্য কোন দেশ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
যাবার আগে বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার সফরের চরিত্র এবং মূল লক্ষ্য সমূহ সম্বন্ধে মোটামুটি বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য থেকে ধরে নেয়া যায় বাস্তব কিছু ফল লাভের আশায়ই বাণিজ্যমন্ত্রীর বিদেশ যাত্রা।
কিছুদিন আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারস্য উপসাগরীয় এলাকা সফর করে এসেছেন। সে দেশগুলোর থেকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাস্তব সাহায্য এবং সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে। ইরানের সাথে খুব শীঘ্রই আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা নব সূচনা প্রায় সমাসন্ন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে গ্রন্থি রচনার শুভ উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তীকালে থেকে গ্রহণ করে আসছেন তার ফল লাভ ঘটতে শুরু করেছে। এবার বাণিজ্যমন্ত্রী তার সফরকালে ইরাক, মিশর এবং সুদানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করবেন। এছাড়াও আলোচনা হবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে।
জনৈক সাংবাদিক বানিজ্য মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন অশোধিত তেল আমদানি সংক্রান্ত বিষয়ে। তিনি এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারা দুনিয়ায় তেল সংকটের প্রেক্ষিতে আমাদের অর্থনৈতিক জটিলতা বেড়েছে। বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এরপর যখন নিয়মিত তেল সরবরাহের কোন প্রকার বাধা বিদেশ সম্মুখীন হতে হয় তখন তা ইতিমধ্যেই পর্যুদস্ত অর্থনীতির উপর দুর্যোগ হয়ে নেমে আসে।
আমাদের তেল নাই। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সে তেল পেলে হয়ত আমরা অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু তার না পাওয়া পর্যন্ত তেল উৎপাদনকারী দেশ সমূহ থেকে আমাদের এখানে নিয়মিত তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ অবশ্যই আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
তাছাড়া অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি পারস্পরিক স্বার্থ পূরণেই সাহায্য করবে। সে দিক থেকে তিনটি দেশের সঙ্গে আমাদের নয়া বাণিজ্য চুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
সারা দুনিয়ায় আজ অর্থনৈতিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। উন্নত রাষ্ট্র সমূহ তাদের এই সংকট মোকাবিলায় এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র সমূহের উপর তাদের বোঝার অংশ নামিয়ে দেবার কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো যদিও উন্নত রাষ্ট্রসমূহকে কাঁচামাল যোগান দিয়ে থাকে তবুও তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের অভাবে তারা উন্নত দেশগুলোর ওপর কোনপ্রকার চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না। অনুমান করি বাণিজ্যমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্যীয় এই উন্নয়নশীল দেশগুলো সফরের সময় এ বিষয়টিও উঠবে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর এই সফরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক তথা সহযোগিতা ও মৈত্রীবন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক। পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণে উন্নয়নকামী দেশ সমূহ একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করুন-এই আমাদের আশা।

ভাওয়ালে জাতীয় উদ্যান

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ঢাকা থেকে ২৬ মাইল দূরে ভাওয়ালে বাংলাদেশের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে ১২ই জুলাই শুক্রবার সকালে বন, মৎস্য ও পশু পালন বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রধান বিশ্রামাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে উদ্যান নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। এই উদ্যানের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে নির্মাণ করা হবে। পরে এই উদ্যানের এলাকা আরো ১০০ বর্গ মাইল সম্প্রসারিত করা হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান যে এই জাতীয় উদ্যানটি শেষ হতে দশ বছর সময় লাগবে এবং উদ্যানটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
আরো জানা গেছে, বাংলাদেশের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যানটিতে জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের জন্য বেশ কটি বিশ্রামাগার ও কাফেটেরিয়া তৈরি করা হবে। বাগানের ফাঁকে ফাঁকে ট্রামলাইন বসিয়ে ভ্রমণের এবং মাছ ধরার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া থাকবে আলাদাভাবে খেলাধুলা করার জন্য শিশু উদ্যান। জাতীয় উদ্যান সংরক্ষন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। বলা যায় জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনাটির মনোহারীত্ব আছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, দেশে যখন সার্বিক পরিস্থিতির মোকাবিলায় আমরা সবাই হিমশিম খাচ্ছি–তখন এমন সুখকর পরিকল্পনা কেন? আমাদের দৃষ্টিতে এর কিছু সুউত্তর আছে। প্রথমতঃ সমস্যা ক্লিষ্ট জর্জরিত জীবনে একটুখানি নির্মল চিত্তবিনোদনের যদি সৃষ্টি করা যায়–তবে মন্দ নয়। দ্বিতীয়তঃ এই বৃহত্তম জাতীয় উদ্যানটির জন্য যে ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে তার পরিমাণ সহনীয় এবং যুক্তিসঙ্গত। তৃতীয়তঃ জাতীয়তা নির্মাণ প্রকল্পটি কিছু বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিতে পারে।
আমাদের ধারণা জাতীয় উদ্যানটি হবে দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিকল্পনার প্রতীক। দেশের যা কিছু শ্রেষ্ঠ সম্পদ অর্থাৎ সুন্দর সুন্দর ফুল -ফলের গাছ, বিচিত্র জীবজন্তু, সৌখিন মাছের চাষ, মনোরম সাজ-সরঞ্জামাদির সমন্বয়ে সুবিন্যস্ত শিশুপার্ক ইত্যাদির সমাবেশ থাকবে সেখানে। শুধু বিদেশী নয়–দেশের লোকও যাবে সেখানে। নির্মল আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের অবকাশ সবাই চায়। সেখানে ব্যয় সাপেক্ষে পরিকল্পনা যারা নিতে পারবেন না তারা অন্তত ভাওয়ালের অবকাশটুকু করতে প্রয়াস পারবেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আঞ্চলিক ভিত্তিতে এমন সংরক্ষিত ও পরিকল্পিত উদ্যান অন্যান্য দেশে কিছু কিছু আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মোঘল আমলেও এমন পরিকল্পনা নেয়া হতো। তারা নির্মাণ করেছিল গোলাপবাগ। সহস্র রকম গোলাপ ফুলের সমারোহে সে উদ্যান ছিল দেশি-বিদেশি সকলেরই আনন্দ অবগাহনের কেন্দ্র। ইতিহাসে তার নাম আজও পাওয়া যায়। মোঘল ঐতিহ্যের রুচিও সুকুমার প্রবনতার স্বাক্ষর হিসেবেও সে উদ্যান ছিল উল্লেখযোগ্য। তেমন একটি পদক্ষেপ নিয়ে আমরা যদি সত্যিই একটি জাতীয় উদ্যান গড়ে তুলতে পারি তাহলে ক্ষতি তো নেই-ই বরং লাভ আছে অনেক।
উদ্যান পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে, এটির নির্মাণ কাজ শেষ হতে প্রায় দশ বছর সময় লাগবে। বলাবাহুল্য, এটা বেশ দীর্ঘ সময় কিন্তু তবুও যদি বাস্তবে উদ্যানটির পরিকল্পনামাফিক একদিন শেষ হয়, অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে দেশবাসীর সামনে জাতীয় উদ্যানটি উপহার দেয়া যায় তাহলে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত হবো। জাতীয় উদ্যানকে বাঙালি জাতির রুচি, সৌন্দর্যবোধ, পুষ্প প্রীতি, দেশীয় জীবজন্তুর নমুনা সংরক্ষণ প্রবণতা প্রীতি এবং অর্থকরী বুদ্ধির ফলপ্রসূ চিন্তার প্রতীক বলতে পেরে ধন্য হব। আমরা এই পরিকল্পনাকে স্বাগতম জানাই এবং এই পরিকল্পনার যথার্থ বাস্তবায়ন ঐকান্তিক ভাবে কামনা করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!