You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা দিবসকে ‘সঙ্কল্প-দিবস’ হিসেবে বিবেচনা করে বিবৃতি

১২ আগস্ট ১৯৪৮

ঢাকা

 

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ সংগঠন কমিটির আহ্বায়ক মওলবী নঈমুদ্দীন আহমদ আসন্ন আজাদী দিবসে ছাত্র সমাজের কর্তব্য সম্পর্কে সম্প্রতি একটী বিবৃতি দিয়াছেন। ঐ দিবসে গণআজাদী ও দেওয়ানী আজাদী প্রতিষ্ঠার সঙ্কল্প গ্রহণ করার জন্য তিনি ছাত্র সমাজকে আহবান জানাইয়াছেন। নঈমুদ্দীন সাহেবের এই সময়োপযোগী আহবানকে আমি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করি।

 

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট আমরা যে আজাদী লাভ করিয়াছি, সেটা যে গণ আজাদী নয়, তা গত একটী বছরে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হইয়াছে। জাতীয় মন্ত্রিসভা দীর্ঘ একটি বছরে জনগণের দুইশ’ বছরের পুঞ্জীভূত দুঃখ-দুর্দশা মোচনের কোন চেষ্টা ত করেনই নাই, বরঞ্চ সেই বোঝার উপর অসংখ্য শাকের আটি চাপাইয়াছেন। ভুখা, বিবস্ত্র, জরাগ্রস্ত ও শত অভাবের ভারে ন্যুজ জনসাধারণের ভাত, কাপড়, ওষুধ পত্র ও অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের কোন ব্যবস্থা তারা করেন নাই; বরঞ্চ পাট, তামাক শুপারী ইত্যাদির উপর নয়া ট্যাক্স বসাইয়া ও বিক্রয়কর বৃদ্ধি করিয়া জনগণের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিসহ করিয়া তুলিয়াছেন। বিনা খেসারতে জমিদারী বিলাপের ওয়াদা খেলাফ করিয়া তাঁরা জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদিগকে পঞ্চাশ ষাট কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করিতেছেন। নুতন জরীপের নাম করিয়া তাঁরা জমিদারী প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপ আট বছর স্থগিত রাখার ষড়যন্ত্র করিতেছেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অছিলায় তাঁরা অনেক দেশভক্ত লীগ-কর্মীকেও বিনা বিচারে কয়েদ খানায় আটকাইয়া রাখিতেছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুসলিম ছাত্র সমাজের উপর এবং আরও কতিপয় ক্ষেত্রে জনতার উপর লাঠী চার্জ, কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার ও গুলী চালনা করিয়া তারা আজাদীকে কলঙ্কিত করিয়াছেন। আজ সেই মন্ত্রিসভাই আজাদী উৎসবের সাময়িক সমারহের দ্বারা নিজেদের অথৰ্ব্বতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা ঢাকিবার প্রয়াস পাইতেছেন।

 

বস্তুত, গণ-জীবনে আজাদীর পরিবেশ সৃষ্টি না করিয়া আজাদী উৎসব করিতে যাওয়া এবং সবক্লিষ্ট, দুর্ভিক্ষপীড়িত মরণোন্মুখ জনগণকে সেই উৎসবের শরীক হইতে বলা নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রহসনে আত্মপ্রতারিত নেতারাই সন্তুষ্ট থাকিতে পারেন, জনগণ-বিশেষ করিয়া সচেতন ছাত্র ও যুব-সমাজ উহা দ্বারা বিভ্রান্ত হইবে না। তারা ‘আজাদী দিবস’ অবশ্যই পালন করিবে, কিন্তু সেটা উৎসবের দিন হিসাবে নয়, উৎপীড়নের নিগঢ় ছিন্ন করার সঙ্কল্প নেওয়ার দিবস হিসাবে পালন করিবে।

 

আমি আশা করি, মিঃ নঈমুদ্দীন আহমদের আহবানে শুধু মুসলিম ছাত্র সমাজ নয়, গোটা ছাত্র ও যুব সমাজই এক বাক্যে সাড়া দিবেন এবং ১৫ই আগষ্টকে ‘সঙ্কল্প-দিবস’ হিসাবে সফল করিয়া তুলিবেন।

 

Reference:

Hasina, S. (2018) Secret Document of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Sheikh Hasina, Hakkani Publishers


বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সমগ্র, Farzana Yeasmine Aparajita, Dr Md Razibul Bari 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!