কথাটা শুনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার চক্ষু চড়কগাছ। তিনি এতক্ষণ ভুলেই গিয়েছিলেন মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে দলবলসহ অধিনায়ক আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি দু’দিন আগে আত্মসমর্পণ করেছেন। টেবিল চাপড়ে ক্ষ্যাপা কুকুরের মতাে তর্জন গর্জন করে ওঠেন ইয়াহিয়া খান, “না হতে পারে না।” ক্ষোভে দুঃখে তার গণ্ডদেশ বেয়ে নেমে এল অশ্রুধারা। ঠিক এমন সময় প্রেসিডেন্ট নিক্সনের টেলিফোন। নিক্সন গভীর সহানুভূতি জানালেন পরাজিত পাকিস্তান বাহিনীর সর্বাধিনায়ককে। ইয়াহিয়ার ঠোটের কোণে তৃপ্তির হাসি। নিক্সনের সান্ত্বনা পেয়ে জঙ্গীকর্তা আপাতত চাঙ্গা। আবার টেলিফোন বেজে উঠলাে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে স্মরণ করিয়ে দিলেন : পরিস্থিতি সুবিধার নয়। ক’দিন জনসমক্ষে বের না হওয়াই ভাল। আপনার জীবন হুমকির মুখে। ইয়াহিয়া শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে জবাব দিলেন : যতসব বাজে কথা; আমার কেশাগ্রও স্পর্শ করবার ক্ষমতা নেই কারাে। আমি পাকিস্তানের সর্বকালের সবচাইতে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। রিসিভার রেখে দিয়ে নিজে বিড় বিড় করতে করতে ইয়াহিয়া বললেন : “ওই বােকারা মনে করেছে জনতার রুদ্ররােষ থেকে আমাকে রক্ষা করতে হবে। আমরা যুদ্ধে হেরেছি তাতে কি, এবার শান্তিকে জয় করবাে। আরে হ্যা, কর্নেল আমাকে একটা ফাইল দেখাতে হয় যে, ডেটে (রাজবন্দী) শেখ মুজিবুর রহমানের ফাইলটা বড় দরকার। আমার মনে হয় তাঁকে ফাসি দেয়ার উপযুক্ত সময় এখনই।” শেখ মুজিবুর রহমান তখন মিয়ানওয়ালি কারাগারের ক্ষুদ্র কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। তিনি তখনও জানেন না তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মুজিব শুধু জানেন, মৃত্যু দুয়ারে করঘিাত করছে। প্রিয় জন্মভূমির মাটিতে তাঁর আর বুঝি ফেরা হল না।
Source: পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু -রবার্ট পেইন