You dont have javascript enabled! Please enable it!

জাগ্রত চৌরঙ্গী

১৬ বেঙ্গলে থাকাকালে সেনাপ্রধানের অনুমতি নিয়ে মে-জুন মাসে আমি চারুকলা কলেজের (বর্তমানে চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্টসের অধীন) মাধ্যমে একটি ভাস্কর্য বানাতে শুরু করি । হামিদুজ্জামান তখন একটা স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি এটি নির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করেছিলেন। তাঁকে সক্রিয় সহযােগিতা করে চারুকলা কলেজের একজন ছাত্র (তার নাম এখন আমার মনে নেই। পরে তিনি আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের হেড হয়েছিলেন)। ভাস্কর্যটি আর্ট কলেজের ভেতরে তৈরি করা হয়। পরে সেটা ক্রেন দিয়ে বড় ট্রাকে তুলে জয়দেবপুর নেওয়া হয়। ওই ভাস্কর্যটি জয়দেবপুর রাজবাড়ির ভেতরে স্থাপন করা হয়।

পরে সেনাপ্রধানের অনুমতি নিয়ে আরেকটি ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় জয়দেবপুরের চৌরাস্তায়। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চে শহীদ হুরমত, মনু খলিফা, নিয়ামতসহ অন্যান্য শহীদের স্মরণে এটি নির্মাণ করা হয় । নির্মাণকাজে ছিলেন প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক এবং তাঁকে সহায়তা করে অনারারি ক্যাপ্টেন আফতাব আলী বীর উত্তম ও মেজর মােহাম্মদ আলী। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালের মে মাসে। শেষ হয় ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মাটি খনন করে এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। স্থানীয় ২০৮ জন শহীদের নাম সংগ্রহ করে শ্বেতপাথরে খােদাইয়ের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে ভাস্কর্যে প্রতিস্থাপন করা হয়। শ্বেতপাথরগুলাে ছিল বর্তমান সংসদ ভবনের । সংসদ ভবনের পাশে এক জায়গায় পাথরগুলাে পাকারে রাখা ছিল। সেখান থেকে সেগুলাে আমরা নিয়ে আসি। সংসদ ভবনের পাথর নেওয়ায় পরবর্তী সময়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযােগ দায়ের করা হয়। যাহােক, এটাই ছিল বাংলাদেশে প্রথম ফ্রি স্ট্যান্ডিং স্ট্যাচু । এ ধরনের ভাস্কর্য বিভিন্ন রাজবাড়ির ভেতরে নির্মিত হলেও জনসমক্ষে কোথাও স্থাপন করা হয়নি। পরে সিমেন্টপাথর দিয়ে একটা থ্রি নট থ্রি রাইফেল ভাস্কর্যের অগ্রভাগে স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যটা বানাতে সাংঘাতিক কষ্ট করতে হয়েছে। তখন এত উঁচু ক্রেন ছিল না।

বাঁশ দিয়ে মাচা বানাতে হয়েছে। মাটির ১১ ফুট নিচ থেকে ফাউন্ডেশন দিয়ে ভিত্তি তৈরি করা হয়। এর নামকরণ করা হয় ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। ভাস্কর্য নির্মাণের চিন্তা আমার মাথায় আসে পূর্ব জার্মানি যাওয়ার ফলে। আমি বার্লিনে বিভিন্ন ওয়ার মিউজিয়ামে বড় বড় স্ট্যাচু দেখেছিলাম। তার পর থেকে আমার মাথায় খেলছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মুক্তিযােদ্ধার প্রতিকৃতিসংবলিত একটি বড় ধরনের ভাস্কর্য স্থাপন করা। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরােধ হয়েছিল। এই প্রতিরােধে হরমুজ বলে ১৪-১৫ বছরের এক বালক শহীদ হয়। জাগ্রত চৌরঙ্গী হরমুজের নামে উৎসর্গ করা হয়। মনু খলিফাসহ আরও চারজন শহীদ হয় ওই প্রতিরােধে।

Reference: ১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন – আমীন আহম্মেদ চৌধুরী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!