You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযোদ্ধাদের ডুবিয়ে দেয়া জাহাজগুলোর মালামাল পরে কোথায় গেল?

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে যে জাহাজগুলাে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বন্দর সচল করার জন্য সােভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা প্রকৌশলীরা সেগুলাে উদ্ধার করছিল। আমরা তাদের সহযােগিতা দিতাম। পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল বন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা দেখা ও চোরাচালান বন্ধ করা। এসব কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল, বন্দরে ছােট ছােট ট্যাংকার ভর্তি হয়ে তেল আসার পর তেলের ট্যাংকারের নিচ দিয়ে পাইপ লাগিয়ে রাস্তা খনন করে ওপারে সবার অগােচরে পাচার করা হচ্ছে। ৩ ও ৫ নম্বর জেটিতে সিমেন্টের পাটাতনের নিচ দিয়ে কেটে আরেকটি স্লাব বানিয়ে সে পাটাতনের নিচে নৌকা নিয়ে এসে পাটাতনের ভেতর থেকে সিমেন্টগুলাে পাচার করা হচ্ছে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না । অভিনব সব কৌশল। দেখা যায়, বাইরে দিয়ে তালা । দেওয়া আছে, কিন্তু ভেতরের সিমেন্ট অনেক সময়ই চুরি হয়ে গেছে।

এই সময়, অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে সরকার তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়। আমি আনােয়ারায় দায়িত্ব পালন করি। অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে আনােয়ারায় বেশির ভাগ বাড়িতে বহিরাগতদের পাওয়া গেল। তারা বিভিন্ন বাড়িতে জিনিসপত্র রাখত। জাহাজে নিষিদ্ধ মালামাল এনে বহির্নোঙর থেকে নৌকায় করে এনে লােকজন সমুদ্র বা কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন গ্রামে লুকিয়ে রাখত। আমরা ওই সব গ্রাম যখন রেইড করলাম, তখন একটা জায়গায় পলিথিন ব্যাগের ভেতরে ভারী কোনাে জিনিস ভরে নদীর তলদেশে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ একটা সুতলি বা মােটা সুতা ভাসতে আরম্ভ করলে আমরা সন্দেহ করি, কীভাবে সুতাটা এখানে এল। তারপর দেখি, সুতাটা একটা গাছের সঙ্গে বাঁধা। সুতাটা টেনে আনার পর দেখি যে পুরাে কনট্রা আইটেমের বিরাট এক কনসাইনমেন্ট পানির ভেতর থেকে বের হয়ে এল। ওই সময় আমরা নিষিদ্ধঘােষিত মালামালসহ ৪৩টি সাম্পান আটক করেছিলাম। সাম্পানের মালামাল যখন আমরা কাস্টমসের মাধ্যমে আনতে শুরু করি, তখন ৪৩টি সাম্পানের মধ্যে শেষ পর্যন্ত তিনটা না চারটা সাম্পানের মালামাল কনট্রা আইটেম হিসেবে এন্ট্রি পায় । বাকিগুলাে বিভিন্ন হােমরাচোমরা ব্যক্তির সুপারিশে ছাড়া পেয়ে যায়। এগুলাে যাঁরা করছিলেন, তাঁদের সবাই কিন্তু বর্ধিষ্ণু পরিবারের। অনেকেই ছিল বিভিন্ন উচ্চপদে অধিষ্ঠিত লােকের নিকটাত্মীয়।

Reference: ১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন – আমীন আহম্মেদ চৌধুরী

 

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!