একজন পদস্থ সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও আমি হঠাৎ করে বলে উঠলাম, “স্যার, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি তাে ছিলেন পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালী জেলে। আপনি জানেন না, কাদের ক্ষমা করেছেন? অথচ মুজিবনগর সরকারের প্রকাশ্য ঘােষণা ছিল যে, কেউ নিজের হাতে বিচার তুলে নেবেন না। কেবলমাত্র সুষ্ঠু বিচারের পর দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়া হবে। তাহলে আমাদের ওয়াদার ইজ্জত রইলাে কই?” বঙ্গবন্ধু কী যেন চিন্তা করে হঠাৎ বিকটভাবে চিৎকার করে উঠলেন,
“তােমরাই তাে আমার এই সর্বনাশ করেছ। কেন আমাকে জাতির পিতা বানাইলা? পিতা তাে ক্ষমা করবেই?”
জবাবটা দিলাে গাফফার চৌধুরী, “আপনি হচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা। তাই আমরা সবাই মিলে আপনাকে জাতির পিতা বানিয়েছি। কিন্তু সেদিন পর্যন্ত যারা এ ব্যাপারে কথায় কথায় বাড়াবাড়ি করছিল, তাদের অধিকাংশই এখন জাসদ করছে। বাকিরা খুব লীগে রয়েছে।”
এবার নিভে যাওয়া পাইপটা টেবিলের উপর রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিচু গলায় বললেন, “শােনেন সাহেবরা। চিলিতে তাে আলেন্দেরে শ্যাষ করছে। কিন্তু আমারে এমতে কাইত করতে পারবাে না। যখন কারবার করবাে, তখন তিন বাহিনীর তিন চীফ আইস্যা আমারে স্যালুট দিয়া কইবাে, স্যার অনেক দিন গভরমেন্ট চালাইলেন। আপনি এখন টায়ার্ড হইয়া পড়ছেন। এই কাগজের মধ্যে দস্তখত কইরা এখন রেস্ট নেন। আপনি জাতির পিতা ঠিকই থাকবেন। এই না কইয়া আমার কাছ থাইক্যা দস্তখত আদায় করবাে। আমিও দস্তখত দিয়া যামুগা মনপুরায়। এরপর বুঝতেই তাে পারতাছেন, কমিউনিস্টরা যাইবাে আন্ডারগ্রাউন্ডে। তখন আপনাগাে মতাে ন্যাশনালিস্টগে এরা তক্তা বানাইবাে।”
ঘরের মধ্যে তখন এক অসহনীয় পরিবেশ। অজানা আশঙ্কায় মনটা কেপে উঠল। বঙ্গবন্ধু আবার কথা বললেন, “আমি যখন থাকুম না, তখন আমার দাম বুঝবেন। বটগাছ পইড়া গেলে হাওয়ার দাপট টের পাইবেন।”
কথা ক’টা বলেই তিনি আবার পাইপ ধরালেন। আমরা দুজন হতভম্বের মতাে তাকিয়ে রইলাম।
#সংগ্রামের_নোটবুক #তিন_বাহিনী_প্রধান
ছবি – ফাইল ফটো। তিন বাহিনী প্রধান ১৯৭৩।
লেখা – এম আর আখতার মুকুল