You dont have javascript enabled! Please enable it!
ঘাতক-দালালদের বিচার কেন জরুরি
সভ্যতার আসল শক্তি তার নৈতিকতায়। আইনের চেয়ে নৈতিকতার শক্তি অনেক বেশি। সে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার জন্যই চাই একাত্তরের ঘাতকদালালদের বিচার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে নাৎসি জার্মানদের হাতে ৬০ লাখ ইহুদি নিহত হয়। যুদ্ধে আটকা পড়ে অথবা প্রতিপক্ষের পরস্পরের ভেতর বােমাবাজির ফলে নয়, এ বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত হয় নাৎসি জার্মানির সুপরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে। হিটলারের তথাকথিত ফাইনাল সলুশন’-এর লক্ষ্য ছিল একটি জাতিকে পুরােপুরি ধ্বংস করে ফেলা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের চার বছরের মধ্যেই নুরেমবার্গ ট্রায়ালে নাৎসি নেতৃত্বের প্রথম সারির ২৪ জন নেতার বিচার অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় একই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আরও ১৮৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে। নুরেমবার্গের সমান্তরাল অনুষ্ঠিত এ বিচার শেষ হয় ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে।  নুরেমবার্গ বিচারের প্রধান বিচারপতি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট জ্যাকসন। তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বিচারপতি জ্যাকসন ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন এ বিচার কেন গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায় : ‘যারা আজ বিচারের সম্মুখীন, তাদের (আদর্শগত প্রভাব) নিজ দেশের মাটিতে মিলিয়ে যাওয়ার অনেক পরেও অক্ষুন্ন থাকবে। আমাদের দায়িত্ব হবে এ কথা প্রমাণ করা, এ লােকগুলাে বর্ণবাদী ঘৃণা, সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের প্রতীক। তারা ঔদ্ধত্য ও ক্ষমতার নৃশংসতার প্রতীক। তারা নিজেদের এই আদর্শের সঙ্গে এতটা পুরােপুরি একাত্ম করে ফেলেছে যে তাদের প্রতি কোনাে ঔদার্য, কোনাে নমনীয় মনােভাব প্রকাশের অর্থই হবে তাদের সেই আদর্শের প্রতি সম্মতি এবং তাদের সম্পাদিত ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের প্রতি উৎসাহ প্রদর্শন।
জ্যাকসন এ কথা বলেছিলেন বিচারকক্ষে সমবেত বিচারকদের উদ্দেশে তার  নির্দেশ ছিল স্পষ্ট- ঘৃণা নয়, প্রতিশােধ নয়, ন্যায়বিচারের স্বার্থেই এদের বিচার হওয়া উচিত। প্রমাণিত হলে এদের অপরাধের সমতুল্য শাস্তি দিতে হবে, তার  কমও নয়, বেশিও নয়। এই বিচার থেকে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, জাতিহত্যার  মতাে অপরাধের জন্য কোনাে অপরাধী নিষ্কৃতি পাবে না। ভবিষ্যতের শিশু এই। বিচার থেকে শিক্ষা নেবে যে ভাষা, ধর্ম বা জাতিগত কারণে সে বৈষম্যের শিকার হবে না তেমন কোনাে বৈষম্য থেকে তাকে রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রে, রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে সে দায়িত্ব বর্তাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর শুধু এইসব প্রতিষ্ঠানের নয়, এ দায়িত্ব প্রতিটি বিবেকবান মানুষেরও নুরেমবার্গের পর রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নাৎসি খুনিদের বিচার কার্যত শেষ হয়ে যায়। আমেরিকা ও সােভিয়েতদের মধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য সব প্রশ্নের মতাে নাৎসিদের বিচারের প্রশ্নেও পূর্ব-পশ্চিম মতবিরােধ শুরু হয়ে  যায় এ নিয়ে তাদের কোনাে দায়-দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে- এ কথা অন্যান্য  বিতর্কের ধূলিঝড়ে চাপা পড়ে যায়। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে হিটলারের সঙ্গে। সহযােগিতা করেছে এবং জাতিহত্যার জন্য জড়িত এমন অনেক বিজ্ঞানী তাদের। পরিচয় গােপন করে এই দুই দেশের নতুন যুদ্ধ পরিকল্পনায় হাত লাগানাে শুরু করেন। নাৎসিপন্থী কোনাে কোনাে দেশ, যেমন- আর্জেন্টিনা, হিটলার বাহিনীর কোনাে কোনাে সমরনায়ককে নিজের দেশে আশ্রয় দেয়। তারা ক্রমশ সেসব। দেশের রাজনীতি-অর্থনীতির মূলধারায় একীভূত হয়ে পড়ে। পৃথিবী হয়তাে নাসি খুনি ও তাদের সংঘটিত গণহত্যার কথা ভুলেই যেত। একটি কারণে তা ঘটে নি। যারা হিটলারের জাতিহত্যার প্রধান শিকার, সেই ইহুদি।
জাতি, একদিনের জন্যও নিজেরা যেমন সে ঘটনা ভােলেনি, তেমনি পৃথিবীকেও ভুলতে দেয়নি। ইহুদি, তা সে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন, হিটলারের হাতে। তাদের জাতিহত্যার স্মৃতি আগলে রেখেছে। অসংখ্য প্রামাণ্য গ্রন্থ তারা লিখেছে, চলচ্চিত্র বানিয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে সে ঘটনার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। যারা সেই গণহত্যার শিকার, তাদের সম্ভাব্য সবার ইতিহাস সংকলিত করেছে। যারা বেঁচে  গেছে, তাদের প্রত্যেকের কথ্য ইতিহাস- ওরাল হিস্টরি লিপিবদ্ধ করেছে। আরও একটি কাজ তারা করেছে, এখনাে করে যাচ্ছে। নাম পাল্টে লুকিয়ে আছে, ভােলাে পাল্টে দ্রলােক হয়ে দিন কাটাচ্ছে, যেখানে যখন খোঁজ পাওয়া। যায়- এমন প্রতিটি নাৎসি খুনিকে তারা খুঁজে বের করার অহর্নিশ চেষ্টা চালিয়ে গেছে তাদের চেষ্টার ফলেই আইখম্যানের মতাে জল্লাদ ধরা পড়েছে, তার বিচার হয়েছে। ৬০ বছর পরও তারা সে খোজা থামিয়ে দেয়নি। এখনাে যেসব নাসি খুনি বেঁচে আছে, তাদের অনেকেই অতিবৃদ্ধ, কেউ কেউ মৃত্যুশয্যায়, অথর্ব কিন্তু তেমন অপরাধীর জন্য কোনাে করুণা নেই। ইহুদিদের চেষ্টা ও চাপের কারণেই কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসের এক খামারবাড়ি থেকে খুঁজে বের করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানাে হয়েছে ৮৮ বছরের নাৎসি এসএস সদস্য হার্বাট বিক্কারকে মিশিগান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ক্রোয়েশিয়ার নাসি সদস্য ৯০ বছরের ফার্ডিনান্ড হ্যামারকে। বিচারের জন্য শিকাগাে থেকে উক্রাইনে ফেরত পাঠানাে হয়েছে ৮৭ বছর বয়সের অসিপ ফিরিশচাককে। অতিবৃদ্ধ এসব খুনি যেকোনাে সময় মারা যেতে পারে, তাদের আটকানাের খুব বেশি সময় আর হাতে নেই, এ কথা বুঝতে পেরে ইসরায়েলের সিমন ভিজেনথাল সেন্টার তাদের শেষ চেষ্টা হিসেবে নাৎসি খুনিদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য নগদ পুরস্কার ঘােষণা করেছে। এদের চেষ্টা ও উদ্যোগেই এ পর্যন্ত পৃথিবীর ২০টি দেশে প্রায় ৫০০ নাৎসি খুনির নাম চিহ্নিত করা হয়েছে।
কিন্তু কেন? এত দিন পরও কি দরকার এসব বুড়ো মানুষকে হেনস্তা করার? প্রধান কারণ, যে কারণ বিচারপতি জ্যাকসন বলে গেছেন, তা হলাে ন্যায়বিচার। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে এরা অভিযুক্ত ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ যে গণহত্যা আইন (জেনােসাইড কনভেনশন) গ্রহণ করে, তাতে জাতিহত্যাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালে অপর এক আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য কোনাে স্টাচুটরি লিমিটেশন’ থাকবে না বলে নির্ধারিত হয়। অন্যকথায়, যত আগের ঘটনাই হােক না কেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য শাস্তি বলবৎ থাকবে সময়ের দূরত্ব এ জন্য কোনাে প্রতিবন্ধক নয়। এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিটি দেশ এ আইন বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ  কিন্তু সে তাে কেবল আইনের কথা। সভ্যতার আসল শক্তি তার নৈতিকতায় আইনের চেয়ে নৈতিকতার শক্তি অনেক বেশি। বাংলাদেশের উদাহরণেই আমরা জানি, আমাদের নীতিবােধ ক্রমশ দুর্বল হওয়ার ফলে কাগজেকলমে আইন থাকলেও দেশের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। দেশের যারা সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ, তাদের এ নিয়ে কোনাে অপরাধবােধ পর্যন্ত নেই। নৈতিকতায়, নীতিবােধে একটা জাতির চেতনা প্রকাশিত হয়, তার মানবিকতা প্রকাশিত হয়।
কিন্তু নীতিবােধের বদলে অপরাধ-চেতনাই যখন শেষ পর্যন্ত জিতে যায়, তখন সে দেশের, সে জাতির পতন ঠেকানাে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইহুদি নিধনের ভেতর দিয়ে নাৎসি জার্মানি তার মানবিকতা হারায়। যারা সে ঘটনা অস্বীকার করে অথবা সে অপরাধকে খাটো করে দেখতে চেষ্টা করে, তারাও একই অপরাধে দোষী। হলােকস্ট বা হিটলারের হাতে ইহুদি নিধন আমরা কেন মনে রাখব, তার নানা ব্যাখ্যা নানাজনে দিয়েছেন। আমি সান ডিয়েগাের ফারব মিডল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির বালকদের যৌথভাবে লেখা একটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিতে চাই। তাদের সে কবিতার নাম ‘গণহত্যার কাহিনি আমরা কেন পাঠ করব’: গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব, কারণ এতে আমরা জাতিবৈষম্য বিষয়ে জ্ঞান পাই গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব, কারণ তেমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব যাতে এমন ঘটনা আবার না ঘটে গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব এখন যে স্বাধীনতা ও মুক্তি ভােগ করছি তার কৃতজ্ঞতা স্বীকারের জন্যে। গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব যারা নিহত হয়েছে তাদের কাছে আমাদের ঋণ শশাধের জন্যে; গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব যাতে শিশুকালেই আমরা সে অপরাধের বিরুদ্ধে শিক্ষা পাই এবং পরিণত বয়সে সে শিক্ষা ভুলে না যাই। গণহত্যা বিষয়ে পাঠ করব যাতে নিজেদের ঔদ্ধত্যে আমরা অন্ধ না হই ।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের লেখা এই কবিতা থেকে আমাকে উদ্ধৃতি দিতে হলাে কারণ, কিছু দিন আগে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এক সভা করে দাবি করেছেন, একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের হাতে বাঙালি। জাতিহত্যার যে ঘটনা ঘটে, তার জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচারের দাবি তােলা অযৌক্তিক। ঢাকায় প্রেসক্লাবে সে গােলটেবিল বৈঠকে যারা ভাষণ দেন, তাদের বয়স আমার জানা নেই, তবে যেহেতু অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তাই অনুমান করি, তারা পরিণত বয়সের। তাদের মধ্যে ছিলেন ইসলামি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিষয়ক ডিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও প্রেস ইনস্টিটিউটের সভাপতি। কেন বিচার হবে না, সে দাবি তুলে যে যুক্তিগুলাে তারা তুলে ধরেন, আমি সান ডিয়েগাের স্কুল ছাত্রদের কবিতা অনুসরণ করে লিখে জানাচ্ছি : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, কারণ কোনাে যুদ্ধাপরাধ হয়নি; একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, কারণ মুক্তিযােদ্ধারাও অপরাধ করেছেঃ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, কারণ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনাে যুদ্ধই হয়নি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, কারণ এত দিন যারা বিচার করে নি তাদের আগে বিচার হওয়া উচিত; একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, কারণ বিচার করলে দেশের হাল পাকিস্তান হবে।
যে কেউ, এমনকি ক্লাস সিক্সের ছাত্রছাত্রীও বুঝবে আমাদের অধ্যাপকরা নিজেরাই পরস্পরবিরােধী যুক্তি দিয়েছেন। তাদের ইতিহাস-জ্ঞান যে খুব খারাপ, সেটাও খুব স্পষ্ট। একই নিশ্বাসে যারা মুক্তিযােদ্ধাদের যুদ্ধাপরাধী বলেন এবং কোনাে যুদ্ধাপরাধ হয়নি বলে দাবি করেন অথবা এত দিন বিচার হয়নি, ফলে বিচার হবে না বলে যারা দাবি তােলেন, তাদের যুক্তি-বুদ্ধি খুব তীক্ষ একথা বলা কঠিন। যারা বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি, তারা বােধ হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকার রেসকোর্সে জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণ পত্রটির অনুলিপি দেখেননি। তাঁরা বােধ হয় এও ভুলে গেছেন বা জানেন না যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আইন পরিষদে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইবুন্যাল অ্যাক্ট নামে একটি আইন প্রণীত হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সে আইন প্রণয়ন করা হয়। যুদ্ধ না হলে অথবা যুদ্ধাপরাধী না থাকলে দেশের জাতীয় সংসদে আইন করা কেন? এ কথা। ঠিক, সে আইন কার্যকর হয়নি। কারণ, আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলাদেশে এত দিন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা এসব অধ্যাপকের মতাে হয় ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন অথবা কোনাে না কোনােভাবে নিজেরাই সেসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যারা নিজেরাই অপরাধী, তারা আবার অপরাধের বিচার করবেন বা চাইবেন কী করে? | এ পণ্ডিতপ্রবরদের বলি, বিচারপতি জ্যাকসনের ভাষণের উদ্ধৃতাংশ দয়া করে পাঠ করুন।
তার কথা যদি খুব কঠিন মনে হয়, তাে ক্লাস সিক্সের ছেলেমেয়েদের লেখা কবিতার অংশবিশেষ আরেকবার পড়ন। এসব শিশু হলােকস্টের কথা বলেছে। আমাদের একাত্তর, সেও আরেক হলােকস্ট, আরেক জাতি হত্যা ভালাে করে তাকালে হিটলারের ছায়ায় দেখবেন ইয়াহিয়া, নাসি সৈনিকের পােশাকে দেখবেন পাকিস্তানি সৈন্য ও তার রাজাকার দোসরকে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের কেন বিচার চাই, জানেন? কারণ, আমরা চাই অবশেষে আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা। কারণ, আমরা ঠেকাতে চাই সেই খাণ্ডব দাহনের পুনরাবৃত্তি। কারণ, আরও আছে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার হতেই হবে, অন্যথায় একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের ঋণ শােধ হবে না  একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার হতেই হবে, অন্যথায় যে ঘৃণ্য আদর্শের কথা বলে তারা খঞ্জর তুলে নিয়েছিল, সে আদর্শের প্রতি সম্মতি জানানাে হবে, তাকে উৎসাহিত করা হবে। চল্লিশ বছর ধরে এ ভুলটি আমরা করে এসেছি। আমাদের মৌন সম্মতিতেই সেই ঘাতক-দালালরা সমাজে মুক্তভাবে বিচরণ করেছে এবং তাদের ঘৃণিত আদর্শ প্রচার করেছে। এ কথার সেরা প্রমাণ তাে এ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপকেরাই জাতি হিসেবে আমরা কোন উত্তরাধিকার বহন করব: একদল খুনির আদর্শ, যারা জাতি ও ধর্মের নামে নিজের ভাই ও প্রতিবেশীকে খুন করেছে, নাকি সেই মুক্তিযােদ্ধার, যার রক্তে ও ত্যাগে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ? এই সত্য আবিষ্কারের এখনই সময়।

সূত্র : একাত্তর যেখান থেকে শুরু – হাসান ফেরদৌস,  সময় প্রকাশনী,২০১৬

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!