বিদায়, ড্যান কগিন
ড্যান কগিনের খুব ইচ্ছা ছিল ঢাকায় পুরােনাে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হােটেলে আরেকবার থাকার ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর সেই ভয়াল রাতে এই হােটেলের জানালা দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। অন্যান্য বিদেশি সাংবাদিকের মতাে তাকেও সে হােটেল ছেড়ে চলে যেতে হয় এক দিন পর। ৪০ বছর পর ঢাকায় এসে সেই হােটেলে আরেকবার প্রাতরাশ সারতে চেয়েছিলেন। ঢাকায় এলে অসংখ্য পুরােনাে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা হবে, আড্ডা হবে, এমন আশাও তার ছিল। সেসব বন্ধুর সবার নাম এখন আর মনে নেই কারও কারও নাম স্মৃতি খুঁড়ে উদ্ধার করেছিলেন। যেমন শাহরিয়ার জামাল নবী ও তার স্ত্রী পলি। তাদের দেখা মিলবে তাে! খুব ইচ্ছা ছিল কুষ্টিয়া যাবেন। একাত্তরের এপ্রিলে এই শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বাঙালি সেনাসদস্যদের সরাসরি লড়াই হয়। তাঁর পাঠানাে সে যুদ্ধের বিবরণ, দি ব্যাটেল অব কুষ্টিয়া, টাইম ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। তিনিই প্রথম বিদেশি সংবাদদাতা, যার সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা ছিল। একাত্তরে আরও অসংখ্য প্রতিবেদন তিনি পাঠিয়েছেন, কিন্তু কুষ্টিয়ার স্মৃতি তার মনে গাঁথা ছিল। যে কয়দিন কুষ্টিয়ায় ছিলেন, অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্বও তাঁদের কেউ কি এখনাে বেঁচে আছেন? খুব ইচ্ছা ছিল তাদের খুঁজে বের করা, মুখােমুখি বসে আরও একবার কথা বলা। কিন্তু ড্যানের ঢাকা যাওয়া হলাে না। মস্তিষ্কের প্রবল রক্তক্ষরণ, সেখান থেকে পক্ষাঘাত । প্রায় দুই মাস হাসপাতালে জীবমৃত অবস্থায় থাকার পর ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ২২ তারিখে দেহত্যাগ করেন ড্যান কগিন মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর উপলক্ষে আয়ােজিত অনুষ্ঠানে মুক্তিযােদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন ড্যান ডিসেম্বরের ৩ তারিখের জন্য টিকিট কাটাও হয়েছিল।
যাওয়ার আগে দিন কয়েক নিউইয়র্কে থাকবেন ভেবে সান ফ্রান্সিসকো থেকে সরাসরি উঠেছিলেন প্রবাসী বাঙালি চলচ্চিত্রকার অনিন্দ্য আতিকের বাসায়। ড্যানকে সে-ই খুঁজে বের করেছিল। কুষ্টিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে ব্যাটল অব কুষ্টিয়ায়, টাইম ম্যাগাজিনে সচিত্র প্রতিবেদন, লেখক ড্যান কগিন । খুঁজে পেতে দেখা গেল, ১৯৭১ নিয়ে তার অসংখ্য প্রতিবেদন রয়েছে এমনকি যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ পর্যন্ত। ঢাকায় তখন তােড়জোড় চলছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর উদযাপনের। ঢাকায় তাকে নেওয়ার কোনাে ব্যবস্থা করা যায় না? মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হকের সঙ্গে যােগাযােগ করা হলাে। তিনি এককথায় রাজি ড্যানকে ঢাকায় আমন্ত্রণ করতে খবর পরে এরপর যুক্ত হলেন মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিল, তারাও ড্যানকে চায় তাদের বিশেষ অনুষ্ঠানে আতিকের ওপর দায়িত্ব পড়েছিল ড্যানকে খুঁজ বের করে আমন্ত্রণপত্র পৌছে দেওয়ার টাইম ম্যাগাজিনে যােগাযােগ করে খুব বেশি জানা গেল না, তবে তিনি সান ফ্রান্সিসকো থাকেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল। এরপর ইন্টারনেট ও টেলিফোন বই ঘেঁটে অবশেষে ড্যানের খোঁজ মিলল তিনিই যে সেই ড্যান কাগন, একাত্তরে যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ টাইম ম্যাগাজিনের হয়ে কভার করেছিলেন, তা প্রমাণের জন্য আতিকের কাছে গােটা কয়েক প্রতিবেদন ও ছবি পাঠিয়ে দিলেন ড্যান । ড্যানকে পেয়ে আতিক ভীষণ খুশি হয়েছিল ছবি-পাগল মানুষ।
ড্যানকে দেখেই ঠিক করে ফেলে তাকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করবে ড্যানের ঢাকা ও কুষ্টিয়া সফর তাে থাকবেই। আরও যেখানে যেখানে তিনি যেতে চান, তার সবই কম-বেশি সেই ছবিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। ছবির জন্য স্টোরিবাের্ড বানানাে, গল্পের কাঠামাে সব ঠিক। ড্যান নিজেও ঢাকায় যাওয়ার সম্ভাবনায় দারুণ উত্তেজিত। একসময় উপমহাদেশের সবগুলাে দেশে থেকে সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন। করেছেন তিনি, কখনাে টাইম ম্যাগাজিনের হয়ে, কখনাে বা এপির হয়ে। ফলে এই অঞ্চলের ইতিহাস ও তার রাজনৈতিক বৈরিতা তিনি খুব ভালােই জানতেন। আশা করেছিলেন, ঢাকা যাওয়ার পর উপমহাদেশের অন্যান্য দেশেও যাবেন আঞ্চলিক মৈত্রীর সম্ভাবনা যাচাই করতে ঢাকায় যাওয়ার আগে দিন কয়েক হাতে সময় ছিল, সেই সময় আতিককে। নিয়ে বাঙালি পাড়ায় গেছেন ড্যান, প্রবল পরিতৃপ্তি নিয়ে বাঙালি খাবারও খেয়েছেন। কিন্তু ড্যান যে পুরােপুরি সুস্থ নন, আতিক তাঁকে দেখেই বুঝেছিল। ইনসােমনিয়ায় ভুগতেন, সারা রাত জেগে থাকতেন। আতিক পরে জেনেছে ডিপ্রেশনের রােগী তিনি, উচ্চ রক্তচাপও ছিল। কিন্তু ঘড়ি ধরে ওষুধ খাওয়া তার। অভ্যাসের বাইরে। তার থাই স্ত্রী সম্পম ড্যানের বেখেয়ালি স্বভাবের ব্যাপারে আতিককে সাবধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কে শােনে কার কথা। ২৫ নভেম্বর অকস্মাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ড্যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ধরা পড়ল মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ও পক্ষাঘাত। প্রায় দুই মাস কোমায় ছিলেন ড্যান খুব কাছে। এসে কথা বললে সাড়া দিতেন। কিন্তু পুরােপুরি জেগে ওঠা আর হয়নি তার। ২২ জানুয়ারি ২০১২ নিউইয়র্কের এলমাস্ট হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ড্যান কগিন।
১৯৬৫ থেকে ১৯৭২-এই সাত বছর ড্যান টাইম ম্যাগাজিনের বৈদেশিক প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে চষে বেড়ান। ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতাে ঢাকায় আসেন আইয়ুব-বিরােধী গণ-অভ্যুত্থানের ওপর রিপাের্ট করতে। সে সময় বঙ্গবন্ধু ও মওলানা ভাসানীসহ অসংখ্য বাঙালি নেতার। সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল ১৯৬৯-এ মওলানা ভাসানীর ওপর প্রকাশিত হয় তার স্মরণীয় প্রতিবেদন, প্রফেট অব ভায়ােলেন্স’। বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতার পথে এগােচ্ছে, সামরিক সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না এ দেশকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে পদানত করে রাখা, ড্যানের সেই প্রতিবেদন থেকে এ কথা বুঝতে কষ্ট হয় না। ২৫ মার্চের কালাে রাত ড্যান দেখেছিলেন। তিনি জানতেন, এ দেশের মানুষ মুক্তির যে স্বাদ পেয়েছে, কোনাে মূল্যেই তা বিকোবে না। সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে জনযুদ্ধে বদলে যাচ্ছে তা দেখার জন্য সীমান্ত টপকে লুকিয়ে প্রবেশ করেছিলেন কুষ্টিয়া। ৮০ হাজার পাকিস্তানি সেনার গ্যারিসন শহর, সেখানে একমাত্র বিদেশি সাংবাদিক হিসেবে চলাফেরার মস্ত ঝুঁকি রয়েছে, এ কথা তিনি। জানতেন কিন্তু একসময়ের মার্কিন নৌ-সেনা, ভিয়েতনাম ও ইন্দো-চীনের পােড় খাওয়া ওয়ার করেসপনডেন্ট এত সহজে ভয় পাওয়ার লােক নন। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি হেঁটে পুরাে শহর ঘুরে দেখেন মুক্তিবাহিনী তখন সদ্য সংগঠিত হচ্ছে। সে বাহিনীর সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের অপারেশন প্রত্যক্ষ করেন। তাঁর কাছ থেকে দেখা ও শােনা সে ঘটনার।
বিবরণ, যা টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ১৯ এপ্রিল, সম্ভবত মুক্তিবাহিনীর ওপর প্রথম সরেজমিন প্রতিবেদন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার পর বাঙালি সামরিক ও আধা সামরিক সদস্যদের হাতে যে অঞ্চলগুলাে সর্বপ্রথম মুক্ত হয়, কুষ্টিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম বাঙালি যােদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে ৩১ মার্চ বালুচ রেজিমেন্টের ডেলটা কোম্পানির অধিকাংশ সদস্য সেনা হয় নিহত, নয়তাে গ্রেপ্তার হয়। সে বিদ্রোহের নাটকীয় বিবরণ ধরা পড়েছে ড্যান কগিনের প্রতিবেদনে। শুধু কুষ্টিয়ায় নয়, ঢাকায় এসেছিলেন ড্যান মুক্তিযুদ্ধের সময়। মে মাসের গােড়ার দিকে প্রথম মার্কিন সাংবাদিক হিসেবে অনুমতি নিয়েই তিনি ঢাকায় আসেন। সেনা অধিকর্তারা হয়তাে ভেবেছিলেন, তাঁদের খবরদারিতে থাকা বিদেশি সাংবাদিকের চোখে ধূলাে দেওয়া কঠিন হবে না। ঘাগু সাংবাদিক ড্যান কগিন। একসময় সায়গনে মার্কিন তাঁবেদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিবরণ সবিস্তার জানিয়েছেন তিনি ঢাকায় এসেও তার বুঝতে সময় লাগল না মাছ দিয়ে শাক ঢাকার চেষ্টা করছে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্তারা। ৩ মে তার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড্যান ঢাকাকে বললেন, ‘এ সিটি অব দি ডেড’। ২৫-২৬ মার্চের নিষ্ঠুর সেনা হামলা, যার ফলে কার্যত নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক কচুকাটা হয়েছে, তার এক মাস পরও এই শহরে মৃত্যুর চিহ্ন সর্বত্র। ঢাকার বিভিন্ন বাড়ির ছাদে তিনি পাকিস্তানি পতাকা দেখেছিলেন, অফিসের দেয়ালে জিন্নাহর ছবি।
অজ্ঞাতনামা বাঙালির কথা উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, ‘এ কেবল পাকিস্তানিদের চোখে ধুলাে দেওয়া। অভিন্ন পাকিস্তান শেষ। আমরা এই খুনিদের মাফ করব না, তাদের অপরাধ ভুলব না’ তাকে একজন বলেছে। তিনি সাংবাদিক, এ কথা জানতে পেরে তাকে গণকবরে নিয়ে গেছে বাঙালি যােদ্ধাদের একজন। সিঁড়ির নিচে খুন হয়েছেন দুজন অধ্যাপক, এমন এক বাড়ি দেখে এসেছেন তিনি। আমরা কিছুতেই দাস হয়ে থাকব না’, এমন কথা সে সময় তিনি বারবার শুনেছেন। অক্টোবরের ২৫ তারিখে নয়াদিল্লি থেকে পাঠানাে এক প্রতিবেদনে ড্যান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির একটি খতিয়ান তুলে ধরেন। প্রায় এক কোটি উদ্বাস্তু, কমপক্ষে ১০ লাখ নিহত। করাচিতে একজন সামরিক কর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ড্যান লিখেছেন, জেনারেলরাই স্বীকার করেছে, না হলেও এক লাখ লােক নিহত হয়েছে। পাকিস্তানি অবরােধের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হামলা ক্রমেই বাড়ছে, বর্ষাকাল শেষ হলেই প্রতিরােধের মাত্রা বহু গুণ বেড়ে যাবে, এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ড্যান যুদ্ধের শেষ মাথায় গােপনে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। টাইমের প্রতিবেদনে তার জীবন্ত বিবরণ রয়েছে। মুক্তিবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন আমাকে জানালেন, তাঁরা ভিয়েতকংদের মতাে তিন স্তরে আক্রমণ চালাচ্ছেন। সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা সেরে তাঁরা এখন ‘চোরাগােপ্তা হামলা ও দ্রুত পলায়নের নীতি অনুসরণ করছেন। এরপর হবে সার্বিক হামলা। সরেজমিন পর্যবেক্ষণের পর সে যুদ্ধের সার্বিক বিবরণ দিয়েছিলেন টাইম ম্যাগাজিনের ডিসেম্বরের প্রচ্ছদ কাহিনিতে। প্রিয় আবদুল্লাহ, আমরা এখন এখানে। তােমাদের খেলা শেষ। আমার পরামর্শ হলাে, তোমরা আত্মসমর্পণ করাে। এরপর তােমাদের ভালাে-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার।’-পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজির কাছে পাঠানাে ভারতীয় জেনারেল নাগরার এই গােপন-বার্তা দিয়ে শুরু সে প্রতিবেদন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলাের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতার সে বিবরণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় দলিল।
একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বার কয়েক ঢাকায় এসেছিলেন ড্যান। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তার সঙ্গে এক ধরনের হৃদ্যতাও জন্মেছিল। ১৯৭২-এ বৈরুতে একটি নতুন ম্যাগাজিন শুরুর দায়িত্ব নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য চলে গেলে এই দেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে একটি সাময়িক যতি আসে। রাজনৈতিক জটিলতায় সে পত্রিকা অবশ্য টিকে থাকেনি। এর পরের ছয়সাত বছর এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ব্যাংককে দুটি সাপ্তাহিকের দায়িত্ব নিয়ে একটি নতুন কোম্পানি খুলে বসেন ড্যান । ১৯৮২ সালে সে কাজ ছেড়ে দিয়ে যােগ দেন এসকাপ-এর বাঙালি প্রধান শামস কিবরিয়ার মুখপাত্র ও ভাষণ লিখিয়ে হিসেবে। ১০ বছর সে কাজে লেগেছিলেন ড্যান নিজেই বলেছেন, তাঁর জীবনের একটি প্রিয় সময় তিনি কাটিয়েছেন শামস কিবরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এই সাবেক অর্থমন্ত্রী নিহত হয়েছেন, সে খবর ড্যান জানতেন। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল মিসেস কিবরিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন, তার সঙ্গে পুরােনাে সময়ের সুখ-দুঃখের কথা ভাগবাটোয়ারা করে নেবেন। শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হলাে না ড্যানের। একা, প্রায় জীবমৃত অবস্থায় দুই মাস হাসপাতালে কাটিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বিদায়, ড্যান ।
সূত্র : একাত্তর যেখান থেকে শুরু – হাসান ফেরদৌস, সময় প্রকাশনী,২০১৬