You dont have javascript enabled! Please enable it!
৫ নম্বর সেক্টর
এই সেক্টরেও মুক্তিবাহিনী অত্যন্ত তৎপরতার সাথে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। বড়ছড়া-সাব-সেক্টরের অধীনস্থ আনন্দনগরে ২রা নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক সংঘর্ষ হয়। পাকিস্তানি সেনাদের একটি সেকশন রসদপত্র নিয়ে সাচনা থেকে তাহেরপুর যাবার পথে এফ এফ মুজাহিদ এবং এম এফ জিয়ার নের্তৃত্বে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন আনন্দনগরে এ্যামবুশ করে পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকজনকে হত্যা করে। কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী ২টি নৌকা, ২টি রাইফেল ও প্রচুর রেশন সামগ্রী উদ্ধার করে। | ৩রা নভেম্বর ক্যাপ্টেন মুসলিম ও ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মাহফুজুর রহমান এক কোম্পানি মুক্তিবাহিনী নিয়ে তাহেরপুর পাকিস্তানি ঘাটি আক্রমণ করে ৩ জনকে হত্যা এবং বেশ কিছু আহত করে কিন্তু পাকিস্তানিদের ব্যাপক প্রতি-আক্রমণের মুখে মুক্তিবাহিনী পিছনে সরে আসতে বাধ্য হয়। কাশেম নামে একজন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ ও ৫ জন আহত হয়।
আজমীরিগঞ্জ দুর্ঘটনা (Azmirgonj Tragedy)।
১৬ই নভেম্বর আজমীরিগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। আজমীরিগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাস ৪৫ জনের একটি দল নিয়ে অবস্থান করছিলেন। ইতােপূর্বে কমান্ডার দাস ৮টি অপারেশনে বেশ রণকৌশলের পরিচয় দিয়েছিলেন। এলাকায় তিনি পাকিস্তানিদের কাছে টেরর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুক্তিবাহিনীর ইনফরমারের ভুলে পাকিস্তানিরা কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাসের সঠিক অবস্থান জানতে পেরে ১৬ই নভেম্বর বেলা ১১ টায় প্রায় ২০০ পাকিস্তানি সেনা মুক্তিবাহিনীর উপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে। কমান্ডার দাস প্রস্তুত ছিলেন না। তবু তিনি ত্বরিৎবেগে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। প্রতি-আক্রমণ করে ফাস্ট লাইনের পাকিস্তানি সেনাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলেন। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা তুমুল সংঘর্ষ চলে। পাকিস্তানিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। কিন্তু কমান্ডার দাস শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। নিজে নিহত হলেন, নিহত হলাে আরাে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আহত হলে বেশ কিছু।
জগৎজ্যোতির মৃত্যুতে মুক্তিবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় । আজমীরিগঞ্জ পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ওদিকে পাকিস্তানি ঘাটি তাহেরপুর দীর্ঘ ১২ দিন অবরােধ করে রাখার পর ক্যাপ্টেন মুসলিম ২৮শে নভেম্বর ভাের ৫টায় মুক্তিবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে তাহেরপুর আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনারা বেশ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পালিয়ে যায়। এক ঘণ্টার মধ্যে তাহেরপুর শত্রুমুক্ত হয়। তাহেরপুর দখলের পর বড়ছড়া সাব-সেক্টর বাহিনী বাজেতপুর পর্যন্ত সমগ্র সুরমা নদী এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। | শেলা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলালও তার বাহিনী নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে এই সাব-সেক্টরের লে. মাহবুব ও লে. রউফ সাফল্যের সাথে পাগলা সেতু এবং জাওয়া রেল। ও সড়ক সেতু ধ্বংস করতে সমর্থ হন। | নভেম্বর মাসের শেষ ভাগে লে. কর্নেল সাফায়াত জামিলের নের্তৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন তামাবিল এলাকায় আসেন। ডাউকী সাব-সেক্টর বাহিনী এবং ৩য় ইস্ট বেঙ্গল যৌথভাবে মেজর সাফায়াত জামিলের কমান্ডে ২৯শে নভেম্বর রাধানগর আক্রমণ করে। প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর ৩০ শে নভেম্বর রাধানগর শত্রুমুক্ত হয়। এর পরই তার বাহিনী অগ্রসর হয়ে গােয়াইনঘাট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
টেংরাটিলা আক্রমণ
টেংরাটিলা ছিল পাকিস্তানিদের একটা বড় ও সুদৃঢ় ঘাঁটি। টেংরাটিলা আক্রমণ করার পূর্বে সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল শওকত ২০শে নভেম্বর এক কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন আকবর, ক্যাপ্টেন হেলাল, ক্যাপ্টেন মহসীন, লে, মাহবুব প্রমুখ। কিছু সংখ্যক এফ, এফ, লিডারও কনফারেন্সে যােগ দিয়েছিলেন। সভায় টেংরাটিলা আক্রমণের ব্যাপারে লে. কর্নেল শওকত বিস্তারিত আলােচনা করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৭/২৮ নভেম্বর টেংরাটিলা রেকি করা হয়। ৪ কোম্পানি মুক্তিবাহিনী ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপন করে। পরিকল্পনা মােতাবেক ৩য় বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন মহসীন তার কোম্পানি নিয়ে ডান দিক থেকে এবং ৩য় বেঙ্গলের আরেকটি কোম্পানি ক্যাপ্টেন আকবরের নের্তৃত্বে বাম দিক থেকে মূল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। লে. রউফ তার কোম্পানি নিয়ে ডান দিকে ফ্লাঙ্ক গার্ড’ এবং লে, মাহবুব তার কোম্পানি নিয়ে বাম দিকে ‘ফ্লাঙ্ক গার্ড’ হিসেবে রইলেন। সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল শওকত নিজে নিলেন এই আক্রমণ পরিচালনার দায়িত্ব। মুক্তিবাহিনী ৩০শে নভেম্বর ভাের ৭ টায় আক্রমণ করলাে। পাকিস্তানিরাও সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালায়। উভয় পক্ষের আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরক্ষা এমন সুদৃঢ় ছিল যে তাদের তীব্র প্রতিরােধের মুখে মুক্তিবাহিনী প্রাথমিক পর্যায়ে একটুও অগ্রসর হতে পারছিল না। কিন্তু ক্রমে ক্রমে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরােধ হালকা হতে থাকে এবং পালিয়ে যাবার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেও তারা পালাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে রাতের অন্ধকারে একটা জলাপথে পায়ে হেঁটে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাদের সব রেশন সামগ্রী। ও গােলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। ৫ই ডিসেম্বর টেংরাটিলা শত্রুমুক্ত হয়।
৬ নম্বর সেক্টর
নভেম্বরের প্রথম থেকেই ৬নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন অবস্থান অধিকার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন। নওয়াজেশউদ্দিনের নের্তৃত্বে তার বাহিনী ১৮ই নভেম্বর রায়গঞ্জের পাকিস্তানি ঘাঁটি আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়িত করতে সমর্থ হন। কিন্তু এর বিনিময়ে তাকে লে, সামাদ নামে একজন তরুণ অফিসার ও বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তিযােদ্ধা। হারাতে হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ২০ জনের উর্ধ্বে বলে জানা যায়। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের বাহিনী ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে নাগেশ্বরী ও পাটেশ্বরীর ধরলা নদীর ঘাট পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। | চিলাহাটি সাব-সেক্টর কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল তার বাহিনী নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ অব্যাহত রেখে নভেম্বর মাসেই ডিমলা পর্যন্ত তার অধিকারে নিয়ে আসে। | ওদিকে পাটগ্রাম সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান তার বাহিনী নিয়ে ১৯শে নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর বড়খাতা ঘাটি আক্রমণ করেন। আক্রমণের তীব্রতায় পাকিস্তানি সেনা বড়খাতা ছেড়ে হাতীবান্ধা নামক স্থানে তাদের ডিফেন্স গড়ে তােলে। মুক্তিবাহিনীর তিনটি কোম্পানি নভেম্বরের শেষ দিকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। হাতিবান্ধা নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমর্থ হয়। টিকতে না পেরে পাকিস্তানি সেনারা পিছনে সরে লালমনিরহাটে অবস্থান নেয়। ক্যাপ্টেন দেলওয়ারের নের্তৃত্বে মােগলহাট সাব-সেক্টর বাহিনীও পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ অব্যাহত রেখে অগ্রসর হতে থাকে এবং নভেম্বর মাসের শেষ দিকে লালমনিরহাট থেকে ৪ মাইল দূরে অবস্থান গ্রহণ করে।
৭ নম্বর সেক্টর
এই সেক্টরেও মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা ক্যাপ্টেন গিয়াস, ক্যাপ্টেন রশীদ, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ক্যাপ্টেন ইদ্রিস, প্রমুখ সাব-সেক্টর কমান্ডারদের নেতৃত্বে পাকিস্তানিদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে একের পর এক সাফল্য অর্জন করতে থাকে। লালগােলা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মুক্তিবাহিনীর একটি কোম্পানি সুবেদার আবুল হাসেমের নেতৃত্বে পাকিস্তানি ঘাটি ইসলামপুর আক্রমণ করে। সুবেদার হাশেম তার কোম্পানিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে হাবিলদার সাজ্জাদ, হাবিলদার কাওসার ও নায়েক আবুলের নের্তৃত্বে তিনটি। কলামে পরিচালনা করেন। প্রথমেই তিনি তার সাপাের্ট সেকশনের ৬টি ৩” মর্টার দ্বারা পাকিস্তানি অবস্থানের উপর বেশ কিছুক্ষণ শেলিং করেন। শেলিং-এর ফলে পাকিস্তানিরা। যখন বিপর্যস্ত তখনই তার হুকুমে মুক্তিবাহিনী নিজ নিজ কলামের অধীনে পাকিস্তানি সেনাদের উপর এক সঙ্গে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা প্রচণ্ড মার খেয়ে ইসলামপুর ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর ছেড়ে চাপাইনবাবগঞ্জের মূল ঘাঁটিতে চলে যায়। এই সংঘর্ষে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। ৩০ জন রাজাকার বন্দি হয় এবং ৫০ জনেরও বেশি আত্মসমর্পণ করে। অপর পক্ষে মুক্তিবাহিনীর ১০ জন শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। নভেম্বরের ১৩/১৪ তারিখে হামজাপুর সাব-সেক্টরের মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার খানপুর বি ও পিতে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান আক্রমণ করে নিজ পক্ষে মাত্র কয়েকজনের আহত হওয়ার বিনিময়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়িত করতে সমর্থ হয়। এই সংঘর্ষে ৩০ জন পাকিস্তানি নিহত হয় বলে জানা যায়। ২৭শে নভেম্বর ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ৫টি কোম্পানি পােড়াগ্রাম আক্রমণ করে। পােড়াগ্রামে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর এক কোম্পানি নিয়মিত পাকিস্তানি সেনা ও এক কোম্পানি রাজাকারের সুদৃঢ় ঘাটি। এই সংঘর্ষ প্রচণ্ড তীব্রতার মধ্য দিয়ে দু’দিন স্থায়ী হয়। অবশেষে চরম ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পাকিস্তানি বাহিনী পােড়াগ্রাম ছেড়ে চাপাইনবাবগঞ্জে তাদের মূল ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। এই সংঘর্ষে ৩০ জন পাকিস্তানি সেনা ও ৫০ জন রাজাকার নিহত হয়।
১১ নম্বর সেক্টর
১১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর | বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিলেন। তার নির্দেশে ৬ই নভেম্বর ঢালু সাব-সেক্টর। বাহিনী তন্তর গ্রামের পাকিস্তানি ঘাঁটি আক্রমণ করে। তন্তর গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৫০ জন ; ডা. আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ এর নের্তৃত্বে এফ এফ এর দুটি কোম্পানি ও সুবেদার মেজর জিয়াউল হকের নের্তৃত্বে এম, এফ এর একটি প্লাটুন এই আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। সম্মিলিত এই বাহিনী ৬ই নভেম্বর রাত ৮টায় হাতিপাথার নদী পার হয়ে দুই দিক থেকে তন্তর গ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের উপর। আকন্দ্রিক আক্রমণ চালায় । মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী তন্তর গ্রামের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষে ৪জন এফ এফ শহীদ হন এবং ২ জন এম, এফ গুরুতর আহত হন। ১২ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বান্দরকাট্য পাকিস্তানি অবস্থান আক্রমণ করে। মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সাত্ত সিং নিজে এই আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা। ছিল; ডা, আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ, অধ্যাপক আবদুল হান্নান ও জনাব আবুল হাশেমের। নের্তৃত্ব তিন কোম্পানি এম এফ সম্মিলিতভাবে এই আক্রমণ করবে। মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি সাপাের্ট প্রদান শেষ হলে শত্রুকে চার্জ করতে হবে। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ২০০ সেনা বান্দরকাটায় অবস্থান করছিল। পরিকল্পনানুসারে চার কোম্পানি মুক্তিবাহিনী ত্ব স্ব কমান্ডারের নের্তৃত্বে ১১/১২ নভেম্বর রাতে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে পজিশন গ্রহণ করে। ভাের ৪টায় মিত্রবাহিনী আর্টিলারি শেলিং শুরু করে। ১ ঘণ্টা পর শেলিং বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সকাল ৫টার দিকে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ছিল মজবুত ঘাটিতে, কিন্তু তবু তারা মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মােকাবেলা করতে ব্যর্থ হয় এবং পিছনে সরে যেতে বাধ্য হয়। বান্দরকাটা শক্রমুক্ত হয়। ১৯ জন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। আহত ও নিহতের সংখ্যা আরাে বেশি ছিল বলে মনে করা হয়। এফ এফ-এর এম, এ ক্লাশের ছাত্র শওকত সহ ৪ জন। শহদি হয় এবং বেশ কয়েক জন আহত হয়। কামালপুর সংঘর্ষ কামালপুর নামক স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর ২টি কোম্পানি অত্যন্ত সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যুই তৈরি করে অবস্থান করছিল।
মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর এই অবস্থান আক্রমণ করার জন্য যৌথভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-মুক্তিবাহিনীর তিন কোম্পানি এবং মিত্রবাহিনীর দুই কোম্পানি আক্রমণে অংশগ্রহণ করবে। সেক্টর কমান্ডার মেজর তাহেরের নির্দেশে ক্যাপ্টেন মান্নান, লে. মিজান এবং এফ, এফ, সাঈদের নের্তৃত্বে তিন কোম্পানি মুক্তিবাহিনী ১৪ই নভেম্বর রাত ১২টার মধ্যে আক্রমণ স্থান এফ, ইউ, পি-তে পৌছে যায়। মেজর তাহের নিজে সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকলেন। তার সাথে ছিল ১০ জন মুক্তিযােদ্ধার এক সেকশন। মেজর তাহেরের সংকেতে ১৫ই নভেম্বর ভোের সাড়ে চার ঘটিকায় মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানিদের উপর হিংস্র ব্যাঘ্রের মতাে ঝাপিয়ে পড়ে। অল্প সময়ের ব্যবধানেই অগ্রবর্তী পজিশনের প্রায় এক কোম্পানি পাকিস্তানি সেনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। উভয়পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। ভাের ৭টার মধ্যে মেজর তাহের মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে নয়াপাড়ার শেষ প্রান্তে পৌছুলেন। কামালপুর ছেড়ে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হঠতে শুরু করল। শত্রু বাহিনী অনেক পেছনে থেকে প্রবল আর্টিলারি শেলিং করছিল। কামালপুর প্রায় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। এমন সময় হঠাৎ একটি পাকিস্তানি আর্টিলারি শেল মেজর তাহেরের বাম পায়ের উপর পড়ে। মেজর তাহের চিৎকার করে পড়ে যান, কমান্ডার আহত হওয়ার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিবাহিনীর মনােবল ভেঙে পড়ে যার প্রেক্ষিতে মেজর তাহেরের আহতাবস্থায় ‘আগে বাড়াে’ বলা সত্ত্বেও আর আগে বাড়া হলাে না। মেজর তাহেরকে পিছনে সরিয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনীও পেছনে সরে যায়। ব্যর্থ হয় কামালপুর আক্রমণ। নভেম্বরের ২০/২১ তারিখ মুক্তিবাহিনী নলিতাবাড়ি থানা আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। সংঘর্ষে বেশ কিছু পাকিস্তানি পুলিশ, বাঙালি রাজাকার ও আলবদর সদস্য নিহত হয়। নলিতাবাড়ি দখলের মধ্য দিয়ে একমাত্র হালুয়াঘাট ছাড়া শেরপুর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ। সীমান্ত এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

সূত্রঃ  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!