You dont have javascript enabled! Please enable it!
২ নম্বর সেক্টর
এই সেক্টরের অধীন লাতুমুরা নামক স্থানে মেজর আইনউদ্দিন তার ৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের উপর তীব্র আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা করেও লাতুমুরায় টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। তবে এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর চরম ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। ৩ জন অফিসার ও ৪০ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ এবং ৬০ জন আহত হয়। সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল খালেদ মােশাররফ ক্যাপ্টেন জাফর ইমামকে ডেকে বিলােনিয়া থেকে ফেণী স্টেশন পর্যন্ত সব শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করার দায়িত্ব তাকে প্রদান করেন। নির্দেশানুযায়ী ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম ১০ম বেঙ্গলের ১টি কোম্পানি ও ক্যাপ্টেন মাের্শেদ ২য় বেঙ্গলের ১টি কোম্পানি নিয়ে ৮ই নভেম্বর বিলােনিয়া ও পরশুরামের পাকিস্তানি অবস্থান আক্রমণ করেন। এই আক্রমণ সম্পর্কে জাফর ইমাম সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তার প্রবন্ধে লিখেছেন : “পরশুরাম ও বিলােনিয়ার পকেট থেকে শত্রুদের হটানাের ব্যাপারে মিত্র বাহিনীর জেনারেল হীরা আমায় এক রকম চ্যালেঞ্জ করলেন। আমি দৃঢ়ভাবেই সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। আত্মপ্রত্যয় নিয়ে সামরিক কৌশলের অন্যতম কৌশল হিসেবে গােপন অনুপ্রবেশ দ্বারা শত্রুদের গােপনে অবরােধ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিটে আমাদের অনুপ্রবেশের কাজ শুরু করলাম।
আমরা এমন একটা এলাকা ঘেরাও করার অভিযানে নেমেছি যার তিনটি দিকই ছিল ভারত সীমান্ত দ্বারা বেষ্টিত। আমরা তাই ভারতের এক প্রান্তের সীমান্ত থেকে পরশুরাম ও চিতলিয়ার মাঝ দিয়ে অগ্রসর হয়ে ভারত সীমান্তের অপর প্রান্ত পর্যন্ত অবরােধ করার সিদ্ধান্ত নিলাম । অবরােধের কাজ শুরু হল। অন্ধকার রাতে মুহুরী নদী ও ছিলনিয়া নদীর কোথাও বুক পানি কোথাও বা পিচ্ছিল রাস্তার বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি সবাই। আমরা আমাদের নির্ধারিত স্থানে হাজির হলাম এবং এর ফলে শত্রুদের পরশুরাম ও চিতলিয়া ঘাটির দিক থেকে যাতে কোনাে প্রকার আক্রমণ না আসতে পারে তার জন্য প্রতিরােধ গড়ে তুললাম। ভাের হলাে। আমরাও সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে গেলাম। শত্রুরা আমাদের অবরােধের মাঝে। এ সফলতার খবরটা জেনারেল হীরাকে জানাতে ইচ্ছে হল।
অয়্যারলেসে জেনারেল হারাকে জানালাম যে শত্রুদের আমরা পুরােপুরি জালে আটকিয়েছি। খবরটা শুনে জেনারেল হীরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। বিলােনিয়া থেকে রেল লাইনের সাথে সমান্তরালভাবে কাঁচা রাস্তাও চলে এসেছে ফেণী পর্যন্ত। এই রাস্তার পাশে আমাদের বেশ কিছু বাংকার গড়ে উঠছে। বাংকারে বসে সবাই সামনের চেয়ে আছি। হঠাৎ দূর থেকে একটা ট্রলির আওয়াজ অস্পষ্ট শুনতে পেলাম। শব্দটা চিতলিয়ার দিক থেকেই আসছে বলে মনে হল। রেল লাইন ও সড়কের কাছের বাংকার যারা ডিউটিতে ছিল তাদের মধ্যে নায়েব সুবেদার এয়ার আহমদ ছিল খুবই সাহসী। আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলাম একজন অফিসার ও কয়েকজন সৈন্য বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ নিয়ে এগিয়ে আসছে। ট্রলিটা একেবারে কাছে এসে গেল। নায়েব সুবেদার এয়ার আহমদ ও তার সঙ্গীদের। হাতের অস্ত্রগুলাে এক সঙ্গে গর্জে উঠলাে শত্রুরা অনেকেই পালাতে চাইল কিন্তু তা সম্ভব হতে আমরা দিলাম না। নায়েব সুবেদার এয়ার আহমদ আনন্দে বাংকার ছেড়ে উঠে দৌড়ে গেল অদূরে পড়ে থাকা শত্রুদের মৃত অফিসারটির কাছে। গােলাগুলির কথা সে যেন মুহূর্তের জন্যে ভুলে গেল। অফিসারের পকেট থেকে সে পিস্তলটি উঠিয়ে নিল, তারপর তাকে টেনে নিয়ে আসতে লাগলাে নিজ বাংকারের দিকে, ঠিক তক্ষুণি শক্রদের চিতলিয়া ঘাঁটির দিক থেকে একটি বুলেট এসে বিঁধলাে এয়ার আহমদের মাথায়। চোখের সামনেই দেখতে পেলাম ওর। শরীরটা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল। সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল। এর পরই উভয়পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হল। পাকিস্তানি বাহিনী চিতলিয়া ও পরশুরাম থেকে মুক্তি বাহিনীর অবস্থানের উপর ব্যাপকভাবে আর্টিলারি গােলাবর্ষণ। করছিল। ১০ই অক্টোবর পাকিস্তানি জঙ্গী বিমান মুক্তিবাহিনীর উপর বােমা বর্ষণ। করে। কিন্তু তাতে মুক্তিবাহিনীর কোনাে ক্ষতি হয়নি। ১১ই অক্টোবর পাকিস্তানি জঙ্গী বিমান পুনরায় হামলা শুরু করে। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানি বাহিনীর ৫৪ জন পাকিস্তানি সেনা অস্ত্রশস্ত্র ও গােলা বারুদ সহকারে মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দি হয়। এরপর মুক্তিবাহিনী চিতলিয়ার পথে অগ্রসর হলে পাকিস্তানি সেনারা চিতলিয়া ছেড়ে মুন্সিরহাটে আশ্রয় নেয়।’
বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে হঠাৎ দেখলাম তিনটি শক্রর বিমান আমাদের এলাকায় উড়ে আসছে। এসেই ওরা সে এলাকার উপর বােম্বিং করতে শুরু করল। অনেক ঘরবাড়ি পুড়ে যেতে লাগল। চারদিকে দাউ দাউ করে বাড়িঘরে আগুন জ্বলছে। ওরা বেশ নিচু হয়েই বােম্বিং করছিল। যদিও আমাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র বহু ছিল, কিন্তু বিমান বিধ্বংসী কামান আমাদের ছিল না। আমরা তাই শেষরক্ষা হিসেবে এম, এম, জি.-কে একাজে ব্যবহার করতে লাগলাম। যেহেতু ওরা জানতাে। আমাদের কোন বিমান বিধ্বংসী কামান নেই, তাই নিশ্চিত হয়ে নিচু দিয়ে বিমান। চালাচ্ছিল। সবাই অপেক্ষায় আছি কখন আমাদের এম, এম, জি-র আওতায় বিমানগুলাে আসে। এক সময় এম, এম, জি’র আওতায় এসে গেল বিমানগুলাে। মুহূর্তে গর্জে উঠলাে এম, এম, জি,। দুটি বিমান উড়ে চলে গেল ওদের সীমানায়। আর একটি ফিরে যেতে পারলাে না। শূন্যে ঘুরপাক খেয়ে ছিটকে পড়লাে মাটিতে। সব জোয়ানেরা চেঁচিয়ে উঠলাে উল্লাসে। মিত্রবাহিনীর জেনারেল হীরা অয়্যারলেসে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানালেন। সেদিন রাতে আমরামিত্রবাহিনীর সহযােগিতায় শত্রুদের বিলােনিয়া ও পরশুরাম ঘাঁটির উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালালাম। ওরা আমাদের এ হামলার মুখে বেশিক্ষণ টিকতে পারলাে না। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ওরা। শত্রুদের শতকরা ৮০ ভাগ সৈন্যই আমাদের আক্রমণে প্রাণ দিল। রাতের মধ্যেই আমরা পরশুরাম ও বিলুনিয়া দখল করতে সক্ষম হলাম । অন্যদিকে ৪র্থ বেঙ্গলের কাপ্টেন গাফফার ফুলগাজী পাকিস্তানি ঘাটির উপর প্রচণ্ড আক্রমণ করেন। অবস্থার প্রতিকূলতায় পাকিস্তানি বাহিনী ফুলগাজী থেকে সরে গিয়ে রেল স্টেশনে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে। মুক্তিবাহিনী অগ্রসর হয়ে কালিরহাট। ও পাঠাননগরে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে শত্রর উপর চাপ অব্যাহত রাখে। সােনাগাজীতে গেরিলা বাহিনীর একটি বড় দল পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিল। তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা লাকসামের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
৩ নম্বর সেক্টর
এই সেক্টরের অধীনে প্রথাগত যুদ্ধের জন্য কার্যত অক্টোবর মাসে ২য় ও ১১তম ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন নিয়ে ‘এস’ ফোর্স গঠিত হয়। কিছুদিন এস-ফোর্স ও ৩ নম্বর সেক্টর যুক্তভাবে থাকার পর ৩ নম্বর সেক্টর মেজর নূরুজ্জামানের দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যত মেজর সফিউল্লাহই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।  বিলােনিয়া ও পরশুরাম সংঘর্ষে ২ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের সাথে ‘এস’-ফোর্সের ২য় ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন মােরশেদের কমান্ডে এক কোম্পানি সৈন্যের কৃতিত্বও উল্লেখযােগ্য। তারা যুক্তভাবেই চিতলিয়া পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে শত্রুকে লাকসাম অভিমুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। মুকুন্দপুর বি ও পি মুকুন্দ রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বদিকে স্টেশন ও মুকুন্দপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। পাকিস্তানি বাহিনী এক প্লাটুন পদাতিক সৈন্য ও কিছু রাজাকার সদস্যের সমন্বয়ে এখানে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা গড়ে তােলে। সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল সফিউল্লাহ। মুকুন্দপুর বি ও পি শত্রুমুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মিত্র বাহিনীর ১৮তম রাজপুত ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এই আক্রমণ পরিচালনায় সহায়তা করেন। পরিকল্পনানুসারে ১৮তম রাজপুত ব্যাটালিয়ন উত্তরে জলিলপুরে রেললাইনের উভয় পার্শ্বে অবস্থান গ্রহণ করে। দক্ষিণে ২য় ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের অবস্থান গ্রহণ করায় রেললাইন ধরে উত্তর ও দক্ষিণে শত্রুর পালাবার পথ বন্ধ হয়ে যায় । এই আক্রমণ পরিচালনার জন্য লেফটেনেন্ট সাইদ তার কোম্পানিকে মুকুন্দপুরের দক্ষিণে এক পেয়ারা বাগানে সমবেত *রেন। সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে ৮০০ গজ দূরে যথাসম্ভব গােপনে ও সতর্কতার সাথে সময় কাজ সম্পন্ন হয়। পরিকল্পনা মােতাবেক আক্রমণের পূর্বে মুক্তিযােদ্ধাদের গােলন্দাজ আর সাপাের্ট প্রদান করে। ফায়ার সাপাের্টের আড়ালে লে. সাইদের বাহিনী ৯ নভেম্বর ভােরে পাকিস্তানি ঘাঁটি মুকুন্দপুর বি ও পি আক্রমণ শুরু করেন।
পাকিস্তানি ২ন তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে ব্যাপকভাবে গােলাবর্ষণ করে এই হামলা রকভাবে প্রতিহত করে। অদূরবর্তী পাকিস্তানি অবস্থান থেকে মুক্তিবাহিনী দ্বারা ও মুকুন্দপুরে সৈন্য প্রেরণের চেষ্টা করা হয় কিন্তু উত্তরে ১৮ তম রাজপুত ও ফলে ২য় ইস্ট বেঙ্গলের অবস্থানের জন্য সে চেষ্টা সফল হয়নি। সারাদিন তুমুল যুদ্ধ চলে। মুকুন্দপুর শত্রুমুক্ত হয় । ৪ নম্বর সেক্টর মেজর সি, আর, দত্তের কমান্ডে ৪নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণাত্মক অভিযান অব্যাহত রাখে। এই সেক্টরে নভেম্বর মাসের অন্যান্য ছােট খাট সংঘর্ষের মধ্যে ১০ই নভেম্বর আটগ্রামে এক বড় রকমের সংঘর্ষ হয় যার বিশদ বিবরণ দেয়া প্রয়ােজন। আটগ্রাম ঘেরাও আটগ্রাম জকীগঞ্জের নিকট ভারত সীমান্তের অদূরে মজবুত পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান। এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়মিত সৈন্যের একটি কোম্পানি, খাইবার স্কাউটস্ এর একটি কোম্পানি এবং এক কোম্পানি রাজাকার অবস্থান করছিল। এই অবস্থান থেকে পাকিস্তানি সেনারা রাতের অন্ধকারে ভারত সীমান্ত পার হয়ে ভারতীয় রেল লাইনের উপর মাইন পুঁতে রাখতাে যার ফলে বেশ কিছু রেলগাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাছাড়াও ভৌগােলিক দিক থেকে আটগ্রাম ও জীগঞ্জের গুরুত্ব ছিল খুব বেশি। এই দ্বিবিধ কারণে সেক্টর কমান্ডার মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত আটগ্রামকে হানাদারমুক্ত করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুসারে তিনি লে. জহিরের নের্তৃত্বে দু’কোম্পানি মুক্তিযােদ্ধা পাঠিয়ে দিলেন।
সুরমা নদী অতিক্রম করে শক্রর অগ্রবর্তী ঘাটি পাশে রেখে কিন্তু মূল ঘাটিকে সামনে রেখে রাস্তায় দু’পাশে অবস্থান নিতে লে. জহিরকে বলা হল। নদী অতিক্রম করে লে, জহির তার বাহিনী নিয়ে যথারীতি অবস্থান গ্রহণ করে। লে. গিয়াসের অধীনে এক কোম্পানি সৈন্য দেওয়া হলাে আটগ্রাম-জকীগঞ্জ সড়ককে মুক্ত রাখার জন্য। ক্যাপ্টেন আবদুর রবের নের্তৃত্বে এক কোম্পানি সৈন্য গােটা গ্রামে মােতায়েন করা হয়। ক্যাপ্টেন আবদুর রব গােটগ্রাম রাজাকারদের ক্যাম্পে তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে মুক্তিবাহিনী দ্বারা দ্রুত রাস্তার দু’পাশে প্রতিরক্ষা গড়ে তােলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনাকে আসতে দেখা যায়। তারা চিৎকার করে মুক্তিবাহিনীকে গালি দিতে দিতে অগ্রসর হচ্ছিল। কাছেই মুক্তিবাহিনীর অবস্থান তারা বুঝতে পারেনি। ক্যাপ্টেন আবদুর রব তার সৈন্যদের নিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করছিলেন। রেঞ্জের মধ্যে আসার সাথে সাথেই তিনি ফায়ারের আদেশ দিলেন। তখন মুক্তিবাহিনীর সব রাইফেল ও গানগুলি একত্রে গর্জে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা ছিল খােলা জায়গায় ।
কাজেই প্রথম ধাক্কায়ই বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনা ধরাশায়ী হয়। ক্যাপ্টেন এ, রবের নিজস্ব ভাষায় বলতে গেলে :”They were shouting and saying MUJIBKA BACHA HATIAR CHOR DAO. AGAR NA TO KUI ZINDA WAPAS NAHI ZAOGE. They were advancing from both sides of the road. They were about a platoon strength. When they came within hundred yards. I ordered to 4 LMGs, two on each side of the road. to open fire. They got a shock of their lives. Within seconds 18 of them fall on the ground and the rest of them took shelter of a nallah and fled away.” (তারা চিৎকার করে বলছিল, ‘মুজিবকা বাচ্চা, হাতিয়ার ছােড় দো। আগার না তাে কোয়ি জিন্দা ওয়াপস্ নাহি যাওগে।” তারা রাস্তার দু’পাশ দিয়েই অগ্রসর হচ্ছিল, সংখ্যায় ছিল প্রায় এক প্লাটুন। ১০০ গজের মধ্যে, আসতেই আমি রাস্তার প্রত্যেক পাশে স্থাপিত ২টা করে মােট ৪টা এল এম জি থেকে গুলি খুলবার আদেশ দিলাম। জীবনে তারা এক বিরাট হোঁচট খেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাদের ১৮ জন ধরাশায়ী হল। অবশিষ্টরা একটা নালার আড়ালে আশ্রয় নিয়ে পালিয়ে গেল। আটগ্রাম আক্রমণের সার্বিক সংঘর্ষে ৪০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি নিহত, ১১ জন রাজাকার বন্দি এবং বেশ কিছু আহত হয়। অপরপক্ষে মুক্তিবাহিনীর ২জন শহীদ ও ৫ জন আহত হয়। এই সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত ভারতের ৯৯তম মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন এবং ১ম ইস্ট বেঙ্গলও জড়িয়ে পড়ে। নভেম্বরের ২০/২১ রাতে জীগঞ্জ ও আটগ্রাম। হানাদারমুক্ত হয় । ২১শের রাতেই ক্যাপ্টেন আবদুর রব সালামটিলা ও লে, জহির রাজাটিলা আক্রমণ করেন। ২২ তারিখের মধ্যে উভয় স্থানই মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে। আসে। এখানে পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে প্রচুর গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
————
* সাক্ষাৎকার : কর্নেল এ, বি কমান্ডার এ, এস, সি, স্কুল।

সূত্রঃ  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!