You dont have javascript enabled! Please enable it! শাহবাজপুর (লাতু) রেল স্টেশন আক্রমণ - সংগ্রামের নোটবুক
শাহবাজপুর (লাতু) রেল স্টেশন আক্রমণ
শাহবাজপুর স্টেশনটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩২তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি, এক প্লাটুন স্কাউট এবং বেশ কিছু সংখ্যক সশস্ত্র রাজাকার শাহবাজপুরের প্রতিরক্ষায় নিয়ােজিত ছিল। ক্যাপ্টেন আবদুর রব পাকিস্তানিদের এই ঘাঁটি আক্রমণের পরিকল্পনা নিলেন। পরিকল্পনা ছিল : একটি কোম্পানি বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কে অবস্থান গ্রহণ করে শাহবাজপুর থেকে পাকিস্তানিদের পিছু হটবার সম্ভাবনা এবং বিয়ানীবাজার থেকে তাদের সাহায্যের সকল পথ রুদ্ধ করবে। এ’ কোম্পানিরই একটি প্লাটুন শত্রুঘাটির উপর আঘাত হানবে এবং ৫ মিনিট গােলাবর্ষণের পরই তিনটি কোম্পানি একযােগে সম্মুখভাগ আক্রমণ করবে। ক্যাপ্টেন আবদুর রব তার সামগ্রিক পরিকল্পনাটি কমান্ডার মেজর চিত্তরঞ্জন দত্তকে দিয়ে অনুমােদন করিয়ে নেন। পরিকল্পনানুযায়ী যথাস্থানে ট্রপস পােস্টিং করা হল। ১০ই আগষ্ট ভাের ৫টার মধ্যেই ক্যাপ্টেন আবদুর রবের নের্তৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ৫টি কোম্পানি যথাস্থানে পজিশন নেয়ার পরপরই তিনি গােলা বর্ষণের আদেশ দেন, শুরু হল আক্রমণ। আক্রমণের ১৫ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটবার চেষ্টা করে। সকাল ৭টার মধ্যেই শাহবাজপুর রেলস্টেশনের অধিকাংশ এলাকা ক্যাপ্টেন আবদুর রবের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। হঠাৎ দেখা গেল মুক্তিবাহিনীর উপর পাকিস্তানি আর্টিলারি ফায়ার আসতে থাকে। অথচ পরিকল্পনানুসারে পাকিস্তানির কোনাে আক্রমণে আসা সম্ভব ছিল না। পরে জানা যায় যে কোম্পানিটি বড়লেখা এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল তারা পাকিস্তানিদের গতিপথ রুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানি গােলাবৃষ্টির মধ্যে মুক্তিবাহিনী বিপর্যস্ত অবস্থায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। রণাঙ্গনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন আবদুর রব সেক্টর কমান্ডারের কাছে থেকে পরামর্শ। চাইলেন। সেক্টর কমান্ডার মেজর দত্ত তাকে অবস্থার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেবার পরামর্শ দেন। ক্যাপ্টেন আবদুর রব তার বাহিনী নিয়ে টিকে থাকবার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ। হলেন। বাধ্য হয়ে তিনি তার বাহিনী নিয়ে পিছনে সরে এলেন এই সংঘর্ষে পাকিস্তানিদের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হলেও ৬জন বীর মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হয় এবং ৫ জন আহত হয়। শহীদদের মধ্যে বিশেষ করে খেলাধূরার জগতে অত্যন্ত সুপরিচিত নাম ই, পি, আর বাহিনীর হাবিলদার কুতুব, নায়েক মান্নান ও মুজাহিদ হাবিলদার মােহাম্মদ ফয়েজের নাম উল্লেখযােগ্য।
এদিকে ১৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানিদের দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য একই সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান বিয়ানীবাজার, বড়লেখা এবং জকীগঞ্জ ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে। পাকিস্তানিদের সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য মুক্তিবাহিনী প্রস্তুত থাকায় পাকিস্তানি সেনারা যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছনে সরে যেতে বাধ্য হয়। তবে  মুক্তিযােদ্ধাদের ৭ জন শহীদ ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। | অক্টোবর মাসের প্রথম ভাগে ‘জেড-ফোর্সের দু’টি ব্যাটালিয়ন ১ম ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল এই সেক্টরে যােগ দেওয়ায় সেক্টরের শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই দুই ব্যাটালিয়নের ব্যাপক তৎপরতা পাকিস্তানিদের ভীষণভাবে পর্যদস্ত করে ফেলে। দক্ষিণগুলে ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে ৮ম বেঙ্গলের কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য জনগণ। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এই সংঘর্ষে ৮ম বেঙ্গল ১০৫ মি. মি. গান সাফল্যের সাথে। ব্যবহার করে। ক্যাপ্টেন মুসলিম বড়ছড়া সাব-সেক্টরের দায়িত্ব নেবার পূর্বে ৮ই আগস্ট জামালগঞ্জের সাচনায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক বড় রকমের সংঘর্ষ হয়। সিরাজুল ইসলাম নামে এক সাহসী মুক্তিযােদ্ধা মাত্র এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ তীক্ষ্মভাবে পরিচালনা করেন কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর প্রবল প্রতি-আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযান ব্যহত হয়। কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম তার সাপীদের আক্রমণ অব্যাহত রাখার উপদেশ দিয়ে নিজে কয়েকটি গ্রেনেড নিয়ে। ক্রলিং করে শক্রর বাংকারের দিকে এগিয়ে যায়। বাংকারের মুখােমুখি এসে সিরাজ বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করেন যার ফলে শত্রুদের দু’টি বাংকার বিধ্বস্ত হয়। জয়ের নেশায় সিরাজুল ইসলাম আরেকটি বাংকারে পৌছে গ্রেনেড চার্জ করার পূর্ব মুহূর্তেই এল, এম, জির ব্রাশ ফায়ারে তার দেহ বিদীর্ণ হয়। সিরাজুল ইসলামসহ ৬ জন মুক্তিযােদ্ধা এই সংগর্মে শহীদ হয়।

সূত্রঃ  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী