বেসরকারি বাহিনীর গঠন ও কার্যক্রম
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরকারিভাবে গঠিত নিয়মিত বাহিনী ও গণবাহিনী ছাড়াও বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব ছাড়াই কিছু অনিয়মিত বাহিনী স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে গড়ে ওঠে। বাংলার স্বাধীনতা অর্জনে সে সব বাহিনীর অবদান ছিল অপরিসীম। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের উল্লেখ না থাকলে। সেই ইতিহাস অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। তাই নিতান্ত সঙ্গত কারণেই সেসব বাহিনীর গঠন ও কার্যাবলী পাঠকের সামনে যথাসম্ভব উপস্থাপিত করার প্রয়াস। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ।
১. টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী
এই বাহিনী গড়ে ওঠে টাঙ্গাইলের আবদুল কাদের সিদ্দিকী নামে একজন বেসামরিক ব্যক্তির উদ্যোগ, কর্তৃত্ব ও নের্তৃত্বে। তারই নামানুসারে এই বাহিনী কাদেরিয়া বাহিনী’ পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে টেরর’ হিসাবে গণ্য হতাে এবং যুদ্ধের কৃতিত্বের উপহার স্বরূপ কাদের সিদ্দিকী বাঘা সিদ্দিকী’ নামে বিখ্যাত হয়ে যায়। একজন বেসামরিক ব্যক্তি হয়েও বাঘা সিদ্দিকী কেমন করে ১৬ হাজারেরও উর্ধে গেরিলা যােদ্ধা তৈরি করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধ করে টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত রাখতে সমর্থ হন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ইতিহাসে তার দান স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
কাদেরিয়া বাহিনীর সদর দফতরসহ মুক্ত এলাকা ছিল উত্তরে মধুপুর এলাকায় ময়মনসিংহ সড়কের দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ কালিয়াকৈর এর উত্তর পর্যন্ত ৫০ মাইল জঙ্গল এলাকা, পূর্বে ভালুকা, শ্রীপুর ও গফরগাঁও এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইল মধুপুর সড়ক পর্যন্ত ৩০ মাইল। এই ১৫০০ বর্গমাইল এলাকা পুরাে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস কাদেরিয়া বাহিনীর করায়ত্ত ও নিরাপদ ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে কখনাে প্রবেশ করতে পারেনি। এই বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষার জন্য বাঘা সিদ্দিকী তার বাহিনীকে নিম্নরূপভাবে বিন্যস্ত করেছিলেন : ১. ১নং কোম্পানি, স্থান : দেওপাড়া, অধিনায়ক ছিলেন লােকমান হােসেন। ২, ১নং (ক) কোম্পানি, স্থান ; রাঙ্গামাটি, অধিনায়ক ছিলেন আবদুল হাকিম। ৩, ২নং কোম্পানি, স্থান ; মরিচা, অধিনায়ক ছিলেন নবী নওয়াজ খান। ৪, ৩নং কোম্পানি স্থান : পাথরঘাটা, অধিনায়ক ছিলেন মতিউর রহমান। ৫. ৪নং কোম্পানি, স্থান। : বহেয়া, অধিনায়ক ছিলেন ফজলুর রহমান,
তার সহযােগী ছিলেন গােলাম মােস্তফা।
সূত্রঃ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী