You dont have javascript enabled! Please enable it!
চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া
নিজ শক্তি ও শত্রু শক্তির পরিসংখ্যান ই.পি, আর ৩নং সেক্টর যশােরের অধীন ছিল ২টি উইং-৪নং উইং চুয়াডাঙ্গায় এবং ৫নং উইং ছিল খুলনায় । ৪নং উইং-এর অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি মেজর মাে. আবু ওসমান চৌধুরী (বর্তমান গ্রন্থের লেখক)। তিনি পাকিস্তান থেকে এসে ২৫শে ফেব্রুয়ারি। ১৯৭১-এ উইং-এর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তার অধীনে ২জন সহকারী অধিনায়ক ছিলেন। তন্মধ্যে একজন বাঙালি ক্যাপ্টেন এ, আর, আজম চৌধুরী, অপরজন অবাঙালি ক্যাপ্টেন সাদেক হােসেন। উইং-এর অধীনে ছিল ৫টি কোম্পানি, একটি সাপাের্ট প্লাটুন ও একটি সিগন্যাল পাটুন। কোম্পানি ও প্লাটুনগুলির অবস্থান ছিল নিম্নরূপ : | ১. প্রাগপুর এলাকায় ‘এ’ কোম্পানি, অধিনায়ক বাঙালি সুবেদার মােজাফফরআহমদ, ২. ধােপাখালী এলাকায় ‘বি’ কোম্পানি, অধিনায়ক বাঙালি সুবেদার খায়রুল বাশার খান, ৩. বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) ‘সি’ কোম্পানি, অধিনায়ক বাঙালি সুবেদার মুকিদ, ৪. যাদবপুর এলাকায় ‘ডি’ কোম্পানি, অধিনায়ক বাঙালি সুবেদার আবদুল মজিদ মােল্লা, ৫. উইং সদর চুয়াডাঙ্গায় ‘ই’ কোম্পানি নিয়ে অবস্থান করছিলেন সুবেদার (বাঙালি) আবদুর রাজ্জাক, ৬. উইং সদরে সিগন্যাল প্লাটুন, অধিনায়ক বাঙালি হাবিলদার মােসলেম উদ্দিন এবং ৭. উইং সদরে সাপাের্ট প্লাটুন, অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি সুবেদার পি, কে,
ইব্রাহীম। আধাসামরিক বাহিনী হলেও প্রত্যেকটি কোম্পানিই ছিল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। প্রতি কোম্পানিতে ৩টি করে লিরেট (হালকা ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামান), ৭টি হালকা মেশিন গান, ১টি মাঝারি মেশিন গান এবং বাকী সবই ৩০৩ রাইফেল। পর্যাপ্ত পরিমাণে গােলাবারুদও মজুদ ছিল । এক কোম্পানি শক্তি ছাড়াও উইং সদর সাপাের্ট প্লাটুনের কাছে ৬টি ও মর্টার ছিল। তাছাড়া ছিল ৩০৩ রাইফেলের বদলি হিসাবে আগত ২০০ স্বয়ংক্রিয় চায়নিজ রাইফেল, কিন্তু সেই সঙ্গে চায়নিজ রাইফেলের এ্যমুনিশন আসেনি। প্রতিকূল অবস্থায় সময়ের স্বল্পতার জন্য ৩০৩ রাইফেলগুলাে জমা করা সম্ভব হয়নি। বলা প্রয়ােজন, চায়নিজ রাইফেলের সাথে গুলি না আসলেও কুষ্টিয়া বিজয়ের পর বহু চায়নিজ গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল যা দিয়ে যুদ্ধের পুরাে নয় মাস রাইফেলগুলাে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছিল। মােদ্দাকথায়, একটি ব্যাটালিয়ন হিসাবে ‘মুভ’ করার মতাে অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ ও যানবাহন ৪নং উইং-এর ছিল।
ওদিকে ৪নং উইং-এর সদর চুয়াডাঙ্গায় কোনও পাকিস্তানি বাহিনী না থাকলেও সদরে ই,পি, আর বাহিনীর প্রায় এক প্লাটুনের মতাে অবাঙালি সৈন্য ছিল। তাছাড়া উইং সুবেদার মেজরও ছিলেন অবাঙালি। জেলা সদর কুষ্টিয়া শহরকে ২৫শে মার্চ রাতেই যশাের সেনানিবাস থেকে ২৭তম বেলুচ রেজিমেন্টের অফিসারসহ ২০০’র বেশী সৈন্য এসে বিনা বাধায় দখল করে সেখানে ৩০ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারী করে রাখে। পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন মেজর শােয়েব এবং বাকী অফিসারগণ ছিলেন ক্যাপ্টেন সামাদ, ক্যাপ্টেন শাকিল ও লেফটেনেন্ট আতাউল্লাহ শাহ। এই বাহিনীর ছিল জিপারােহি ১০৬ মি. মি. আর, আর (ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামান), চায়নিজ। ভারী, মাঝারি ও হালকা মেশিন গান, সাব মেশিন গান ও স্বয়ংক্রিয় চায়নিজ রাইফেল এবং প্রচুর পরিমাণ গােলাবারুদ, যানবাহন ও শক্তিশালী বেতার যন্ত্র। এদিকে ২৫শে মার্চ বিকেলে যশাের থেকে ই.পি, আর সেক্টর সদরের উপঅধিনায়ক অবাঙালি মেজর সরদার আবদুল কাদের একটি জিপ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা এসে উইং অধিনায়ক মেজর ওসমান ও সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আযম চৌধুরীকে বিশেষ জরুরী বৈঠকের অজুহাতে যশাের নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে ক্যাপ্টেন আযম উইং-সদরে উপস্থিত ছিলেন না এবং মেজর ওসমান ছিলেন কুষ্টিয়াতে। তাই সরদার আবদুল কাদের উইং-এর অবাঙালি সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন সাদেক ও তার পরিবারকে নিয়ে ২৬শে মার্চ ভাের ৫ ঘটিকায় যশােরের পথে রওয়ানা হয়ে যান।
উইং অধিনায়কের কুষ্টিয়া গমন ও চুয়াডাঙ্গা প্রত্যাবর্তন
চুয়াডাঙ্গার ৪নং উইং অধিনায়ক মেজর ওসমান ২৪শে মার্চ সকালে সশস্ত্র ই.পি. আর প্রহরী নিয়ে সপরিবারে অফিসের কাজে কুষ্টিয়া চলে যান। ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে তিনি কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসেই অবস্থান করছিলেন। ২৬শে মার্চ ভাের বেলা পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের জীপে সড়ক টহল দিতে ও সান্ধ্য আইন ঘােষণা করতে দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সাথে যােগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু দেখা গেল টেলিফোন বিকল। বুঝতে পারলেন যে সব টেলিফোন লাইন বিকল করে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা সার্কিট হাউসের পেছনেই কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে তাদের
—————-
* সাক্ষাৎকার : ক্যাপ্টেন এ, আর, আযম চৌধুরী।
স্বয়ংক্রিয় চায়নিজ রাইফেল, কিন্তু সেই সঙ্গে চায়নিজ রাইফেলের এ্যমুনিশন আসেনি। প্রতিকূল অবস্থায় সময়ের স্বল্পতার জন্য ৩০৩ রাইফেলগুলাে জমা করা সম্ভব হয়নি। বলা প্রয়ােজন, চায়নিজ রাইফেলের সাথে গুলি না আসলেও কুষ্টিয়া বিজয়ের পর বহু চায়নিজ গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল যা দিয়ে যুদ্ধের পুরাে নয় মাস রাইফেলগুলাে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছিল। মােদ্দাকথায়, একটি ব্যাটালিয়ন হিসাবে ‘মুভ’ করার মতাে অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ ও যানবাহন ৪নং উইং-এর ছিল।
ওদিকে ৪নং উইং-এর সদর চুয়াডাঙ্গায় কোনও পাকিস্তানি বাহিনী না থাকলেও সদরে ই,পি, আর বাহিনীর প্রায় এক প্লাটুনের মতাে অবাঙালি সৈন্য ছিল। তাছাড়া উইং সুবেদার মেজরও ছিলেন অবাঙালি। জেলা সদর কুষ্টিয়া শহরকে ২৫শে মার্চ রাতেই যশাের সেনানিবাস থেকে ২৭তম বেলুচ রেজিমেন্টের অফিসারসহ ২০০’র বেশী সৈন্য এসে বিনা বাধায় দখল করে সেখানে ৩০ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারী করে রাখে। পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন মেজর শােয়েব এবং বাকী অফিসারগণ ছিলেন ক্যাপ্টেন সামাদ, ক্যাপ্টেন শাকিল ও লেফটেনেন্ট আতাউল্লাহ শাহ। এই বাহিনীর ছিল জিপারােহি ১০৬ মি. মি. আর, আর (ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামান), চায়নিজ। ভারী, মাঝারি ও হালকা মেশিন গান, সাব মেশিন গান ও স্বয়ংক্রিয় চায়নিজ রাইফেল এবং প্রচুর পরিমাণ গােলাবারুদ, যানবাহন ও শক্তিশালী বেতার যন্ত্র।  এদিকে ২৫শে মার্চ বিকেলে যশাের থেকে ই.পি, আর সেক্টর সদরের উপঅধিনায়ক অবাঙালি মেজর সরদার আবদুল কাদের একটি জিপ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা এসে উইং অধিনায়ক মেজর ওসমান ও সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আযম চৌধুরীকে বিশেষ জরুরী বৈঠকের অজুহাতে যশাের নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে ক্যাপ্টেন আযম উইং-সদরে উপস্থিত ছিলেন না এবং মেজর ওসমান ছিলেন কুষ্টিয়াতে। তাই সরদার আবদুল কাদের উইং-এর অবাঙালি সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন সাদেক ও তার পরিবারকে নিয়ে ২৬শে মার্চ ভাের ৫ ঘটিকায় যশােরের পথে রওয়ানা হয়ে যান।
উইং অধিনায়কের কুষ্টিয়া গমন ও চুয়াডাঙ্গা প্রত্যাবর্তন
চুয়াডাঙ্গার ৪নং উইং অধিনায়ক মেজর ওসমান ২৪শে মার্চ সকালে সশস্ত্র ই.পি. আর প্রহরী নিয়ে সপরিবারে অফিসের কাজে কুষ্টিয়া চলে যান। ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে তিনি কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসেই অবস্থান করছিলেন। ২৬শে মার্চ ভাের বেলা পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের জীপে সড়ক টহল দিতে ও সান্ধ্য আইন ঘােষণা করতে দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সাথে যােগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু দেখা গেল টেলিফোন বিকল। বুঝতে পারলেন যে সব টেলিফোন লাইন বিকল করে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা সার্কিট হাউসের পেছনেই কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে তাদের
—————-
* সাক্ষাৎকার : ক্যাপ্টেন এ, আর, আযম চৌধুরী।
আনসার ও সামরিক-বেসামরিক সর্বস্তরের কর্মচারীদের এক রুদ্ধদ্ধার বৈঠক ডাকলেন। ঐ বৈঠকে ঢাকার পরিস্থিতি, বর্তমানে করণীয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত আলােচনা করেন। বৈঠকে প্রত্যেকেই পাকিস্তানি হামলার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়াবার ও ই.পি, আর বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবার দৃঢ় শপথ গ্রহণ করে। এ সময় এগিয়ে এলেন রাজা মিয়া, অধ্যক্ষ ফুলে হােসেন, ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জনাব গোলাম রসুল, প্রকৌশলী জনাব সফিউদ্দিন, ছাত্রনেতা সিদ্দিক জামাল নান্টু (বর্তমানে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব) প্রমুখ। সভায় মেজর ওসমানকে সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান বলে ঘােষণা করা হয়। সভাশেষে বাইরে অপেক্ষমান উত্তাল জনসমুদ্রের প্রলয়ঙ্করী হুঙ্কারে মেজর ওসমানের বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি যে তার মূলধন শুধু ই.পি, আর বাহিনী ও তাদের ৩০৩ রাইফেলই নয়। তার আছে সেই চরম ও চূড়ান্ত (Decisive) হাতিয়ার যা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নেই তথা বাংলার স্বাধীনতাকামী আপামর জনসাধারণ। সেই উদ্বেলিত জনসমুদ্র নিয়ে বেলা আড়াইটায় মেজর ওসমান ই.পি, আর উইং-এর কোয়ার্টার গার্ডে নিজ হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ঘােষণা করেন, “স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে মেনে নিয়ে আমরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করলাম।” সমবেত জনসমুদ্রের জয়বাংলা ধ্বনিতে শহর প্রকম্পিত হয় । ই.পি. আর কোয়ার্টার গার্ডের সৈনিকরা পতাকাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সামরিক অভিবাদন জানায়। পদ্মা-মেঘনার পশ্চিম পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ‘দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গন’ নামকরণ করে মেজর ওসমান মনােনয়নক্রমেই রণাঙ্গনের একচ্ছত্র অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এটাও ঐতিহাসিক সত্য যে সেদিন মেজর ওসমান তার মুষ্টিমেয় ই.পি. আর বাহিনী নিয়ে সারাদেশ থেকে যােগাযােগবিহীন অবস্থায় সম্পূর্ণ একক দায়িত্বেই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। সে দিনটি ছিল ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সন।
সংঘর্ষের সূত্রপাত ও কুষ্টিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা
যথাবিহিত প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা ও ব্যারিকেড স্থাপনের পর সেদিনই উইং সদর থেকে সীমান্তবর্তী সব বি, ও. পি ও কোম্পানিগুলােকে প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলা হয়। কোম্পানি অধিনায়কদের সাথে মেজর ওসমান নিজেই। বেতার মারফত কথা বলেন। পরদিন ২৭শে মার্চ। যশাের সেক্টরের উপ-অধিনায়ক মেজর সরদার আব্দুল কাদের ধরে নিয়েছিলেন যে ২৬শে মার্চ ভাের পর্যন্ত যখন মেজর ওসমান চুয়াডাঙ্গাতে ফিরে আসেনি, তখন নিশ্চয়ই সে কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছে এবং তাহালে তার অধীন সীমান্তবতী পুরাে বাহিনীই দেশের। পরিস্থিতি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং কোনও প্রকার ঘটনার জন্য অপ্রস্তুত। সম্ভবত : এ ধারণার বশবর্তী হয়েই সেক্টর সদর যশাের থেকে ক্যাপ্টেন সাদেককে উইং-এর অধীন বি, ও, পি গুলােতে পাঠানাে হয় ই.পি. আর দের নিরস্ত্র করে বন্দি করবার উদ্দেশে। ক্যাপ্টেন সাদেকের সাথে ছিল কয়েকজন অবাঙালি সশস্ত্র প্রহরী, জিপচালক ছিল বাঙালি ল্যান্স নায়েক ওয়াহেদ। এই সংবাদ ২৭শে মার্চ সকাল ৭টায় যাদবপুরে অবস্থিত কোম্পানি অধিনায়ক সুবেদার আব্দুল মজিদ মােল্লা বেতার মারফত মেজর ওসমানকে জানালেন। মেজর ওসমান ক্যাপ্টেন সাদেকের উপর কড়া নজর রাখার। নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যাপ্টেন সাদেক সদলবলে যাদবপুর কোম্পানি সদরে পৌছুলেন। সেখানে পৌছে ক্যাপ্টেন সাদেকের সঙ্গী জনৈক অবাঙালি হাবিলদার কোম্পানি সদরে কর্তব্যরত প্রহরীর সাথে অশােভন আচরণ করলে উভয়ের মধ্যে বচসা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। গােলাগুলিতে প্রহরী সিপাই মাে, আশরাফ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে ক্যাপ্টেন সাদেক ও তার। সঙ্গীরা জিপ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাে। এ খবর সুবেদার মজিদ মােল্লা মেজর ওসমানকে অবহিত করলে তিনি তাদের জীবিত অথবা মৃত পাকড়াও করার নির্দেশ দেন। এর ফলে উভয় পক্ষের খণ্ডযুদ্ধে ক্যাপ্টেন সাদেক ও তার সঙ্গীরা ই.পি. আরদের হাতে নিহত হয়। সৌভাগ্যক্রমে জিপচালক ল্যান্স নায়েক ওয়াহেদ গােলাগুলির মধ্যেও বেঁচে যায়। কোম্পানি অধিনায়ক সুবেদার মজিদ মােল্লা বেতার মারফত মেজর ওসমানকে পুরাে ঘটনা অবহিত করলে তিনি সুবেদার মজিদকে অভয় দিয়ে সদা সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করতেও বলেন। সে সময় সামরিক ও বেসামরিক সকল পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যাদি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যােগাযােগ ইত্যাদির ব্যাপারে মেজর ওসমান একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন স্থানীয় এম, সি, এ. ডা, আসহাবুল হক জোয়ার্দার, এম, পি, এ এ্যাডভােকেট ইউনুস আলী এবং এম, পি, এ, ব্যারিস্টার বাদল রশীদ। ২৭শে মার্চের যাদবপুরের ঘটনার পর মেজর ওসমান উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলাপ আলােচনা করে প্রথমেই কুষ্টিয়া জেলা সদরকে শত্রুমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মােতাবেক জরুরি ভিত্তিতে সীমান্তে অবস্থানরত সব ই.পি, আর কোম্পানিগুলােকে চুয়াডাঙ্গা সদর দপ্তরে চলে আসার নির্দেশ দিলেন। শুধু সর্বোত্তরে অবস্থিত প্রাগপুরের কোম্পানি অধিনায়ক সুবেদার মােজাফফর আহমদকে তার। কোম্পানিসহ কুষ্টিয়ার নিকটবর্তী কোনাে এক স্থানে এসে অপেক্ষা করতে নির্দেশ দিলেন। মেজর ওসমান কুষ্টিয়া আক্রমণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।

সূত্রঃ  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!