You dont have javascript enabled! Please enable it!
দিনাজপুর
নিজ ও শক্র শক্তির পরিসংখ্যান ই.পি, আর বাহিনীর ৫নং সেক্টর সদরের অবস্থান ছিল দিনাজপুরে যা কুঠিবাড়ি নামেও পরিচিত। এই সেক্টরের অধীন ছিল ৩টি উইং। উইংগুলির অবস্থান ছিল দিনাজপুরে ৮নং উইং, ঠাকুরগাঁও-এ ৯নং উইং এবং রংপুরে ১০নং উইং। সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসার লে. কর্নেল তারেক রসুল কোরেশী এছাড়া সেক্টর উপঅধিনায়ক ও এ্যাডজুটেন্ট উভয়েই ছিলেন অবাঙালি। দিনাজপুরে অবস্থিত ৮নং উইংএর উইং অধিনায়ক ছিলেন অবাঙালি মেজর আমিন তারিক এবং সহকারী উইং। অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি ক্যাপ্টেন নজরুল হক ও ক্যাপ্টেন নাজির আহমদ। সেক্টরের মেডিকেল অফিসার মেজর মকসুল হােসেন চৌধুরীও ছিলেন বাঙালি। সেক্টর সদর দপ্তর, ৮নং উইং সদর দপ্তর, উইং এর একটি কোম্পানি ও সাপাের্ট প্লাটুন সহকারে দিনাজপুরে প্রায় ৩ শত বাঙালি সৈন্য অবস্থান করছিল। সাপাের্ট প্লাটুন ও সেক্টর সদরে ৬টি ৬-পাউডার গান, ৬টি ও মর্টার এবং ভারী মেশিন গান ও হালকা মেশিন গান ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
অপরপক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের (এফ, এফ) ২৬তম ব্যাটালিয়নের ১টি কোম্পানি সত্তরের নির্বাচনের পর থেকেই পূর্ণ সামরিক সম্ভারে সজ্জিত হয়ে দিনাজপুর সার্কিট হাউসে অবস্থান করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর সেখানে তাদের শক্তি আরাে বৃদ্ধি করা হয়। সারা বাংলাদেশব্যাপী যােগাযােগ রক্ষাকল্পে এই ব্যাটালিয়ন ই.পি, আর সেক্টর সদরেই একটি শক্তিশালী। বেতার সেট স্থাপন করে যার নিয়ন্ত্রণ ছিল সম্পূর্ণরূপে সেনাবাহিনীর লােকজনের হাতে। সেখানে ই.পি আর বাহিনীর কোনাে সদস্যেরই প্রবেশাধিকার ছিল না। ব্যাটালিয়নের অবাঙালি অফিসারগণকে প্রায়ই ই.পি, আর সেক্টর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক। রসুলের সাথে গােপন বৈঠক করতে দেখা যায় । পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ ও বাঙালিদের প্রতিরােধ ২৫শে মার্চ গভীর রাতে লে. কর্নেল তারেক রসুল দিনাজপুরে উপস্থিত অফিসার ও সিনিয়র জে, সি, ও -দের নিয়ে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে সামরিক আইন জারীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৮শে মার্চ সকালে তারেক রসুল অবাঙালি অফিসার ও জে, সি-ওদের নিয়ে আবার এক বৈঠক করেন। এই বৈঠকে কোনাে বাঙালি অফিসার বা জে, সি, ওকে ডাকা হয়নি। ফলে ই.পি. আর বাহিনীর সদস্যদের মনে পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা আক্রমণাশঙ্কা তীব্র হয় এবং বাঙালি সৈনিকগণ যে কোনাে অবস্থা মােকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকে। ঐ দিনই অপরাহ্ন ৩ ঘটিকায় সেনাবাহিনী তাদের সার্কিট হাউসের অবস্থান থেকে ই.পি, আর সেক্টর সদর কুঠিবাড়ির উপর আকস্মিকভাবে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এর সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালিরা মর্টার প্লাটুন ও মর্টার নিয়ে কাঞ্চন নদীর তীরে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে।
উভয় পক্ষে ব্যাপক গােলাগুলি শুরু হয়। খবর পেয়ে শহরে কর্তব্যরত ই.পি, আর সৈন্যদলও সদরে। ফিরে অন্যান্য বাঙালিদের সাথে যােগ দেয়। অস্ত্রাগার খুলে বাঙালিরা যাবতীয় অস্ত্র ও গােলাবারুদ বের করে কাঞ্চন নদীর তীরে প্রতিরক্ষা ব্যুহ সুদৃঢ় করে। সেখানে ৬পাউন্ডার ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামানগুলাে প্রস্তুত করে সার্কিট হাউসের উপর গােলাবর্ষণ। করতে থাকে। এই আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে সেক্টর সুবেদার মেজর আবদুর রব বাঙালিদের সাথে যােগ দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে “দি সানডে টাইমস্ লিখেছে : They dug trenches and aligned their guns on the Rifles’ barracks. As it happened, the Bengalis fired first and for 3 days a fierce battle raged, shells from both sides falling on the town and causing many casualties. Sgt. Major Rab could not command his forces because he was caught in his house between fires.* (তারা পরিখা খনন করে তাদের কামান বন্দুক রাইফেলস্ বাহিনীর ব্যারাকের দিকে তাক করে রাখে। এমতাবস্থায় বাঙালিরা প্রথম গুলি ছোঁড়ে এবং ৩দিন পর্যন্ত ঘােরতর যুদ্ধ চলতে থাকে। দুই পক্ষের গােলাগুলি শহরের উপর পড়ে বহু হতাহতের কারণ ঘটে। সার্জেন্ট মেজর (প্রকৃত পক্ষে সুবেদার মেজর) রব তার বাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে পারেনি কারণ সে দুই পক্ষের গােলাগুলির মধ্যে আটকা পড়েছিল। “দি সানডে টাইমস’ বলেছে বাঙালিরাই প্রথম পাকিস্তানিদের উপর গুলি ছোড়ে। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানিরাই প্রথম আক্রমণ করে। এই আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণের সময় কোনাে বাঙালি অফিসার উপস্থিত ছিলেন না যেহেতু তৎপূর্বেই মেজর মকসুল হােসেন। চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন নজরুল হক পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হয়ে যান। ক্যাপ্টেন নাজিরকেও একটি প্লাটুন সহকারে ঠাকুরগাঁও পাঠানাে হয়েছিল। সুবেদার মেজর রব ২৯শে মার্চ তার বাহিনীর সাথে যােগ দিতে সমর্থ হয়। যােগদানের পরই আবদুর রব। সীমান্তের ই.পি, আর কোম্পানিগুলােকে সব অবাঙালি ই.পি.আর সৈনিকদের বন্দি করে সেক্টর সদর দিনাজপুর চলে আসার নির্দেশ প্রদান করে।
————
The Sunday Times: 11 April 1971.
৮নং উইং-এর বাসুদেবপুরে অবস্থিত কোম্পানি অধিনায়ক সুবেদার এম, এ, শুকুর ২৮শে মার্চ তার বেতার সেট মারফত সারা বাংলাদেশের খবরাখবর জানতে পেরে তার অধীন অবাঙালিদের বন্দি করে ২৯শে মার্চ ফুলবাড়িতে পৌছে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করেন। একই তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী ফুলবাড়ি থানা আক্রমণের উদ্দেশে দিনাজপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সুবেদার শুকুর তার বাহিনী নিয়ে প্রস্তুতই। ছিল। পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় তাদের মারণ-সীমায় পৌছুবার সাথে সাথেই ই.পি. আর সৈনিকদের গানগুলাে গর্জে ওঠে। ভাের ৪টা পর্যন্ত গােলাগুলিতে পাকিস্তানি বাহিনী গাড়ি, গােলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্র ও কিছু রসদপত্র ফেলে রেখে বিচ্ছিন্নভাবে পালিয়ে যায় । সুবেদার শুকুর একজন আহত পাকিস্তানি সেনাকেও বন্দি করেন। ৩০শে মার্চ সকাল ৭টায় পাকিস্তানি ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়নের সৈন্য সুবেদার শুকুরের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ই.পি, আর বাহিনী। পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। কিন্তু পেছনে সরে এসে বিকেল ৪টায় সুবেদার শুকুরের বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতি-আক্রমণ করলে পাকিস্তানি বাহিনী বেশ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সৈয়দপুর সেনানিবাসের দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনারা দিনাজপুর সেক্টরের উপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ইতােমধ্যেই সীমান্ত প্রহরাধীন ৮ম উইং-এর কোম্পানিগুলাে সুবেদার মজিদ, সুবেদার আমীর আলী, সুবেদার মােয়াজ্জেম, সুবেদার মােকাদ্দেস ও সুবেদার মােমিনুল হকের নের্তৃত্বে সেক্টর সদরে অন্যান্য বাঙালিদের সাথে যােগদান করে নতুন উদ্যমে আক্রমণ শুরু করে। ২৯শে মার্চ রাতে সেক্টর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক রসুল তার অন্যান্য অফিসার, ২৬ এফ এফ বাহিনী ও ই.পি, আর বাহিনী অবাঙালি সৈনিকদের সাথে নিয়ে সৈয়দপুর সেনানিবাসের দিকে চলে যাবার মুহূর্তে ফুলবাড়ি নামকস্থানে সুবেদার শুকুরের বাহিনীর সাথে এক সংঘর্ষে দারুণভাবে নাজেহাল হয়ে সেনানিবাসে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ।
এই সংঘর্ষে অবাঙালি মেজর আমিন তারেক ও মেজর সিদ্দিক নিহত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর পলায়নে ৩১শে মার্চ তারিখেই দিনাজপুর শহর শত্রুমুক্ত হয়। সেদিনই বন্দি মেজর মকবুল হােসেন চৌধুরী, ক্যাপ্টেন নজরুল ও তাদের পরিবারবর্গকে (ক্যাপ্টেন নাজিরের স্ত্রীসহ) উদ্ধার করা হয়। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক, এস, পি এবং অন্যান্য বেসামরিক অফিসারগণকেও বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করা হয়। দিনাজপুর মুক্ত হওয়ার পর সর্বস্তরের জনগণ ই.পি, আর বাহিনীর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। আনসার, পুলিশ এবং মুজাহিদরাও ই.পি, আরদের সঙ্গে যােগদান করে। ওদিকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নকে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলে কিছু বাঙালি সৈন্য পালিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাপ্টেন আশরাফ ও ক্যাপ্টেন আনােয়ার দিনাজপুরে বাঙালি ই.পি, আরদের সাথে যােগদান করেন। রংপুর ১০নং উইং-এর সুবেদার মেজর ওসমান গণি এবং ঠাকুরগাঁও ৯নং উইং- এর সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিন ও দিনাজপুর ই,পি, আরদের সাথে যোেগ দেন। ৪ঠা এপ্রিল মেজর মসুল হােসেনের নের্তৃত্বে এসব অফিসার ও জে, সি, ওদের। ভাতগাও সেতুর নিকট অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্তানুযায়ী সব বাঙালি সৈনিকদের প্রতিরক্ষায় নিম্নরূপভাবে নিয়ােজিত করা হয় ।
১. নীলফামারীতে সুবেদার মজিদের এক কোম্পানি,
২. ভূষিরবন্দর নামক স্থানে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের এক কোম্পানি ক্যাপ্টেন আশরাফের নের্তৃত্বে এবং সুবেদার হাফিজ ও হাবিলদার নাজিমের নের্তৃত্বে দুই কোম্পানি ই.পি. আর,
৩. বদরগঞ্জে সুবেদার কায়সারের নের্তৃত্বে এক কোম্পানি ই.পি. আর প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। এখানে ক্যাপ্টেন আনােয়ার তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের দুই প্লাটুন নিয়ে কায়সারের সঙ্গে মিলিত হন।
৪, নায়েব সুবেদার লুৎফুর রহমান ও হাবিলদার গােলাম কিবরিয়া এক প্লাটুন নিয়ে রাজবাড়ি-রাণীনগর কাঁচা রাস্তায় প্রতিরক্ষা নেন। ৫. সুবেদার খালেক এক কোম্পানি নিয়ে ভাতগাঁও সেতু রক্ষায় রইলেন। মুক্তিবাহিনীর বিপর্যয় ও দিনাজপুরের পতন ৬/৭ এপ্রিল নীলফামারীতে পাকিস্তানি বাহিনী সুবেদার মজিদের কোম্পানির উপর হামলা চালায়। সংঘর্ষে ৮জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হলেও মুক্তিযােদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। পরে তারা দেবীগঞ্জে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে। এই আক্রমণে মক্তিযােদ্ধাদের বেশ কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ওদিকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের এক কোম্পানি নিয়ে মেজর নিজামউদ্দিন অবস্থান। করছিল ঘোড়াঘাট নামক স্থানে। ২৬/২৭ মার্চ বগুড়া থেকে ২৩ তম ফিল্ড রেজিমেন্টের দুই ব্যাটারি সৈন্য সৈয়দপুর রওয়ানা করার সংবাদ পেয়ে মেজর নিজাম লেফটেনেন্ট।
রফিকের নেতৃত্বে এক প্লাটুন এবং লেফটেনেন্ট মুখলেসের নের্তৃত্বে এক প্লাটুন সৈন্য ঐ রাতেই পলাশবাড়ি রােড জংশনে প্রতিরক্ষা নেবার জন্য পাঠালেন। লে, রফিকের প্লাটুন যথাসময়ে পলাশবাড়িতে প্রতিরক্ষা রচনা করে কিন্তু লে, মুখলেসের প্লাটুন পলাশবাড়ি। পৌছুবার পূর্বেই পাকিস্তানি সেনারা এসে লে, রফিকের পাটুনকে আক্রমণ করে। সংঘর্ষে লে. রফিক পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হন। পরে রফিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর মেজর নিজাম অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে ফুলবাড়িতে সুবেদার শুকুরের বাহিনীর সাথে মিলিত হন। হলদিবাড়িতে এক প্লাটুনকে প্রতিরক্ষায় রেখে তিনি ৭ইএপ্রিল পার্বতীপুরের পাকিস্তানি ঘাটি আক্রমণ করেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করা যায়নি। বহু মুক্তিযােদ্ধার প্রাণের বিনিময়েও আক্রমণ দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। বিচ্ছিন্নভাবে পশ্চাদপসরণ করে মুক্তিবাহিনী হাবরা নামকস্থানে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। কিন্তু ১২ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর প্রবল আক্রমণে হাবরা থেকে মুক্তিবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বদরগঞ্জের প্রতিরক্ষায় ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনােয়ার তার ইন্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্য, ই,পি, আর বাহিনী, কিছু আনসার ও মুজাহিদ নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও নিজ ও শত্রু শক্তির পরিসংখ্যান ই.পি.আর বাহিনীর ৯নং উইং- এর সদর দপ্তর ছিল ঠাকুরগাঁও। উইং অধিনায়ক মেজর। মােহাম্মদ হােসেন এবং সহকারী উইং অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নাবিদ আলম উভয়ই ছিলেন। অবাঙালি। উইং-এর পাঁচটি কোম্পানি ও একটি সাপাের্ট প্লাটুন ছিল। কোম্পানিগুলাের অবস্থান ছিল ‘ডি’ কোম্পানি সদর ঠাকুরগাঁও, অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি সুবেদার এম, এ, হাফিজ। সীমান্তের কোম্পানিগুলি ছিল রুহিয়া, চিলাহাটি, তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়ে।। কোম্পানি অধিনায়কদের অধিকাংশ ছিল অবাঙালি। উইং-এর সুবেদার মেজর পদে অধিষ্ঠিত ছিল প্রবীণ বাঙালি নির্ভীক সৈনিক মােহাম্মদ কাজিমউদ্দিন।
২৫শে মার্চ রাতে সহকারী উইং অধিনায়ক নাবিদ এক প্লাটুন সৈন্য সাথে নিয়ে দিনাজপুর সেক্টর অধিনায়কের বৈঠকে যােগদান করে। পরদিন ২৬শে মার্চ সে সব জেসিওদের একত্র করে সামরিক আইন জারীর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। ঠাকুরগাঁও শহরের পরিস্থিতি ও পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতা ২৬শে মার্চ সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহর হাজার হাজার জনতার উত্তাল তরঙ্গে, স্লোগানে ও মিছিলে ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত । গাছপালা কেটে ঠাকুরগাঁওকে ব্যরিকেডের শহরে পরিণত করে তারা বাঙালি ই.পি. আর কে-পথে নামার আহ্বান জানায়। শহরে সান্ধ্য আইন জারী করা হয়। কিন্তু উত্তপ্ত জনতা কোনাে বাধাই মানেনি। পাকিস্তানি বাহিনী জনতার উপর গুলি চালায়। নিহত হলাে রিকসা চালক মােহাম্মদ আলী ২৬শে মার্চের সকাল ১০ ঘটিকায়। ২৭শে মার্চ রাতে দিনাজপুর থেকে বাঙালি ক্যাপ্টেন নাজির আহম্মদ এক প্লাটুন। ই.পি, আর সৈন্য নিয়ে ঠাকুরগাঁও পৌছুল । প্লাটুনের এক সেশন সৈন্য অবাঙালি হলেও সুবেদার আতাউল হক এব অবশিষ্ট সৈনিকরা সবাই ছিল বাঙালি।  ২৭শে মার্চ শহরে জনতার উপর অবাঙালি ই.পি, আর এর গুলিতে নিহত হলাে একটি শিশু। অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। বাঙালি ইপি, আর সৈনিকরা পাকিস্তানিদের আক্রমণাশঙ্কায় ভীত হয়ে পড়ে। সেই রাতেই সুবেদার মেজর। কাজিমউদ্দিনের সভাপতিত্বে বাঙালিদের এক গােপন বৈঠকে ২৮শে মার্চ সকাল ৬টায়। পাকিস্তানিদের উপর হামলা চালানাের সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু নানাবিধ কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে। ২৮শে মার্চ উইং অধিনায়ক মেজর মােহাম্মদ হােসেন এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে ঠাকুরগাঁও দিনাজপুর রােড পরিষ্কার করার জন্য বিকেল ৪টার মধ্যে সুবদের হফিজকে পাঠিয়ে দেয়। পথিমধ্যে দিনাজপুর থেকে পলায়মান কয়েকজন বাঙালি ই,পি, আর সদস্যদের কাছ থেকে পাকিস্তানিদের দ্বারা বাঙালিদের উপর হামলার খবর জানতে পেরে হাফিজ দ্রুত উইং সদরে ফিরে এসে সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিনকে বিষয়টি অবগত করায়। তারা এও জানতে পারে যে রাত পৌণে এগারােটায় শহরের শেষ টহলদার পাটি ফিরে এলেই বাঙালিদের উপর আক্রমণ চালানাে হবে এবং সব বাঙালি জে, সি, ও-কে বন্দি করা হবে। বাঙালিদের বিদ্রোহ ও প্রতি আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বাঙালিদের উপর আসন্ন আক্রমণের খবর জানতে পেরে বাঙালি জেসিওদের এক গােপন বৈঠকে তারা বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সুবেদার, হাফিজ, সুবেদার আতাউল হক ও অন্যান্যরা সব বেরিয়ে পড়লেন এবং সব বাঙালি সৈনিককে সিদ্ধান্তকৃত এ্যাকশন-এর কথা জানিয়ে দিলেন। সুবেদার হাফিজ দ্রুত তার। কাজ সম্পন্ন করে একজন দেহরক্ষী নিয়ে স্টেন হাতে রাতের অন্ধকারে মেজর মােহাম্মদ হােসেনের বাংলাের দিকে অগ্রসর হলেন। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশ ঘটিকা। দেহরক্ষীদলের অধিনায়ক হাবিলদার জামানকে গুলি করে ধরাশায়ী করলেন। তার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালিদের সব রাইফেল গর্জে উঠে। শুরু হলাে উভয়পক্ষে গােলাগুলি। এব্যাপারে সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিন বলেন : “রাত ১০টা ১৮মিনিট, চারিদিকে অন্ধকার থমথমে ভাব। সুবেদার হাফিজের হস্তস্থিত ছােট্ট স্টেন গানটি হঠাৎ গর্জিয়া উঠিল। মেজর আর ক্যাপ্টেনের দেহরক্ষীদলের অধিনায়ক হাবিলদার মােহাম্মদ জামান বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরকালের যাত্রী হলাে তাহারই গার্ড রুমের বিছানায়।
ইশারা বুঝে পর মুহূর্তে আরও অনেক ক্ষুধার্ত হাতিয়ার এক সঙ্গে গর্জিয়া উঠল। বেশ কয়েকজন পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিক পরপারের যাত্রী হইল। আমাদের লােক স্থানে স্থানে “জয় বাংলা” ধ্বনি দিয়ে বিজয় বার্তা ঘােষণা করল।” সারারাত গােলাগুলি চলতে থাকে। এদিকে ২৯শে মার্চ ভাের বেলা দেখা গেল বাঙালি ক্যাপ্টেন নাজির আহম্মদ তার বন্ধু পাঞ্জাবি নাবিদ আলম ও তার স্ত্রীকে বাঁচাবার জন্য তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সৈয়দপুর সেনানিবাসের দিকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুদূর অগ্রসর হতেই তারা জনতার হাতে ধরা পড়ে প্রত্যেকই প্রাণ বিসর্জন দেয় । ২৯শে মার্চ সারাদিন গােলাগুলি চললাে। সর্বস্তরের জনসাধারণ ও বাঙালি ‘ই.পি, আরদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এল। ইতােমধ্যে সীমান্তের সব কোম্পানিগুলােকেও অবাঙালিদের বন্ধি করে অবিলম্বে ঠাকুরগাঁও চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হল।
————–
সাক্ষাৎকার ; মােহাম্মদ কাজিমউদ্দিন, ডি-এ -ড়ি, বিডিআর, অবসরপ্রাপ্ত
৩০শে মার্চের ভােরবেলা এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে নায়েব সুবেদার মতিউর রহমান পাকিস্তানিদের মূলঘাটি উইং সদরের তিন তলা ভবন আক্রমণ করেন। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম হলেন না। এরপর সুবেদার হাফিজ এক প্লাটুনের কিছু বেশি সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানি ঘাটি আক্রমণ করল। বেলা ৩টার মধ্যে দালানের শেষ শক্রটিও নিধন করে তিনি সম্পূর্ণ উইংটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উইং অধিনায়ক ও তার সঙ্গীরা নিহত হন। ই.পি, আর বাহিনীর সুবেদার আতাউল হক ও ল্যান্স নায়েক জয়নাল শাহাদাৎ বরণ করেন। ৩১শে মার্চ সীমান্তের বাঙালি ই.পি, আর সেনারা অবাঙালি ই.পি, আর সৈন্যদের বন্দি করে উইং সদর ঠাকুরগাঁও পৌছে গেলে সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিন নিজ হাতে সম্পূর্ণ অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পুরাে বাহিনীকে সংগঠিত করার পর নিম্নস্থান গুলােতে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করেন : ১. নায়েব সুবেদার আবদুল খালেকের নের্তৃত্বে এক কোম্পানি ই.পি. আর ও এক কোম্পানি মুজাহিদকে ভাতগাঁও পুলের নিকট,  ২. নায়েব সুবেদার বদিউজ্জামানের নের্তৃত্বে এক কোম্পানি ই.পি. আর ও কিছু মুজাহিদ নিয়ে দেবীগঞ্জ এলাকায়, ৩. হাবিলদার নূর মােহাম্মদের নের্তৃত্বে এক প্লাটুন ই.পি. আর ও এক প্লাটুন মুজাহিদ শিবগঞ্জ বিমান বন্দরে, ৪, উইং সদরে এক কোম্পানি ই.পি, আর রিজার্ভ, ইতােমধ্যে ঠাকুরগাও’র সহকারী আনসার এ্যাডজুটেন্ট কবিরউদ্দিন বেশ কিছু আনসারকে সংগঠিত করে ই.পি আর -এর সাহায্যার্থে রণাঙ্গণে পাঠালেন। সুবেদার মেজর কাজিম ঠাকুরগাও উইং এর অধীন এলাকাকে দু’টি সাব-সেক্টরে ভাগ করে সুবেদার আবুল হাশেমকে পঞ্চগড় সাব-সেক্টর ও নায়েব সুবেদার হাজী মুরাদ আলীকে রুহিয়া সাব-সেক্টরের দায়িত্ব প্রদান করেন। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও সৈয়দপুরের মধ্যে। যােগাযােগ রক্ষাকারী বিভিন্ন রাস্তায় এবং খানসামা, জয়গঞ্জ ও ঝাড়বাড়ি এলাকায় প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তােলেন। ওদিকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থিত তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬তম এফ, এফ, ও অন্যান্য অবাঙালি। সৈন্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে বহু বাঙালি সৈন্য হতাহত ও বন্দি করে। অনেকেই পালিয়ে যেত সমর্থ হয়। এই ব্যাটালিয়নের ‘সি’ কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন আশরাফ।
ভাগ্যচক্রে তিনি বেঁচে যান এবং প্রায় পুরাে কোম্পানি নিয়ে ই.পি, আরদের সাথে যােগদান করেন। ২রা এপ্রিল অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম, টি, হােসেন ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও এসে সুবেদার মেজর কাজিম উদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি যুদ্ধে যােগ দিতে চাইলে ঠাকুরগাঁও উইং এর ই.পি, আর সৈনিকগণ তাকে সানন্দে তাদের অধিনায়ক রূপে গ্রহণ করে। ৩রা এপ্রিল তারা সম্মিলিতভাবে বৈঠক করে বৈঠকের সিদ্ধান্তানুযায়ী ঠাকুরগাঁও’র প্রতিরক্ষা বাতিল করেন এবং সুবেদার হাফিজ তার কোম্পানি নিয়ে দিনাজপুর-সৈয়দপুর সড়কে ক্যাপ্টেন আশরাফের তৃতীয় বেঙ্গলের ‘সি’ কোম্পানির সাথে মিলিত হন। এই সম্মিলিত বাহিনী ৪ঠা এপ্রিল ভূষিরবন্দর নামক স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যুহরচনা করে। ঐদিন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই.পি, আর, আনসার ও মুজাহিদ নিয়ে গঠিত হয় ‘যৌথ-কমান্ড’। এই যৌথ কমান্ড’ সৈয়দপুর সেনানিবাস আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
মুক্তিযােদ্ধাদের বিপর্যয়
পরিকল্পনানুসারে ৫ই এপ্রিল সুবেদার আবদুল মজিদ এক কোম্পানির অধিক ই.পি, আর বাহিনী নিয়ে নীলফামারী- সৈয়দপুর সড়কে সৈয়দপুরের অদূরে দারােয়ানী নামক স্থানে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করেন। সেদিন ভূষিরবন্দরের ই.পি. আর বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে ছােট খাট সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আরাে দশ মাইল অগ্রসর হয়ে চম্পাতলী নামক স্থানে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। ৬ই এপ্রিল ভােরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী গােলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযােদ্ধাদের চম্পাতলী প্রতিরক্ষা স্থান আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন আশরাফ ই.পি, আর, তৃতীয় বেঙ্গলের কোম্পানি, আনসার ও মুজাহিদ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করেন। তুমুল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়। কিন্তু দুপুর আড়াইটায় পাকিস্তানি বাহিনী ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র সহকারে ব্যাপকভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের উপর আবার আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে মুক্তিযােদ্ধারা বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। প্রচুর ক্ষতি স্বীকার করে তারা রাতের অন্ধকারে পাশ্চাদপসরণ করে। এরপর মুক্তিযােদ্ধারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে একদল ক্যাপ্টেন আশরাফের নের্তৃত্বে ভূষিরবন্দর ও অন্যদল সুবেদার হাফিজের নের্তৃত্বে বীরগঞ্জে প্রতিরক্ষা পজিশন গ্রহণ করে।  ৭ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী একই সঙ্গে নীলফামারী, ভূষিরবন্দর ও বদরগঞ্জে আক্রমণ চালায়। ট্যাঙ্ক ও গােলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণে মুক্তিযােদ্ধারা টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। ১০ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী দিনাজপুর-সৈয়দপুর সড়কের দশমাইল আক্রমণ করে। এই আক্রমণে মুক্তিযােদ্ধাদের এক দল দিনাজপুরের দিকে চলে যায় এবং আরেকদল ভাতগাঁও নামক স্থানে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। এই যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী খানসামা হয়ে ভাতগাঁও আক্রমণ করার সম্ভাবনার খবর পেয়ে সুবেদার হাফিজ বীরগঞ্জ থেকে তার বাহিনী নিয়ে গােপনে খানসামাতে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করেন। ঐ দিন সন্ধ্যার পর ষষ্ঠ বেলুচ ব্যাটালিয়নের দু’টি কোম্পানিকে খানসামা নদী পার হতে দেখা যায়। সুবেদার হাফিজ কালবিলম্ব না করে নদী পার হওয়া অবস্থায়ই পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে। অপ্রস্তুত পাকিস্তানি সেনাদের দু’টি কোম্পানিই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
মুক্তিযােদ্ধারা বহু অস্ত্রশস্ত্র, গাড়ি ও রসদপত্র হস্তগত করে। কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা প্রাণ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পালিয়ে যায় । কিন্তু ১৪ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপকভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের ভাতগাঁও প্রতিরক্ষা আক্রমণ করে। ভাতগাঁও পাকিস্তানি বাহিনীর কজায় চলে যায়। যার ফলে সুবেদার হাফিজ খানসামা ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। পাকিস্তান বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে মুক্তিযােদ্ধাদের জয়গঞ্জ ঝাড়বাড়ি ও দেবীগঞ্জ প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে। তারা ১৬ই এপ্রিলের মধ্যে পঞ্চগড়ে সমবেত হয়ে কাঞ্চন নদীর তীরে প্রতিরক্ষা নেয়। ১৯শে এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ট্যাঙ্ক ও গােলন্দাজ বাহিনীর পূর্ণ সহযােগিতায় পঞ্চগড় আক্রমণ করে। তুমুল সংঘর্ষের পর মুক্তিবাহিনী পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড় দখল করে জগদল ও ওমরখানা পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপন করে। অপরদিকে মুক্তিযােদ্ধারা ভজনপুর নামক স্থানে গিয়ে শক্ত প্রতিরক্ষা গড়ে তােলে। ভজনপুরকে রক্ষা করার জন্য তারা ২/৩ মাইল অগ্রসর হয়ে মাগুরমারী ও ময়নাগুড়িতে দু’টি অস্থায়ী ‘পকেট’ তৈরি করে সেখান থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে নাজেহাল করতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী বহু চেষ্টা করেও মুক্তিযােদ্ধাদের ভজনপুর। ঘাটি দখল করতে পারেনি। এই উইং-এর ই.পি, আর বাহিনী অন্যান্যদের সক্রিয়। সহযােগিতায় বাকী ৮মাস ভজনপুরকে মুক্ত রাখতে সমর্থ হয়।

সূত্রঃ  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!