You dont have javascript enabled! Please enable it!

১২ জুলাই ১৯৭১ঃ সম্মেলনে যুদ্ধ কৌশল অনুমোদন 

দশদিন ব্যাপী সম্মেলনে যুদ্ধের বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈঠকে লেঃ এম, এ, রব চীফ অব –স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ, কে খন্দকার ডেপুটি- চীফ- অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা হচ্ছেঃ 
১। বিভিন্ন সেক্টরের সীমানা নির্ধারণ 
২। নিম্নলিখিতভাবে গেরিলা যুদ্ধের আয়োজনঃ 
(ক)নির্ধারিত এলাকায় নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে পাঁচ অথবা দশজন নিয়ে গঠিত ট্রেনিং প্রাপ্ত গেরিলা দলকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। 
(খ)গেরিলাদের শ্রেণীবিভক্তিঃ
একশন গ্রুপঃ এই গ্রুপের সদস্যরা শত্রুর বিরুদ্ধে সরাসরি গেরিলা হামলা পরিচালনা করবে। তারা শতকরা ৫0 থেকে ১০০ ভাগ হাতিয়ার বহন করবে।
গোয়েন্দা সেনাঃ এই গ্রুপের গেরিলারা সাধারণত সংঘর্ষে জড়িত হবেনা। এরা শত্রুপক্ষের খবরাখবর সংগ্রহ করবে। এদের সাধারণতঃ৩০ ভাগের বেশি অস্ত্র থাকবেনা।
গেরিলা ঘাঁটিঃ প্রতিটি ঘাঁটিতে গেরিলাদের থাকা খাওয়ার জন্য কয়েকটি নিরাপদ গৃহের ব্যাবস্থা থাকবে যেখান থেকে যথাযথ খবর প্রাপ্তির পরই তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারে। প্রত্যেক ঘাঁটিতে একটি করে মেডিক্যাল গ্রুপ থাকবে যারা প্রয়োজনে গেরিলাদের চিকিৎসা করবে। প্রত্যেক ঘাঁটিতে একজন রাজনৈতিক নেতার দায়িত্ব থাকবে। এদের দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে পাকিস্তানীদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া এবং একই সঙ্গে বাঙ্গালীরা যাতে সাহসও শক্তি হারিয়ে না ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। শত্রুর বিরুদ্ধে বড় আক্রমণ পরিচালনার উদ্দেশ্যে আর বেশী সংখ্যকগেরিলা কিংবা নিয়মিত বাহিনীর সৈনিকদের স্থান সংকুলানের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিকে তৈরি রাখাও এদের দায়িত্ব ছিল।
৩। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের অবিলম্বে ব্যাটালিয়ান ফোর্স এবং সেকটর ট্রুপস এর ভিত্তিতে সংগঠিত করতে হবে।
৪। শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ঃ
(ক) প্রতিটি সুবিধাজনক স্থানে শত্রুর বিরুদ্ধে রেইড এবং অ্যামবুশের মাধ্যমে আঘাত হানার জন্য বিপুল সংখ্যক গেরিলাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 
(খ) শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে দেওয়া যাবেনা। বিদ্যুতের খুঁটি, সাবষ্টেশন প্রভৃতি উড়িয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অচল করার মাধ্যমে একাজ করতে হবে।
(গ) পাকিস্তানীদেরকে কোন কাঁচামাল কিংবা উৎপাদিত পণ্য রফতানি করতে দেওয়া হবেনা। যেসব জিনিস গুদামে থাকবে সেগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে।
(ঘ) শত্রু পক্ষের সৈন্যও সামরিক সরঞ্জাম আনা- নেওয়ার জন্য ব্যবহারযোগ্য রেলপথ, নৌপথ পরিকল্পিতভাবে ধংস করে দিতে হবে।
(ঙ) রণ কৌশলগত পরিকল্পনা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে শত্রুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তে বাধ্য হয়্।
(চ) শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করার পর তাদের বিচ্ছিন্ন বাহিনীগুলোর উপর গেরিলারা মরনপ্রান আঘাত হানবে।
মেজর রফিকের ভাষ্য

৮ নম্বর সেক্টরঃ ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর এম,এ ওসমান চৌধুরী। এসময় মেজর এম, এ মঞ্জুর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন এবং তাকে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। এর আওতায় ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল পটুয়াখালী জেলা। পরে বরিশালও পটুয়াখালীকে এই সেক্টর থেকে বাদ দেওয়া হয়। সেক্টরে সৈন্য সংখ্যা ছিল ২ হাজার। গেরিলা ৭ হাজার। সাব-সেক্টরের সংখ্যা ছিল ৭টি। সেক্টর হেডকোয়াটার ছিল বেনাপোলে।
৯ নম্বর সেক্টরঃ বরিশাল, পটুয়াখালী, এবং খুলনাওফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়। সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন মেজর এম,এ, জলিল। সাব-সেক্টরের সংখ্যা ছিল৮ টি। গেরিলা ছিল প্রায়১৫ হাজার। নিয়মিত সৈন্য ছিল এক ব্যাটালিয়নের মত।
১০ নম্বর সেক্টরঃ এই সেক্টরের কোন আঞ্চলিক সীমানা ছিলনা। শুধু নৌ-বাহিনীর কমান্ডোদের নিয়ে গঠিত এই সেক্টরের সদস্যদের শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হতো। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সংখ্যক কমান্ডো এক-একটি গ্রুপ গঠিত হতো। যে সেক্টরের এলাকায় কমান্ডো অভিযান পরিচালিত হতো সেই এলাকার সেক্টর কমান্ডারের অধীনে থেকে কমান্ডোরা কাজ করত। নৌ- অভিযান শেষ হওয়ার পর কমান্ডোরা তাদের মুল সেক্টর অর্থাৎ ১০ নম্বর সেক্টরে ফিরে আসতো।
১১ নম্বর সেক্টরঃ এই সেক্টরটি ছিল মেজর তাহেরের কমান্ডে। ১৫ নভেম্বর এক অভিযানে তিনি আহত হলে স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহকে এই সেক্টরের কমান্ডার করা হয়। এখানে সাব-সেক্টর ছিল৮ টি এবং গেরিলাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ হাজার।

মেজর রফিকের ভাষ্য

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!