সিন্ধুর কমিউনিস্টদের প্রতিবাদ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বা ধারার মানুষজনের সবসময়ই সহানুভূতি ছিল। উগ্র বামপন্থি, বিশেষ করে যারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অনুসারী ছিল তাদের খানিকটা দ্বিধা ছিল। পাকিস্তানে যারা কমিউনিস্ট ছিলেন বা বা ধারার ছিলেন তারা বাংলাদেশের পক্ষে যতটুকু করার ততটুকু করেছেন, আমাদের পাকিস্তান ঘৃণার কারণে সে সব ঘটনা চাপা পড়ে যায়। | মার্চ মাসের (১৯৭১) শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সিন্ধু প্রদেশ কমিটি উর্দুতে একটি ইশতেহার প্রকাশ করে। পাকিস্তানের করাচি, কোয়েটা, সুকুর, হায়দরাবাদ ও লাহোরে তা ব্যাপকভাবে বিলি করা হয়। ইয়াহিয়া চক্রকে তীব্র ভাষায় ইশতেহারে নিন্দা করা হয়। ইশতেহারে বলা হয়“আর্নি জেনারেলদের কাপুরুষ চক্রটি বাংলাদেশের জনগণকে খুন করার অভিযান শুরু করেছে। তারা এই হত্যালীলায় যে অস্ত্র ব্যবহার করছে তা জনতার কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ দিয়েই কেনা হয়েছে। এই চক্র ইতিপূর্বে বালুচিস্তানের জনগণের ওপর ওদের নৃশংসতা ও বর্বরতার অভিযান চালিয়েছিল।…এই আর্মি জেনারেলরা সাম্রাজ্যবাদী, একচেটিয়াপতি এবং সামন্তপ্রভুদের। সহায়তায় জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য সামনাসামনি বেরিয়ে এসেছে। তারা বেয়নেটের মুখে জনতাকে দাবিয়ে রাখার জন্য পূর্ববাংলায়, বেলুচিস্তানে সৈন্য সমাবেশ করছে …জনগণের দাবি এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তাদের আন্দোলন বুলেট দিয়ে মোকাবিলা করা হচ্ছে। ঢাকা, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, শ্রীহট্ট এবং পূর্ব বাংলার অন্যান্য শহরে নিরস্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ মিছিল যাত্রীদের ওপর মেশিনগান ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের ১৩ কোটি জনসাধারণের বিরুদ্ধে একটি ফ্রন্ট খোলা হয়েছে।
সামরিক জুন্টার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। বুলেট, জেল, চক্রান্ত, দমনপীড়ন এবং বর্বরতা আগেও জনতার অগ্রগতি স্তব্ধ করতে সক্ষম হয়নি। এবারও তারা সক্ষম হবে না”। | ইশতেহারের শেষে শ্লোগান ছিল-‘সামরিক শাসন মুর্দাবাদ, জনপ্রিয় শাসন জিন্দাবাদ।
সূত্র : দৈনিক কালান্তর, কলকাতা, ২২.০৪.১৯৭১।
Photo: Qazi Faiz Mohammed with AL leaders