মুক্তিফৌজ নেতার ঘােষণা বাঙলাদেশ থেকে পাক সেনা উৎখাত করে তবে থামবাে
(নিজস্ব প্রতিনিধি-সুন্দর কাবাদি)
লণ্ডন, ১৪ জুলাই-স্বাধীন টেলিভিশনে ‘ওয়ার্ল্ড ইন এ্যাকসন’ নামক সাপ্তাহিক এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিফৌজের নেতা মেজর খালেদ টেলিভিশন রিপাের্টারদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন-বাংলাদেশের একটি লােকও জীবিত থাকা পর্যন্ত এই সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশ থেকে পাক সেনা ও রাজনৈতিক নেতাদের উৎখাত করে তবে থামবাে। আমেরিকায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত মেজর খালেদ গত ১৮ বছর ধরে পাক সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তিনি বলেছেন, পাক বাহিনী হেলিকপ্টার এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের লােকদের মনােবল ভেঙ্গে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা নতি স্বীকার করবাে না। সমগ্র বাংলাদেশকে আমরা একটা সংগ্রামী জাতিতে পরিণত করবাে। পাক-বাহিনী আমাদের গ্রামগুলির উপর বিরামহীন গােলাবর্ষণ করছে এবং বাংলাদেশটাকে শক্ত এক সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। মেজর খালেদ বলেছেন, পাক বাহিনী বাঙালী মেয়েদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে এবং তাদের শীলতা হানি করছে। ভােগের পর তারা মেয়েদের হত্যা করছে।
মুক্তিফৌজের অপর একজন নেতা ক্যাপ্টেন চৌধুরী টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাঞ্জাবী সেনারা বাঙালী মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক লােকেরাও এই নষ্টামীতে যােগ দিয়েছে। ইয়াহিয়া খান এখন হিটলারী রাজনীতি অনুসরণ করছেন। মেজর খালেদ বলেছেন, আমরা হিংসাপরায়ণ নই। মহান সংস্কৃতির ধারক আমরা। দেশীয় কাব্য ও সাহিত্যের জন্য আমরা গর্বিত। আমরা কোনও দিন হিংসাপরায়ণ ছিলাম না। পাক বাহিনীর অত্যাচারের বদলা নেওয়ার জন্যই আমরা হিংসার আশ্রয় নিয়েছি। শান্তিপ্রিয় আমরা বাঙালীরা আজ অস্ত্রধারণে বাধ্য হয়েছি। এই সংগ্রাম আমাদের এখন চালিয়ে যেতেই হবে। দশ লক্ষ লােক ইতিমধ্যেই মারা গেছে। যুদ্ধে আরও ৫০ লক্ষ লােক হয়তাে মারা যাবে। অনাহারে মারা যাবে হয়তাে আরও এক কোটি লােক। তাতে আমাদের কোন ভয় নেই। আমাদের অস্ত্র নেই, কিন্তু জনবল আছে। প্রয়ােজন হলে খালি হাতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাবাে।
তিনি বলেছেন, বিশ্বাসঘাতকদের আমরা হত্যা করবাে। বাংলাদেশে আমরা ক্রীড়নক সরকার গঠন করতে দেব না। আমরা জানি ন্যায়ের দাবীতে আমরা সংগ্রাম করছি। তাঁর নিজের পরিবারের খবর কি জিজ্ঞাসা করলে মেজর খালেদ বলেন, পরিবারের খবর আমি জানি না। অন্যান্য বহু পরিবারের ভাগ্যে কি হয়েছে আমি নিজের চোখেই তা দেখেছি। তাই নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছি। নিজের কথা চিন্তা করার অধিকার এখন আমার নেই। বাংলাদেশই আমার পরিবার।
Reference:
১৫ জুলাই ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা